বাগদা: চলতি বিধানসভায় রাজ্যের সর্বকনিষ্ঠ বিধায়ক হতে চলেছেন মতুয়া পরিবারের সদস্য তথা তৃণমূল সাংসদ মমতাবালা ঠাকুরের মেয়ে মধুপর্ণা ঠাকুর। তাঁর বয়স ২৫ বছর। প্রথমবার ময়দানে নেমেই ছক্কা হাঁকালেন তিনি। ১৩ বছর পর বাগদা কেন্দ্রে তাঁর হাত ধরেই কমব্যাক করল তৃণমূল।
বাগদা বিধানসভা কেন্দ্রে জয়ী হল তৃণমূল। ৩৩,৪৫৫ ভোটে জয়ী হয়েছেন তৃণমূল প্রার্থী মধুপর্ণা ঠাকুর।
বাগদায় জয়ের আবির এবার তৃণমূলই খেলবে বলে আগেই দাবি করেছিলেন মধুপর্ণা ঠাকুর। আর সেই দাবিই প্রমাণিত হল। মতুয়া অধ্যুষিত বাগদায় জয়ী হলেন তৃণমূল প্রার্থী মধুপর্ণা ঠাকুর। ৩৩,৪৫৫ ভোটে জয়ী হলেন তিনি। তাঁর প্রাপ্ত ভোট ১ লক্ষ ৭ হাজার ৭০৬। বিজেপি প্রার্থী বিনয়কুমার বিশ্বাস পেয়েছেন ৭৪,২৫১ ভোট। আর ফরওয়ার্ড ব্লক প্রার্থী গৌর বিশ্বাস পেয়েছেন ৮,১৮৯ ভোট।
এদিন মধুপর্ণা বলেন, ‘আগে থেকেই বলেছি জয় নিশ্চিত। এবার জয়ের আবির আমরাই খেলব। মানুষ বুঝতে পেরেছে। দিদি ছাড়া কেউ উন্নয়ন করতে পারবে না।’ ভোটের দিন বাগদা বিধানসভা কেন্দ্রে বিভিন্ন সময় উত্তেজনার খবর উঠে আসে। বিজেপির তরফ থেকে বারেবারেই সন্ত্রাসের অভিযোগ করা হয়। এদিন তার প্রেক্ষিতে মধুপর্ণা বলেন, ‘হেরে গিয়েছেন, এখন কাঠিবাজি ছাড়া আর কোনও কাজ নেই। এখনও কাঠিবাজি করে যাচ্ছেন। আমি তো ঘরে বসে ভাবছিলাম যে বিনয়কুমার বিশ্বাসের তো কোনও কাজ নেই। তিনি ঘরে বসে পপকর্ন খান, আর দেখুন তৃণমূল জিতছে।’
ভোটে জিতে মানুষকে ধন্যবাদও জানান মধুপর্ণা। তিনি বলেন, ‘আমায় ঘরের মেয়ে হিসেবে সবাই যে আশীর্বাদ করেছে, তার জন্য তাদের ধন্যবাদ। আমি যেন কাজ করতে পারি। যেন তাদের পাশে দাঁড়াতে পারি।’ একইসঙ্গে বাড়ির পারিবারিক সমস্যারও তিনি সমাধান করতে চান বলে জানান মধুপর্ণা।
উল্লেখ্য, কিছুদিন আগেই নিজের পৈতৃক ভিটে তথা বড়মা বীণাপানি দেবীর ঘর ফিরে পাওয়ার দাবিতে আন্দোলনে বসেছিলেন ঠাকুরনগর ঠাকুরবাড়ির সদস্যা তথা কপিলকৃষ্ণ ঠাকুর ও তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ মমতাবালা ঠাকুরের মেয়ে মধুপর্ণা ঠাকুর। মতুয়া ভক্তদের একাংশ তাঁর সঙ্গে এই লড়াইয়ে শামিলও হয়েছিল, যা বিশেষ নজর কারে তৃণমূল নেতৃত্বের।
বর্তমানে মধুপর্ণা ঠাকুর সারা ভারত মতুয়া মহাসংঘের সহ-সংঘাধিপতি। ঠাকুরনগরে অবস্থিত পিআর ঠাকুর গভর্নমেন্ট কলেজ থেকে প্রাণিবিদ্যায় স্নাতক মধুপর্ণা। ঠাকুরবাড়ি হোক বা মতুয়া আন্দোলন, সবেতেই নতুন মুখ হিসেবে উঠে এসেছেন তিনি।
অবশেষে বাগদা বিধানসভা উপনির্বাচনের মধ্যে দিয়ে প্রত্যক্ষ রাজনৈতিক জীবনের পা রাখলেন তিনি। সম্পর্কে তুতো দাদা তথা ঠাকুর পরিবারের আরও এক সদস্য শান্তনু ঠাকুর বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্রে দ্বিতীয়বারের জন্য জয়ী হয়েছেন। আর বোনও এবার বাগদা বিধানসভার উপনির্বাচনে জয়ী হয়ে জনপ্রতিনিধি।
গত বিধানসভা নির্বাচনে এই কেন্দ্রে জয়ী হয়েছিলেন বিজেপি প্রার্থী বিশ্বজিৎ দাস। পরবর্তীকালে তিনি তৃণমূলে যোগ দেন। শুধু গত বিধানসভাই নয়, সদ্য সমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনেও বাগদায় ২০ হাজারের বেশি ভোটে এগিয়ে ছিল বিজেপি। তাই পিছিয়ে পড়া এই আসন নিজেদের দখলে নেওয়াটাই চ্যালেঞ্জ ছিল তৃণমূল কংগ্রেসের। সেই কারণেই প্রার্থী নির্বাচনে বিশেষ নজর দেয় ঘাসফুল শিবির।
তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পর বিশ্বজিৎ দাস লোকসভা নির্বাচনে বনগাঁ কেন্দ্রে প্রার্থী হয়েছিলেন। কিন্তু তিনি হেরে যান তিনি। তাই ফের তাঁকে এই কেন্দ্রের উপনির্বাচনে প্রার্থী করা হবে কিনা তা নিয়ে জল্পনা চলছিল। কিন্তু প্রার্থী তালিকায় নতুন চমক আনে তৃণমূল। উপনির্বাচনে একেবারে নতুন মুখকে বাগদা বিধানসভার ভোট লড়াইয়ে নেমেছিল শাসক দল। ঠাকুর পরিবারের সদস্য তথা রাজ্যসভার সাংসদ মমতাবালা ঠাকুরের মেয়ে মধুপর্ণাকে বেছে নেয় তারা।
বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্রে এবারও জয়ী হয়েছেন শান্তনু ঠাকুর। বিজেপির সাংসদ তাঁদেরই পরিবারের সদস্য। মতুয়া ভোটের একটা বড় অংশ পেয়ে তিনি জয়ী হয়েছেন। এই ভোট তৃণমূলের দিকে ঘুরবে কিনা তা নিয়ে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত অনিশ্চয়তা ছিল। কিন্তু শেষ হাসি হাসলেন মধুপর্ণা। দীর্ঘদিন বাদে মতুয়া গড় ফিরে পেয়ে খুশি তৃণমূল কর্মী সমর্থকরা। মানুষ পাশে রয়েছেন, জানালেন সর্বকনিষ্ঠ বিধায়ক। মাত্র ২৫ বছরে বিধায়ক হয়ে কামাল করলেন তিনি।
সেক্ষেত্রে এখন দেখার ঠাকুর বাড়ির অন্দরমহলের চিত্র, রাজ্য রাজনীতিতে কী প্রভাব ফেলে।