সঙ্গীতা চৌধুরী : কলকাতা :প্রয়াত বর্ষীয়ান অভিনেতা তথা নাট্যকার মনোজ মিত্র। বয়স হয়েছিল ৮৫। মঙ্গলবার অর্থাৎ আজ সকাল ৮.৫০-এ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। ক্যালকাটা হার্ট ক্লিনিকে ভর্তি ছিলেন কিছুদিন ধরে, অবস্থা সঙ্কটজনক ছিল।
কিছুদিন আগে, সেপ্টেম্বরে গুরুতর অসুস্থ হয়েছিলেন তিনি।বুকে ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। অবস্থা অত্যন্ত সঙ্কটজনক বলে জানিয়েছিলেন চিকিৎসকরা।
দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন বর্ষীয়ান এই নাট্য ব্যক্তিত্ব। শেষ কিছুদিন শরীর অত্যন্ত খারাপ ছিল তাঁর। রবিবার বিকেলে অবস্থার অবনতি হয়। ভর্তি করা হয় কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালে।
বাংলা থিয়েটার ও চলচ্চিত্র জগতের কিংবদন্তি এই শিল্পীর হৃদযন্ত্রের সমস্যা ছিল বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে। এছাড়াও অনিয়ন্ত্রিত রক্তচাপ, ক্রিয়েটিনিন এবং সোডিয়াম-পটাশিয়ামের সমস্যাও ছিল তাঁর।
শুধু সিনেমা জগতে তাঁর খ্যাতি ছিল এমন নয়। মনোজ মিত্র দাপটের সঙ্গে কাজ করেছেন নাট্যমঞ্চে। তাঁর অভিনয় দেখার জন্য একসময় মুখিয়ে থাকত নাট্যপ্রেমীরা। যদিও বিগত কয়েক বছর ধরে শারীরিক অসুস্থতার কারণে বিনোদন জগত থেকে খানিকটা দূরেই ছিলেন।
অভিনয় জীবনে তপন সিনহা, সত্যজিৎ রায়, বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত, বাসু চ্যাটার্জি, তরুণ মজুমদার, শক্তি সামন্ত, গৌতম ঘোষের মতো পরিচালকের সঙ্গে কাজ করেছেন। শ্রেষ্ঠ নাট্যকারের জন্য পেয়েছেন অগুনতি পুরস্কার। তাঁর অভিনীত ‘বাঞ্ছারামের বাগান’,’আদর্শ হিন্দু হোটেল’ আজও মুগ্ধ করে সিনেপ্রেমীদের।
তাঁর মৃত্যুর খবরে শোকস্তব্ধ গোটা চলচ্চিত্র জগত্। সমাজমাধ্যমের পাতায় অভিনেতা অভিনেত্রীরা শ্রদ্ধা জানিয়েছেন প্রয়াত অভিনেতার উদ্দেশ্যে।
উল্লেখ্য, ১৯৩৮ সালের ২২ ডিসেম্বর অবিভক্ত বাংলাদেশের খুলনা জেলার সাতক্ষীরা মহকুমার ধুলিহর গ্রামে জন্ম হয় তাঁর। অভিনেতার বাবা অশোককুমার মিত্র এবং মা ছিলেন রাধারাণী মিত্র। প্রয়াত অভিনেতার বাবা গ্রামের প্রথম বি.এ পাশ ছিলেন। স্বাধীনতার পর কলতায় চলে আসেন তাঁরা। কলকাতার স্কটিশচার্চ কলেজের ছাত্র ছিলেন মনোজ। একদিকে অধ্যাপক এবং অন্য দিকে থিয়েটার দুদিকেই সমান আগ্রহ ছিল তাঁর। তাই অভিনেতা চেয়েছিলেন কলকাতার কাছের এমন কোনও কলেজে যোগ দিতে যেখানে চাকরি করতে করতে তাঁর থিয়েটার চালিয়ে যাওয়া সম্ভব। যদিও তাঁর থিয়েটার করাতে একেবারেই মত ছিল না অভিনেতার বাবার।
যদিও পরবর্তীকালে দুই দিকই সমান তালে সামলেছেন তিনি। মনোজের তৈরি নাট্যদলের নাম ছিল ‘ঋতায়ন’। যেখানে তিনি নাট্যকার এবং নির্দেশক দুই ছিলেন। একগুচ্ছ নাটক করেছিলেন তিনি। সেই তালিকায় রয়েছে ‘অবসন্ন প্রজাপতি’, ‘নীলা’, ‘মৃত্যুর চোখে জল’, ‘সিংহদ্বার’, ‘ফেরা’-সহ আরও অনেক নাটক। এছাড়াও বহু বহু বাংলা ছবিতে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছিল। খলনায়ক হিসাবেও তাঁর জুড়ি মেলা ভার ছিল। তাঁর অভিনীত বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য ছবি হল ‘বাঞ্ছারামের বাগান’, ‘শত্রু’। বহু দিন রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে নাট্য বিভাগে অধ্যাপক হিসাবে পড়িয়েছেন। ২০০৩ সালে তিনি অবসর গ্রহণ করেন।