Mamata Banerjee – PM Modiআপনি কেন আগে আপনার স্ত্রীকে সিঁদুর দিচ্ছেন না? সাহস থাকলে টিভি চ্যানেলে মুখোমুখি বসুন , মোদীকে চরম কটাক্ষ মমতার

0
9

অপারেশন সিঁদুর নিয়ে এই প্রথম ঘরোয়া রাজনীতিতে চরম আক্রমণের মুখে পড়লেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী । বৃহস্পতিবার উত্তরবঙ্গের আলিপুরদুয়ারে জনসভা করেছেন প্রধানমন্ত্রী। সেই সভা থেকে যেমন পাক মদতপুষ্ট সন্ত্রাস ও অপারেশন সিঁদুরের প্রসঙ্গ তোলেন মোদী, তেমনই তাঁকে মঞ্চে দেখে আরও এক কদম এগিয়ে যান কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। তিনি আবার বলেন, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যেমন অপারেশন সিঁদুর হয়েছে, তেমনই বাংলাতেও অপারেশন হবে।

মোদী-সুকান্তর এই আক্রমণের জবাব দিতে গিয়ে এদিন সব আগল ভেঙে দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “অপারেশন সিঁদুর নিয়ে আমার কিছু বলার নেই। প্রত্যেক মহিলার সিঁদুরের প্রতি সম্মান রয়েছে। তাঁরা স্বামীদের থেকে সিঁদুর নেন। কিন্তু আপনি তো সবার স্বামী নন। আপনি কেন আগে আপনার স্ত্রীকে সিঁদুর দেন না?”

মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য পরক্ষণেই বলেন, “আমি দুঃখিত। এটা আমার বলার কথা ছিল না। কিন্তু আপনি আমাকে বাধ্য করেছেন মুখ খুলতে”।

এদিন আলিপুরদুয়ারের সভায় দাঁড়িয়ে বাংলার সরকারকে ‘নির্মম’ বলেন প্রধানমন্ত্রী । সেই সঙ্গে মুর্শিদাবাদ ও মালদায় মহিলাদের উপর অত্যাচারের ঘটনা নিয়ে তীব্র সমালোচনা করেন। তার জবাব দিতে গিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন,“মালদা, মুর্শিদাবাদে হামলা করেছে বিজেপি। আমাদের কাছে প্রমাণ রয়েছে”।

মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, এক সময় বলতেন চাওয়ালা ছিলেন। চা বেচতেন। এখন বলছেন, সিঁদুর বেচবেন। সিঁদুর এভাবে বেচা যায় না। বাংলার মা বোনেরা সম্মানের সঙ্গে বাঁচেন। তা কি উত্তরপ্রদেশে হয়? অসমে, গুজরাতে, মধ্যপ্রদেশে হয়? উত্তরপ্রদেশের রাস্তায় তো গাড়িতে বসে অশ্লীল ছবি দেখা হয়”।

আলিপুরদুয়ারের সভায় দাঁড়িয়ে এদিন প্রধানমন্ত্রী একবারও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম মুখে আনেননি। কিন্তু সেই সভায় দাঁড়িয়ে সুকান্ত মজুমদার যা বলেছেন, সেটাকেই পাল্টা আঘাতের অস্ত্র করে নিয়েছেন তৃণমূলনেত্রী।

মমতা বলেন, “মোদীজির মুখে এসব মানায় না। উনি রাজ্যে এসে বলছেন, বাংলায় অপারেশন সিঁদুর করবেন। তার মানে সন্ত্রাসবাদীদের সঙ্গে বাংলার মাটি বাংলার মহিলাদের মর্যাদা মিশিয়ে দিয়েছেন। এটা তিনি করতে পারেন? বাংলায় এসে বাংলার মানুষকে, বাংলার মাটিকে অপমান করছেন। বাংলার মহিলাদের অপমান করছেন।”

এদিনের বক্তৃতায় বাংলায় ৬ সঙ্কটের কথা ব্যাখ্যা করেন প্রধানমন্ত্রী। তার মধ্যে অন্যতম হল, রাজ্যে বল্গাহীন দুর্নীতি চলছে। তার জবাব দিতে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “বড় বড় কথা বলছেন, বিজেপির রাজ্যে কী অবস্থা? গুজরাতে বসে, মধ্যপ্রদেশে পাকিস্তানকে মদত করছে, সেই ঘটনা বেরিয়েছে। তা নিয়ে কী বলবেন? বাংলায় হলে কী করতেন?”

