দেশেরসময় , বাগদা: নাম না করে মুকুল রায়কে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করলেন বিজেপি সাংসদ শান্তনু ঠাকুর। ৩০% সংখ্যালঘু এবং ১৫% জালিয়াতদের ভোটে তৃণমূল জেতে বলেও দাবি কেন্দ্রীয় জাহাজ প্রতিমন্ত্রীর। রবিবার উত্তর ২৪ পরগনার বাগদার আউলডাঙ্গাতে একটি প্রতিবাদ সভায় উপস্থিত ছিলেন শান্তনু ঠাকুর। সেখানেই তিনি তোপ দেগেছেন রাজ্যের শাসকদলকে। তিনি আরও বলেছেন, “তৃণমূলের মনে ভয় নেই কেন জানেন। ওদের একজন দাগী নেতা বলেছেন তৃণমূল কোনও দিন যাবে না। ৩০% সংখ্যালঘু ভোট ও ১৫% জালিয়াতদের ভোট। এই ৪৫ শতাংশ ভোটেই জয়ী হবে তৃণমূল। কিন্তু বর্তমানে প্রেক্ষাপট পরিবর্তন হয়েছে। ভাইজানরা এত চটেছেন যে দিদিকে গদি থেকে নেমে টেনে নামাতে পারলে বাঁচেন।” অন্যদিকে হরিচাঁদ ঠাকুর এবং গুরুচাঁদ ঠাকুরের নাম ভুল বলা প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও আক্রমণ করা হয় ওই প্রতিবাদ সভা থেকে।
মতুয়াদের ধর্মগুরুর নাম ভুল উচ্চারণের প্রতিবাদে উত্তর ২৪ পরগনার বাগদার আউল ডাঙ্গাতে একটি প্রতিবাদ সভার আয়োজন করেছিল বিজেপি। সেই প্রতিবাদ সভায় উপস্থিত ছিলেন বনগাঁর সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় জাহাজ প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর। উপস্থিত ছিলেন বনগাঁ জেলা বিজেপির সাধারণ সম্পাদক দেবদাস মণ্ডল।
তিনি বলেছেন, “বড়মার কাছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন আমি যদি আবার জন্মগ্রহণ করি যেন তোমার সন্তান হই। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মতুয়াদের সঙ্গে মীরজাফরি করলেন । উনাকে যেমন ভগবান ক্ষমা করবেন না। তেমন মতুয়ারা ক্ষমা করবেন না। আগামীতে কোনও ঘরে কন্যা সন্তান জন্মগ্রহণ করলে মতুয়ারা তার নাম মমতা রাখবেন না।”
এমনকি পঞ্চায়েত ভোটের আগে তৃণমূল নেতারা সাইকেল, গরু ,বাছুর চুরি করতে আসবে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ওই স্থানীয় বিজেপি নেতা। তা রুখতে হাতে ডান্ডা নিয়ে বিজেপি কর্মীদের প্রস্তুত থাকতেও বলেছেন। চোরেদের হাত থেকে বাঁচতে দরজা-জানলা বন্ধ করে রাখার পরামর্শও দিয়েছেন তিনি। মমতার পাশাপাশি বাগদার বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাসকেও আক্রমণ করে তিনি বলেছেন, “তিনি বিজেপির বিধায়ক তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সভাপতি। তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে রানি রাসমণি, মা সারদা বলেছেন। আবার ভারতরত্ন দেওয়ার কথা বলছেন। চোররা ভারতরত্ন পান না।”
যদিও বিজেপি নেতাদের এই অভিযোগগে গুরুত্ব দিতে রাজি নন বাগদার বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস। তিনি বলেছেন, “ওদের মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে। ভোট যত এগিয়ে আসবে, তত ভুলভাল বকবে।” মমতাকে আক্রমণ প্রসঙ্গে বিশ্বজিৎ বলেছেন, “মতুয়াদের সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হৃদয়ে সম্পর্ক। মতুয়াদের জন্য যদিও কেউ কাজ করে থাকেন তা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এটা মতুয়ারাও জানেন। সেই সম্পর্ক আগেও ছিল। এখনও আছে। আগামী দিনেও থাকবে।”
