দেশের সময়: মতুয়া মেলায় এসে সিএএ তাস খেললেন কেন্দ্রীয় জাহাজ মন্ত্রী সর্বানন্দ সোনেওয়াল। মতুয়া ভোটব্যাঙ্ক নিজেদের পকেটে রাখতে এর আগে একই তাস খেলেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। শনিবার কেন্দ্রীয় জাহাজ ও বন্দর মন্ত্রী সেই ইস্যুকে উস্কে দিলেন আরও একবার। বললেন, মোদী সরকার যখন কথা দিয়েছে, তখন সিএএ হবেই। তাঁর এই মন্তব্য ঘিরে তুমুল আলোড়ন ছড়িয়েছে।
প্রতিবাদে সরব হয়েছে তৃণমূল। তাদের বক্তব্য, হরিচাঁদ গুরুচাঁদের নামাঙ্কিত মেলায় এসে রাজনীতির প্রসঙ্গ তুলে মেলার গরিমাকে কলুষিত করেছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। তৃণমূলের প্রাক্তন সাংসদ মমতাবালা ঠাকুরের তোপ, মতুয়া মহামেলা আক্ষরিক অর্থেই মিলন মেলা। গোটা ভারতবর্ষ এমনকী বাংলাদেশ থেকে লাখো লাখো মানুষ এই মেলায় ভিড় জমান। এই মেলার একটা আলাদা ঐতিহ্য আছে। রাজনীতির প্রসঙ্গ উত্থাপন করে সেই ঐতিহ্যকে নষ্ট করলেন কেন্দ্রীয় জাহাজমন্ত্রী। দেখুনভিডিও
মতুয়া মহামেলা উপলক্ষে টুইট করেছেন শুভেচ্ছা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। কিন্তু শনিবার পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রীর তরফে ঠাকুরনগর ঠাকুরবাড়িতে কোনও শুভেচ্ছাবার্তা আসেনি। এমনটাই দাবি করে রাজনীতির রং লাগানোর চেষ্টায় মরিয়া বিজেপি। তাদের তোপ, তৃণমূল সরকার মতুয়াদের জন্য কিছু করেওনি। আগামী দিনেও করবে না, এটা স্পষ্ট। যদিও এই ইস্যুতে বিজেপিকে পাল্টা আক্রমণ করতে ছাড়েননি মমতাবালা ঠাকুর। তাঁর বক্তব্য, লাখো লাখো ভক্ত ঠাকুরবাড়িতে এসে যে কামনাসাগরে স্নান করছেন, সেই পুকুরের ঘাট বাঁধিয়ে দিয়েছে বর্তমান রাজ্য সরকার।
হরিচাঁদ গুরুচাঁদের জন্মতিথি উপলক্ষে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার রাজ্যে সরকারি ছুটি ঘোষণা করেছে। হরিচাঁদ গুরুচাঁদের নামে বিশ্ববিদ্যালয় করে দিয়েছে। পি আর ঠাকুরের নামে কলেজ হয়েছে। তৈরি হয়েছে মতুয়া ওয়েলফেয়ার বোর্ড। কিছুদিন আগেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছেন, গুরুচাঁদ সাহিত্য চর্চা কেন্দ্র হবে। হরিচাঁদ গুরুচাঁদ স্বাস্থ্যকেন্দ্র হবে। ঠাকুরনগর রেলস্টেশনে যে বুকিং কাউন্টার রয়েছে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন রেলমন্ত্রী ছিলেন, তখন সেটি তিনিই করে দিয়েছিলেন। এছাড়াও রাজ্যের উদ্যোগে ঠাকুরনগরে রাস্তাঘাট, স্কুল সবই হয়েছে। মতুয়ারা সমস্তরকম সরকারি সুযোগ সুবিধা পাচ্ছেন।
মমতাবালার তোপ, ঠাকুরবাড়িতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এসেছিলেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এসেছিলেন। মতুয়া সমাজ যদি প্রশ্ন করে, তাঁরা কী দিয়ে গিয়েছেন? দেশের সমাজ সংস্কার আন্দোলনে বিশেষ অবদান রয়েছে হরিচাঁদ গুরুচাঁদ ঠাকুরের। তাহলে তাঁরা দেশের ইতিহাসে স্থান পেলেন না কেন? তাঁদের জন্মদিনে কেন জাতীয় সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হল না? এর উত্তর কে দেবে?
