দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ আলিপুরদুয়ারের প্রশাসনিক সভার মঞ্চ থেকে ফের কেন্দ্রের বিরুদ্ধে বঞ্চনার অভিযোগ এনে তোপ দাগলেন মুখ্যমন্ত্রী। ১০০ দিনের কাজ থেকে শুরু করে ওবিসি ছাত্রছাত্রীদের অনুদানের টাকা, সবই আটকে রেখেছে কেন্দ্র। অভিযোগ মমতার। এমনকি, টাকা না পেলে ‘বুঝে নেওয়ার’ও হুঁশিয়ারি দিলেন তিনি।
বাংলায় অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের জন্য কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদী সরকার বৃত্তি বন্ধ করে দিয়েছে বলে বৃহস্পতিবার বড় অভিযোগ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । সেই সঙ্গে তিনি এও ঘোষণা করলেন, এতে বাংলার ছাত্রছাত্রীদের বিপন্ন বোধ করার কারণ নেই। কেননা দিদি রয়েছেন। বাংলার ওবিসি ছাত্রছাত্রীদের এবার রাজ্য সরকারই ৮০০ টাকা করে ভাতা বা বৃত্তি দেবে। সেই প্রকল্পের নাম মুখ্যমন্ত্রী রেখেছেন মেধাশ্রী !
এর আগেও একাধিক বার একাধিক সভামঞ্চ থেকে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে টাকা না দেওয়ার অভিযোগ এনেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ কিন্তু, এদিন আলিপুরদুয়ারে তাঁর সুরটা যেন ছিল আরও কয়েক দাগ চড়া। অভিযোগের সুর পাল্টে এদিন যেন কেন্দ্রকে কার্যত হুঁশিয়ারি দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। বললেন, “আমি দেখতে চাই কদিন এটা চলে। আমি ভিক্ষে করব না। আমি ভিক্ষে করার লোক নই।”
বৃহস্পতিবার আলিপুরদুয়ারে সরকারি পরিষেবা দেওয়ার অনুষ্ঠান ছিল মুখ্যমন্ত্রীর। সেই অনুষ্ঠানে মমতা বলেন, ওরা এমন ভাব দেখাচ্ছে যে ওরা টাকা দিচ্ছে। আরে টাকা তো বাংলা থেকে তুলে নিয়ে যাচ্ছে। সেই টাকা বাংলার মানুষের কাছে ফেরাচ্ছে না। একশ দিনের কাজের টাকা বন্ধ করেছে। গরিব মানুষগুলো কাজ করে টাকা পাচ্ছে না। গ্রামের রাস্তার টাকা বন্ধ করেছে। মানুষের বাড়ি করার টাকা বন্ধ করেছে। এবার ওবিসি ছাত্রছাত্রীদের টাকাও বন্ধ করেছে।
মমতা বলেন, কুকুরের কাজ কুকুর করেছে। তাঁর কথায়, “আমি কাউকে কুকুর বলছি না। তবে বাংলায় একটা প্রবাদ রয়েছে। কুকুরের কাজ কুকুর করেছে কামড়ে দিয়েছে পায়ে, তাই বলে কি কুকুরকে কামড়ানো মানুষের শোভা পায়?”
শিক্ষা থেকে বৃত্তির জন্য মোদী সরকার যে লাগাতার বরাদ্দ কমাচ্ছে তা নিয়ে জাতীয় স্তরে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে শিক্ষকদের সংগঠনও। তারা হিসাব দিয়ে দেখিয়েছে, কীভাবে প্রি ম্যাট্রিক ও পোস্ট ম্যাট্রিক স্তরে বৃত্তির জন্য বরাদ্দ কমানো হয়েছে। অ্যাকশন ফর অ্যাকাডেমিক্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট টিচার্স অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য তথা দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক্সিকিউটিভ কাউন্সিলের সদস্য সীমা দাস জানিয়েছেন, ওবিসি ছাত্রছাত্রীদের জন্য পোস্ট ম্যাট্রিক স্কলারশিপে কেন্দ্র চলতি অর্থবর্ষে ২১৭ কোটি টাকা ছাঁটাই করেছে। একই ভাবে তফসিলি জাতির ছেলেমেয়েদের প্রি ম্যাট্রিক স্কলারশিপে ছাঁটা হয়েছে ২২৫ কোটি টাকা। তাঁর অভিযোগ, শিক্ষাক্ষেত্রে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলিকে আরও জায়গা করে দিতেই এ সব কাণ্ড-কারখানা চলছে।
