দেশের সময়: ঘূর্ণিঝড় রেমেলের জেরে দুর্যোগের সাক্ষী থেকেছে কলকাতা সহ রাজ্যের বিভিন্ন জেলা। রাজ্যে নির্বাচনী প্রচারে এসে এবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মুখে উঠে এলে ঘূর্ণিঝড় প্রসঙ্গ। অশোকনগরের সভার শুরুতেই প্রধানমন্ত্রীর বলেন, প্রথমেই মা কালীকে প্রণাম জানাচ্ছি। তাঁর আশীর্বাদেই আমরা সকলে মিলে ঘূর্ণিঝড়ের মোকাবিলা করেছি। ঘূর্ণিঝড়ের উপরে লাগাতার নজর রেখেছিল ভারত সরকার। আমিও লাগাতার যোগাযোগ রেখেছিলাম। আমাদের এনডিআরএফ ও বাকিরা ভালো কাজ করেছে। কেন্দ্রীয় সরকার সবদিক থেকে রাজ্য সরকারকে যতটা সম্ভব সাহায্য করছে।’
নির্বাচনী প্রচারে এসে ফের বাংলার দুর্নীতি নিয়ে সরব হলেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। একই সঙ্গে দাবি করলেন তাঁর আমলে গত ১০ বছরে কেন্দ্রে কোনও দুর্নীতি হয়নি।
মোদীর কথায়, “গত ১০ বছরে কেন্দ্রীয় স্তরে একটাও দুর্নীতি হতে দিইনি। বাংলায় দুর্নীতিকারীদের এমন ব্যবস্থা করব যে, এদের আগামী প্রজন্মও দুর্নীতি করার আগে ১০০ বার ভাববে।’’
টেনে আনলেন সন্দেশখালি থেকে কেশপুরের সন্ত্রাসের প্রসঙ্গও। তৃণমূলের পাশাপাশি বাম এবং তারও আগের কংগ্রেস সরকারকে দায়ী করেছেন মোদী।
প্রধানমন্ত্রীর কথায়, “পশ্চিমবঙ্গে কারখানা বন্ধ, চাকরি নেই। এই দুর্দশা কে করল? প্রথমে কংগ্রেস লুটেছিল। তার পর বামেরা লুটেছিল। এখন তৃণমূল দুই হাতে লুট করছে। তিনজনেই পশ্চিমবঙ্গের দোষী।”
হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, “তৃণমূল তো দূরে থাক, কারও ক্ষমতা নেই মোদীকে তাঁর সঙ্কল্প থেকে সরিয়ে দেয়। ক্ষমতায় এলে এক এক টাকার হিসাব হবে। দুর্নীতিকারীদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
দাবি করেছেন, এর আগে লুট হওয়া ১৭ হাজার কোটি টাকা মানুষকে ফেরত দিয়েছে বিজেপি সরকার। ক্ষমতায় এলে বাংলায় লুট হওয়া টাকাও জনগণকে ফেরত পেতে সাহায্য করা হবে।
প্রধানমন্ত্রী এদিন বলেন, “বাংলায় লাগাতার খুন আর হামলার ঘটনা ঘটছে। ভোটের আগে বিজেপিকে কর্মীদের জেলে ভরা হচ্ছে। এই সব অত্যাচার সত্ত্বেও বিপুল সংখ্যক মানুষ বেরিয়ে এসে নিজের ভোট নিজে দিচ্ছেন।”
ওবিসিদের শংসাপত্র বাতিলের প্রসঙ্গও টানেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, কলকাতা হাইকোর্ট বেআইনি ভাবে দেওয়া ওবিসি সংরক্ষণ বাতিলের নির্দেশ দিয়েছে। তৃণমূল এখন উচ্চ আদালতকে আক্রমণ করছে। বিচার ব্যবস্থা সম্পর্কে খারাপ কথা বলছে।
মোদী বলেন, ‘‘তৃণমূল এবং জোট ‘ইন্ডিয়া’র আপনাদের উন্নয়নের সঙ্গে কোনও সম্পর্ক নেই। এরা শুধু নিজেদের ভোটব্যাঙ্ককে তুষ্ট করতে চায়। সংবিধানের ক্ষতি হচ্ছে বলে চিৎকার করতে থাকা মানুষদের পশ্চিমবঙ্গে এসে দেখে যেতে বলুন। এখানকার ওবিসিদের ধোঁকা দিয়েছে তৃণমূল। আদালতে তা প্রকাশ্যে এসেছে। কলকাতা হাই কোর্ট বলেছে, ৭৭ মুসলিম সম্প্রদায়কে ওবিসি ঘোষণা করা অসাংবিধানিক। তৃণমূল লক্ষ ওবিসি যুবদের অধিকার কেড়ে নিয়েছে জিহাদিদের মদত জোগানোর জন্য। আদালতের এই সিদ্ধান্তের পর মুখ্যমন্ত্রীর রূপ দেখে আমি স্তম্ভিত। বিচারকদের উপর প্রশ্ন তোলা হচ্ছে। আমি তৃণমূলীদের প্রশ্ন করতে চাই, এ বার কি বিচারকদের পিছনেও গুন্ডা পাঠাবে! ন্যায়পালিকার গলা টিপছে তৃণমূল। তৃণমূল সত্যি সহ্য করতে পারছে না। যারা তৃণমূলের সত্য সামনে আনবে, তাদেরই টার্গেট করে ওরা।’’
