

বাংলায় কথা বললেই হেনস্থার অভিযোগ উঠছে বিজেপি শাসিত বিভিন্ন রাজ্যে। যথাযথ কাগজ দেখালেও বাংলাদেশি তকমা দিয়ে জেলে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ। তারই প্রতিবাদে বুধবার পথে নামে তৃণমূল। কলেজ স্কোয়্যার থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত মিছিল করে তারা। ছিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ অন্যান্য নেতৃত্ব। মিছিল শেষে সভা হয় ডোরিনা ক্রসিংয়ে। সেই মঞ্চ থেকে বিজেপিকে নিশানা করেন মমতা। বলেন, ‘এ রাজ্যে প্রায় দেড় কোটি পরিযায়ী শ্রমিক কাজ করেন। তাঁরা সসম্মানে কাজ করেন এখানে। অথচ আমাদের ২২ লক্ষ শ্রমিক নানা জায়গায় হেনস্থার শিকার হচ্ছেন। ভাগাভাগি করে চলবে তো?’

বাঙালিদের ওপর অত্যাচার, ভাষা নিয়ে অপমান, এবং ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়ার চেষ্টার বিরুদ্ধে ফের বিস্ফোরক মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । মুখ্যমন্ত্রী বুঝিয়ে দেন, বাঙালি এবং বাংলা ভাষার উপর আঘাত এলে, কোনও ভাবেই বাংলার সরকার চুপ থাকবে না।
বুধবার ধর্মতলায় তৃণমূলের প্রতিবাদ মঞ্চ থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র ভাষায় আক্রমণ শানালেন মুখ্যমন্ত্রী। বললেন, “মোদীজিকে বলছি, সতর্ক করে গেলাম। মারবও না, কাটবও না। তোমাদের মতো নই। আমরা তোমাদের ভাষায় কথা বলি না। কিন্তু অত্যাচার যদি বন্ধ না হয়, আমরা কীভাবে থামাতে হয়, তা জানি। মানুষই সেটা করে দেবে।”

এই মঞ্চ থেকেই জাতীয় রাজনীতিতে বড় বার্তা দিলেন মমতা। বললেন, “২৬ এ বাংলা তারপরের ইলেকশনে দিল্লি দখল করব। এবারে ইন্ডিয়ার সরকার হবে।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, মমতার এই বার্তা শুধু কেন্দ্রকে নয়, বিরোধী জোটকেও মনে করিয়ে দেওয়া, নিই এখনও দেশের এক অন্যতম শক্তিশালী আঞ্চলিক নেত্রী, যিনি প্রয়োজনে নেতৃত্ব দিতেও প্রস্তুত।

হঠাৎ কেন এই প্রসঙ্গের অবতারণা তার ব্যাখ্যাও দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূল নেত্রী বলেন, “আমাকে অনেকেই বলেছেন, সামনে ২১ শে জুলাই। তার আগে আবার কেন? আমি বলেছি ডেঞ্জারাস সিচুয়েশন হলে এমন হবে। আমি ছাড়ার পাত্র নই। বাকি ২১শে জুলাই কর্মসূচী ঘোষণা করব।”
অর্থাৎ ২১ জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে এ ব্যাপারে তিনি আরও বিস্তারিত ভাবে তুলে ধরতে পারেন বলে মনে করা হচ্ছে।
এদিনের সভা মঞ্চ থেকে নাম না করে নির্বাচন কমিশন ও কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলোর ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর অভিযোগ, “ইলেকশন কমিশন আর এজেন্সি লাগিয়ে মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। আমরা সেটা হতে দেব না।”
বক্তব্যের আগাগোড়া বারে বারে উঠে এল বাংলা বলার কারণে ভিনরাজ্যে বাঙালিদের হেনস্থা করার প্রসঙ্গ। তৃণমূল নেত্রীর কথায়, “আমরা কারও সঙ্গে ঝগড়া চাই না। কিন্তু বাঙালিকে যদি ছোট করে দেখেন, তাহলে ভুল করবেন। মনে রাখবেন, এই বাঙালিই কিন্তু দেশ স্বাধীনে বড় ভূমিকা পালন করেছিল।”

মমতার প্রশ্ন, বাংলা প্রত্যেকের ভাষাকেই সম্মান করে। কিন্তু বাংলা কি ভারতের মধ্যে নয়? তা হলে ভিন রাজ্যে কাজ করতে গিয়ে কেন বাংলায় কথা বলার জন্য হেনস্থার শিকার হতে হবে?

 
                