Baba Loknath: জন্মাষ্টমী তিথিতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন বাবা লোকনাথ ব্রহ্মচারী। তিথি অনুযায়ী আজ বাবা লোকনাথের জন্মদিবস। জানা যায়, ১১৩৭ বঙ্গাব্দে ১৮ ভাদ্র উত্তর ২৪ পরগণা থেকে কিছুটা দূরে কচুয়া গ্রামে এক ব্রাহ্মণ পরিবারে এই জন্মাষ্টমী তিথিতেই জন্মগ্রহণ করেন যুগ পুরুষ বাবা লোকনাথ। তার পিতার নাম রামনারায়ণ ও মায়ের নাম কমলাদেবী। নিজের অমোঘ বাণীর মাধ্যমে সকলকে সহজে ও সুখে জীবনযাপন করার পথ দেখিয়েছেন লোকনাথ। জেনে নিন বাবা লোকনাথের কিছু বাণী, যা আপনার দুঃখ, কষ্ট ও সমস্যা সমাধানের পথ দেখাবে।
ছোটবেলা থেকেই নিজের সেবাযত্ন, উপদেশ দিয়ে সকলকে সমৃদ্ধ করেছিলেন তিনি। তিথি অনুযায়ী ১ ভাদ্র তাঁর জন্মদিন। আর সেই তিথি অনুযায়ী তাঁর জন্ম দিবস উপলক্ষে উত্তর ২৪পরগনার বনগাঁর ১২-র পল্লী স্পোটিং ক্লাবের প্রাঙ্গণে প্রতি বছরের মতো এবারও ১১ দিনের গীতা পাঠ ও লীলা কীর্ত্তনের আয়োজন হয়েছে৷
পুরাণ মতে দ্বাপর যুগের এই তিথিতেই মানবরূপে মর্তে আবির্ভাব হয়েছিলেন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ। এই উৎসবগুলি কৃষ্ণাষ্টমী, গোকুলাষ্টমী, অষ্টমী রোহিণী, শ্রীকৃষ্ণজয়ন্তী ইত্যাদি নামেও পরিচিত। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বিশেষত বৈষ্ণবদের কাছে জন্মাষ্টমী একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎসব।
এবছর দেশজুড়েই ১৮ ও ১৯ অগাস্ট দুদিনব্যাপী পালিত হয়েছে জন্মাষ্টমী।
১২-র পল্লী লোকনাথ মন্দির কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান নারায়ণ ঘোষ বলেন, জন্মাষ্টমীর পূর্ণলগ্নে বাবা লোকনাথেরও জন্মদিন সেই জন্য এদিন বনগাঁর ১২র পল্লীর বাবা লোকনাথ মন্দির-এর প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে শুরু হয় সনাতন মহা ধর্মীয় সম্মেলন৷ এদিন উপবাস রেখে তাঁর আবির্ভাব তিথি পালন করেন লোকনাথ বাবার হাজার হাজার ভক্তরা। নদিয়ার চাকদহের গঙ্গা থেকে কলস ভর্তি করে জল নিয়ে এসে বনগাঁর মন্দিরে প্রতিষ্ঠিত লোকনাথ বাবার বিগ্রহকে স্নান করান তাঁর প্রিয় ভক্তরা৷
তারপর থেকে টানা আরও ১১ দিন ধরে মন্দির প্রাঙ্গণে প্রভুপাদ শ্রী রতনকৃষ্ণ গোস্বামী মহারাজ শ্রী মদ্ভগবত গীতা পাঠ করেন, বিশিষ্ট শিল্পীবৃন্দ লীলা কীর্ত্তন এবং ভক্তি মূলক সংগীত পরিবেশন করেন৷ অনুষ্ঠানের শেষ দিনে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা সহ নগর কীর্ত্তন এবং মহাভোগ প্রসাদ বিতরণ করা হয় কয়েক হাজার ভক্তদের মধ্যে৷ এই মন্দির চত্বর ঘিরে বসে মেলা৷ আর এই ধর্মীয় সম্মেলন শেষ হতেই খুঁটি পুজো দিয়ে বাঙালীর শ্রেষ্ঠ উৎসব শারদোৎসবের সূচনা হয় ১২-র পল্লী স্পোর্টিং ক্লাবে৷ দেখুন ভিডিও :
লোকনাথ বাবার কিছু বাছাই করা উপদেশ রইল দেখুন এক নজরে:
১. গর্জন করবি কিন্তু আহাম্মক হবি না, ক্রোধ করবি কিন্তু ক্রোধান্ধ হবি না।
২. যে ব্যক্তি সকলের সুহৃদ আর যিনি কায়মনোবাক্যে সকলের কল্যাণ সাধন করেন তিনি যথার্থ জ্ঞানী।
৩. আমিও তোদের মত খাই-দাই মল-মূত্র ত্যাগ করি। আমাকেও তোদের মতোই একজন ভেবে নিস। আমাকে তোরা শরীর ভেবে ভেবেই সব মাটি করলি আর আমি যে কে, তা আর কাকে বোঝাবো। সবাই তো ছোট ছোট চাওয়া নিয়ে ভুলে রয়েছে, জানল না প্রকৃত আমি কে?
