দেশের সময়, কলকাতা: ধর্ষণের বিরুদ্ধে শীঘ্রই বিধানসভায় বিশেষ অধিবেশন ডেকে আইনে পাশ করানো হবে বলে জানিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
বুধবার মেয়ো রোডের সভা থেকে মমতা বলেন, “রাজ্যের হাতে আইন থাকলে আমরা অনেক আগেই ধর্ষণের বিরুদ্ধে কঠোর আইন আনতাম। কিন্তু অনেক অপেক্ষা করেছি। আর নয়। আগামী ১০ দিনের মধ্যে বিধানসভায় বিশেষ অধিবেশনে ধর্ষণের বিরুদ্ধে ফাঁসির বিল আনব। রাজ্যপালের কাছে পাঠাব।”
রাজ্যপালকে ‘রাজাবাবু’ বলে কটাক্ষ করে মমতা বলেন, “আমি জানি রাজাবাবুর কাজ। উনি যদি বিল না পাশ করেন তাহলে মেয়েরা রাজভবনের সামনে গিয়ে বসে থাকবে।”
সম্প্রতি রাজ্যপালের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ এনেছিলেন রাজভবনেরই এক মহিলা কর্মী। সেই প্রসঙ্গও টেনে আনেন মুখ্যমন্ত্রী। মমতা বলেন, “আপনার বিরুদ্ধে তো রাজভবনেরই এক কর্মীর শ্লীলতাহানির অভিযোগ উঠেছে। লজ্জা করে না!”
ধর্ষণের বিরুদ্ধে কঠোর আইনের সপক্ষে সওয়াল করে এদিনের মঞ্চে অভিষেক বলেন, “দফা এক, দাবি এক, ধর্ষণ বিরোধী আইন আনা হোক। আগামীদিনে এই সরকার ধর্ষণ বিরোধী আইন আনুক।” অভিষেক এও বলেন, “রাতারাতি নোটবন্দি, লকডাউন করতে পারে, তাহলে ধর্ষণ বিরোধী আইন আনা হচ্ছে না কেন? আমরা চাই যারা এই নারকীয় বর্বর ঘটনার সঙ্গে যুক্ত, তাদের সমাজে থাকার অধিকার নেই।”
ওই প্রসঙ্গ টেনে মমতা বলেন, “অভিষেক ঠিকই বলেছে। বিজেপি কেন ফাঁসির জন্য কঠোর সাজা আনছে না। আসলে ওরা জানে, তাতে ওদের সব লোক জেলে ঢুকে যাবে।” মুখ্যমন্ত্রী এও বলেন, “যাঁরা ধর্ষম করবে তাঁদের একমাত্র শাস্তি ফাঁসি, এই একটা কাজ করলে সব ঠান্ডা হয়ে যাবে।”।
এরপরই ধর্ষণের বিরুদ্ধে ফাঁসির দাবিতে এদিনের মঞ্চ থেকে দলের একাধিক কর্মসূচি ঘোষণা করেন তৃণমূল নেত্রী। তিনি জানান, আগামী শুক্রবার রাজ্যের প্রতিটি কলেজের গেটে ধর্ষণের সর্বোচ্চ সাজা ফাঁসির দাবিতে টিএমসিপি বিক্ষোভ দেখাবে। পরের দিন অর্থাৎ শনিবার ব্লকে ব্লকে মিছিল হবে। ১ সেপ্টেম্বর মেয়েরা ধর্ষণের আইন বদলের দাবিতে প্রতিটি এলাকায় মিছিল করবেন।
বুধবার মেয়ো রোডে টিএমসিপির সমাবেশ থেকে আরজি কর ইস্যুতে কড়া বার্তা সামনে আনলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
মঙ্গলবার ছাত্র সমাজের নাম করে নবান্ন অভিযানের যে ডাক দেওয়া হয়েছিল, সেই প্রসঙ্গ টেনে সরাসরি বিজেপিকে আক্রমণ করে তৃণমূল নেত্রী বলেন, “আসল আন্দোলনে জল ঢেলে দিতে চক্রান্তের খেলায় নেমেছে বিজেপি। বিজেপি জেনে শুনে বনধ ডেকেছে, কারণ ওদের ডেডবডি চাই। আমরা শান্তি চাই, বিচার চাই, ওরা বিচার চাই না। ওরা চাই আন্দোলনে জল ঢেলে দিতে। তাই চক্রান্তের খেলায় নেমেছে।”
নিজের দাবির সপক্ষে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “কালকে কারা এসেছিল আন্দোলন করতে? ছাত্র সমাজ?” জবাবও দিয়েছেন মমতা নিজেই, বলেন, “যদি বাংলার মানুষ হয় তাহলে নবান্ন চেনে না? আমি তো দেখলাম, ওদের অনেকে রাজভবনকে নবান্ন ভেবে ওখানেও ঢিল মেরেছে!”
মঙ্গলবারের ঘটনায় পুলিশের প্রশংসা করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “পুলিশকে সেলাম জানায়। নিজের রক্ত দিয়েছে, কিন্তু বিজেপির চক্রান্তের কাছে কোনও ডেডবডি তুলে দেইনি।”
৮ অগস্ট গভীর রাতে আরজি করে ডাক্তারি ছাত্রীকে খুনের ঘটনায় ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পুলিশ অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছিল। সেই প্রসঙ্গ টেনে মমতা বলেন, “আমি তো রবিবার পর্যন্ত সময় চেয়েছিলাম, তার মধ্যে যদি পুলিশ কোনও কিনারা না করতে পারতো তাহলে তো বলেছিলাম, সিবিআইয়ের হাতে দিয়ে দেব। কিন্তু মঙ্গলবার সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হল। পুলিশ তদন্তের সময়ও পেল না।”
এরপরই মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্ন, “সিবিআই তদন্তভার নেওয়ার পর কতদিন অতিক্রান্ত হল? ১৫ দিন। এখনও কেন বিচার হল না?”
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, সাতদিনের মধ্যে ফাস্টট্র্যাক কোর্টের মাধ্যমে ফাঁসি দিতে চেয়েছিলাম। আজকে যারা কামদুনি বলেন, তাদেরও আমরা ফাঁসি চেয়েছিলাম। অনেক চোর ডাকাতকে ছেড়়ে দেওয়া হয়। আমার কাছে ফাইল আসে ১০-১২ বছর হয়ে গেছে। ওদের ছেড়ে দেওয়া হোক। কীসের নিয়ম? কেন ছাড়া হবে। প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখলাম। কিন্তু কোথায় কী? যাঁরা ধর্ষণ করবে তাঁদের একমাত্র শাস্তি ফাঁসি, এই একটা কাজ করলে সব ঠান্ডা হয়ে যাবে।