রবিবার রাজ্যে পর পর চারটি সভা রয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর। প্রথমেই তিনি পৌঁছে গিয়েছেন ভাটপাড়ায়। ব্যারাকপুরের বিজেপি প্রার্থী অর্জুন সিংহের সমর্থনে সেখানে প্রচার করার কথা তাঁর। এর পর চুঁচুড়ায় লকেট চট্টোপাধ্যায়ের সমর্থনে, আরামবাগে অরূপকান্তি দিগরের সমর্থনে এবং সাঁকরাইলে রথীন চক্রবর্তীর সমর্থনে আরও তিনটি জনসভা করবেন মোদী। এই কেন্দ্রগুলিতে আগামী ২০ মে পঞ্চম দফায় ভোট রয়েছে। শনিবারই তিনি কলকাতায় চলে এসেছেন। রাতে ছিলেন রাজভবনে। শনিবার রাতে মোদীর কলকাতায় পৌঁছনোর পরেই সন্দেশখালির আরও একটি ‘স্টিং ভিডিয়ো’ প্রকাশ্যে এসেছে। সেখানেও দেখা গিয়েছে স্থানীয় বিজেপি নেতা গঙ্গাধর কয়ালকে। ওই ভিডিয়ো এখন রাজ্য রাজনীতির চর্চার কেন্দ্রে।
বাংলায় এবার অন্যরকম পরিস্থিতি, গতবারের সাফল্যকে ছাপিয়ে যাবে বিজেপি।
রবিবার ব্যারাকপুর লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী অর্জুন সিংয়ের সমর্থনে ভাটপাড়ার জগদ্দলে সভা থেকে দাবি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর।
আগামী ২০ মে পঞ্চমদফায় ভোট রয়েছে ব্যারাকপুরে। মোদীর কথায়, “পূর্ব ভারতের গুরুত্পূর্ণ রাজ্য বাংলা। এখানে এবার অন্যরকম পরিস্থিতি। গতবারের সাফল্যকে ছাপিয়ে যাবে বিজেপি।”
১৯ এর লোকসভা ভোটে বাংলা থেকে ১৮টি আসনে জয়ী হয়েছিল বিজেপি। গত মাসে বারাসতে নির্বাচনী সভা থেকে সন্দেশখালির প্রসঙ্গ টেনে মোদী বলেছিলেন, “৪২ এ ৪২ চাই।”
এদিন অবশ্য সরাসরি কোনও সংখ্যার উল্লেখ করেননি প্রধানমন্ত্রী। তৃণমূল এবং সিপিএমকে এক বন্ধনীতে রেখে মোদী বলেন, “‘বাংলায় রামনবমী পালন করতে দেয় না, রামের নাম নিতে দেয় না তৃণমূলের সরকার। কংগ্রেস আর বামফ্রন্টও রামনবমীর বিরুদ্ধে। এমন লোকজনের হাতে এই মহান দেশ তুলে দেওয়া যায় কি?”
খানিক থেমে জবাবও দিয়েছেন নিজেই, “কংগ্রেসের আমলে দেশে দারিদ্র বেড়েছিল। আর তৃণমূল বাংলাকে দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করেছে। চোরেদের জেলে ভরতেই হবে।”
জনতার উদ্দেশে মোদী বলেন, “তৃণমূল বলে কেন্দ্র টাকা দিচ্ছে না। আপনারা মন দিয়ে শুনুন, কিছুদিন আগে সিএজি রিপোর্ট আসে। ২ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকার কোনও হিসেব দেয়নি তৃণমূল। তৃণমূল যে কত বড় দুর্নীতিগ্রস্ত দল, তার সবচেয়ে ব় প্রমাণ শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি। এরা সরকারে থেকে চাকরি বিক্রি করেছে! কত বড় দুর্নীতি ভাবুন।”
সন্দেশখালি প্রসঙ্গে ভাটপাড়ার সভা থেকে মোদী বলেন, ‘‘সন্দেশখালিতে কী হচ্ছে, সারা দেশ দেখছে। তৃণমূলের পুলিশ ওদের বাঁচিয়েছে। নতুন খেলা শুরু করেছে। ওদের গুণ্ডা সন্দেশখালির বোনেদের ভয় দেখাচ্ছে। কারণ অত্যাচারীর নাম শাহজাহান শেখ। ওঁকে ক্লিনচিট দিতে চায় তৃণমূল।’’
মোদী বলেন, ‘‘এখানে ওএমআর শিট জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। ভুয়ো ইন্টারভিউ নেওয়া হয়েছে। তৃণমূল সরকারের আমলে শুধু দুর্নীতি হয়েছে। বাংলার এই লুঠের পাইপয়সার হিসাব নেব। কাউকে ছাড়া হবে না। বাংলার ভুক্তভোগীদের বলতে চাই, মোদী আছে। দুর্নীতিগ্রস্তেরা কেউ বাঁচতে পারবে না।’’
মোদী কর্নাটকের উদাহরণ দিয়ে বলেন, ‘‘কর্নাটকে কংগ্রেস ওসিবিদের সংরক্ষণ সব মুসলমানদের দিয়ে দিয়েছে। বাংলাতেও আপনাদের সতর্ক থাকতে হবে। ভোটব্যাঙ্কের এই রাজনীতি সিএএ-র মতো আইনকে ‘ভিলেন’ বানিয়ে দিয়েছে।’’
মোদী জানান, হিন্দুদের উপর অত্যাচার বাংলায় বরদাস্ত করা হবে না। তাঁর কথায়, ‘‘বাংলায় হিন্দুদের দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক করে রাখতে চান তৃণমূল নেতৃত্ব। হিন্দুদের ভাসিয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছে। এত বড় সাহস! আদিবাসী, দলিতদের সঙ্গে অন্যায় এই দেশ মেনে নেবে না।’’
ভাটপাড়ার সভা থেকে বাংলার মানুষের জন্য পাঁচটি গ্যারান্টি দিলেন মোদী—
ধর্মের ভিত্তিতে সংরক্ষণ দেওয়া হবে না
তফসিলি জনজাতির সংরক্ষণ কেউ শেষ করতে পারবে না
রামনবমী পালন করতে, রামের পুজোয় কেউ বাধা দিতে পারবে না
রামমন্দিরে সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্ত কেউ বদলাতে পারবে না
সিএএ কেউ বন্ধ করতে পারবে না
ঝড়ঝঞ্ঝার মাঝেই শনিবার সন্ধেয় রাজ্যে এসে পৌঁছন মোদী। রাতে রাজভবনেই ছিলেন। এদিন রাজ্যে মেগা কর্মসূচি রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর। ব্যারাকপুরের সভার পরে হুগলির চুঁচড়ায় লকেট চট্টোপাধ্যায়ের সমর্থনে নির্বাচনী জনসভা করবেন তিনি। সেখান থেকে আরামবাগের পুরশুড়ায় বিজেপি প্রার্থী অরূপকান্তি দিগড়ের হয়ে প্রচার করবেন। সেখান থেকে হাওড়া। বিজেপি প্রার্থী রথীন চক্রবর্তীর সমর্থনে জনসভা দিয়ে শেষ করবেন কর্মসূচি।
প্রধানমন্ত্রীর সফরকে কেন্দ্র করে শনিবার বিকেল থেকেই কলকাতা শহরের বিভিন্ন রাস্তায় যান নিয়ন্ত্রণ শুরু করেছে পুলিশ।