
প্রচলিত মত অনুযায়ী, মহাশিবরাত্রিরের পুণ্যলগ্নেই বিয়ে ও মিলন হয়েছিল দেবাদিদেব ও আদি শক্তি পার্বতীর। তাই এমন তিথিতে ডুবস্নানের মাহাত্ম্যকে মাথায় রেখেই আজ সব রাস্তা প্রয়াগরাজমুখী।

‘হর হর মহাদেব’, একটানা, বিভিন্ন লয়ে, লক্ষ লক্ষ গলার সুরে কানে আসছে এই মন্ত্র । যেদিকে চোখ যাক না কেন, শুধুই মানুষের মাথা। ত্রিবেণী সঙ্গমে বুধবার সকাল থেকেই লাখ লাখ মানুষের ভিড়। মহাদেবের নাম নিয়ে চলছে ডুব স্নান। রসুলাবাদ ঘাট থেকে ত্রিবেণী ঘাট, পুণ্যের খোঁজে শেষ লগ্নে ডুব স্নানের হিড়িক গোটা প্রয়াগরাজ জুড়েই। ৪৫ দিন ধরে চলা মহাকুম্ভ স্নানের আজই শেষ দিন। মহাশিবরাত্রির অমৃতস্নানের সঙ্গেই সমাপ্ত হবে এই মহাযজ্ঞ। বিশেষজ্ঞদের দাবি, ১৪৪ বছরে একবার আসে এমন মহাযোগ।
ইতিমধ্যেই বিশ্বের সব থেকে বড় আধ্যাত্মিক জমায়েতের স্বীকৃতি পেয়েছে এই মহাকুম্ভ। আরাধনা থেকে পুণ্যলাভ, মহাকুম্ভের শুরু থেকেই উৎসাহ নজরে এসেছিল গোটা বিশ্ব জুড়ে। হলিউড কাপেল থেকে বিলিয়নিয়ার বিজ়নেস টাইকুন, স্টিভ জোভসের স্ত্রী থেকে গায়ক ক্রিস মার্টিন, ভুটানের রাজা-রানি হোন বা বস্তারের অমর যাদবের পরিবার মহাকুম্ভে ডুব দেওয়ার তালিকায় বাদ পড়েননি কেউই। কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী, গুজরাট টু বাংলার আমআদমির পাশেই ডুবস্নান সেরেছেন গ্লোবাল জনতা।

পরিসংখ্যান বলছে, মঙ্গলবার, ২৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রায় ৬৫ কোটি মানুষের পা পড়েছে মহাকুম্ভে। আর শেষ পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, আজ অর্থাৎ বুধবার ভোর চারটে পর্যন্ত অমৃত স্নান লগ্নে ডুব দিয়েছেন প্রায় ২৬ লাখ মানুষ। দিন গড়ালে গুণিতক হারে বাড়বে ‘ফুটফল’ তা বলাই বাহুল্য।
মহাকুম্ভ নিয়ে হিড়িকের আবহে ঘটেছে একাধিক দুর্ঘটনাও। কুম্ভমেলাতেই পদপিষ্ট হন ৩৩ জন মানুষ। সেই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে কোনও রকম অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পর্যাপ্ত পরিমাণে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছে উত্তরপ্রদেশ প্রশাসন। গোটা পরিস্থিতিতে নজর রাখতে গোরখনাথ মন্দিরে কুম্ভের কন্ট্রোলরুমে ভোর থেকেই হাজির মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। প্রশাসন সূত্রে খবর, মকর সংক্রান্তি ও বসন্ত পঞ্চমীতে ডুব দিতে আসা পুর্ণ্যার্থীদের ভিড়ের রেকর্ড ভেঙে যেতে পারে মহাশিবরাত্রির অমৃতস্নানে।

