দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ বৃহস্পতিবার সকালে বনগাঁয় বিএসএফের মঞ্চে দাঁড়িয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ যা বলেছিলেন তাতে আগুনটা জ্বলেই গিয়েছিল। বিকেলে নতুন তৃণমূল ভবনে প্রথম সাংবাদিক বৈঠকে তা নিয়ে রীতিমতো হুঁশিয়ারি দিলেন মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ।
অমিত শাহের উদ্দেশে মমতা বলেন, “আগুন নিয়ে খেলবেন না।”
সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর অনুষ্ঠানে শাহ বলেন, ‘চোরা চালান, অনুপ্রবেশের মতো অপরাধ স্থানীয় প্রশাসনের সাহায্য ছাড়া আটকানো যায় না। খুব তাড়াতাড়ি সেই রাজনৈতিক পরিস্থিতিও তৈরি হয়ে যাবে বাংলায়।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সাংবিধানিক পথেই আমাদের সীমান্তকে দুর্ভেদ্য বানাব। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সীমান্ত সুরক্ষাকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছেন।’
তৃণমূলের অনেকের মতে, অচিরেই সেই রাজনৈতিক পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার কথার মধ্যে অন্য ইঙ্গিত রয়েছে। বাংলার বিজেপি নেতারা গত কয়েক মাস ধরেই বলে আসছেন, এখানে পুলিশ রাজ কায়েম হয়েছে। প্রশাসনের নির্লজ্জ দলীয়করণ হয়েছে।
কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপ ছাড়া তা মোকাবিলা সম্ভব নয়। তাঁদের দাবি, বাংলার পুলিশকে কেন্দ্র নিয়ন্ত্রণ করুক। অর্থাৎ রাষ্ট্রপতি শাসন জারি না হোক অন্তত সংবিধানের ৩৫৫ ধারা প্রয়োগ করে পুলিশ তথা আইনশৃঙ্খলাকে কেন্দ্রের অধীনে আনুক দিল্লি।
সাংবাদিক সম্মেলনে সেই প্রশ্নের জবাবে দিদি কার্যত রণংদেহি মেজাজে এদিন বলেন, “মিস্টার অমিত শাহ, হোম মিনিস্টার হিসেবে আমি আপনাকে সম্মান করি। আপনিও নাগরিক, আমিও নাগরিক। সেই হিসেবে সম্মান করি। কিন্তু আগুন নিয়ে খেলবেন না।” এরপরেই মমতা বলেন, “বাংলায় বিএসএফ রাজ চালাবেন না। আপনার কাজ সীমান্তে গরু পাচার আটকানো, অনুপ্রবেশ রুখে দেওয়া—আপনি সেটা করুন।”
এমনিতেই বিএসএফের এলাকা বৃদ্ধি নিয়ে এর আগে সরব হয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। চিঠি দিয়ে তিনি বলেছিলেন, এই সিদ্ধান্ত আসলে গণতান্ত্রিক সরকারের উপর সেচ্ছাচারী বুলডোজার। যদিও সেই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করেনি কেন্দ্র। মমতা এও বলেন, “অচিরেই বাংলায় সেই রাজনৈতিক পরিস্থিতি তৈরি হবে মানে কী? তার মানে উনি সেটা করবেন? উনি ষড়যন্ত্রকারী? এই তো, ঝুলি থেকে বিড়াল বেরিয়ে পড়েছে।”
প্রসঙ্গত, বাংলার বিধানসভা নির্বাচনে হারের এক বছর পর বাংলায় এলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।
এদিন সিএএ নিয়ে অমিত শাহ বলেছেন, কোভিড পরিস্থিতি মিটলেই নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন কার্যকর হবে। তা নিয়েও শাহের বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ শানান দিদি। তাঁর কথায়, “সিএএ বলে লাভ নেই। ওরা শুধু মিথ্যাচার আর ভ্রষ্টাচার জানে। নাগরিক না হলে ওঁরা ভোট দিল কী করে? ওঁরা সবাই নাগরিক।”
বৃহস্পতিবার শিলিগুড়িতে দাঁড়িয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে আক্রমণ করলেন। একই দিনে কলকাতায় অস্থায়ী তৃণমূল ভবনে রাজ্য কমিটির বৈঠকের পর পালটা জবাব দিলেন মমতাও। শাহের উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রীর সাফ বার্তা, ‘বাংলা নিয়ে ভাবার দরকার নেই, আপনারা আগে দিল্লি সামলান।’
মমতা বলেন, ‘উত্তরপ্রদেশে থানায় অভিযোগ জানাতে গেলে পুলিশ ধর্ষণ করে। বাংলায় এসব কখনও হয় না। আমি আমাদের কেউ দোষ করলে তাঁকেও ছাড়ি না। মেয়েদের জন্য কন্যাশ্রী, রূপশ্রী প্রকল্প রয়েছে। কৃষক, খেতমজুরদের জন্য আর্থিক সাহায্য দেওয়া হয়।
স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে রাজ্যের মানুষ বিনামূল্যে চিকিৎসা পায়।’ তিনি আরও বলেন, ‘কেউ যদি বলে বাংলায় যেও না, গেলে খুন হয়ে যাবে, সেসব শুনলে গায়ে লাগে। বাংলা ইজ বেটার দ্যান এনি আদার স্টেট (যে কোনও অন্য রাজ্যের থেকে বাংলা ভাল)।’
ওদিকে শিলিগুড়িতে দাঁড়িয়ে অমিত শাহ বলেন, সিএএ হবেই। করোনা কাল কেটে গেলেই সিএএ হবে। পালটা মমতা বললেন, ‘বাংলায় কোনও সিএএ হতে দেব না।’ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, দেশের নাগরিক সবাই, তাঁদের জন্য আবার সিএএ কীসের জন্য? এই নাগরিকরাই তো ভোট দিয়েছেন নরেন্দ্র মোদি, অমিত শাহকে। সাম্প্রতিক কালের বগটুই থেকে হাঁসখালি কাণ্ড নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আক্রমণের জবাবে দিল্লি-উত্তরপ্রদেশ দেখালেন মমতা।