দেশের সময়: দীর্ঘদিন ধরে জীবন জীবিকার স্বার্থে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিলেন তাঁরা। রাজ্যের প্রতিটি জেলায় পোশাক তৈরির শিল্পের সঙ্গে যুক্ত টেলারদের নিয়ে গড়ে তুলেছিলেন সংগঠন। অবশেষে তার সরকারি স্বীকৃতি মিলল। সরকারের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যদের পাশাপাশি স্কুল পোশাক তৈরির বরাত পাবেন টেলারিং শিল্পের সঙ্গে যুক্তরাও। শুধু তাই নয়, সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে উন্নতমানের পোশাক তৈরির জন্য বনগাঁর তপন চক্রবর্তীকে মাস্টার টেলারের স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে রাজ্য সরকারের তরফে।
রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় যেসব দর্জি রয়েছেন, তাঁদের পাশাপাশি স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারাও যাতে স্কুল ইউনিফর্ম তৈরির কাজ ভালোভাবে রপ্ত করতে পারেন, সেজন্য তপনের মাধ্যমে জেলায় জেলায় প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজও শুরু হয়েছে।
আর শুক্রবার বনগাঁয় উদ্বোধন হল পোশাক তৈরির জন্য কাটিং ইউনিটের। উদ্বোধন করেন রাজ্যের ক্ষুদ্র শিল্পমন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিন্হা। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বনগাঁ পুরসভার চেয়ারম্যান গোপাল শেঠ সহ বিশিষ্টরা। অনুষ্ঠানে উত্তর ২৪ পরগনা, নদীয়া, মুর্শিদাবাদ, আলিপুরদুয়ার সহ বিভিন্ন জেলার প্রতিনিধিরা হাজির ছিলেন।
আগামী দিনে সবাইকে নিয়েই এগিয়ে চলাই তাঁদের লক্ষ্য বলে জানিয়েছেন বনগাঁ আরএমজি ক্লাস্টার অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল কো অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের সম্পাদক তপন চক্রবর্তী। তিনি বলেন, দাবি আদায়ে অনেক দিন ধরে আন্দোলন করতে হয়েছে। যাঁরা পাশে ছিলেন, তাঁদের সবাইকে ধন্যবাদ। টেলারিং শিল্পের সঙ্গে যুক্তদের রুজিরুটির কথা মাথায় রেখে রাজ্য সরকারও যেভাবে আমাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে, আমরা কৃতজ্ঞ।
অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিনহা বলেন, এ রাজ্যে গত একবছরে এক কোটি ৩৪ লক্ষ মিটার প্যান্টের কাপড় তৈরি হয়েছে। এবার তৈরি হবে জামার কাপড়। ফলে স্কুল পড়ুয়াদের পোশাক তৈরির জন্য আর অন্য রাজ্যের উপর নির্ভর করতে হবে না। কচুরিপানা কিংবা কলাগাছ থেকে তন্তু বের করে সুতো তৈরি হচ্ছে এ রাজ্যে।
বনগাঁ পুরসভার চেয়ারম্যান গোপাল শেঠ কচুরিপানা থেকে বিভিন্ন সামগ্রী তৈরির কাজে যুক্ত মহিলাদের ট্রেনিংয়ের জন্য বনগাঁয় একটি কর্মতীর্থ তৈরির আবেদন জানান মন্ত্রীর কাছে। মন্ত্রী সেই এ ব্যাপারে আশ্বাস দিয়েছেন।
কিন্তু কেন এ ধরনের একটি সংগঠন গড়ার দরকার হল?
কয়েক বছর আগে রাজ্য সরকারের তরফে ঘোষণা করা হয়, এবার থেকে স্কুল পোশাক তৈরি করবেন স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যরা। এই ঘোষণার জেরেই বিপাকে পড়েন রাজ্যের হাজার হাজার দর্জি। স্কুল ইউনিফর্ম তৈরির কাজ তাঁদের হাতছাড়া হলে কীভাবে তাঁদের পেট চলবে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়ে যান তাঁরা। ঠিক সেসময়ই রাজ্যের বিভিন্ন জেলার দর্জিদের নিয়ে সংগঠন গড়ে তুলে দাবি আদায়ে সরব হন তপন চক্রবর্তী। তখন করোনা মহামারী চলছে। সেই অবস্থাতেই হোয়াটসঅ্যাপে গ্রুপ খুলে প্রত্যেকের সঙ্গে যোগাযোগ করে কলকাতায় ময়দানে মিলিত হন তাঁরা। বিভিন্ন জেলা থেকে প্রতিনিধিরা আসেন। তারপর তাঁরা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দ্বারস্থ হন। বিষয়টি ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প দফতরকে দেখার নির্দেশ দেন মমতা। সেইমতো ওই দফতরের মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিনহা জানিয়ে দেন, সবাইকে এক ছাতার তলায় আসতে হবে। সেইমতো জেলায় জেলায় শুরু হয় রেডিমেড গার্মেন্টস তৈরির সঙ্গে যুক্তদের নিয়ে ক্লাস্টার তৈরির কাজ। পাশাপাশি ওয়েস্ট বেঙ্গল টেলারিং অ্যাসোসিয়েশনও গড়ে তোলা হয়। যার সভাপতি করা হয় তপন চক্রবর্তীকে।
ইতিমধ্যেই রাজ্যে তিনশোটির মতো আরএমজি তৈরি হয়েছে। তারমধ্যে প্রায় ১৮০টির মতো আরএমজি স্কুল ড্রেস তৈরির কাটিংয়ের বরাত পেয়েছে বলে জানিয়েছেন তপন। তিনি বলেছেন, মাস্টার টেলার হিসেবে রাজ্য সরকারের তরফে তাঁকে শংসাপত্র দেওয়া হয়েছে।
কখনও ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে, কখনও আবার হাতেকলমে স্কুল পোশাক তৈরির প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন তিনি। তাঁর সঙ্গে অমিত নন্দী, প্রশান্ত দত্তদের মতো অনেকে ওই প্রশিক্ষণে সাহায্য করছেন। ইতিমধ্যেই একাধিক জেলার প্রশিক্ষণ শেষ হয়েছে। যে জেলাগুলি বাকি আছে, সেগুলিতেও ধাপে ধাপে ওই প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করবে রাজ্য সরকার।