শিবরাত্রি আর মহাশিবরাত্রির তাৎপর্য জানুন :
প্রতি মাসে কৃষ্ণপক্ষের চতুর্দশী তিথিতে পালিত হয় মাসিক শিবরাত্রি। তবে বছরে একবার হয় মহা শিবরাত্রি। মাসিক শিবরাত্রি বিশেষ দিনে শিব ও শক্তির মিলনকে উদযাপন করা হয়। ভক্তরা সারাদিন উপবাস রেখে নিষ্ঠার সঙ্গে মহাদেব ও দেবী পার্বতীর পুজো করেন, তাঁদের আশীর্বাদ কামনা করেন।

হিন্দু পুরাণে বলা হয়েছে, মাসিক শিবরাত্রির উপবাস পালন করলে জীবনে শান্তি আসে এবং মোক্ষলাভ সম্ভব হয়। এই ব্রতের মাধ্যমে সমস্ত দুঃখ ও কষ্ট থেকে মুক্তি মেলে বলে বিশ্বাস করেন ভক্তরা। তাই শিবভক্তদের কাছে মাসিক শিবরাত্রি এক বিশেষ পবিত্র দিন, যেদিন তারা সম্পূর্ণ নিষ্ঠা ও ভক্তিভরে মহাদেবকে স্মরণ করেন।

প্রতি মাসের কৃষ্ণপক্ষের চতুর্দশী তিথিতে পালিত হয় মাসিক শিবরাত্রি, যা শিবভক্তদের কাছে অত্যন্ত পবিত্র দিন। তবে ফাল্গুন মাসের কৃষ্ণপক্ষের চতুর্দশী তিথি আরও বিশেষ, যা মহাশিবরাত্রি নামে পরিচিত। হিন্দু পুরাণ অনুসারে, এই দিন মধ্যরাতে ভগবান শিব লিঙ্গরূপে আবির্ভূত হন। সেই থেকেই এই তিথি শিব ও শক্তির মিলনের প্রতীক হিসেবে উদযাপিত হয়ে আসছে। প্রতিবছর ফেব্রুয়ারি বা মার্চ মাসে মহাশিবরাত্রি উদযাপন হয়, যা শিবভক্তদের জন্য সর্বোচ্চ আনন্দ ও নিষ্ঠার উৎসব।
মহাশিবরাত্রি পুজো বিধি জেনে নিন:
মহাশিবরাত্রির পুজো অত্যন্ত বিশেষ এবং নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করা হয়। এই দিন সকালে ব্রাহ্ম মুহূর্তে স্নান সেরে সংকল্প গ্রহণ করতে হয়। এরপর বাড়ির মন্দিরে শাস্ত্র অনুযায়ী ভগবান শিব ও দেবী পার্বতীর পুজো করতে হয়। পুজোর সময় শিবের মন্ত্র ১০৮ বার জপ করা শুভ মনে করা হয়।
পরে স্থানীয় মন্দিরে গিয়ে শিবলিঙ্গে জল, বেলপাতা, ভাং, ধূতরো, চন্দন ও অন্যান্য পবিত্র সামগ্রী নিবেদন করতে হয়। মহাশিবরাত্রির রাতে পুজোর বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে বলে মনে করা হয়। তাই রাতে পুজোর আগে আবার স্নান করে শুদ্ধ হয়ে নেওয়া হয়। রাতের যে কোনও পর্বে বা চারটি ধাপে শিবের পুজো করা যেতে পারে।
দই, ঘি, দুধ, চিনি, মধু ইত্যাদি দিয়ে শিবলিঙ্গে অভিষেক করার নিয়ম রয়েছে। কেউ চাইলে আখের রস দিয়েও শিবলিঙ্গ স্নান করাতে পারেন। পুজোর সময় শিবরাত্রির উপবাস কাহিনী শোনা শুভ বলে ধরা হয়। এছাড়া শিবের মন্ত্র পাঠ করলে পূণ্য লাভ হয়। পুজোর শেষে পরিবারের সবাই মিলে ভগবান শিবের আরতি করে ভোগ নিবেদন করতে হয়। তারপর উপবাস ভঙ্গের মাধ্যমে এই পবিত্র দিনের সমাপ্তি ঘটে।
