দেশের সময় কলকাতা : মাথায় চোট নিয়েই গার্ডেনরিচে হাজির মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মধ্যরাতে গার্ডেনরিচে ঝুপড়ির ওপর নির্মীয়মাণ বহুতল ভেঙে পড়ে ভয়াবহ দুর্ঘটনা। প্রাণ হারিয়েছেন ২ জন। আহত ১৫ জন। ধ্বংসাবশেষে চাপা পড়ে আছেন ৭ জন। রাতেই দুর্ঘটনার খবর পেয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সকাল হতেই ঘটনাস্থলে হাজির হন তিনি। মাথায় ব্যান্ডেজ বাঁধা অবস্থাতেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম ও দমকল মন্ত্রী সুজিত বসু, কলকাতা দক্ষিণের সাংসদ মালা রায় এবং কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলও।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ওই বহুতল বেআইনি ছিল বলেই জানালেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, “বিল্ডিংয়ের নীচে যাঁদের ঘরবাড়ি ভেঙে গিয়েছে, তাঁদের নতুন করে বাড়ি বানিয়ে দেওয়া হবে। এই নির্মাণ কীভাবে হচ্ছিল, কোনও আইনি বৈধতা হয়েছিল কিনা, সে ব্যাপারে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করে দেখা হবে।”
গার্ডেনরিচে নির্মীয়মান বহুতল ভেঙে পড়ার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। আহত এবং নিহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা এক্স হ্যান্ডেলে জানিয়েছিলেন তিনিও। ইতিমধ্যেই ওই নির্মীয়মান বাড়ির প্রোমোটারকে গ্রেফতারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
মমতা লিখেছেন, ‘‘গার্ডেনরিচে নির্মীয়মাণ বহুতল ভেঙে পড়ে যে দুর্ঘটনা ঘটেছে, আমি তাতে শোকাহত। মেয়র, দমকলমন্ত্রী, পুলিশ কমিশনারের সেক্রেটারিয়েট, সিভিক পুলিশ, দমকল এবং বিপর্যয় মোকাবিলা দল সারা রাত ধরে ঘটনাস্থলে রয়েছেন। তাঁরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা চালাচ্ছেন। মৃতদের পরিবারকে এবং আহতদের আমরা ক্ষতিপূরণ দেব। ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে আছি।’
Sad to learn about the house collapse disaster of an under- construction building in the Garden Reach area of the Kolkata Municipal Corporation. Our Mayor, Fire Minister, Secretaries and Commissioner of Police, civic, police, fire and disaster management officers and teams…
— Mamata Banerjee (@MamataOfficial) March 18, 2024
এদিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আমরা সকালে মর্মাহত। দুজন মারা গেছেন। যার মধ্যে আমি খবর পেলাম একজনের পা আটকে আছে। উদ্ধারকাজ যত তাড়াতাড়ি হবে তত ভালো। শোকস্তব্ধ আমি। বেআইনি কাজ করলে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আমি প্রশাসনের কাছে পদক্ষেপ করার জন্য জানিয়েছি।”
এরপর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্থানীয় হাসপাতালে পৌঁছন। সেখানেই বেশ কয়েকজন চিকিৎসাধীন রয়েছেন। হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “এখানে যাঁরা আছেন তাঁদের অবস্থা স্থিতিশীল।”
এর আগে সকালে ঘটনাস্থল থেকে মেয়র ফিরহাদ হাকিম জানিয়েছেন, মৃতদের পরিবারপিছু পাঁচ লক্ষ টাকা এবং আহতদের এক লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। বহুতলটি যে বেআইনি ভাবে তৈরি করা হচ্ছিল, তা তিনি মেনে নিয়েছেন তিনিও। তবে তাঁর দাবি ছিল, বাম আমলের থেকেই বেআইনি নির্মাণ শুরু হয়।
ফিরহাদ ঘটনাস্থলে সারা রাত ছিলেন। তিনি ওই এলাকার বিধায়কও। তাঁর সঙ্গে দমকলমন্ত্রী সুজিত বসুও ছিলেন রাতে। ভাঙা বহুতলের কংক্রিটের চাঙড় সরিয়ে এখনও উদ্ধারকাজ চলছে। দু’জনের মৃত্যুর খবর জানিয়েছেন মেয়র। তাঁর কথায়, ‘‘যেখানে দুর্ঘটনা ঘটেছে সেখানে ২১ জন ছিলেন। ১৩ জনকে উদ্ধার করা গিয়েছে। দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। সাত জনকে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। এক জন রয়েছেন এসএসকেএম হাসপাতালে।’’
গার্ডেনরিচের ঘটনায় ইতিমধ্যে রাজ্যের শাসকদলের বিরুদ্ধে তোপ দাগতে শুরু করেছেন বিরোধীরা। শুভেন্দু অধিকারী রাতেই এক্সে লেখেন, ‘‘গার্ডেনরিচের ১৩৪ নম্বর ওয়ার্ডে পাঁচ তলা বাড়ি ভেঙে পড়েছে। এই এলাকাটি কলকাতার মেয়র এবং রাজ্যের মাননীয় পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের ‘দুর্গ’ বলে পরিচিত। আমি পুলিশ, রাজ্যের মুখ্যসচিবকে বলব অবিলম্বে রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা দলকে উদ্ধারকাজে নিয়োগ করতে। এই ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বাড়তে পারে। আমার কাছে অনেক ফোন আসছে।’’