দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ একগুচ্ছ কর্মসূচি নিয়ে পাঁচদিনের উত্তরবঙ্গ সফর চলছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের । আগামীকাল কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামের অনুষ্ঠানে একাধিক সরকারি প্রকল্পের সূচনা করতে পারেন তিনি। এছাড়া অজয় এডওয়ার্ডের হামরো পার্টির সঙ্গে একটি বৈঠক হতে পারে তাঁর। তার আগে রবিবার শিলিগুড়ির একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন তিনি। সেখানেই তিনি তুললেন রামপুরহাট হিংসার প্রসঙ্গ।
বগটুই-কাণ্ড নিয়ে এদিন মন্তব্য করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, পুলিশের ভুল ছিল। খুনের পর ওদের আশঙ্কা করা উচিত ছিল কিছু একটা হতে পারে।’ এরপরই মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এখানে খুন হয়েছে তৃণমূল নেতা। যাদের বাড়িতে আগুন লাগল তারাও তৃণমূল, আর তৃণমূলকেই গালি দেওয়া হচ্ছে। তাহলেই বুঝুন হাত, পা, মাথা, সবই আমাদের কাটা গেল, আবার আমাদেরই গালি দেওয়া হচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এখনও বলছি, রামপুরহাট-কাণ্ডের পিছনে বড় ষড়যন্ত্র রয়েছে।’
এরপরই সিবিআইয়ের ওপর ক্ষোভ উগরে দেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, নেতাই-কাণ্ডে এখনও বিচার হয়নি। নোবেল চুরির তদন্তে কিছু হয়নি। এর আগেও অনেক মামলা সিবিআই নিয়েছে। কোনও মামলায় বিচার হয়নি। দুর্গাপুজোয় রাজ্য পুলিশ, খেলা হলে রাজ্য পুলিশ, মেলা হলে রাজ্য পুলিশ।
আর একটা ঘটনা ঘটলেই পুলিশকে খারাপ বলা হচ্ছে। যদি এমন হয়, কাল থেকে পুলিশ রাস্তায় থাকবে না, রাতে পাহারা দেবে না? দিল্লি থেকে এসে পাহারা দেবে? দিন রাত যাঁরা থাকে তাঁদের বিশ্বাস হয় না।
পাশাপাশি তিনি বিজেপিশাসিত অন্য রাজ্যের ঘটনার প্রসঙ্গ তুলে ধরে মন্তব্য করেন, “হাথরাসে, লখিমপুর, অসমের এনপিআর নিয়ে মানুষ মারা গেছে, তখন সিবিআই কোথায়, কোথায় বিচার! ত্রিপুরা, অসম, উন্নাও, দিল্লির হিংসায় আমাদের প্রতিনিধি দল ঢুকতে দেওয়া হয়নি। আর এখানে আমি যাতে যেতে না পারি তাই সকাল-বিকেল সেজেগুজে টিভিতে চলে যাচ্ছে। এলাকায় গন্ডগোল যাতে না হয় তা দেখতে হবে। নাম আর মুখে কালি লাগিয়ে সিপিএম, কংগ্রেস, বিজেপি মিছিল করবে। আর সিপিএম, কংগ্রেস, বিজেপি তোফা হয়ে সোফায় বসে থাকবে?”
