দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ করোনার কাঁটা সরিয়ে দু’বছর পর ২০২২-এ ফের অনুষ্ঠিত হল এই বাণিজ্য সম্মেলন।
বুধবার থেকে শুরু হওয়া সম্মেলন শেষ হল আজ বৃহস্পতিবার । আর এদিন সমাপ্তি ভাষণে এই সম্মেলন সফল বলে দাবি করে বিনিয়োগের প্রস্তাবের খতিয়ান তুলে ধরেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷
বৃহস্পতিবার বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনের (Bengal Global Business Summit, BGBS 2022) মঞ্চে দাঁড়িয়ে এদিন মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেছেন, এই দু’দিনে বাংলায় ৪০ লক্ষ কর্মসংস্থানের সুযোগ সুনিশ্চিত হয়েছে।
কারণ এই দু’দিনে ৩ লক্ষ কোটি টাকা লগ্নির প্রস্তাব এসেছে। প্রসঙ্গত, বুধবার সম্মেলন মঞ্চে দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, তাঁর সরকারের লক্ষ হল পাঁচ বছরে দেড় কোটি বঙ্গবাসীর কাজের সুযোগ তৈরি করা।
এদিন মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, এর আগের পাঁচটি বাণিজ্য সম্মেলনে মোট ১২ লক্ষ কোটি টাকা লগ্নির জন্য সমঝোতা হয়েছিল। এ বার ১৩৭ টি মউ সই হয়েছে। তাতে মোত ৩ লক্ষ ৪২ হাজার ৩৭৫ কোটি টাকার লগ্নি প্রস্তাব রয়েছে। অর্থাৎ মোট সাড়ে ১৫ লক্ষ কোটি টাকার লগ্নি প্রস্তাব রয়েছে বাংলার ঝুলিতে। তাঁর কথায়, আগের প্রস্তাবগুলির অনেক কিছু হয়েছে, কিছু কিছু প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে।রাজ্যে বিনিয়োগ করছে ফ্লিপকার্ট, ইনফোসিসের মতো সংস্থা।
বুধবার বাণিজ্য সম্মেলন শুরু হওয়ার পরই বিরোধীরা প্রশ্ন তুলেছিলেন, আগের পাঁচটি সম্মেলন থেকে আদৌ কি কিছু হয়েছে? বাম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেছিলেন, কী অশ্বডিম্ব প্রসব হয়েছে? আর বিজেপি নেতা অশোক লাহিড়ী বলেছিলেন, শুধু আবেগের বশে কেউ লগ্নি করে না।
তবে এই সব রাজনৈতিক চাপানউতোরের ঊর্ধ্বে মৌলিক প্রশ্নও তুলছেন তাঁরা। সুজনবাবু বলেছেন, মুখ্যমন্ত্রী এর আগেই বলেছেন, বাংলায় দারিদ্র কমেছে ৪০ শতাংশ আর কর্মসংস্থান চারশ শতাংশ হয়ে গিয়েছে। এর পরেও দেড় কোটি মানুষ কর্মহীন থাকেন কীভাবে?
তবে সে সব কটাক্ষ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী কোনও জবাব দেননি। তিনি তাঁর কথা এদিন বলেছেন। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, “যা বিনিয়োগ আসবে সবটাই কলকাতা বা আশপাশের এলাকা হজম করবে না। ছড়িয়ে যাবে জেলায় জেলায়। কারণ বাংলার অর্থনীতিতে জেলাগুলি অন্যতম স্তম্ভ”। যে কারণে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে বিপুল সাফল্যের কথা উল্লেখ করে জেলার বণিকসভাগুলিরও ভূয়সী প্রশংসা করেছেন মমতা।
বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলন এবার করার নেপথ্য কাহিনিও শোনান মমতা। তিনি বলেন, “আমি যখন কয়েক মাস আগে অমিত মিত্র, পার্থ চট্টোপাধ্যায়, মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদীকে এই শিল্প সম্মেলনের কথা বলেছিলাম, তখন তাঁরা বলেছিলেন, কী করে হবে? এখন তো মহামারী পর্ব চলছে। আমি বলেছিলাম, কনফিডেন্স রাখলেই হবে। আজকে সেটা হল। এবং খুব ভাল ভাবে হল। তাঁর কথায়, বিপর্যয় আসবে, যাবে কিন্তু জীবন, জীবিকা থেমে থাকবে না”।
মমতার কথায়, আগামী ১০ বছরে বাংলা এমন জায়গায় যাবে যে কেউ ধরতে পারবে না। কারণ বাংলা সমস্ত বিনিয়োগ ধরে ফেলবে।
এরই পাশাপাশি রাজ্যেকে আরও শিল্পবান্ধব করার উদ্দেশে বিশেষ ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি জানান, পশ্চিমবঙ্গে রপ্তানি হাব তৈরি হবে। উত্তর থেকে দক্ষিনে অনেকগুলি রপ্তানি কেন্দ্র তৈরি করতে হবে। যাতে দ্রুত বাংলার উৎপাদন বিদেশে পৌঁছে দেওয়া যায়। এছাড়াও অন্ডাল এবং বাগডোগরায় দুটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
বিজিবিএস শুরুর দিনেই বাম, কংগ্রেস, বিজেপি বলেছিল বাংলায় শিল্পায়নের পূর্ব শর্ত বিপন্ন। অর্থাৎ এই রাজ্যে আইনের শাসন নেই, হিংসা, অরাজকতা, অস্থির পরিবেশ বিরাজ করছে। এই পরিবেশে কেউ শিল্প করতে এগিয়ে আসবে না। এদিন দেশ-বিদেশের শিল্পপতিদের সামনে দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী বললেন, “বাংলায় স্থিতাবস্থা রয়েছে। বাংলায় শান্তি রয়েছে। এখানে শিল্প করার ক্ষেত্রে কোনও সমস্যা নেই।” তাঁর সংযোজন, “বাংলা খুব আকর্ষণীয়। বাংলা রসগোল্লা, সীতাভোগ, মিহিদানার মতো মিষ্টি।”
এদিন আগামী বছরের বাণিজ্য সম্মেলনেরও দিনক্ষণ ঘোষণা করে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। ২০২৩-এর ১-৩ ফেব্রুয়ারি হবে বাণিজ্য সম্মেলন।