মিলন খামারিয়া, মোহনপুর :গতকাল শেষ হল পাঁচদিন ধরে চলা(১৩ই মার্চ থেকে ১৭ই মার্চ) গো-পালন ও গরুর দুধ থেকে বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য,যেমন -ঘী,ছানা,পনির, লস্যি,খোয়া ক্ষীর, দই, মিষ্টি প্রভৃতি তৈরির প্রশিক্ষণ। এই প্রশিক্ষণ দিল ‘পশ্চিমবঙ্গ প্রাণী ও মংস্য বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়’-এর মোহনপুর শাখা। পশ্চিমবঙ্গের ১০ টি জেলা(নদিয়া, মালদা, মুর্শিদাবাদ, কলকাতা, উত্তর ২৪ পরগণা, দক্ষিণ ২৪ পরগণা, উত্তর দিনাজপুর, পুরুলিয়া, পূর্ব মেদিনীপুর ও বর্ধমান) থেকে ৩০ জন এই প্রশিক্ষণ শিবিরে অংশগ্রহণ করেছিলেন। প্রশিক্ষণ দেন প্রফেসর লোপামুদ্রা হালদার, ড. অনিন্দিতা দেবনাথ, ড. গৌতম কুমার দাস,শ্রী পার্থ প্রতিম দেবনাথ, শ্রী কুমারেশ হালদার, ড. সুরোজিৎ মন্ডল, ড.প্রদীপ রায় ও ড. পিনাকী রঞ্জন রায় প্রমুখ।
প্রশিক্ষণ নিতে আসা উদ্যোগীদের দুধে কী কী উপাদান থাকে সেই সম্পর্কে সচেতন করা হয়। ভেজাল দুধ থেকে বেছে নিয়ে বিশুদ্ধ দুধ চেনা ও দুধকে বিশুদ্ধ রাখার উপায় শেখানো হয়। দুধ থেকে বিভিন্ন দ্রব্য তৈরি করে তার বাজারজাতকরণ ও ব্যবসার পদ্ধিতিও জানানো হয় এই শিবিরে।
প্রফেসর গৌতম দাস বলেন – গরু বিভিন্ন দিক দিয়ে আমাদের উপকার করে থাকে। শাস্ত্রে উল্লিখিত সাত মাতার অন্যতম হল গো-মাতা। গো-মাতা আমাদের বিভিন্ন ভাবে প্রতিপালন করে থাকে। দুধ থেকে ক্রিম, ঘী, পনির, খোয়া ক্ষীর, লস্যি প্রভৃতি দ্রব্য তৈরি করা হাতে -কলমে শেখান তিনি।
‘বিশ্বব্যাঙ্ক ও ভারতীয় কৃষি অনুসন্ধান পরিষদ’-এর যৌথ উদ্যোগে ‘ন্যাশনাল এগ্রিকালচারাল হায়ার এডুকেশন প্রজেক্ট’ তৈরি হয়েছিল ২০১৮ সালে। তারই অধীনে এই প্রশিক্ষণ শিবির চলছিল। এটি তাদের অষ্টম প্রশিক্ষণ শিবির।
কৃষি ক্ষেত্রে যারা এগিয়ে আসতে চায় তাদের প্রশিক্ষিত করতেই মূলত এই শিবিরের আয়োজন করা হয়েছিল। উচ্চ শিক্ষিত ব্যক্তিরাও দুগ্ধজাত বিভিন্ন দ্রব্য উৎপাদন করে, তাকে ব্যবসা হিসেবে গ্রহণ করে যাতে স্বাবলম্বী হতে পারেন, সেটাকে গুরুত্ব দিয়ে উপলব্ধি করাতেই এই প্রশিক্ষণ শিবিরের বন্দোবস্ত করা হয় । মানুষ শুধুই চাকরি করবে না, সে নিজে অনেক মানুষের কর্মসংস্থানের যাতে ব্যবস্থা করতে পারে, সেই আত্মবিশ্বাস গড়ে তোলা ও বিভিন্ন দিক দিয়ে শিক্ষা দিয়ে তাদের বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত করতেই এই শিবিরের আয়োজন করা হয়েছিল।
এই প্রশিক্ষণ শিবিরের উদ্দেশ্য কী সে সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে প্রজেক্ট পি.আই. ড. লোপামুদ্রা জানান যে -” আমাদের রাজ্য ও দেশে দুগ্ধজাত দ্রব্যের চাহিদা ভীষণ পরিমাণে আছে। সেইজন্য আমরা চাইছি প্রশিক্ষণ নিয়ে প্রশিক্ষিতরা ব্যবসা করে নিজেরা স্বাবলম্বী হোক। শুধুই চাকরি করার মানসিকতা থেকে বেরিয়ে এসে নিজেরা ব্যবসা করে অনেক মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করব -এই প্রচেষ্টা করুক। তাতেই দেশের সমৃদ্ধি আসবে ও আত্মনির্ভরশীল ভারত গড়ে উঠবে।”
প্রশিক্ষণ শিবির পরিচালনায় বিশেষভাবে সহযোগী ছিলেন ড. অনিন্দিতা দেবনাথ।এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন উপাচার্য তপন কুমার দেবনাথ। প্রশিক্ষণ শেষে প্রত্যেককে ল্যাক্টোমিটার,ডিজিটাল থার্মোমিটার,পরিমাপক মগ,ঘী এবং সার্টিফিকেট দেওয়া হয়। নাবার্ড বা অন্য কোনো সংস্থা থেকে এই সার্টিফিকেট দেখিয়ে ব্যবসা শুরুর জন্য অর্থনৈতিক সাহায্য পাওয়া যেতে পারে বলেও জানা যায়।