৪. অর্থ উপার্জন করা, তা রক্ষা করা আর তা ব্যয় করার সময় বিশ্ব দুঃখ ভোগ করতে হয়। অর্থ সকল অবস্থাতেই মানুষকে কষ্ট দেয়। তাই অর্থ ব্যয় হলে বা চুরি হলে তার জন্য চিন্তা করে কোনও লাভ নেই।
৫. যাহারা আমার নিকট আসিয়া, আমার আশ্রয় গ্রহণ করে তাহাদের দুঃখে আমার হৃদয় আদ্র হয়। এই আদ্রতাই আমার দয়া ইহাই আমার শক্তি, যা তাদের উপর প্রসারিত হয় এবং তাহাদের দুঃখ দূর হয়।
৬. যে কর্ম মনে তাপ সৃষ্টি করে তাই পাপ। যে কর্মের মধ্য দিয়ে আত্মসচেতনতা বা শক্তির ভাব মনকে ভরিয়ে তোলে, তাই পুণ্য এবং স্বর্গ তুল্য।
৭. পিতা-মাতা তাঁরা যতই বৃদ্ধ হোক না-কেন পিতামাতাই। তাঁদের খুশি করার জন্য বিরক্ত না হয়ে বার বার তাঁদের প্রশ্নের উত্তর দিবি। আর কোনও কারণ জিজ্ঞাসা না-করে তাঁদের ইচ্ছা পূরণ করার চেষ্টা করবি।
৮. সূর্য উঠলে যেমন আধার পালিয়ে যায়, গৃহস্থের ঘুম ভেঙে গেলে যেমন চোর পালিয়ে যায়, ঠিক তেমনি বার বার বিচার করলে খারাপ কাজ করার প্রবৃত্তি পালিয়ে যাইবে।
৯. গীতা কি আর নিত্য পাঠ করাপর জিনিস, গীতা যে গীতা। গীতা পাঠ করলে কী হবে, শোনার চেষ্টা করতে হবে। প্রতিটি জীব হৃদয়ে বসে যে ভগবান নিত্য গীতা শোনাচ্ছেন, যেদিন শুনবি সেদিন গীতা হয়ে যাবি।
১০. সত্যের মতো পবিত্র আর কিছু নেই, সত্যিই স্বর্গ গমনের একমাত্র সোপান রূপ সন্দেহ নেই।
১১. আমি শরীর ছেড়ে দিয়েছি। কিন্তু ভক্তের রক্ষা করার জন্য আমি সর্বদাই ভক্তের সঙ্গে রয়েছি। তোদের চোখ নেই, তাই তো তোরা আমায় দেখেও দেখিস না।
১২. যে ব্যক্তি কৃতজ্ঞ, ধার্মিক, সত্যচারী, উদারচিত্ত, ভক্তিপরায়ন, জিতেন্দ্রিয়, মর্যাদা রক্ষা করতে জানে আর কখনও আপন সন্তানকে পরিত্যাগ করেন না, এমন ব্যক্তির সঙ্গে বন্ধুত্ব করুন।
১৩. আমার ওপর আস্থা, বিশ্বাস, যা বাড়বে, ততই তোদের সর্ব অভীষ্ট সফল হবে।
১৪. প্রতিদিন রাতে শোবার সময় সারাদিনের কাজের হিসেব-নিকেশ করবি। অর্থাৎ ভালো কাজ কী কী করেছিস আর খারাপ কাজ কী কী করেছিস? যে সকল খারাপ বলে বিবেচনা করলি, সে সকল কাজ আর যাতে না করতে হয় সেদিকে খেয়াল রাখবি।
১৫. দীন দরিদ্র অসহায় মানুষের হাতে যখন যা দিবি তা আমিই পাব, আমি গ্রহণ করব। দরিদ্রতায় ভরা সমাজের দুঃখ দূর করার চেষ্টা করবি।
১৬. অন্ধকার ঘরে থাকিলে, তোকে যদি কেহ জিগ্যেস করে তুই কে? তুই বলিস ‘আমি’। আমাকে যদি কেহ জিগ্যেস করে আমিও বলি ‘আমি’।
নামে নামে এত মিত্রতা হয় আর আমিতে আমিতে কী কোনও মিত্রতা হইতে পারে না?
১৭. ইচ্ছায় হোক, অনিচ্ছায় হোক, যে সন্তান মায়ের আদেশ পালন করে ভগবান তার মঙ্গল করেন।
১৮. এই বিরাট সৃষ্টির মধ্যে এমন কিছু নেই যাকে উপেক্ষা করা চলে বা ছোট ভাবা যায়। প্রতিটি সৃষ্টি বস্তু বা প্রাণী নিজ নিজ স্থলে স্বমহিমায় মহিমান্বিত হয়ে আছে জানবি।
১৯. সচেতন হতে হবে। অচেতনাই জীবনের ধর্ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। নিরন্তর অভ্যাস এবং চেষ্টার ফলে তাকে সচেতনতায় রূপান্তরিত করতে হবে।
২০. রণে, বনে, জঙ্গলে যখনই বিপদে পড়বি, আমাকে স্মরণ করবি, আমিই রক্ষা করবো।