বাগদা:বাগদা বিধানসভার উপনির্বাচনে জয়ী হয়ে ইতিহাস গড়লেন তৃণমূলের প্রার্থী মধুপর্ণা ঠাকুর। বর্তমান বিধানসভায় সর্বকনিষ্ঠ বিধায়ক নির্বাচিত হলেন তিনি। ২৫ বছরেই বিধানসভার অলিন্দে পা রাখতে চলেছেন মধুপর্ণা ঠাকুর। চলতি বিধানসভায় রাজ্যের সর্বকনিষ্ঠ বিধায়ক হচ্ছেন মতুয়া পরিবারের সদস্য তথা তৃণমূল সাংসদ মমতাবালা ঠাকুরের মেয়ে মধুপর্ণা। দেখুন ভিডিও
প্রথমবার রাজনীতির ময়দানে নেমেই ছক্কা হাঁকালেন তিনি। ১৩ বছর পর মতুয়া অধ্যুষিত বাগদা কেন্দ্রে তাঁর হাত ধরেই কামব্যাক করল তৃণমূল। কপিলকৃষ্ণ ঠাকুর ও মমতাবালা ঠাকুরের মেয়ে মধুপর্ণা। বর্তমানে তিনি মতুয়া মহাসংঘের সহ- সংঘাধিপতি।
বিধায়ক নির্বাচিত হওয়ার দিন তাঁর বয়স ২৫ বছর ১ মাস ১৩ দিন। ১৯৯৯ সালের ৩০ মে মহারাষ্ট্রের চন্দ্রপুরে জন্ম মধুপর্ণার। সেখানেই শুরু লেখাপড়া। মাধ্যমিক পাশ করেন নাগপুর থেকে। উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন বিধাননগরের কেন্দ্রীয় বিদ্যালয় থেকে। প্রপিতামহের নামাঙ্কিত পিআর ঠাকুর গভর্নমেন্ট কলেজ থেকে বিএসসি পাশ করেছেন। বর্তমানে বারাসত বিশ্ববিদ্যালয়ে উদ্ভিদবিদ্যা নিয়ে এমএসসি পড়ছেন তিনি। অল্পদিনেই রাজনীতির ময়দানে নজর কেড়েছেন তিনি। শুরুটা করেছিলেন অবশ্য অরাজনৈতিকভাবেই।
ঠাকুরনগর ঠাকুরবাড়িতে বড়মা বীণাপাণিদেবীর পৈত্রিক ঘর ফিরে পাওয়ার দাবিতে আন্দোলনে বসেন তিনি। তাঁর সেই আন্দোলনে মতুয়া সমাজের একটা বড় অংশ তাঁকে সমর্থন করে। আর এতেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নজরে পড়ে যান মধুপর্ণা। বাগদা বিধানসভা উপনির্বাচনে বিশ্বজিৎ দাস প্রার্থী হতে রাজি না হওয়ায় মধুপর্ণাকেই প্রার্থী করার সিদ্ধান্ত নেন তৃণমূল নেত্রী। লড়াইটা কঠিন ছিল। কিন্তু মধুপর্ণা রাজি হয়ে গিয়েছিলেন। শুধু রাজি হওয়াই নয়। জীবনের প্রথম লড়াইটা জেতার তাগিদ ছিল তাঁর ভিতরে। চ্যালেঞ্জ হিসেবেই নিয়েছিলেন ভোটটাকে।
বাগদা বিধানসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচনে জয়ী হয়েই তৃণমূল প্রার্থী মধুপর্ণা ঠাকুর জানিয়েছিলেন তিনি ‘বড়মা’ বীণাপাণি দেবীর বন্ধ ঘরে ঢুকবেন আশীর্বাদ নেওয়ার জন্য। শনিবার বিকেলে জয়ের পর বড়মার ঘরে ঢোকেন মধুপর্ণা। ঘরের মধ্যে ঢুকে আশীর্বাদ নেন তিনি। মমতাবালা ঠাকুর জানিয়েছেন, আদালতের নির্দেশেই তাঁরা ঘর ফিরে পেয়েছেন। দীর্ঘ প্রায় কয়েক মাস পর মতুয়া ভক্তরা আবারও বড়মা বীণাপাণিদেবীর ঘরে ঢুকে তা পরিষ্কার করে পুজোর ব্যবস্থা করেন। এদিকে শৈশবের স্মৃতি বিজড়িত ঘরে ঢুকতে পেরে খুশি মধুপর্ণাও।
