দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ তিনদিনের জন্য উত্তরবঙ্গ সফরে মুখ্যমন্ত্রীর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ জিটিএ-র শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে যোগ দেন তিনি। আর জিটিএ নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর কল্পতরু মুখ্যমন্ত্রী। শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানের পর ওই মঞ্চ থেকেই একাধিক ঘোষণা করেন তিনি। বলেন, “পাহাড়ে যাঁরা ফুটপাথে বসে ব্যবসা করেন তাঁদের জন্য দোকান গড়ার পরিকল্পনা।” পাহাড়ে মহিলাদের শপিং মল তৈরি করার বার্তা মুখ্যমন্ত্রীর। এদিন দার্জিলিংয়ে মুখ্যমন্ত্রী জানালেন, দার্জিলিংয়ে ২০০ একর জায়গায় আরও একটি শহর গড়ে উঠবে।
মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন সেখানে থাকবে শপিংমল, হোমস্টে, ছোট দোকান, রেস্তোরাঁ—ইত্যাদি। মমতা এও বলেছেন, ২০০ একর জমির বন্দোবস্ত করা গিয়েছে। মূল শহরের আশপাশেই এই নতুন শহর গড়ে উঠবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
এদিন অনীত থাপাদের পাশে নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট করে বলেন, রাজ্য সরকারের উদ্দেশ্য একটাই—পাহাড়ের শান্তি আর অর্থনৈতিক বিকাশ। মমতার কথায়,পাহাড় উন্নয়ন চায়, শান্তি চায়। সেই কারণেই পাহাড় জিটিএ চায়। এত শান্তিপূর্ণ নির্বাচন আগে কখনও দেখিনি। গত ১০ বছরে আমরা জিটিএকে ৭ হাজার কোটি টাকা দিয়েছি। পাহাড়ে শান্তি থাকলে অর্থনৈতিক উন্নয়ন হবে।
Thank you Madam for your visit. pic.twitter.com/tg2knrGp6F
— Anit Thapa (@AnitThapa14) July 11, 2022
জিটিএ নির্বাচনে এবার অনীত থাপাদের দলের সঙ্গে জোট করে লড়েছিল তৃণমূল। পাহাড়ের স্থানীয় প্রশাসনের ভোটে ঘাসফুল শিবির খাতা খুলেছে। সেইসঙ্গে এও, অনীত থাপারা যে বিপুল সমর্থন পেয়ে জিটিএ-এর ক্ষমতায় এসেছে তা অভাবনীয়। কারণ কয়েক মাস আগেও পাহাড়ের পুর নির্বাচনে অনীতদের এই দাপট দেখা যায়নি। সেই ভোটে আবার অজয় এডওয়ার্ডের হামরো পার্টি মাথা তুলেছিল পাহাড়ে।
মুখ্যমন্ত্রী এদিন স্পষ্ট করে দিয়েছেন, দার্জিলিংকে শুধু পর্যটনের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে চান না তিনি। পাহাড়ের তরুণ প্রজন্মের কর্মসংস্থানের জন্য বিকল্প বন্দোবস্তের কথা বলেছেন তিনি। এদিন মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, পাহাড়ের ঝর্ণার জল বোতলে প্যাকিং করে কী ভাবে পৃথক একটি শিল্প গড়ে তোলা যায় তাও প্রশাসনিক কর্তাদের ভাবার কথা বলেছেন তিনি।
অনেকের মতে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ ছিল পাহাড় ও জঙ্গলমহলে শান্তি প্রতিষ্ঠা করে জনজীবনকে স্বাভাবিক ছন্দে ফেরানো। সেদিক থেকে প্রশাসক মমতা সর্বোতভাবে সফল। মাঝে পাহাড় কিছুটা অশান্ত হলেও পরে তা নিয়ন্ত্রণে আনে রাজ্য সরকার। এখন পাহাড় শান্ত। মমতা চান সেই শান্তির বাতাবরণকেই ধরে রাখতে। যাতে অসন্তোষ না তৈরি হয়।
আগামী ১৩ তারিখ পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রী থাকবেন উত্তরবঙ্গেই। সকলের নজর ছিল, বহু বছর পরে পাহাড়ের নির্বাচন মিটেছে, আজ তার শপথের অনুষ্ঠানে দাঁড়িয়ে ঠিক কী বলেন তৃণমূল কংগ্রেস সুপ্রিমো। তিনি আজ জানিয়ে দিলেন, পাহাড় শান্তি চায়, পাহাড় উন্নয়ন চায়, এবং আর্জি জানালেন পাহাড়ে শান্তি বজায় রাখার। সঙ্গে তিনি বুঝিয়ে দিলেন, পাহাড়ের দখল নিতে আসবেন না তিনি, আসবেন শুধু ভালবাসতে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন বলেছেন, ‘আমাদের একটাই লক্ষ্য, পাহাড় ভালো থাক, পাহাড় এগিয়ে থাক। পাহাড়ের হাসি দেখতে চাই।’ শান্তির সঙ্গে উঠে এসেছে পাহাড়ের উন্নয়ন প্রসঙ্গ। জানিয়েছেন গত ১০ বছরে পাহাড়কে সাত হাজার কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। আগামিদিনে আরও সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। পাহাড়ে শান্তি থাকলেই অর্থনৈতিক উন্নতি হবে বলেও জানিয়েছেন।
বক্তব্যের মাঝেই তিনি বলেন, পাহাড় প্রসঙ্গে গতকালই কথা বলেছেন অনীথ থাপার সঙ্গে। পাহাড়ের নতুন ইকো-ট্যুরিজম হাব প্রসঙ্গে কথা বলেন। সঙ্গেই মঞ্চ থেকে জানান, মংপুতে ইউনিভার্সিটি চালু হবে, কার্শিয়াং-এ তৈরি হবে প্রেসিডেন্সির ক্যাম্পাস। তৈরি হবে আইআইটি হাব। অর্থাৎ তিনি বুঝিয়ে দিলেন, শিল্প আর শান্তির পাশাপাশি সমান নজর সেখানকার ছেলে মেয়েদের পড়াশোনার প্রতিও।
রাজনৈতিক মহলের মতে, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর পাহাড় আর জঙ্গলমহল, এই দুই প্রান্তের শান্তি প্রতিষ্ঠা করাই ছিল তাঁর কাছে বড় চ্যালেঞ্জ। সময় লাগলেও ধীরে ধীরে তিনি করেছেন। পাহাড়ে মাঝে অশান্তি হলেও আপাতত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে। নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। তাই এবার অশান্ত পাহাড়কে শান্ত রাখতে তিনি বদ্ধ পরিকর।