তৃণমূলকে আক্রমণ করে মোদী বলেন, ‘‘তৃণমূলের বিধায়ক হিন্দুদের ভাগীরথীতে ভাসিয়ে দেওয়ার কথা বলেছে। এখানকার সন্তরা সেই ভুল শুধরে নেওয়ার অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু তৃণমূল সেই সন্তদেরই গালিগালাজ করেছে। রামকৃষ্ণ মিশন, ভারত সেবাশ্রম, ইস্কনের সন্ন্যাসীদের অপমান করা হয়েছে। ভোটব্যাঙ্ককে খুশি করতে এবং ভোট জিহাদদের এগিয়ে নিয়ে যেতে এমনটা করা হয়েছে।’’
মোদী বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গের এক দিকে কয়লাখনি রয়েছে। অন্য দিকে, উপকূল রয়েছে। স্বাধীনতার আগে বাংলা লক্ষ লক্ষ মানুষের রোজগারের ব্যবস্থা করে দিত। কিন্তু এখন সব কারখানা বন্ধ। পশ্চিমবঙ্গের এই দুর্দশা কে করল? প্রথমে কংগ্রেস লুটেছিল। তার পর বামেরা লুটেছিল। এখন তৃণমূল দুই হাতে লুট করছে। তিন জনেই দোষী। মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন দিল্লিতে কংগ্রেস এবং বামকে সমর্থন করবে। মানুষ সব খেলা বুঝে গিয়েছে।’’
রেখার প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘বসিরহাটের প্রার্থী রেখা কত সুন্দর ভাষণ দিয়েছেন! তৃণমূলের এ রকম কোনও নেতা নেই। এক জন গরিবের মেয়েকে সংসদে পাঠাতে বিজেপি কী ভাবে এত বড় পদক্ষেপ করল, তা দেশবাসী দেখল। আমার বিশ্বাস, তিনি নারীশক্তির প্রতিনিধিত্ব করছেন। তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াই করে চলেছেন। আমি ওঁর সাহসকে কুর্নিশ জানাচ্ছি। রেখাকে দেখে মনে হয় মা দুর্গার পূজারি রেখা। শাহজাহান শেখদের মতো নেতাদের সাহস যাতে না বাড়ে, তার জন্য রেখার জেতা প্রয়োজনীয়। তৃণমূল মাকে ভয় দেখিয়েছে, মাটিকে অপমান করেছে। তাই বাহাদুর বেটি রেখাকে জেতাতে হবে।’’
রেখার প্রশংসা করে মোদী বলেন, ‘‘সন্দেশখালির মহিলারা বিচার চাইলে সেই মহিলাদেরই টার্গেট করেছে তৃণমূল। বসিরহাটের প্রার্থী রেখা পাত্র কত সুন্দর ভাষণ দিয়েছেন! তৃণমূলের এ রকম কোনও নেতা নেই। এক জন গরিবের মেয়েকে সংসদে পাঠাতে বিজেপি কী ভাবে এত বড় পদক্ষেপ করল, তা দেশবাসী দেখল। আমার বিশ্বাস, তিনি নারীশক্তির হয়ে লড়াই করছেন। আমি ওঁর সাহসকে কুর্নিশ জানাচ্ছি। রেখাকে দেখে মনে হয় মা দুর্গার পূজারি। শাহজাহান শেখদের মতো নেতার সাহস যাতে না বাড়ে, তার জন্য রেখার জেতা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। তৃণমূল মাকে ভয় দেখিয়েছে, মাটিকে অপমান করেছে। বাহাদুর বেটি রেখাকে জেতাতে হবে।’’
মোদী আরও বলেন, ‘‘মতুয়াদের কুর্নিশ জানাই। আপনাদের নাগরিকত্ব পেতে কেউ বাধা দিতে পারবে না। কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। সংবিধান এ অধিকার দিয়েছে। তৃণমূল কেন, কোনও শক্তিই মোদীর সংকল্পকে নড়াতে পারবে না।’’