শান্তনু অবশ্য ঠাকুর বলেন, ‘বিষয়টি একটি আইনি ব্যবস্থার মধ্যে রয়েছে। তার মধ্যেই যারা তালা ভেঙেছে তাদের বিরুদ্ধে আবারও একটি আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নের ডালি নিয়ে বারবার পৌঁছে গিয়েছেন বাগদার মানুষের কাছে। দলের সিনিয়র লিডাররা যেভাবে পথ দেখিয়েছেন সেই পথেই এগিয়েছেন মধুপর্ণা। আর এতেই এল সাফল্য। তখনও শংসাপত্র হাতে পাননি। কিন্তু ফলাফলের ট্রেন্ড বলে দিচ্ছিল বড় ব্যবধানেই জিততে চলেছেন তিনি। সংবাদ মাধ্যমের প্রশ্নের উত্তরে মধুপর্না তাই জানাতে ভুললেন না এই জয় তাঁর পথ চলা শুরু। মানুষের জন্য কাজ করতে চান তিনি।
আগামী দিনে কী কী কাজ করবেন তাও যেন ছকে ফেলেছেন মধুপর্ণা। বললেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে বাগদায় অনেক কিছুই হয়েছে। কিন্তু আরও কাজ বাকি। ভোটের প্রচারে বিভিন্ন এলাকায় যাওয়ার সুবাদে মানুষের অভাব অভিযোগ সমস্যার কথা শুনেছেন তিনি। সেতু, রাস্তাঘাট, আলো, পানীয় জল, নিকাশির কিছু সমস্যা এখনও রয়ে গিয়েছে। গুরুত্ব দিয়ে সেই কাজগুলি করতে চান তিনি। সর্বোপরি মতুয়া সমাজের উন্নয়নে যে তাঁর পাখির চোখ সেটাও জানাতে ভোলেননি বাগদার জয়ী তৃণমূল প্রার্থী।
বাগদায় জয়ের আবির এবার তৃণমূলই খেলবে বলে আগেই দাবি করেছিলেন মধুপর্ণা ঠাকুর। আর সেই দাবিই প্রমাণিত হল। মতুয়া অধ্যুষিত বাগদায় জয়ী হলেন তৃণমূল প্রার্থী মধুপর্ণা ঠাকুর। ৩৩,৪৫৫ ভোটে জয়ী হয়েছেন তিনি। তাঁর প্রাপ্ত ভোট ১ লক্ষ ৭ হাজার ৭০৬। বিজেপি প্রার্থী বিনয়কুমার বিশ্বাস পেয়েছেন ৭৪,২৫১ ভোট। আর ফরওয়ার্ড ব্লক প্রার্থী গৌর বিশ্বাস পেয়েছেন ৮,১৮৯ ভোট।
এদিন মধুপর্ণা বলেন, ‘আগে থেকেই বলেছি জয় নিশ্চিত। এবার জয়ের আবির আমরাই খেলব। মানুষ বুঝতে পেরেছে। দিদি ছাড়া কেউ উন্নয়ন করতে পারবে না।’ ভোটের দিন বাগদা বিধানসভা কেন্দ্রে বিভিন্ন সময় উত্তেজনার খবর উঠে আসে। বিজেপির তরফ থেকে বারেবারেই সন্ত্রাসের অভিযোগ করা হয়।
এদিন তার প্রেক্ষিতে মধুপর্ণা বলেন, ‘হেরে গিয়েছেন, এখন কাঠিবাজি ছাড়া আর কোনও কাজ নেই। এখনও কাঠিবাজি করে যাচ্ছেন। আমি তো ঘরে বসে ভাবছিলাম যে, বিনয়কুমার বিশ্বাসের তো কোনও কাজ নেই। তিনি ঘরে বসে পপকর্ন খান, আর দেখুন তৃণমূল জিতছে।’
ভোটে জিতে মানুষকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন মধুপর্ণা। তিনি বলেন, ‘আমায় ঘরের মেয়ে হিসেবে সবাই যে আশীর্বাদ করেছে, তার জন্য তাদের ধন্যবাদ। আমি যেন কাজ করতে পারি। যেন তাদের পাশে দাঁড়াতে পারি।’ একইসঙ্গে বাড়ির পারিবারিক সমস্যারও তিনি সমাধান করতে চান বলে জানান মধুপর্ণা।