দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ মেঘ ভাঙা বৃষ্টিতে বিধ্বস্ত জম্মু ও কাশ্মীরের অমরনাথ তীর্থক্ষেত্র। শুক্রবার বিকেল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ অমরনাথ গুহা এবং কালীমাতার মধ্যবর্তী অঞ্চলে খুব কম সময়ের মধ্যে বাঁধভাঙা বৃষ্টি হয়। এই ক্লাউডবার্স্ট-এর ফলে যে প্লাবন তৈরি হয়, তাতে ভেসে গিয়েছে ২৫টি পুণ্যার্থীর শিবির। এখনও পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ১৬।
অমরনাথে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে আটকে-পড়া পর্যটকদের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি জেলার ১১ থেকে ১২ জন পর্যটক আছেন। রাজ্যের তরফে জানানো হয়েছে, ”জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়েছে। তাঁরা সকলেই নিরাপদে আছেন।”
এখনও বাংলারও বহু পর্যটক আটকে রয়েছেন অমরনাথের বিপর্যস্ত এলাকায়। তাঁদের অনেককে আবার খুঁজেও পাওয়া যাচ্ছে না বলে খবর। এ হেন উদ্বেগজনক পরিস্থিতিতে কন্ট্রোল রুম খুলল নবান্ন।
এদিন টুইট করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, সর্বোত ভাবে রাজ্য সরকার পাশে রয়েছে। নবান্নে ২৪ ঘণ্টার জন্য কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। সেখানকার নম্বর ০৩৩-২২১৪৩৫২৬। যে পরিবারের লোকজন অমরনাথ গিয়েছেন, যাঁদের সঙ্গে পরিবারের লোকজন যোগাযোগ করতে পারছেন না, তাঁদের কী অবস্থা, ইত্যাদি জানানো হবে কন্ট্রোল রুম থেকে।
Shocked and stunned by the Amarnath disaster. Sincere condolences to kins of the victims, solidarity to the trapped and stranded. Opened control room in Nabanna (033- 22143526), activated our Delhi RC office, connected J&K government for rescue of pilgrims from Bengal. (1/2)
— Mamata Banerjee (@MamataOfficial) July 9, 2022
মেঘ ভাঙা বৃষ্টিতে আটকে পড়া প্রায় ১৫,০০০ তীর্থযাত্রীকে অমরনাথের গুহা মন্দির এলাকা থেকে নিরাপদে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। মেঘ ফেটে সৃষ্ট হড়পা বানের কারণে অন্তত ১৬ জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে এখনও অবধি। ৪০ জনেরও বেশি মানুষ এখনও নিখোঁজ। শুক্রবার সন্ধ্যায় অমরনাথ গুহা এলাকার কাছে আটকে পড়া বেশিরভাগ তীর্থযাত্রীদেরই পঞ্চতরণীতে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। এটি অমরনাথ যাত্রার বেস ক্যাম্প হিসাবে কাজ করে। শনিবার সকালে ২১ জন আহত তীর্থযাত্রীকে চিকিৎসার জন্য বিমানে করে বালতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
প্রশাসন সূত্রের খবর, এখনও পর্যন্ত ষোল জনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করা গিয়েছে। প্রায় ৪০ জন এখনও নিখোঁজ বলে মনে করা হচ্ছে। কোনও ভূমিধ্বসের খবর পাওয়া যায়নি, তবে অবিরাম বৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে, যদিও এর ফলে উদ্ধারকাজে ব্যাঘাত ঘটছে না। NDRF-এর চারটি দল ১০০ জনেরও বেশি উদ্ধারকারী নিয়ে উদ্ধারকার্যে নেমেছে। ভারতীয় সেনাবাহিনী, এসডিআরএফ, সিআরপিএফ এবং অন্যান্যরা উদ্ধারকাজ চালিয়ে যাচ্ছে,” সংবাদ সংস্থা এএনআইকে বলেন এনডিআরএফের মহাপরিচালক অতুল কারওয়াল।
চিনার কর্পস কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল এডিএস আউজলা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে হড়পা বান কবলিত এলাকায় পৌঁছেছেন। কাশ্মীর পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল বিজয় কুমার এবং কাশ্মীরের বিভাগীয় কমিশনারও উদ্ধার অভিযানের তদারকি করছেন।
শনিবার দুপুর পর্যন্ত জানা গিয়েছে, হাওড়ার একই পরিবারের তিনজন, ধূপগুড়ির ছজন, উল্টোডাঙার চার জন লেকটাউনের ন’জন আটকে রয়েছেন অমরনাথে। এঁদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।
তারমধ্যেই খবর মিলেছে ,বারুইপুরের এক কলেজ পড়ুয়ার মৃত্যু হল অমরনাথে । সেখানে মেঘ ভাঙা বৃষ্টিতে যে বিপর্যয় নেমে এসেছে তাতে ইতিমধ্যে বহু পর্যটকের মৃত্যু হয়েছে ৷ তাঁদের মধ্যে রয়েছেন বারুইপুরের বর্ষা মুহুরি। ভূগোলে এমএসসি পড়ছিলেন তিনি।
জানা গেছে, কয়েকজনের টিম নিয়ে উত্তর ভারতে ঘুরতে গিয়েছিলেন বর্ষা। তাঁর সঙ্গে ছিলেন আরও ৬ জন। গত ১ জুলাই কলকাতা থেকে রওনা দিয়েছিলেন তাঁরা। পহেলবাগে ছিলেন ২ দিন। সেখান থেকে অমরনাথে যান। ১৬ তারিখ কলকাতায় ফিরে আসার কথা ছিল সকলের।
এদিন বর্ষার মৃত্যু সংবাদ সামনে এলে শোকের ছায়া নামে বারুইপুরে। মা এবং মামার পরিবারের সঙ্গে ঘুরতে গিয়েছিলেন বর্ষা। জানা যাচ্ছে তাঁর মাও গুরুতর আহত। তাঁকে অমরনাথ থেকে হেলিকপ্টারে করে উড়িয়ে আনা হয়েছে কলকাতায়।
ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা থেকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া তীর্থযাত্রীরা এই ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন। এক তীর্থযাত্রীর কথায়, “মেঘ ভাঙার ১০ মিনিটের মধ্যে, আটজন মানুষের মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়। জলের সঙ্গে প্রচুর পরিমাণে পাথর বয়ে এসেছিল। প্রায় ১৫,০০০ তীর্থযাত্রী ওই অঞ্চলে ছিলেন। প্রবল বৃষ্টি সত্ত্বেও তীর্থযাত্রীরা এখানে এসেই চলেছেন।” “পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, বৃষ্টি এখনও চলছে। বিপদের মাত্রা দেখে, এলাকা প্লাবিত হওয়ার কারণে অমরনাথ যাত্রা সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে ৷