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, অপারেশন সিঁদুর নিয়ে তো সমস্ত বিরোধীরা মিলে গোটা দুনিয়ায় পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রচার করছেন। আর এখানে আপনি নিজের পাবলিসিটি করে বেড়াচ্ছেন। আগে বলুন পহেলগামের ওই চার জঙ্গি কোথায় গেল? তাদের ধরতে পারলেন?

এখানেই না থেমে, মমতার কড়া আক্রমণ, “আমেরিকা বললে এক মিনিটে চুপ করে যান, আর বড় বড় কথা বলেন? আমাদের এখানে নারী সবচেয়ে বেশি সুরক্ষিত। আপনি কী করেছেন ? যারা মহিলাদের সঙ্গে অসম্মানজনক আচরণ করেছে আপনি তাদেরকে বিজয়ীর মতো ঘুরিয়েছেন। আমাদের এখানে যেমন নারীদের নিরাপত্তা আছে, সারা বিশ্বে কোথাও তেমন নেই।”

মোদী আজ অভিযোগ করেছিলেন, বাঙালিরা বাংলার বাইরে গিয়ে কোথাও চিকিৎসা পান না। কারণ কেন্দ্রের আয়ুষ্মান কার্ডের সুবিধা এ রাজ্যে নিতে দেওয়া হয় না। এ প্রসঙ্গে মমতার কটাক্ষ, “আপনি আয়ুষ্মান হোন। ঈশ্বর আপনাকে ১৭৫ বছর বাঁচিয়ে রাখুন, আমরা খুশি হব। কিন্তু আমরা আয়ুষ্মান ভারত করছি না। কারণ এখানে সাধারণ মানুষকে কোনও টাকা দিতে হয় না। আয়ুষ্মান ভারত করতে গেলে তো রাজ্যকে ৪০ শতাংশ টাকা দিতে হতো।”

মুখ্যমন্ত্রী আজ দৃশ্যতই কড়া মেজাজে ছিলেন। রীতিমতো চালিয়ে খেলেন মোদীর বিরুদ্ধে। তিনি বলতে থাকেন, “কেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বোসের প্ল্যানিং কমিশন সরিয়ে দিলেন? কেন গান্ধীজির নাম সরিয়ে দিলেন?

আম্বেদকরের নাম, আজাদের নাম ভুলে গিয়েছেন। নীতি আয়োগের বৈঠকের কথা বলছেন? আমি যখন শেষবার নীতি আয়োগের বৈঠকে গিয়েছিলাম, সেদিন কেন আমার বক্তব্য মাঝপথে থামিয়ে দেওয়া হয়েছিল?

সবার জন্য ১০ মিনিট করে সময় বরাদ্দ ছিল। কিন্তু আমি বলার সময় মাত্র চার মিনিটের মধ্যে মাইক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। এটা রাজ্য সরকারকে অপমান নয়? এটা একজন মহিলা মুখ্যমন্ত্রীকে অপমান নয়?

তাহলে কেন যাব আমি সেই মিটিংয়ে? শুধু আমি নয় কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রীও তো যাননি, কই সেটা তো বললেন না। আপনি প্রধানমন্ত্রী হয়ে বিদেশে ঘুরে বেড়ান আর অ্যাক্টিং প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আর এক জনকে বানিয়ে রেখেছেন, যে কোনও কিছু মানে না। কোনও যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো আপনি মানেন না।”

শেষে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “উনি সিঁদুর বেঁচে বেড়াচ্ছেন। মহিলাদের সম্মান করতে শিখুন। সিঁদুর খেলা আমাদের রাজ্যে হয় দুর্গাপুজোর দশমীর সময়। যতদিন আমাদের দল থাকবে ততদিন আমরা দেশের জন্য কাজ করে যাব। দেশ কারও একার নয়। দেশ আমাদের সবার।”

দুর্নীতির প্রশ্নে বৃহস্পতিবার আলিপুরদুয়ারের সভা থেকে বাংলার তৃণমূল সরকারকে তীব্র আক্রমণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী । যার জবাবে এদিন বিকেলে নবান্নের সাংবাদিক বৈঠক থেকে মোদীকে চ্যালেঞ্জ করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও  বলেন, “সাহস থাকলে টিভি চ্যানেলে মুখোমুখি বসুন, ইট ইজ মাই ওপেন চ্যালেঞ্জ টু ইউ।”

