দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর এই প্রথম মোহনবাগান ক্লাবে পদার্পণ করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ ক্লাবের প্রধান ফটক থেকে তাঁবুতে প্রবেশের পথে ছিল ঢাকির দল। ঢাকের তালে শতাব্দীপ্রাচীন ক্লাবে প্রবেশ করেন মুখ্যমন্ত্রী। ক্লাবে পা রেখেই মোহনবাগানের ভূয়সী প্রশংসা করেন, তুলে ধরেন ইতিহাস। সবুজ মেরুন মঞ্চে দাঁড়িয়ে ফিরে যান স্মৃতির সরণিতে। তাঁর মনে পড়ে যায় মায়ের কথা। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘মোহনবাগান ‘ম’ দিয়ে শুরু হয়। মোহনবাগানের কথা মনে পড়লেই আমার মায়ের কথা মনে পড়ে। অনেকেই হয়তো জানেন না আমার মা মোহনবাগানকে সমর্থন করতেন। একবার পেলে এসেছিল কলকাতায় খেলতে। সারা বাংলা উথাল পাথাল হয়ে গিয়েছিল।

আর আমার মা ম্যাচের আগে কালীঘাটে পুজো দিতে পাঠিয়েছিল। মোহনবাগানের খেলা হলেই আমার মা রেডিও নিয়ে বসে যেত, আর কালীঘাটে পুজো দিত। আমার মা মোহনবাগানের সমর্থক ছিল। এখন দেখি আমার দাদা ইস্টবেঙ্গল করে। আর মহমেডান স্পোর্টিংয়ের কেউ নেই বলে আমি মহমেডান করি।’

বুধবার বিকেলে মোহনবাগান ক্লাবের নবনির্মিত ক্লাবতাঁবুর উদ্বোধন করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সবুজ মেরুন পাড়ের শাড়ি পড়ে ক্লাবতাঁবুর দ্বারোদ্ঘাটন করেন মুখ্যমন্ত্রী। সঙ্গে ছিলেন ক্লাবের সচিব দেবাশিস দত্ত এবং ফুটবল সচিব সত্যজিৎ চ্যাটার্জি।

সবুজ মেরুন পাড়ের শাড়িতে এসে মোহনবাগান জনতার মন জয় করে নেন। এই প্রসঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘আমার শাড়ি ডিজাইন আমি নিজেই করি। বাজারে এত সরু পাড়ের শাড়ি পেতে সমস্যা হয়। তাই মোহনবাগান ক্লাবের অনুষ্ঠানে আসার আগে এই শাড়ি ডিজাইন করিয়েছি। কিন্তু লাল হলুদ শাড়ি আমার কাছে নেই।’ 

নির্বাচনের আগে তাঁর মস্তিষ্ক থেকেই বেরিয়েছিল ‘খেলা হবে’ স্লোগান। এদিন নিজেই তার ব্যাখ্যা দিলেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘খেলা হবে কেন বলেছিলাম জানেন? জীবনটাই তো খেলা। জন্ম কবে হবে জানা যায়, কিন্তু মৃত্যু কবে কেউ জানে না। যতদিন বাঁচব, জীবন সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে খেলতে খেলতে জীবনটা কেটে যাবে।

মোহনবাগানের ইতিহাস কেউ ভুলতে পারবে না। একজন ছাড়া সবাই খালি পায়ে ইংরেজদের বুটের সঙ্গে লড়াই করেছিল। মোহনবাগান খেলার মধ্যে দিয়ে দেশের আন্দোলন, জাতীয়তাবোধ মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়েছে। মোহনবাগানের তুলনা মোহনবাগান নিজেই। মোহনবাগানের মাটি সোনার চেয়েও খাঁটি।’

এদিন ক্লাবতাঁবুর উদ্বোধনে এসে মোহনবাগানকে ৫০ লক্ষ টাকার অনুদানের ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। সোমবার রাতেই শহরে ফিরেছেন সোনা  জয়ী অচিন্ত্য শিউলি। স্কোয়াশে ব্রোঞ্জ জিতে বাংলার মুখ উজ্জ্বল করেছেন সৌরভ ঘোষালও। ১৬ আগস্ট খেলা দিবসের দিন তাঁদের হাতে তুলে দেওয়া হবে আর্থিক অনুদান। অচিন্ত্যকে ৫ লক্ষ এবং সৌরভকে ২ লক্ষ টাকা দেওয়ার ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

এদিন মুখ্যমন্ত্রীকে উত্তরীয় পরিয়ে স্বাগত জানান সুব্রত ভট্টাচার্য। তাঁর হাতে লাইফটাইম মেম্বারশিপ কার্ড তুলে দেন ফুটবল সচিব সত্যজিৎ চ্যাটার্জি। বিশেষ স্মারক দেন সচিব দেবাশিস দত্ত। ক্লাবের পক্ষ থেকে ফুটবল তুলে দেন মানস ভট্টাচার্য। সেই বলে সই করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, যা রাখা হয়েছে মোহনবাগান ক্লাবের ট্রফির ক্যাবিনেটে। সেখানে একই সঙ্গে স্থান পায় স্মারকও।

এদিন ক্লাবতাঁবুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, আইন মন্ত্রী মলয় ঘটক, সমবায় মন্ত্রী অরূপ রায়, ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষ, প্রতিমন্ত্রী মনোজ তিওয়ারি এবং বিশিষ্ট তৃণমূল নেতা এবং ক্লাবের সহ সভাপতি কুণাল ঘোষ। এছাড়াও ছিলেন মোহনবাগানের প্রাক্তন ফুটবলাররা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here