প্রসঙ্গত, দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে রাস্তার হাল বেহাল। অভিযোগ, বারবার সমস্যার কথা জানিয়েও লাভ হয়নি বিশেষ। এই অবস্থায় এলাকা দিয়ে যাচ্ছিলেন বিজেপি সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর । তাঁকেই হাতজোড় করে থামিয়ে দিলেন গ্রামের মহিলারা। রাস্তার পাশে হাতজোড় করে দাঁড়িয়ে মন্ত্রীর কনভয় থামিয়ে বেহাল রাস্তা দেখালেন গ্রামের মহিলারা।
অভিযোগ এলাকায় বিজেপি ভোটে জেতায় তৃণমূলের ৷ দখলে থাকা পঞ্চায়েত ঠিক করছে না রাস্তা, এমনই দাবি বাসিন্দাদের। বিষয়টি খুব তাড়াতাড়ি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী।
এদিন বনগাঁ’র গাড়াপোতা পঞ্চায়েতের চাঁদা জামতলা এলাকায় ঘটনাটি ঘটে। সূত্রের খবর অনুযায়ী, রবিবার ওই এলাকা দিয়ে যাচ্ছিলেন কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর। সঙ্গে ছিল তাঁর কনভয়।
আর তখনই তাঁকে ঘিরে ধরেন গ্রামবাসীরা। রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে হাত জোড় করে কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুরের কনভয় থামিয়ে এলাকার বেহাল রাস্তা দেখান গ্রামের মহিলারা৷ এক মহিলা অভিযোগ করে বলেন, “গত ভোটে এলাকায় জিতেছিল বিজেপি৷ তাই পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার রাস্তা সংস্কার করা হচ্ছে না৷ প্রায় বছর পঁচিশ হল রাস্তা বেহাল অবস্থায় রয়েছে।”
ওই মহিলা আরও বলেন, “শুধু ভোট হলেই দেখা মেলে নেতাদের। তারা আসেন বিভিন্ন প্রতিশ্রুপতি দিয়ে ভোট নিয়ে চলে যান। কিন্তু ভোট মিটে গেলে আর কারো দেখা পাওয়া যায় না।” অভিযোগ, লোকসভার অন্তর্গত বাগদার এই গাড়াপোতা পঞ্চায়েতের চাঁদা জামতলা এলাকায় উন্নয়নের কোনও ছোঁয়া লাগেনি।
এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে গাড়ি থেকে নেমে আসতে হয় শান্তনুকে। মানুষের কথা শুনে তিনি প্রতিশ্রুতি দেন। তিনি বলেন, “এমপি ল্যাডের টাকা বন্ধ থাকায় আপনাদের রাস্তা মেরামত হয়নি। তবে অবিলম্বে এই রাস্তা মেরামতের ব্যবস্থা করে দেব।” কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তাঁদের কথা দিয়ে যান, শীঘ্রই এই রাস্তা সংস্কারের কাজ হবে। এরপর স্থানীয় মানুষজন জানান, এই রাস্তা সঠিক সময়ে মেরামত না হলে তারা ভোট বয়কট করবেন। মানুষের বিক্ষোভের সামনে পড়ে কেন্দ্রীয়মন্ত্রী সমস্ত কথা শুনে শেষে বলেন, যত তা়ড়াতাড়ি সম্ভব এই রাস্তা মেরামত হবে।
উল্লেখ্য, এদিন দুপুরে শান্তনুবাবু বাগদার আউলডাঙ্গাতে বিজেপি-র একটি প্রতিবাদ সভায় যোগ দিতে যাচ্ছিলেন৷ চাঁদা জামতলা এলাকায় শতাধিক মহিলা বনগাঁ বাগদা সড়কের পাশে আগে থেকে খবর পেয়ে দাঁড়িয়ে পড়েন৷ আর হাতজোড় করে বিনয়ের সঙ্গে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর
কনভয়কে দাঁড় করান৷