Municipal Elections 2022: ‘মতুয়াগড়’ বনগাঁর তৃণমূলের কেন্দ্রীয় মিছিলে নেই শঙ্কর- জ্যোৎস্না! ১০৮ পুরসভায় ভোটের ফল ঘোষণা ২ মার্চ , জানাল নির্বাচন কমিশন

0
1300

পার্থসারথিনন্দী,, বনগাঁ: রাজ্যের বাকি ১০৮ পুরসভায় ভোটের ফল ঘোষণা হবে ২ মার্চ৷ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানাল রাজ্য নির্বাচন কমিশন। আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারি দার্জিলিং, আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর, মালদা, মুর্শিদাবাদ, নদিয়া, হাওড়ার উলুবেড়িয়া, হুগলি, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, বর্ধমান, বীরভূম,উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, মোট ১০৮টি পুরসভায় ভোট।

মনোনয়ন জমা এবং প্রত্যাহারের কাজ শেষ। ৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মনোনয়ন জমা দেন প্রার্থীরা। ১২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মনোনয়ন প্রত্যাহারের সময়সীমা ছিল। তবে কবে ফলপ্রকাশ হবে তা এতদিন অজানাই ছিল। বুধবার বিজ্ঞপ্তি জারি করে নির্বাচন কমিশন জানিয়ে দিল আগামী ২ মার্চ হবে ভোটগণনা।

এদিন দুপুরে উত্তর২৪ পরগনার মতুয়াগড় বনগাঁয় গোপাল শেঠের নেতৃত্বে প্রার্থীদের নিয়ে তৃণমূল কেন্দ্রীয় মিছিল করে কার্যত পুরো ভোট যুদ্ধের দামামা বাজিয়ে দিল বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক মহল৷

পুরসভার তৃণমূল প্রার্থী ও কর্মী সমর্থকদের নিয়ে দুপুরে তিনটে নাগাদ মতিগঞ্জ ঘড়ি মোড় থেকে এই মহা মিছিল শুরু হয়, এবং যশোররোড হয়ে এক নম্বর রেলগেটের কাছে পৌঁছে শেষ হয়। এদিন মিছিলে হাঁটেন বনগাঁর প্রাক্তন সাংসদ মমতা বালা ঠাকুর, বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি আলোরানী সরকার, প্রাক্তন পুর প্রশাসক গোপাল শেঠ সহ, বনগাঁর তৃণমূলের বেশিরভাগ প্রার্থী। তাঁদের সঙ্গে তৃণমূলের পতাকা নিয়ে কয়েক হাজার কর্মীসমর্থকরা এই মিছিলে সমিল হন।


বনগাঁর প্রাক্তন প্রশাসক তৃণমূল প্রার্থী গোপাল শেঠ বলেন” মস্তানদের দিয়ে ভোট করা যাবেনা। মানুষ রায় দেবে তৃণমূলের পতাকা উড়বে৷”
এ দিনের মিছিলে দেখা গোপাল বাবু বলেন” যে মিছিলের হাঁটবে মানুষ তাদের পাশে থাকবে। ওনাদের কাজ থাকতে পারে ৷

তবে এদিনের মিছিলে দেখা যায়নি ৪ নং ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী জ্যোৎস্না আঢ্য তথা প্রাক্তন পুর প্রধান শঙ্কর আঢ্য-র স্ত্রী-কে৷

অনেকে বলছেন এখন বনগাঁয় তৃণমূলের সময়টা ভালো যাচ্ছে না। যেদিন থেকে প্রার্থী তালিকা বেরিয়েছে শাসকের ঘরের আগুন নেমে এসেছে উন্মুক্ত রাস্তায়। অধিকাংশ জেলাই দেখছে বিক্ষোভ, স্লোগান। বাদ পড়েনি বনগাঁও। যেদিন থেকে পৌরসভার তৃণমূলের প্রাক্তন চেয়ারম্যান শংকর আঢ্যকে টিকিট দেওয়া হয়নি সেই দিন থেকেই ছড়িয়েছে ক্ষোভ।

বনগাঁ পৌর ভোটে তৃণমূলের টিকিটে লড়ছেন জ্যোৎস্না আঢ্য । তবে, স্বামী শঙ্কর আঢ্য পাননি টিকিট। এবার শংকর আঢ্যর নাম না থাকায় তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মীদের মধ্যে চরম উত্তেজনা দেখা দেয় সেই থেকেই। শুরু হয় বিক্ষোভ ও রাস্তা অবরোধ।

এরপর এক সপ্তাহ আগে বুধবার হঠাৎ বনগাঁ মহকুমা শাসকের দফতরে এসে ৩ নম্বর ওয়ার্ড থেকে মনোনয়ন পত্র জমা দেন শংকর আঢ্যর ভাই মলয় আঢ্য। এখানেই শেষ নয়, পাশাপাশি ১৭ নম্বর ওয়ার্ড থেকে কংগ্রেসের হয়ে মনোনয়ন জমা দেয় শঙ্কর আঢ্যর মেয়ে ঋতুপর্ণা আঢ্য। এই দুজনকে দলে যোগদান করিয়ে বনগাঁর রাজনীতিতে বড় চমক দিল কংগ্রেস। 

