দেশের সময় উত্তর ২৪ পরগনা: মঙ্গলবার দুপুরে উত্তর চব্বিশ পরগনার হিঙ্গলগঞ্চের সভায় নাটকীয় ঘটনা ঘটে গেল! মঞ্চে বক্তৃতা দেওয়ার সময়ে শরদ কুমার দ্বিবেদীর উপর যারপরনাই চটে গেলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ।
কথা ছিল শীতবস্ত্র বিতরণ করার। সেই মতো পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচিও ছিল তাঁর। কিন্তু সেটা হল না। নিজে কিনে পাঠিয়েছিলেন ১৫ হাজার শীতবস্ত্র।
কিন্তু হিঙ্গলগঞ্জে সভায় পৌঁছালই না তা। সভা চলাকালীনই মঞ্চ থেকে শীতবস্ত্র প্রদানের কথা ঘোষণা করার পর খোদ মুখ্যমন্ত্রী জানতে পারলেন, শীতবস্ত্র আদৌ এসে পৌঁছয়নি সভাস্থলে। কথা দিয়েও রাখতে পারলেন না তিনি। চরম ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী। সভা মাঝপথে থামিয়েই স্টেজে বসে পড়লেন তিনি। সরকারি আধিকারিকদের বললেন, “যতক্ষণ না শীতবস্ত্র আসছে, আপনারাও বসুন আমিও বসলাম।” একেবারে নজিরবিহীন ঘটনা ঘটল হিঙ্গলগঞ্জের সভায়।
আর পাঁচটা সভার মতোই হিঙ্গলগঞ্জের সভায় স্টেজে উঠে বক্তৃতা রাখতে শুরু করেছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পঞ্চায়েত নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজ্যের একাধিক প্রকল্প, প্রতিশ্রুতির আশ্বাস দিচ্ছিলেন। পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী, এরপর শীতবস্ত্র প্রদানের কথা বলেন। সভা শুরু মিনিট দশেকের মাথায় মুখ্য়মন্ত্রী বলেন, “আমি নিজে শীতবস্ত্র কিনে এনেছি।
পাঁচ হাজার সোয়েটার, পাঁচ হাজার কম্বল আর পাঁচ হাজার চাদর। এটা যেন মানুষ ঠিক মতো পান। এগুলো যেন মানুষ ঠিক মতো পান।” কথা গুলো যখন বলছিলেন, মুখ্যমন্ত্রী দৃশ্যত আশা করেছিলেন. স্টেজেই সেগুলি দেখতে পাবেন। তা না দেখতে পেয়ে পিছন ঘুরে তিনি সরকারি আধিকারিকদের প্রশ্ন করেন, “এগুলো কোথায় রেখেছেন? কাকে দিয়েছেন? ১৫ হাজার কোথায় রেখেছেন?”
মুখ্যমন্ত্রী সরকারি আধিকারিককে প্রশ্ন করেন, “কোথায় সেটা?” সরকারি আধিকারিক জানান, সেটা বিডিও অফিসে… এরপরই মুখ্য়মন্ত্রী বলেন, “কেন বিডিও অফিসে থাকে? আপনি নিয়ে আসুন, আমি এখানেই অপেক্ষা করব…” মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “একটা জিনিস দিলে, কেন সেটা ঠিক মতো পৌঁছবে না? আমি জানি না… ”
এ কথা বলেই জেলা শাসকের দিকে মুখ ঘুরিয়ে মুখ্যমন্ত্রী প্রশ্ন করেন ওই জিনিসগুলো কি ওদের দেওয়া হয়েছে। শরদ দ্বিবেদী জবাব দেন না এখনও হয়নি। যেই না সে কথা তিনি বলেন, ওমনি মুখ্যমন্ত্রী স্বর চড়িয়ে বলেন, কেন দেননি? ওগুলো কোথায় রেখেছেন?
মুখ্যমন্ত্রী যখন এ কথা বলছেন, তখন সভাস্থল করতালিতে ফেটে পড়ে। বোঝা যায়, মানুষের পাশে থাকার যে বার্তা মুখ্যমন্ত্রী দিতে চেয়ে প্রশাসনকে বকাবকি করছেন, তাতে স্থানীয়রা উচ্ছ্বসিত। তাঁরা যেন এই বকুনি ও ধমকটাই শুনতে চাইছিলেন।
এর পর ফের জেলা শাসককে মুখ্যমন্ত্রী প্রশ্ন করেন, স্পষ্ট জবাব দিন। গোল গোল কথা বলবেন না। জিনিস দিলেও যদি না পৌঁছয় তা হলে আমার গায়ে খুব জ্বালা ধরে। প্রশাসন ভুল করলে তো আমাকে মানুষের কথা শুনতে হয়। পুলিশ দোষ করলে আমাকেই দায়ী করে মানুষ।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “এখানে আসব বলে আমি কম্বল, চাদর, সোয়েটারগুলো কিনে এনেছি। এসে দেখছি ভোঁপা… ” বলতে বলতেই সরকারি আধিকারিকদের আবারও বলেন, “আমি তো বলেছি, আমরা ডিরেক্ট দেবো, কারোর মারফত দেব না, শোনা হয়নি কেন? আমি বিডিও অফিসে রাখার জন্য তো পাঠায়নি।” মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “যদি বিডিও, আইসি, ডিএম রা ঠিক মতো কাজ না করে, আমি পদক্ষেপ করব।” মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আমি জানি ১৫ হাজার দিয়ে দিতে পারতাম না, অন্তত আমার এখান থেকে তো কিছু দেওয়া হত। এটা আমি পুজো উপলক্ষে এনেছিলাম। এটা যতক্ষণ না আসছে আপনারা বসুন, আমিও বসলাম…” বসেই স্টেজেই চেয়ারে বসে পড়েন মুখ্যমন্ত্রী। এক টানা ১৭ মিনিট বসে থাকেন স্টেজে। পরে অবশ্য বিডিও অফিস থেকে শীতবস্ত্র আনার ব্যবস্থা করা হয়।
এদিনের অনুষ্ঠান মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সাংসদ নুসরত জাহানও। দেখা যায়, ভাবগম্ভীর পরিস্থিতি দেখে নুসরত চুপ করে রয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রীও চেয়ারে মুখ গোমড়া করেই বসে রয়েছেন। এর প্রায় ১৫ মিনিট পরে শুরু হয়ে যায় শীতবস্ত্র বিতরণ।