দেশের সময় বর্ধমান : ‘রাজ্যপালের পদত্যাগ করা উচিত’ – নির্বাচনী সভা থেকে জোরালো দাবি করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যপালের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ তুলেছিলেন রাজভবনের এক কর্মী। সেই ঘটনাপ্রবাহের প্রসঙ্গ টেনে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের পদত্যাগ চাইলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশাপাশি, তিনি আর রাজভবনে যাবেন না বলেও জানিয়ে দিলেন।এমনকী রাজ্যপাল ডাকলেও না! শনিবার বর্ধমানের সপ্তগ্রামের নির্বাচনী সভা থেকে একথা নিজেই জানালেন মুখ্যমন্ত্রী।
সম্প্রতি রাজ্যপালের বিরুদ্ধে কু প্রস্তাব এবং যৌন নির্যাতনের অভিযোগ এনেছেন রাজভবনের এক মহিলা কর্মী। পুলিশে অভিযোগও দায়ের হয়েছে। ওই প্রসঙ্গেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “বাবারে আমাকে আর রাজভবনে ডাকলে যাচ্ছি না, রাজভবনের দরকার হলে রাস্তায় বসে কথা বলে আসব!” এরপরই বোসের নাম উল্লেখ না করে মমতা বলেন, “আপনার পাশে বসাও পাপ!”
প্রশ্ন তুলেছেন, “আপনাকে কে অধিকার দিয়েছে মেয়েদের অত্যাচার করার?”
মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, “মাননীয় রাজ্যপাল, আমার কী দোষ বলুন। আমি তো জানিই না কিছু। অথচ আপনি বলছেন, দিদিগিরি চলবে না। আপনার তো পদত্যাগ করা উচিত।”
সভায় উপস্থিত সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধিদের উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “কালকে নাকি প্রেসকে ডেকেছিল। এডিট করে ভিডিও দেখিয়েছে। পুরোটা দেখিয়েছে? আপনারা তো জানেন কোনখানটা এডিট হয়।”
মুখ্যমন্ত্রী এও বলেন, ” যেটা এডিট করেছে সেটাও আমার কাছে আছে। এখনও তো সব বের হয়নি। আর একটা ভিডিও পেলাম। যা কীর্তকলাপ! ভাবতেও লজ্জা লাগে!”
নিজের বিরুদ্ধে ওঠা যৌন নির্যাতনের অভিযোগ উড়িয়ে রাজভবনে সেদিনের ঘটনার ভিডিও ফুটেজ দেখানোর ব্যবস্থা করেছেন রাজ্যপাল বোস। তারপরই শুক্রবার তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যপালকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন, “সাহস থাকলে চেম্বারের ফুটেজ দেখান। বাইরের ফুটেজ দেখিয়ে কী হবে?”
হুগলির নির্বাচনী সভা থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন রাজ্যপালের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ‘আমার কী দোষ আপনি বলুন, আমি তো জানিই না পুরো ঘটনাটা। উনি বলছেন নাকি দিদিগিরি চলবে না। আমি বলছি, দিদিগিরি চলবে না, দাদাগিরি চলবে না। কিন্তু প্রথমে আপনাকে পদত্যাগ করতে হবে। আপনি কে মহিলাদের অত্যাচার করার জন্য?’
রাজভবনের সিসিটিভি ফুটেজ নিয়েও ইতিমধ্যে নানা জলঘোলা হয়েছে। প্রাথিমিক অনুসন্ধানের জন্য রাজভবনের সিসিটিভি ফুটেজ চেয়ে পাঠিয়েছিল কলকাতা পুলিশের বিশেষ টিম। পুলিশকে সিসিটিভি ফুটেজ দেওয়া হয়নি রাজ্যপালের তরফে। এরপরেই গত বৃহস্পতিবার রাজভবনের তরফে একটি সিসিটিভি ফুটেজ সাধারণ দর্শকদের জন্য। তবে, সেই ফুটেজে রাজভবনের ভেতরের কোনও চিত্র দেখানো হয়নি বলে অভিযোগ ওঠে।
সেই সম্পূর্ণ ভিডিয়ো ইতিমধ্যে মুখ্যমন্ত্রীর হাতে এসেছে একটি সংবাদমাধ্যম মারফত বলেও জানান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এখনও অনেক ক্লিপিংস প্রকাশ্যে আসেনি বলেন দাবি করেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘যে ভিডিয়ো এডিট করা হয়েছে, সেটাও আমার কাছে আছে। এখনও তো সব বের হয়নি। আরও একটা ভিডিয়ো আমি পেলাম। আরও কীর্তি কেলেঙ্কারি হয়েছে।’
উল্লেখ্য, গতকাল পূর্ত দফতর থেকে রাজভবনের সিসিটিভি ফুটেজ জোগাড় করেছে কলকাতা পুলিশের ওই বিশেষ টিম। সিসিটিভি ফুটেজ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
এবং পুলিশকে দেখানো হবে না বলে আগেই জানিয়ে দিয়েছিল রাজভবন। এরপর পূর্ত দফতর যেহেতু রাজভবনের দেখভালের দায়িত্বে রয়েছে, সেই কারণে তাঁদের কাছ থেকে ফুটেজ আনায় পুলিশ। সেখানে ওই মহিলাকে কাঁদতে কাঁদতে রাজ্যপালের ঘর থেকে বেরিয়ে আসতে দেখা গিয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। অভিযোগকারিনীর পেছনে আরও চারজন রাজভবনের কর্মীকে ছুটতে দেখ যায়। তাঁদের স্ক্রিনশট পাঠিয়ে পরিচয় জানানর জন্য রাজভবনে ইতিমধ্যে পাঠিয়েছে পুলিশ।
অন্যদিকেসাংবিধানিক সুরক্ষার অছিলায় রাজ্যপালের নারী নির্যাতন বাংলা বরদাস্ত করবে না বলেও জানিয়েছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এবার মুখ্যমন্ত্রীও এ ব্যাপারে মুখ খুললেন। বার্তা দিলেন, এমন রাজ্যপালের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা উচিত!