বনগাঁ পুরসভা নির্বাচনে এককভাবে লড়াই করছে জাতীয় কংগ্রেস। সেই অনুযায়ী গত বুধবার ১১ টি ওয়ার্ডে তাদের মনোনীত প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। প্রার্থীদের মধ্যে অধিকাংশই নতুন মুখ। এই তালিকায় সবথেকে বড় চমক তৃণমূল পরিবারের দুই প্রার্থী। অর্থাৎ শঙ্কর আঢ্যর মেয়ে ঋতুপর্ণা আঢ্য। ও ভাই মলয় আঢ্য৷ আর তাঁদেরকে কেন্দ্র করে এখন বনগাঁর রাজনীতি সরগরম।

প্রসঙ্গত, বনগাঁর প্রাক্তন পুর প্রশাসক শঙ্কর আঢ্য সেই সময় বলেছিলেন তাঁর মেয়ে ঋতুপর্ণা এখন প্রাপ্ত বয়স্ক সে ঘরে আমার কন্যা তবে বাইরে সে কোন দল করবে সেটা তার নিজম্ব ব্যপার তাকে বাঁধা দিতে পারিনা , এছাড়া শুনেছি ১৭ নং ওয়ার্ডে পাড়ার মেয়েকে চাইছিল এলাকার মানুষ ৷ সে তার পথে চলে তার মতো করে এগিয়ে যাক শুভেচ্ছা রইল৷

শঙ্করের কথায় তাঁকে তৃণমূলের দলের প্রযোজনে ডাকলে তিনি দলের হয়ে কাজ করবেন৷ যদিও তাঁর স্ত্রী এবারে চার নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী জ্যোৎস্না আঢ্য-র হয়ে প্রচার করছেন তিনি ৷ মেয়ে ও ভাইয়ের প্রচারের ব্যাপারে বলেন তাঁরা কি করবেন তারাই নির্ধারণ করবে৷ দল এদিনের মিছিলে তাঁকে ডাকতে হয়তো ভুলে গেছেন যাঁরা পরিচালনা করছেন , এমনটাই জানান শঙ্কর৷

এব্যপারে জ্যোৎস্না আঢ্য বলেন, দু’দিন ধরে আমার শরীর খুবই খারাপ প্রচারে বেরোতে পারছি না৷ দলের প্রচারে যাওয়াতো আমার কর্তব্য ৷সুস্থ হয়েই প্রচারে নামবো৷

পুরপ্রশাসক গোপাল শেঠ বলেন , সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আজকের এই মহামিছিল৷ শান্তিপূর্ণ ভোট দানের পক্ষে সামিল হয়েছিল ৫০ হাজার মানুষ৷ এখানে যারা দলকে শেষ করার চেষ্টা করছে এবং বহিরাগত মস্তানদেরকে দিয়ে ভোট করা যাবেনা, মানুষের রায়েই তৃণমূলের পতাকা উড়বে, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল প্যাকেজ করেছে বহিরাগত দুষ্কৃতি ঢুকিয়ে ভোট করবে বলে তাদের সন্ত্রাস মুলক কাজকে প্রতিহত করতে এই মহামিছিলে মানুষ যোগদিয়েছেন৷ জ্যোৎস্না আঢ্য ও শঙ্কর আঢ্য এদিন মিছিলে অনুউপস্থিত থাকার বিষয়ে বলেন, হয়তো তাঁদের কোন বেক্তিগত কাজ ছিল তাই মিছিলে আসেনি৷

এদিকে গোপাল বাবুর বক্তব্যে পরই- কটাক্ষের সুরে বনগাঁ উত্তরের বিজেপি বিধায়ক অশোক কির্তনীয়া জানান, ভূতের মুখে রাম নাম , সারাবাংলা জুড়ে সন্ত্রাসের বাতাবরণ তৈরি করেছে তৃণমূল , এখানে ওরা ২২ শূন্য হবে৷ যদি দুস্কৃতি ও পুলিশকে বাদ দিয়ে ভোট করে৷ এদিনের মিছিলে স্থানীয় মানুষ ছিল না৷ গাড়ী বোঝাই করে বাইরে থেকে লোক নিয়ে এসে ভিড় দেখাচ্ছে৷ সাধারণ মানুষকে বোকা বানাচ্ছে৷ ২১ মার্চ এর জবাব দেবে বনগাঁর মানুষ৷

উল্লেখ্য, এই পুরসভায় বামেরা ১৯ টি আসনে প্রার্থী দিয়েছে। কংগ্রেস ১১ টি আসনে তাদের প্রার্থী দেওয়ায় ,বাম এবং কংগ্রেস আসন সমঝোতা নিয়ে আলোচনায় বসেও পরবর্তীতে একক ভাবেই লড়াইয়ের ময়দানে নেমেছে সব বাম ও কংগ্রেস৷

বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি আলোরানী সরকার বলেন, আমাদের বাংলার ইতিহাসেই আছে একই পরিবারের সদস্য তৃণমূল,বিজেপি,সিপিএম, কংগ্রেস করতে পারে এবং বিভিন্ন দলের প্রার্থী হিসেবে দাঁড়াতে পারে৷ এব্যপারে কিছু বলার নেই তবে, মানুষ এর জবাব দেবে৷ তৃণমূল শেষ কথা সব কিছুর উপরে নজর রাখছে উর্ধতন কর্তৃপক্ষ, বনগাঁয় ২২ শূন্য করে তৃণমূল দেখিয়ে দেবে ৷

তৃণমূল নেতা রতন ঘোষ বলেন , বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি আলোরানী সরকারের হাত থেকে দলীয় পতাকা শক্ত করে ধরে শপথ নিয়েছি এবারের পুর নির্বাচনে বনগাঁ সহ যেখানে নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমাকে কাজের নির্দেশ দেবেন আমি সেই কাজ নিপূণ ভাবে করব এবং বিশেষ করে এই বনগাঁয় তৃণমূলের জন্মলগ্ন থেকে দলটা করেছি, দায়িত্বের সঙ্গে মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বনগাঁর ২২টি আসনে জয় এনে দিয়ে আমাদের প্রিয় নেত্রীকে উপহার দেব৷ উল্লেখ্য, তৃণমূল সূত্রের খবর, কাগজে কলমে নেতা রতন ঘোষকে দল এখনও স্বীকৃতি দেয়নি ৷ তবে বনগাঁর পুরসভার ভোটের প্রচারে তাঁকে দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন মিটিং -মিছিলে৷

প্রসঙ্গত, চার পুরনিগমের ভোটেও সবুজ ঝড় অব্যাহত রাজ্যে। বিপুল আসন নিয়ে জয়ী হয়েছে তৃণমূল। ২৭ ফেব্রুয়ারি বাকি ১০৮ টি আসনে ভোট। আর সেই ভোটে বিক্ষুব্ধ তৃণমূলদের নির্দল হয়ে মনোনয়ন পেশ অস্বস্তি বাড়াচ্ছে শাসকদলের। এই পরিস্থিতিতে বিক্ষুব্ধ তৃণমূল নেতাদের জন্য স্পষ্ট বার্তা দিয়েছিলেন তৃণমূলের জাতীয় কর্মসমিতির সদস্য পার্থ চট্টোপাধ্যায়৷

গত সোমবার বিকেলে তিনি বলেন, “যারা নির্দল হিসাবে দাড়িয়েছেন তাদের অনুরোধ করেছি নাম প্রথ্যাহার করে নিতে। ৪৮ ঘণ্টা এর মধ্য দলের প্রার্থী পদের জন্য আবেদন জানাবেন তাঁরা। তারপর দলীয় ভাবে চিহ্নিত করে এবং যাঁদের আত্মীয়রা দাঁড়িয়েছেন তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নেব।” পার্থ চট্টোপাধ্যায়  আরও যোগ করেন, “যারা বিভিন্ন জেলাতে কো অর্ডিনেটর হিসাবে রয়েছেন তাঁরা ৪৮ ঘণ্টা বাদে নাম প্রত্যাহার না করলে তাঁদের বহিষ্কার করবেন।”

এদিকে বনগাঁয় প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে কোন নির্দল প্রার্থীই তাঁদের মনোনয়ন প্রথ্যাহার করেনি বরং বিভিন্ন দলে অনেকের আত্মীয়রা দাঁড়িয়েছেন ৷ তাহলে কী একুশের বিধান সভার মতো বাইশের পুর নির্বাচনেও সবুজ ঝড় থেমে যাবে বনগাঁয়!

এদিকে বকেয়া পুরসভার ভোটে অশান্তির আশঙ্কায় বিরোধীরা। ওই পুরসভার ভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনী রাখা সম্ভব কিনা, সে বিষয়ে রাজ্য সরকারকে প্রশ্নও করেছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন। আবার যে পুর এলাকাগুলিতে ভোট, সেখানে আপাতত দুয়ারে সরকার, পাড়ায় পাড়ায় সমাধান কর্মসূচি বন্ধ রাখা যায় কিনা, সে বিষয়েও রাজ্য সরকারের কাছে তথ্য তলব করেছে কলকাতা হাইকোর্ট। আগামী সোমবার হলফনামা আকারে তথ্য জানাতে হবে। 

Previous articlePrimary School Reopening: দীর্ঘদিন পর কচিমুখের ভিড় বাংলার স্কুলগুলিতে, ছন্দে ফিরল ক্লাসরুম
Next articleSandhya Mukhopadhyay: মঙ্গলেই নিভেছিল সন্ধ্যা-প্রদীপ , পূর্ণিমার সন্ধ্যায় বিলীন হলেন গীতশ্রী

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here