এসএসকেএম হাসপাতালে মুখ্যমন্ত্রী, দিল্লি থেকে সরাসরি এসএসকেএম পৌঁছেই চিংড়িঘাটা দুর্ঘটনায় আহতদের সঙ্গে দেখা করেন মুখ্যমন্ত্রী। চিকিৎসাধীন রোগীদের সঙ্গে কথা, রোগী পরিষেবা নিয়ে খোঁজখবরও নেন মমতা, একাধিক স্বাস্থ্য বিষয়ক প্রকল্পের উদবোধন।
দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ এসএসকেএম হাসপাতালে গিয়েই চিংড়িহাটা দুর্ঘটনার আহতদের সঙ্গে দেখা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন ভয়াবহ পথ দুর্ঘটনায় চিংড়িহাটায় জখম হন ৫ জন। জানা যায়, একটি গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেললে পরপর বেশ কয়েকটি গাড়িকে ধাক্কা মারে। ঘাতক গাড়িটি ধাক্কা মারে কয়েকজন পথচারীকেও। পথচারীদের ধাক্কা মেরে গাড়িটি গিয়ে শেষমেশ আটকায় গার্ড রেলে। ঘটনায় ৫ জন গুরুতর জখম হয়েছেন। আহতদের আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এদিন দিল্লি থেকে সরাসরি এসএসকেএম পৌঁছেই আহতদের সঙ্গে দেখা করেন মুখ্যমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “আজ একটি দুর্ঘটনায় এক মাদকাসক্ত যুবক সাত আটজনকে ধাক্কা। তাঁরা অবশ্য ভালো টেক কেয়ার পাচ্ছেন। আমি দেখতে গিয়েছিলাম। ট্রমা কেয়ারটা কষ্ট করে করেছি। দুপুরে ভর্তি হয়েছে। এখনও ব্যান্ডেজ হয়নি দেখলাম কিছু ক্ষেত্রে।”
মুখ্যমন্ত্রী এদিন বলেন, ‘শুনলাম অ্যাডমিশনের প্রসেসেই নাকি সময় লাগে। কিন্তু এটা তো ট্রমা কেয়ারে তো এটা হওয়া উচিত নয়। এখন যদি একজন প্রেগন্যান্ট মহিলা আসেন, তাঁকে যদি প্রসেসের জন্য ছ’ঘণ্টা ফেলে রাখা হয় তাহলে তাঁর তো জীবনটাই সঙ্কটে পড়ে যাবে।’
চারদিনের দিল্লি সফর শেষ করে বৃহস্পতিবারই কলকাতা পৌঁছেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছুটে যান এসএসকেএম হাসপাতালে।
স্বাস্থ্য বিষয়ক প্রকল্পের উদ্বোধনে এসএসকেএম হাসপাতালে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।ট্রমা কেয়ার সেন্টার থেকে ওয়ার্ডে ঢুকে কথা বললেন চিকিৎসাধীন রোগীদের সঙ্গে। হাসপাতালে ভর্তি প্রক্রিয়া নিয়ে ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী। ব্যবস্থাপনা নিয়ে ক্ষোভ উগরে দিলেন মঞ্চ থেকেই। ফের রাতে সিনিয়র চিকিৎসক রাখা নিয়ে সওয়াল করেন। ডাক্তারদের ইঞ্জেকশন ও স্যালাইন দেওয়ার দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।
এদিন এসকেএম-এর মঞ্চ থেকে ক্ষোভ উগরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ”একবার এখানে ব্লাড টেস্ট করাতে এসে রক্ত নিতে গিয়ে আমার হাত একেবারে ফুলিয়ে দিয়েছিল। এগুলো অভিজ্ঞতার ফসল। আবার অনেক নার্সের হাত এত ভালো যে বোঝাই যায় না।” এসএসকেএম-এর ট্রমা কেয়ার সেন্টারের ব্যবস্থাপনা নিয়ে মূলত ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী। এদিন নিজে ট্রমা কেয়ার সেন্টার ভিজিটের পর তিনি বলেন, ”স্যালাইন কিভাবে দিতে হবে সেটা তো জানতে হবে। ট্রমা ইউনিটে তো সবথেকে আগে দরকার। প্রক্রিয়া চলবে কিন্তু চিকিৎসা তো আগে। গর্ভবতী মহিলা এলে তাঁর রেজিস্ট্রেশনে ছয় ঘণ্টা লাগলে রোগী তো মরে যাবে। সকালে চিংড়িহাটার দুর্ঘটনায় আহতদের অনেককেই ভালোভাবে যত্ন নিয়ে শুশ্রুষা করেছে। আবার এক দুজনকে দেখলাম ব্যান্ডেজ পর্যন্ত ঠিক করে করেনি। রক্ত আটকাতে কটা লিউকোপ্লাস লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমার দেখে খুব খারাপ লাগে।’
একইসঙ্গে এসএসকেএম-এর মঞ্চ থেকে সরকারি হাসপাতালগুলিকে রেফার প্রসঙ্গে নিয়ে আরও একবার সতর্ক করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। হাসপাতালে পরিষেবা আরও ভালো করতে চলতি বছরে নয় থেকে দশ হাজার নার্স নেওয়ার প্রস্তাব মুখ্যমন্ত্রীর। তবে এসকেএম-এর হাসপাতালের চিকিৎসকদের প্রশংসাও করেন তিনি।
এদিন এসএসকেএম হাসপাতাল থেকে বিকেল সাড়ে চারটের সময় ভার্চুয়ালি কয়েকটি নতুন পরিষেবার উদ্বোধন ও শিলান্যাস করেন মুখ্যমন্ত্রী। নবান্ন সূত্রে খবর এসএসকেম হাসপাতালে ১০০ টি শয্যা বিশিষ্ট পেডিয়াট্রিক মেডিসিন ডিপার্টমেন্টের নতুন ভাবে সংস্কার করা প্রকল্পের উদ্বোধন করার কথা মুখ্যমন্ত্রীর। পাশাপাশি স্পোর্টস মেডিসিন পরিষেবারও উদ্বোধন করার কথা মুখ্যমন্ত্রীর।
অনেকের মতে, এসএসকেএমের উদ্দেশে বললেও এই বার্তা আসলে গোটা রাজ্যের সরকারি হাসপাতালগুলিকেই দিতে চেয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। কারণ সাধারণ রোগীদের অনেকেরই অভিযোগ, সরকারি হাসপাতালে রোগী নিয়ে গেলে কাগজপত্রের কাজ করতেই অনেক সময় লাগিয়ে দেওয়া হয়। এরমধ্যে রোগী আরও সঙ্কটজনক হয়ে যায়। এদিন সেই অভ্যেসই ত্যাগ করার বার্তা দিয়েছেন মমতা।