এদিনের বক্তৃতায় বাংলায় ৬ সঙ্কটের কথা ব্যাখ্যা করেন প্রধানমন্ত্রী। মোদী বলেন, “তৃণমূল বাংলার জন্য বিরাট ধোঁকা, কেন্দ্রের ১৬টি বড় প্রকল্প আটকে রেখেছে। ওরা নিজেরাই চায় না যে বাংলার উন্নয়ন হোক। সেজন্য রাজ্যে বল্গাহীন দুর্নীতি চলছে।” যার জবাবে মমতা বলেন, “সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি, ভ্রষ্টাচার তো বিজেপি করেছে।”

উত্তরবঙ্গের সভা থেকে মোদী অভিযোগ করেছেন, তৃণমূলের জমানায় বাংলায় বেকারত্ব বেড়েছে। এর জবাবে মমতা বলেন, মোদীর রাজত্বে যেখানে দেশে ৪০ শতাংশ বেকারত্ব বেড়েছে সেখানে আমাদের রাজ্যে ৪০ শতাংশ কমেছে।

এর পরেই চ্যালঞ্জের সুরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন,”যদি আপনার এত ক্ষমতা থাকে, সাহস থাকে তাহলে টিভি ডিবেটে বসুন। একদিকে আপনি থাকবেন একদিকে আমি থাকব। আপনি টেলিপ্রম্পটার ব্যবহার করতে চাইলেও ব্যবহার করতে পারেন। কিন্তু যে প্রশ্ন আসবে সেই প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে।”

পাশাপাশি মমতা আরও প্রশ্ন ছুড়ে দেন মোদীকে। বলেন, “এত বছর ধরে রাজত্ব করছেন, দেশকে কী দিয়েছেন?” খানিক থেমে জবাবও দিয়েছেন মমতা নিজেই, “মোদীজির পলিসি হল ডিভাইড এন্ড রুল।

আলিপুরদুয়ারের মানুষের ওপর যদি বিশ্বাস থাকত, তাহলে অসম থেকে লোক নিয়ে আসতে হত না। উত্তরবঙ্গের মানুষ বুঝিয়ে দিয়েছে, ওনার প্রতি মানুষের কোনও বিশ্বাস নেই।”

কটাক্ষের সুরে মুখ্যমন্ত্রী এও বলেছেন, “একসময় নিজেকে চা ওয়ালা বলতেন, দ্বিতীয়বার বললেন পাহারাদার। আর এখন বলছেন সিঁদুর বেচবেন। সিঁদুর ওইভাবে বেচা যায় না। লজ্জা করে না বলতে?”

বাংলার নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে এদিন তৃণমূলকে বিঁধে মোদী বলেন, “এরা কত বড় নির্লজ্জ যে, দুর্নীতি করার পরেও দোষ স্বীকার করার পরিবর্তে কোর্টকেই দোষারোপ করে।” যার জবাবে মমতা বলেছেন, “আমরা কোর্টকে ইমপার্শিয়াল মনে করি, কিন্তু আপনি তো কোর্টকেও ইনস্ট্রাকশন দেন। এটা আপনার ভাষণ থেকেই প্রমাণিত।”

এদিনের বক্তৃতায় বাংলায় ৬ সঙ্কটের কথা ব্যাখ্যা করেন প্রধানমন্ত্রী। তার মধ্যে অন্যতম হল, রাজ্যে বল্গাহীন দুর্নীতি চলছে। তার জবাব দিতে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “বড় বড় কথা বলছেন, বিজেপির রাজ্যে কী অবস্থা? গুজরাতে বসে, মধ্যপ্রদেশে পাকিস্তানকে মদত করছে, সেই ঘটনা বেরিয়েছে। তা নিয়ে কী বলবেন? বাংলায় হলে কী করতেন?”

Previous articleNarendra Modi in Alipurduar: বাংলার উন্নয়নেই বিকশিত ভারতের জয় ,  প্রধানমন্ত্রী , রাজ্যের ৫ সংকট ব্যাখ্যা করে সুশাসন ও সমৃদ্ধির গ্যারান্টি মোদীর
Next articleWeather Update সঙ্গে ছাতা রাখুন , আরও বাড়বে দুর্যোগ ,  ঝড়-জলে ছারখার হবে কোন কোন জেলা? বৃষ্টি নিয়ে আলিপুরের মেগা আপডেট জানুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here