অর্পিতা বনিক ঠাকুরনগর ঠাকুরবাড়ির ‘ঘরোয়া’ কোন্দল। ভোটের মুখে এই কোন্দলেও লেগেছে রাজনীতির রঙ। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শান্তনু ঠাকুরের বিরুদ্ধে তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ মমতাবালা ঠাকুরের ঘরের তালা ভেঙে ঢোকার অভিযোগ উঠেছে। প্রতিবাদে সোমবার সকাল থেকে ধরনায় বসেছেন মমতাবালা ঠাকুর। মিছিলেরও ডাক দেওয়া হয়েছে। পাল্টা ধরনায় বসার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন শান্তনু ঠাকুরও। তাঁর দাবি, অন্যায় ভাবে মতুয়া বাড়ি ছেলেকে জেল খাটানোর প্রতিবাদে তাঁরাও ধরনায় বসবেন।
মমতাবালা ঠাকুর বলেন, “তাঁরা আজকে অধিকার দেখাচ্ছে, অধিকার থাকতেই পারে, আমি কী অন্যায় করেছি, আমার বাচ্চাগুলোকে নিয়ে কীভাবে থাকব? বিজেপির ক্যাডাররা লাঠি নিয়ে ঘুরছে, বাড়িতে এখন হরিনামের স্লোগান নেই, জয় শ্রী রামের স্লোগান… আমিও তো পার্টি করি, কোনও স্লোগান দিই না। ওটা ঠাকুরবাড়ির প্রপার্টি নয়।”মমতাবালা আরও জানালেন, রবিবার রাতেই গাইঘাটা থানায় শান্তনুর বিরুদ্ধে তিনি অভিযোগ দায়ের করছেন।
অন্যদিকে, শান্তনু ঠাকুর আবার বলেন, “পৃথিবীর কোনও আইন নেই, যে আমার ঠাকুরদাদার ঘরে থাকার অধিকারকে ক্ষুণ্ণ করতে পারে। আমি আমার ঠাকুরদা-ঠাকুরমার ঘরে ঢুকে বসে রয়েছি। এখন থেকে থাকব এই ঘরে।” কিন্তু তালা না ভেঙে তো অন্যভাবেও ঢোকা যেতে পারত? প্রশ্ন করা হয় শান্তনু ঠাকুরকে। তিনি বলেন, “১০ বার বলা হয়েছিল তালা খোলার জন্য। এখন কেউ যদি এই ঘরে হুলিগান পুষে রাখে, তাহলে তো আমাকে দেখতেই হবে। এখানে যদি মমতাবালা ঠাকুরের অধিকার থাকে, তাহলে আমার মা রাধারানি ঠাকুরেরও অধিকার রয়েছে, আমার স্ত্রী সোমা ঠাকুর, বৌদি সীতা ঠাকুরেরও অধিকারও রয়েছে।”
দুষ্কৃতীদের নিয়ে মমতাবালার উদ্দেশে অকথ্য গালিগালাজ নিয়ে শান্তনুর বিরুদ্ধে ব্যাপক ক্ষোভ প্রকাশ করলেন বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী বিশ্বজিৎ দাস। তাঁর কথায়, “কেন্দ্রের বিদায়ী মন্ত্রী কেন্দ্রীয় বাহিনীর অপব্যবহার করে যেভাবে একজন মহিলাকে গালিগালাজ করে, হামলা করে ঘর দখল করেছেন, আমি এর তীব্র নিন্দা করছি। এটা অসামাজিক। ক্ষমতার অপব্যবহার করে একজন নারীর সম্ভ্রম নষ্ট করছেন তিনি।”
রবিবার সন্ধ্যায় উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ঠাকুরবাড়ি। তখন বারুনির মেলা চলছিল। সে সময়েই আচমকাই হট্টগোল। দলবল নিয়ে, এমনকি কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের নিয়ে শান্তনু ঠাকুরের বিরুদ্ধে তাঁর ঠাকুরমা বীণাপাণিদেবীর ঘরের তালা ভেঙে ঢোকার অভিযোগ ওঠে। ২০১৯ সালে বীণাপাণিদেবীর মৃত্যুর পর থেকে তাঁর ছেলের বউ মমতাবালা ঠাকুর ওই ঘরে থাকেন। কিন্তু ওই ঘর নিয়েই দুপক্ষের মধ্যে দীর্ঘদিনের বিবাদ।
বিষয়টি হাইকোর্টেও বিচারাধীন। ঘটনার সময়ে দূরে দাঁড়িয়েছিল রাজ্য পুলিশ। কিন্তু পুলিশও বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করেনি বলে অভিযোগ। পুলিশের বক্তব্য, অভিযোগ হলে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। মেলার মাঝেই ঠাকুরবাড়ির ‘কোন্দলে’ শোরগোল, ছোটাছুটি পড়ে যায় ভক্তদের মধ্যেও।
এদিকে হামলার ঘটনার পরেই ঠাকুরবাড়ির চত্বর থেকে সমস্ত ভক্তদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এলাকায় বিশাল পুলিশ বাহিনী এবং কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন রয়েছে।