বৃহস্পতিবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “ওবিসি ছেলেমেয়েরা পড়াশুনা করবে, বড় হবে—আমরা সবাই তা চাই। ওরা যদি টাকা না দেয় তা হলে না দিক। আমরা চালিয়ে যাব। আমরা শিক্ষাশ্রী দিই, কন্যাশ্রী দিই, বিবেকানন্দ স্কলারশিপের টাকা দিই, এ বার ওবিসি ছেলেমেয়েদেরও টাকা দেব। আর দিল্লি যদি টাকা না দেয়, তা হলে এখান থেকে ওরা কীভাবে টাকা (কর আদায় বাবদ অর্থ) নিয়ে যায়, তাও এবার দেখব।”
এদিনের প্রশাসনিক সভামঞ্চ থেকে মমতা আরও বলেন, “আপনারা হয়ত দুঃখ পাবেন। কেন্দ্র আমাদের সব ফান্ড বন্ধ করে দিয়েছে। ৬ হাজার কোটি টাকা আমরা পাই। ১০০ দিনের কাজে আমরা টাকা পাইনি। ” মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, ৪০ লক্ষ জব কার্ড হোল্ডারদের কাজ করিয়েছে। ১০ কোটি কর্মদিবস তৈরি হয়েছে। কিন্তু, তাদের টাকা দেয়নি কেন্দ্র। সব টাকা রাজ্য মিটিয়েছে বলে জানান মমতা।
এর পরেই বিজেপির নেতামন্ত্রীদের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়ে মমতা বলেন, “রাজ্যের টাকা তুলে নিয়ে যাচ্ছ। নেতারা এসে বলে সব দিল কে? মাছের তেলে মাছ ভাজা। রাজ্য সরকার ট্যাক্স কালেকশন করে না। কেন্দ্র করে। করের ৬০ শতাংশ টাকা আমাদের দেওয়ার কথা। আমাদের টাকাই আমাদের দিচ্ছে না।”
এরপরেই মমতার হুঁশিয়ারি, “আমি দেখতে চাই কদিন এটা চলে। আমি ভিক্ষে করব না। আমি ভিক্ষে করার লোক নই।” তাঁর কথায়, “আমি ভিক্ষা চাইলে মা বোনদের কাছে চাইব, চাষি, শ্রমিক, যুব, কন্যাশ্রীদের কাছে চাইব।”
কেন্দ্রের কাছে অনুদানের আশ্বাস নিয়ে গত বছরের শেষের দিক থেকেই রাজ্যে জোরকদমে শুরু হয়েছিল আবাস যোজনার কাজ। প্রায় যুদ্ধকালীন তৎপরতায় বাইশের শেষে ১১ লক্ষ বাড়ি প্রাপকের নামের তালিকা চূড়ান্ত করে নবান্ন। কিন্তু তার পরেই মাথায় ভেঙে পড়ে আকাশ। সম্প্রতি, কেন্দ্রের তরফে চিঠি দিয়ে নবান্নকে স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেওয়া হয়, পুরনো হিসাব না পেলে প্রধানমন্ত্রী গ্রামীণ আবাস যোজনায় নতুন করে টাকা ছাড়া যাবে না। এর খন কার্যত বিশ বাঁও জলে রাজ্যের আবাস প্রকল্পের ভবিষ্যৎ।
এদিন আবাস নিয়েও কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সরব হন মমতা। বলেন, “বাংলার বাড়ির টাকা দেয়নি। আমরা অভিযোগ পেয়ে ১৭ লক্ষ নাম বাদ দিয়েছি। ১১ লক্ষের বাড়ি তৈরি করা হবে। যদি কেন্দ্রীয় সরকার টাকা না দেয়, আমরা বুঝে নেব। গ্রামীণ রাস্তার টাকা দিচ্ছে না। বন্যা হলেও টাকা দেয় না।”
আবাস থেকে ১০০ দিনের কাজ, কিংবা মিড ডে মিল। রাজ্যের বিভিন্ন প্রকল্প এখন কার্যত কেন্দ্রের রেডারে। রাজ্যের একাধিক প্রকল্পের কাজ পর্যবেক্ষণ করার জন্য দফায় দফায় পশ্চিমবঙ্গে আসছে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল। এদিন তা নিয়েও কটাক্ষ করেন মুখ্যমন্ত্রী, “এখন একটা উইপোকা কামড়ালেও কেন্দ্রের দল পাঠায়। যখন বিএসএফ গুলি চালায় তখন কটা টিম পাঠায়?”
এরপরেই মমতার কটাক্ষ, “সব জায়গায় দেখবেন ওঁর মুখ। উনি খেতে দিয়েছেন। উনি রেশন দিয়েছেন। ছবি তখনই টাঙানো যায়, যাঁকে মানুষ শ্রদ্ধা করে।”