দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ : শুক্রবার সন্ধ্যায় বালেশ্বরে করমণ্ডল এক্সপ্রেসে দুর্ঘটনার পর রাতে কেন্দ্রের তরফে মৃতদের পরিবার পিছু ১০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করা হয়েছিল। শনিবার অকুস্থলে পৌঁছে বাংলার যাঁরা প্রাণ হারিয়েছেন এই দুর্ঘটনায় তাঁদের পরিবারের জন্য ৫ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
মর্মান্তিক, বীভৎস, এই শব্দগুলিও হয়তো কম পড়ছে বালেশ্বরের দুর্ঘটনাস্থলের বর্ণনা দিতে। ওড়িশার বাহানাগা স্টেশনের ঠিক আগেই উল্টে পড়ে রয়েছে হাওড়া-চেন্নাই করমণ্ডল এক্সপ্রেস, হাওড়া-যশবন্তপুর এক্সপ্রেস ও একটি মালগাড়ি। দুমড়ে-মুচড়ে গিয়েছে করমণ্ডল এক্সপ্রেসের ২০টিরও বেশি কামরা।
আজ, শনিবার সকালে দুর্ঘটনাস্থলে যান রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দুর্ঘটনাস্থল ঘুরে দেখেন তিনি। ঘটনাস্থল থেকেই মুখ্যমন্ত্রী ক্ষতিপূরণের ঘোষণা করেন। তিনি জানান, নিহতদের পরিবার পিছু ৫ লক্ষ টাকা করে দেওয়া হবে। গুরুতর আহতদের ১ লক্ষ টাকা ও অল্প আহতদের ৫০ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে।
মুখ্যমন্ত্রী এদিন বলেন, ‘আমি আশা করব সব রাজ্য সরকারই তাঁদের রাজ্যের মৃতদের পরিবারের পাশে দাঁড়াব। আমরাও সর্বোতভাবে পরিবারগুলির পাশে আছি। বাংলার অনেক মানুষ এই ট্রেনে ছিলেন। আমাদের রাজ্যের বড় ক্ষতি।’
দুপুর একটার খবর, করমণ্ডল দুর্ঘটনায় মৃত্যু সংখ্যা ২৮০ পেরিয়ে গিয়েছে। আহতের সংখ্যা ৬০০-র বেশি। মুখ্যমন্ত্রী এদিন জানিয়েছেন, বাংলার পক্ষ থেকে চিকিৎসক, নার্স, উদ্ধারকারী দল পাঠানো হয়েছে বালেশ্বরে। শনিবারও ৭০টি অ্যাম্বুলেন্স পাঠানো হয়েছে।
এদিন ডুমুরজলা থেকে কপ্টারে বালেশ্বর যান মুখ্যমন্ত্রী। নেমে পথমে যান দুর্ঘটনাস্থলে। তারপর সেখান থেকে যান হাসপাতালে। স্থানীয় স্কুলেও যান, যা কার্যত মর্গ হয়ে উঠেছে, ক্লাসরুমে রাখা রয়েছে লাশের সারি। ওড়িশা সরকারের আধিকারিক, রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণ, রেল কর্তাদের সঙ্গেও কথা বলেন তিনি।
রেলের কাজে সমন্বয়ের অভাব রয়েছে বলে রেলমন্ত্রীর সামনেই অভিযোগ করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বললেন, ‘‘মনে হয় রেলের সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। আরও যত্নশীল হওয়া প্রয়োজন।’’ বালেশ্বরে পৌঁছনোর পর রেলমন্ত্রী অশ্বিনীর সঙ্গে দেখা হয় মুখ্যমন্ত্রী মমতার। কত জনের মৃত্যু হয়েছে, তা রেলমন্ত্রীর কাছ থেকে জানতে চান মুখ্যমন্ত্রী। তখন রেলমন্ত্রী বৈষ্ণব জানান যে, ২৩৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। যদিও তার ঘণ্টা খানেক আগেই রেলের তরফে বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়, দুর্ঘটনায় তখনও পর্যন্ত ২৬১ জনের মৃত্যু হয়েছে।
বালেশ্বর যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও। এই প্রসঙ্গে মমতা বলেন, ‘‘সাক্ষাৎ হলে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলব।’’
ইতিমধ্যেই বাংলার অনেকের মৃত্যুর খবর মিলেছে। তাঁদের বেশিরভাগই পরিযায়ী শ্রমিক। কেউ তামিলনাড়ু, কেউ চেন্নাইয়ে রাজমিস্ত্রি বা অন্য কাজে যাচ্ছিলেন। ছিলেন বহু রোগী, যাঁরা চিকিৎসার জন্য যাচ্ছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী এদিন বলেছেন, নবান্নে কন্ট্রোল রুম চলছে। মুখ্যসচিবের নেতৃত্বে তদারকির কাজ চালাচ্ছে রাজ্য সরকার।
পাশাপাশি, সারা রাজ্যের সব জেলাশাসককে তিনি নির্দেশ দিয়েছেন, পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসকের সঙ্গে যেন ব্যক্তিগতভাবে যোগাযোগ রাখেন তাঁরা। বিভিন্ন জেলা থেকে আসা লোকজনের খাওয়া-থাকার বন্দোবস্তেও যেন ত্রুটি না হয়, সেই নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।