দেশেরসময় ওয়েবডেস্কঃ দামামা বেজে গেছে পুরযুদ্ধের।আজ শনিবার বিধাননগর, শিলিগুড়ি, আসানসোল এবং চন্দননগর পুরসভার ভোট। কিন্তু পুর ভোটের দিকে কতটা নজর রয়েছে তৃণমূল নেতৃত্বের? এই মুহূর্তে দলীয় অশান্তি নিয়েই জেরবার তারা। ‘এক ব্যক্তি এক পদ’, আইপ্যাক, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, মদন মিত্র ইত্যাদি বিভিন্ন ইস্যুতে দলীয় অশান্তি সামনে এসেছে। পরিস্থিতি এমন যে আজ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কালীঘাটে বিকেল পাঁচটা নাগাদ বৈঠকে বসতে চলেছেন বলে খবর।
ক্ষমতাসীন তৃণমূলে দলীয় কোন্দল নতুন নয়। প্রকাশ্য বিরোধ এতদিন পর্যন্ত দলের নিচুতলায়, বড়জোর জেলাস্তরে সীমাবন্ধ ছিল। চলতি বিতর্কের স্রোত ঠিক উল্টো। এই প্রথম একেবারে শীর্ষস্তরের বিরোধ মেটাতৈ বৈঠকে বসতে চলেছেন দলনেত্রী।
চলতি বিতর্কে মুখ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে দলের ‘এক ব্যক্তি এক পদ’নীতি এবং তা নিয়ে নবীন সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনড় অবস্থান। দলের সক্রিয় হওয়ার পর থেকেই এই নীতিতে সরব তিনি। সম্প্রতি তাতে যোগ করেছেন বয়স বিধি। অর্থাৎ একটা বয়সের পর নেতৃত্ব থেকে সরে দাঁড়াতে হবে প্রবীণদের। জায়গা ছেড়ে দিতে হবে নবীনদের। অভিষেকের মতে, সেটাই হওয়া উচিত।
অভিষেকের বিরোধী শিবির দলের সাধারণ সম্পাদকের এই বক্তব্যের জবাবে আশ্রয় করছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই। এই দুই ইস্যুতেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রকাশ্যে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেননি। ‘এক ব্যক্তি এক পদ’ বলে তৃণমূলে কোনও নীতি নেই জানিয়ে কলকাতার মেয়র তথা তৃণমূলের প্রথম সারির নেতা ফিরহাদ হাকিম দাবি করেছেন। তাঁর আরও দাবি, এটা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরই কথা।
শুক্রবার দুপুরে ফিরহাদের ওই বক্তব্যের পরই রাতে সামাজিক মাধ্যমে ‘শেষ কথা দিদি বলবে’ বলে প্রচার শুরু হয়েছে। অভিষেকের অনুগামী যুব ব্রিগেড ‘এক ব্যক্তি এক পদ’ নীতি নিয়ে আগেই প্রচার চালিয়েছে সামাজিক মাধ্যমে। সংবাদমাধ্যমেও এই নীতির সপক্ষে মুখ খুলেছেন দলের কেউ কেউ। ফলে বিরোধ স্বয়ং মমতা ও অভিষেকের এমন ধারণা দলে, দলের বাইরে বদ্ধমূল হয়ে গিয়েছে।
দলের একাংশের বক্তব্য, নেত্রী নিজেও এই নীতি কার্যকরের বিপক্ষে নন। তারপরও কেন তিনি ফিরহাদ হাকিমের মতো কয়েকজনের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রমী অবস্থান নিয়েছেন আজকের বৈঠকে তা ব্যাখ্যা করবেন বলে আশা করছেন অনেকেই। অভিষেকের সঙ্গে নানা প্রশ্নে দ্বিমত পোষণ করেন এমন অনেকে প্রবীণ নেতাও মনে করেন, দলের সাধারণ সম্পাদকের অবস্থানের বিপরীতে কোনও দৃষ্টান্ত থাকলে তার যথাযথ ব্যাখ্যা প্রয়োজন। বস্তুত, কম-বেশি সব দলেই লিখিত বা অলিখিতভাবে এই নীতি চালু আছে। আবার সেই নীতির বিরোধী ব্যতিক্রমও আছে। সেই তালিকায় বাদ নেই এক ব্যক্তি এক পদ নীতিতে সবচেয়ে আস্থাশীল বাম দলগুলিও। এখন দেখার তৃণমূল নেত্রী বৈঠকে কী অবস্থান নেন।
এক টিভি চ্যানেলের সাক্ষাৎকারে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এক ব্যক্তি এক পদ নীতির পক্ষে জোরাল সওয়াল করেন। এমনও বলেন, তিনি যতদিন সাধারণ সম্পাদক পদে আছেন, এই নীতিকে বাস্তবায়িত করেই ছাড়বেন। অবশ্য একমাত্র মমতা ব্যানার্জি এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম তা বলে দেন। কিন্তু মমতা ছাড়াও আরও কিছু হেভিওয়েট নেতা রয়েছেন, যাঁরা একাধিক পদ ধরে আছেন।
বিতর্ক আরও বাড়ে তৃণমূলের নতুন প্রজন্মের সদস্যেরা সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘এক ব্যক্তি এক পদ’ হ্যাশট্যাগ ক্যাম্পেন চালানোয়। এমনকী মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের টুইটার পেজেও দেখা যায় সেই ট্রেন্ড। চন্দ্রিমা অবশ্য বলেছেন, তাঁর অ্যাকাউন্ট হ্যান্ডল করে আইপ্যাক। তাঁকে না জানিয়েই এমন টুইট করা হয়েছে।
এরপরেই ফিরহাদ হাকিম স্পষ্ট জানিয়ে দেন, দল এই ‘এক ব্যক্তি এক পদ’ নীতি মানে না। তবে এক্ষেত্রে মমতার কথাই শিরোধার্য সে কথাই জানিয়ে দেন। এই আবহে জল্পনা ওঠে, অভিমানী অভিষেক হয়তো সাধারণ সম্পাদকের পদ ছেড়ে দেবেন। এতে পরিস্থিতি আরও ঘোরালো হয়ে ওঠে। বিতর্কের আগুনে আরও ঘি ঢালেন মদন মিত্র। সবমিলিয়ে তৃণমূলের অন্তর্দ্বন্দ্ব একেবারে প্রকাশ্যে।
এই পরিস্থিতি সামাল দিতে আজ কী নিদান দেন দিদি তা নিয়ে দলে তুমুল কৌতূহলও তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে ‘এক ব্যক্তি এক পদ’ নিয়ে তিনি কী অবস্থান নেন তা নিয়েও আগ্রহ তুঙ্গে।