রবিবার থেকে দফায় দফায় গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। প্রতিরক্ষা সচিবের সঙ্গেও কথা বলেছেন তিনি। আর তারপরই বিশেষ নির্দেশ পৌঁছেছে রাজ্যে রাজ্যে।
পহেলগামে নৃশংস জঙ্গি হামলার পর থেকে পাকিস্তানের সঙ্গে টানাপড়েন চলছে ভারতের । এমন পরিস্থিতিতে কয়েকটি রাজ্যকে জরুরি অবস্থার জন্য প্রস্তুত থাকতে মহড়ার নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। আগামী ৭ মে, অর্থাৎ বুধবার মহড়া চালাতে বলা হয়েছে রাজ্যগুলিকে।
দেশের সব রাজ্যে হবে ‘মক ড্রিল’। এটা যে কোনও সাধারণ বিষয় নয়, তা স্পষ্ট। কারণ এভাবে দেশের সব রাজ্যে মক ড্রিল করার কথা সচরাচর বলা হয় না কেন্দ্রের তরফে। ১৯৭১-এ ভারত-পাক যুদ্ধের আবহে এমন মহড়া হয়েছিল রাজ্যে রাজ্যে। তারপর এই প্রথমবার এমন মহড়ার আয়োজন করা হচ্ছে। আগামিকাল, বুধবার (৭ মে) এই মক ড্রিল হবে বলে নির্দেশ এসেছে কেন্দ্রের তরফে। কী কী করতে হবে, সেটাও উল্লেখ করে দেওয়া হয়েছে চিঠিতে।
রাজস্থান, গুজরাত, পাঞ্জাব এবং জম্মু-কাশ্মীরের সিমান্ত এলাকায় এই মহড়া চালানো হতে পারে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, সব মিলিয়ে দেশের ২৪৪টি জেলায় এই মহড়া চলবে। মহড়া চলবে গ্রামীণ এলাকাতেও। বাংলার মোট ২৩টি জেলার ৩১ মক ড্রিল হবে বলে জানানো হয়েছে।
মোট তিনটি বিভাগ, ক্যাটেগরি এক, দুই এবং তিনে ভাগ করে বলা হয়েছে, কোচবিহার, দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, মালদহ, শিলিগুড়ি, গ্রেটার কলকাতা, দুর্গাপুর, হলদিয়া, হাসিমারা, খড়্গপুর, বার্নপুর-আসানসোল, ফরাক্কা, খেজুরিঘাট, চিত্তরঞ্জন, বালুরঘাট, আলিপুরদুয়ার, রায়গঞ্জ, ইসলামপুর, দিনহাটা, মেখলিগঞ্জ, মাথাভাঙা, কালিম্পং, জলঢাকা, কার্শিয়াং, কোলাঘাট, বর্ধমান, বীরভূম, পূর্ব-পশ্চিম মেদিনীপুর, হাওড়া, হুগলি, মুর্শিদাবাদে মহড়া হবে।
হঠাৎ ব্ল্যাকআউট বা অন্ধকার হয়ে যাবে শহর। নিভে যাবে সব আলো। রাতের অন্ধকারে কোনও এয়ার স্ট্রাইক হলে এই কৌশল নেওয়া হয়। ৭১-এর যুদ্ধের সময় এই কৌশল নেওয়া হয়েছিল।
মিলিটারি বেস, পাওয়ার প্লান্ট বা গুরুত্বপূর্ণ বিল্ডিংগুলি এমনভাবে ঢেকে দেওয়া হবে, যাতে স্যাটেলাইটে ধরা না পড়ে।
ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় শেখানো হবে, কীভাবে দ্রুত উদ্ধারকাজ চালাতে হয়, কীভাবে সরিয়ে নিয়ে যেতে হয় সাধারণ মানুষকে।
নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, মহড়ায় অংশ নেবেন জেলাশাসক-সহ জেলা প্রশাসনের অন্যান্য আধিকারিক, নাগরির সুরক্ষা কর্মী, হোমগার্ডেরা। এ ছাড়াও মহড়ায় অংশ নিতে বলা হয়েছে এনসিসি ক্যাডেট, নেহরু যুব কেন্দ্র সংগঠনের সদস্য এবং স্কুল-কলেজের পড়ুয়াদের।
গত সপ্তাহে নৌসেনা এবং বায়ুসেনা প্রধানের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বিভিন্ন সরকারি সূত্রে দাবি, জঙ্গিদমনে প্রত্যাঘাতের প্রস্তুতি হিসাবেই প্রতিরক্ষা বৈঠক করছেন প্রধানমন্ত্রী। তার পরেই কয়েকটি রাজ্যকে মহড়ার নির্দেশ দেয় অমিত শাহের মন্ত্রক।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক যে যে বিষয়ে মহড়া দিতে বলেছে, তার মধ্যে রয়েছে বিমান হামলার সতর্কতা সাইরেন ব্যবস্থাকে সক্রিয় করা, নাগরিকদের সুরক্ষার স্বার্থে সাধারণ মানুষ, বিশেষত পড়ুয়াদের ভূমিকা কী হবে, হঠাৎ ব্ল্যাকআউট হলে কী করণীয় এবং জরুরি পরিস্থিতিতে কী ভাবে দ্রুত উদ্ধারকাজ চালানো হবে।
পাকিস্তানকে ভারত ঠিক কোন ভাষায় জবাব দেবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে নয়া দিল্লিতে দফায় দফায় বৈঠক চলছে, তা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে। গত ১১ দিন ধরে একটানা সীমান্তে গুলিবর্ষন করে চলেছে পাকিস্তান। সেই আবহেই দেশের সব রাজ্যকে বিশেষ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রের তরফে।