দিল্লি : নীতি আয়োগের বৈঠক বয়কট করে বেরিয়ে এলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাইরে বেরিয়ে এসে তৃণমূল নেত্রী সাংবাদিকদের সামনে অভিযোগ করে বলেন, অসম, ছত্তিসগড়, গোয়ার মুখ্যমন্ত্রীদের দীর্ঘ সময় বলতে দেওয়া হলেও আমি যেই বলতে শুরু করেছিলাম, ওরা আমার বলা বন্ধ করে দিল। রাজ্যের স্বার্থে এখানে এসেছিলাম। কিন্তু বৈষম্যমূলক আচরণ করে আমার মুখ বন্ধ করার চেষ্টা করা হয়েছে।
এই সরকারের কাছে আমি ১০০ দিনের কাজের টাকা বন্ধ সহ বিভিন্ন বঞ্চনার কথা তুলে ধরছিলাম। তখনই আমার কথা বন্ধ করা দেওয়া হল। আমাকে এভাবে অপমান করার প্রতিবাদে বৈঠক বয়কট করে আমি বেরিয়ে এসেছি।
বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র সাত জন মুখ্যমন্ত্রী কেন্দ্রীয় বাজেটে বঞ্চনার অভিযোগ তুলে বৈঠক বয়কট করলেও বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শনিবার সকালে রাইসিনা হাজির হয়েছিলেন। কিন্তু কিছু ক্ষণের মধ্যেই বৈঠক ছেড়ে বেরিয়ে রাষ্ট্রপতি ভবনের বাইরে তিনি বলেন, ‘‘অন্যদের ২০ মিনিটের বেশি বলার সুযোগ দেওয়া হলেও আমাকে পাঁচ মিনিটও বলতে দেওয়া হয়নি। তার আগেই মাইক বন্ধ করে দেওয়া হয়। এই বঞ্চনার প্রতিবাদে আমি বৈঠক ছেড়ে চলে এসেছি।’’
এই ঘটনাকে সরাসরি ‘অপমান’ বলেও চিহ্নিত করেছেন মমতা। তিনি বলেন, ‘‘বিরোধীদের মধ্যে একমাত্র আমিই বৈঠকে হাজির ছিলাম। কিন্তু বলতে দেওয়া হল না। আমি আরও কিছু বলতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তার আগেই মাইক বন্ধ করে অপমান করা হল।’’
প্রসঙ্গত, বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র আট জন মুখ্যমন্ত্রী শনিবারের বৈঠকে গরহাজির থাকলেও মমতা শনিবারের বৈঠক যোগ দিয়েছিলেন। মমতা জানিয়েছেন, এর পর নীতি আয়োগের আর কোনও বৈঠকে তিনি থাকবেন না।
অতীতে কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধী একাধিক বার লোকসভায় তাঁর মাইক বন্ধের অভিযোগ তুলেছেন। এ বার অঙ্গরাজ্যগুলির মুখ্যমন্ত্রীদের বৈঠকেও নরেন্দ্র মোদী সরকারের বিরুদ্ধে মাইক বন্ধ করে বিরোধীদের ‘কণ্ঠরোধ’-এর অভিযোগ উঠল।
প্রসঙ্গত, শুক্রবার দিল্লি যাওয়ার আগেই কেন্দ্রের বিরুদ্ধে বিমাতৃসুলভ আচরণের অভিযোগ তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। তাঁর অভিযোগ ছিল, বাজেটে বাংলাকে বঞ্চনা করা হয়েছে। মমতা বলেছিলেন, ‘‘বাজেটে যে ভাবে বিরোধী রাজ্যগুলিকে বঞ্চনা করা হয়েছে, সেটা মানতে পারছি না। এক দিকে ইকনমিক ব্লকেড, পলিটিক্যাল ব্লকেড, এর সঙ্গে দেশকে টুকরো টুকরো করে দেওয়ার যে পরিকল্পনা, তার চরম নিন্দা করছি। মন্ত্রী সংসদে দাঁড়িয়ে বাংলা ভাগের কথা বলছেন!’’
সেই সঙ্গে মমতা বলেছিলেন, ‘‘বিভিন্ন সূত্র থেকে জানতে পারছি, ওদের দলের অনেক নেতাও বিহার-ঝাড়খণ্ড-অসম-বাংলাকে ভাগ করা নিয়ে বিভিন্ন ধরনের বিবৃতি দিচ্ছেন। কড়া নিন্দা করছি এর। বিহার, ঝাড়খণ্ড, অসম এবং বাংলাকে ভাগ করা মানে গোটা দেশকে ভাগ করা। আমরা একে সমর্থন করি না।’’
মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, বাংলা ভাগের দাবির প্রতিবাদ জানাতেই নীতি আয়োগের বৈঠকে যোগ দেবেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘বৈঠকে থাকব কিছু ক্ষণ। কিছু বলতে দিলে বলব। আর না হলে প্রতিবাদ করব। বাংলার হয়ে কথা বলব।’’ তাঁর ওই মন্তব্যেই বৈঠক থেকে ওয়াক আউটের ইঙ্গিত ছিল বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ।
এর আগেও মোদী সরকারের বিরুদ্ধে মুখ্যমন্ত্রীদের বৈঠকে তাঁকে বলতে না দেওয়ার অভিযোগ তুলেছিলেন মমতা। শনিবার দেখা গেল, মমতার অনুমানই সঠিক। তাঁর অভিযোগ, তাঁকে মাত্র ৫ মিনিট বলতে দেওয়া হয়েছিল। তার পর বন্ধ করে দেওয়া হয় মাইক। যার প্রতিবাদে তিনি বৈঠক ছাড়েন।