এখানেই থামেননি মুখ্যমন্ত্রী। কেন্দ্রের দিকে আঙুল তুলে তাঁর মন্তব্য, “আমি যখন রেলমন্ত্রী ছিলাম তখন রোজ ট্রেনের লাইন কাটা হত, আরশোলা খোঁজা হতো! এখন সব কোথায় গেল!” সাধারণ মানুষদের আরও সতর্ক হতে বলে তিনি বলেন, “সাধারণ মানুষ নজর রাখুন। কিছু খারাপ জিনিস দেখলেই পুলিশকে জানান। পুলিশ ব্যবস্থা না নিলে তার বিরুদ্ধে আমি অ্যাকশন নেব। কোনও নেতার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ থাকলে ফোন করবেন। দু’মাস সময় দেব। সঙ্গে সঙ্গে অ্যাকশন নেব।”
সবাই ভাল না, কিছু কিছু দুষ্টু আছে, দু-একটা দুষ্টু গরু সব জায়গায় থাকে। বাকিরা সবাই তো এখানকারই ছেলেমেয়ে। কিন্তু বাংলার নামে বদনাম করলে এখানকার মানুষ ছেড়ে কথা বলবে না। মা-মেয়ের ঝামেলা হলে, দাদু-নাতির ঝামেলা হলেই সিবিআই চাইছে।’
রামপুরহাট নিয়ে ফের তিনি বলেন, “রামপুরহাটে বড় ষড়যন্ত্র করা হয়েছে, তদন্ত হোক।” তবে একইসঙ্গে তদন্তের প্রহসন তুলে ধরেন মমতা। বলেন, “নোবেল প্রাইজ খোয়া যাওয়া নিয়ে আজ পর্যন্ত বিচার নেই, নন্দীগ্রাম-নেতাইয়ে আজও সিবিআই কিছু করেনি। তাপসী মালিক খুনে সিবিআই আজও বিচার করতে পারেনি, বরং সিট তদন্তে অনেক দূর এগিয়েছিল।”
সংবাদমাধ্যমের প্রতি উষ্মা প্রকাশ করে মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, “কোনও কোনও চ্যানেল ব্যবসার জন্য দিনভর রক্ত দেখিয়ে যাবে শুধু, টিআরপি বাড়ানোর জন্য। তাতে বাচ্চাদের মনে কী প্রভাব পড়ছে ভাবে না। টিআরপি-র আগুনে নিজেরাই পুড়ে যাবে। মানুষের মৃত্যু নিয়ে রাজনীতি হচ্ছে।”
পাশাপাশিই মমতা দাবি করেন, রামপুরহাটে এই অশান্তি ইচ্ছাকৃত, এটা করা হচ্ছে, যাতে দেউচা পাচামির কাজ আটকে দেওয়া যায়।”
প্রসঙ্গত, রাজ্যের তরফে সিট গঠন করা হলেও রামপুরহাট-কাণ্ডে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যেই তদন্তভার নিয়েছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা। এবার সেই নিয়েই মুখ খুললেন মুখ্যমন্ত্রী।
শিলিগুড়ির মঞ্চ থেকে নাম না করে বিরোধীদের এক হাত নিলেন মুখ্যমন্ত্রী। বললেন, রাজ্যের উন্নয়ন আটকাতেই রামপুরহাট কাণ্ড ঘটানো হয়েছে। তিনি বলেন, ‘রামপুরহাট করা হচ্ছে যাতে দেউচা না হয়।’
৬ দিনের উত্তরবঙ্গ সফরে গেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে সরকারি পরিষেবা প্রদান অনুষ্ঠান থেকে রামপুরহাট কাণ্ড নিয়ে একের পর এক বিস্ফোরণ ঘটান মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘রাজ্যে শিল্পের কথা চিন্তা করে না ওরা। সেই চিন্তা থেকে দৃষ্টি ঘোরাতে রাজ্যে অশান্তির ঘটনা ঘটানো হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বীরভূমে দেউচা পাচামির মত বড় প্রকল্প হচ্ছে। এতে রাজ্যের উন্নতি হবে। আর ঠিক সেইসময়ই রামপুরহাটের ঘটনা ঘটানো হল। যাতে সবাই দেউচা থেকে দৃষ্টি ঘুরে যায়। রামপুরহাট ঘটনার পেছনে বৃহৎ ষড়যন্ত্র আছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘রান্নার গ্যাস, পেট্রল-ডিজেলের দাম বাড়ছে, ওষুধের দাম বাড়ছে, আর সেগুলো যাতে কেউ মনে না রাখে সেই জন্য এমন একটা দু’টো ঘটনা ঘটিয়ে দিয়ে মানুষের দৃষ্টি সরিয়ে দেওয়ার জন্য এইসব করায়।’
বিরোধীদের এক হাত নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা চান না এখানে কর্মসংস্থান হোক। বীরভূমে এক লক্ষ চাকরি হবে দেউচা পাচামিতে। আপনারা সব লন্ডভন্ড করে দিচ্ছেন তার কারণ যাতে দেউচাটা না হয়। ছেলে মেয়েরা চাকরি না পায়।’