এই অভিযোগ ও পাল্টা অভিযোগে যেন মতুয়া মেলা শুরুর আগেই খানিকটা তাল কাটল। অনেকেই বলতে শুরু করেছেন, আসলে মতুয়া মেলায় রাজনীতির রং লেগেছে। মতুয়াদের নিয়ে দড়ি টানাটানি চলছে। নিজেদের ভোটব্যাঙ্কের স্বার্থে সবদলই মতুয়াদের ব্যবহার করছে। এদিন যেন তারই একটা ছবি ধরা পড়ল ঠাকুরনগরে। সাংসদ শান্তনু ঠাকুর মঞ্চে দাঁড়িয়ে দাবি করলেন, মতুয়া মহামেলায় কেন্দ্রীয় জাহাজমন্ত্রী এলেন। এতেই বোঝা যায়, মতুয়াদের অগ্রগতি হয়েছে। আর এই অগ্রগতি সম্ভব হয়েছে দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর জন্য। সেই কথারই রেশ ধরে কেন্দ্রীয় জাহাজমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনেওয়াল বললেন, ঠাকুরনগর ঠাকুরবাড়িতে আসতে পেরে তিনি যার পরনাই খুশি। মতুয়া মহামেলা আগামী দিনে গোটা বিশ্বের অন্যতম আকর্ষণীয় মেলায় পরিণত হবে। এবং তা সম্ভব হবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর হাত ধরেই। কারণ, মতুয়াদের জন্য একমাত্র নরেন্দ্র মোদিই ভাবছেন। পাল্টা তোপ দেগে মমতাবালা ঠাকুরের বক্তব্য, মতুয়া মহামেলায় এদিন যাঁরা রাজনীতির রং লাগালেন, সিএএ ইস্যুকে হাতিয়ার করে মিথ্যে আশ্বাস দিয়ে গেলেন, মতুয়া সমাজ তাঁদের ক্ষমা করবে না। সামনেই পঞ্চায়েত নির্বাচন। ভোট বাক্সে তাঁরা এর জবাব দেবেন।
এদিকে, শনিবার থেকেই ঠাকুরনগর ঠাকুরবাড়িতে কাতারে কাতারে ভিড় জমাতে শুরু করেছেন মতুয়া ভক্তরা। শান্তনু ঠাকুর জানিয়েছেন, এবারের মেলায় ৪০ লক্ষের বেশি মানুষের সমাগম হবে বলে আশা তাঁদের। গোটা দেশ থেকে ভক্তরা যাতে সুষ্ঠুভাবে মেলায় পৌঁছতে পারেন, তার ব্যবস্থা করার জন্য তিনি নরেন্দ্র মোদী সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। বলেছেন, এবারের মেলায় লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা আসতে পারেন। আন্দামান থেকে ১২০০ জন যাত্রী বহন ক্ষমতাযুক্ত একটি জাহাজ আসছে। তাতে করে মতুয়া ভক্তরা আসছেন। এছাড়াও মতুয়া মেলা উপলক্ষে ৮টি এক্সপ্রেস ট্রেনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। চলছে ৩০টি বাড়তি লোকাল ট্রেন।
শনিবার দুপুরে কেন্দ্রীয় জাহাজ মন্ত্রী ঠাকুরবাড়িতে আসেন। হরিচাঁদ গুরুচাঁদ ঠাকুরের মন্দিরে মালা দিয়ে প্রণাম করেন তিনি। এরপর যান কামনা সাগরে। ওই পুকুরের জল মাথায় ছিটান। পরে ভক্তদের সামনে ভাষণ দিতে গিয়ে বলেন, এই পবিত্র ভূমিতে আসার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘের সঙ্ঘাতিপতি শান্তনু ঠাকুরের কাছে কৃতজ্ঞ। তিনি সততার সঙ্গে কাজ করছেন। আগামী দিনে দেশের সবচেয়ে বড় মেলায় পরিণত হবে এই মেলা।
মতুয়া ধর্মের গুরু হরিচাঁদ ঠাকুরের ২১২ তম জন্মতিথি উপলক্ষে আজ রবিবার থেকে শুরু হচ্ছে বারুণী মহামেলা। এই মেলা উপলক্ষে সব পথ যেন গিয়ে মিশেছে ঠাকুরনগরে। ডঙ্কা, কাঁসর, নিশান নিয়ে সংকীর্তন করতে করতে ঠাকুরবাড়ির দিকে এগিয়ে চলেছেন ভক্তরা। ঠাকুরনগর স্টেশনে ভিড়ের চোটে পা ফেলার জায়গা নেই। সাতদিন ধরে চলবে মেলা। হরিচাঁদ গুরুচাঁদের মন্দিরে পুজোর পাশাপাশি মতুয়াদের বড় মা অর্থাৎ বীণাপানি দেবীর মন্দিরেও বিশেষ প্রার্থনা চলছে। ভক্তদের উন্মাদনা চোখে পড়ার মতো। মেলা উপলক্ষে আলোর মালায় সাজিয়ে তোলা হয়েছে ঠাকুরবাড়ি। রীতি অনুযায়ী প্রথমে ঠাকুরবাড়ির সদস্যরা কামনা সাগরে ডুব দেবেন। তারপর সুযোগ পাবেন ভক্তরা।