বসিরহাটে দলীয় প্রার্থী হাজি নুরুল ইসলামের জয়ের পর তাঁর প্রথম পরিদর্শন হবে সন্দেশখালি। বসিরহাটের সভা থেকে সাফ জানিয়ে দিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
এদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘বসিরাহাটে হাজি নুরুল যেদিন জিতবে, তার কয়েকদিন পরে আমার প্রথম ভিজিট এবার সন্দেশখালি হবে। তার কারণ, আমি আপনাদের দেখতে যাব।’ একইসঙ্গে মা-বোনেদের যে ভাবে অপামান করা হয়েছে, তর জন্য তিনি মর্মাহত বলেও মন্তব্য করেন তৃণমূল নেত্রী।
চব্বিশের লোকসভা ভোটে আগাগোড়াই সন্দেশখালি কাণ্ডে তৃণমূল সরকারকে নিশানা করেছে বিজেপি। বঙ্গ বিজেপি তো বটেই বাংলায় প্রচারে এসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী থেকে শুরু করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ কিংবা সব কেন্দ্রের নেতারা সন্দেশখালি নিয়ে তৃণমূলকে কোণঠাসা করতে ছাড়েনি। এমনকী সন্দেশখালিতে বেছে বেছে হিন্দু মেয়েদের উপর নির্যাতন করা হয়েছে বলেও তোপ দেগেছে বিজেপি। কিন্তু বাংলায় মেয়েদের উপর অত্যাচার হলে কাউকে ছাড়া হয় না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যেপাধ্যায়। শুধু তাই নয়, বিজেপি শাসিত রাজ্যে মেয়েদের উপর অত্যাচারের প্রসঙ্গও তুলে ধরেন তিনি।
বসিরহাটে প্রচারে গিয়ে মঙ্গলবার মমতা বলেন, “উত্তরপ্রদেশে মহিলাদের উপর অত্যাচার হয়েছে। দলিতদের উপর অত্যাচার হয়েছে। আমাদের এখানে হয় না। আমাদের এখানে যে দু’-একটা ঘটনা হয়, আমরা সঙ্গে সঙ্গে তার ব্যবস্থা নিই। রাম হোক বা রহিম কেষ্ট হোক বা বিষ্টু। সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। কাউকে ছা়ড়া হয় না।’’
রেশন দুর্নীতি মামলার তদন্তে গত জানুয়ারি মাসে সন্দেশখালিতে প্রাক্তন তৃণমূল নেতা শাহজাহান শেখের বাড়িতে গিয়ে আক্রান্ত হয় ইডি। তারপর থেকেই শিরোনামে উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্রের সন্দেশখালি। জমি দখল, নারী নির্যাতন সহ একাধিক অভিযোগে শাহজাহান বাহিনীর বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামে সন্দেশখালিবাসী। বহু ঘটনারপ্রবাহের মধ্য দিয়ে ইতিমধ্যে গ্রেফতার হয়েছে শাহজাহান সহ তাঁর শাগরেদরা। তবে গত এপ্রিল মাসে সন্দেশখালি কাণ্ড নতুন মোড় নেয়। সন্দেশখালির বেশ কয়েকটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। যেখানে বিজপি নেতা গঙ্গাধর কয়ালকে বলতে শোনা যায়, সন্দেশখালির ঘটনা সাজানো। ধর্ষণের ঘটনাও মিথ্যে। গত চার মাসে সন্দেশখালিতে বহু স্রোত বয়ে গেলেও একবারও সেখানে কিংবা যে লোকসভা কেন্দ্রের কেন্দ্রের অন্তর্গত এই এলাকা সেই বসিরহাটে আসেননি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
আগামী ১ জুন বসিরহাটে ভোট। তার আগে মঙ্গলবার তৃণমূলের প্রার্থী হাজি শেখ নুরুল ইসলামের সমর্থনে সভা করলেন মমতা। স্বাভাবিকভাবেই তৃণমূল নেত্রীর বক্তব্যে উঠে এল সন্দেশখালি প্রসঙ্গ। বসিরহাটের মঞ্চে শুরুতেই সন্দেশখালির প্রসঙ্গ টানলেন মমতা। বললেন, ‘‘সন্দেশখালির মা বোনেদের সঙ্গে যা ঘটেছে, তার জন্য হৃদয়ের অন্তঃস্থল থেকে দুঃখিত। মা-বোনেদের নিয়ে যেন অসম্মানের খেলা কেউ না খেলে।’’
সন্দেশখালি নিয়ে মমতার আরও বক্তব্য, ভোটের আগে বিজেপির ‘প্ল্যান-এ সন্দেশখালি’ বাতিল হয়ে গিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ‘‘ভোটের আগে বিজেপির প্ল্যান-এ ছিল সন্দেশখালি। বাতিল হয়ে গিয়েছে। মা বোনেরাই বাতিল করে দিয়েছেন। এখনও প্ল্যান বি জারি রয়েছে। ধর্মস্থানে অশান্তি তৈরির চেষ্টা করা।
বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী রেখা পাত্রকে ফোন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এদিন রেখার নাম না করে সেই প্রসঙ্গও উত্থাপন করেন মমতা। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী মহাশয়, পনি একজনকে ফোন করছেন, আর সবাইকে শোনাচ্ছেন। পুরো শিখিয়ে দিয়ে। ক’জনের খোঁজ নেন? আপনার আমলে ভারতে মেয়েদের উপরে সবচেয়ে বেশি অত্যাচার হয়েছে।’
অন্যদিকে, সুন্দরবনের মানুষদের যাতে প্রশাসনিক কাজে কোনও সমস্যা না হয় সেই প্রসঙ্গে মমতার ঘোষণা, ‘‘সুন্দরবন নিয়ে নতুন মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করছি, আপনাদের জেলা নতুন জেলা হবে বসিরহাটের বেশির ভাগ অঞ্চলগুলি নিয়ে একটা জেলা হবে। ওই দিকে বকখালি সাগরদ্বীপ নিয়ে আরও একটা জেলা হবে।’’
বসিরহাটে ২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলের টিকিটে লড়াই করেন নুরুল ৷ সিপিআই প্রার্থী অজয় চক্রবর্তীকে ৬০ হাজার ভোটে হারান তিনি ৷ যদিও ২০১৪ সালের নির্বাচনে এই কেন্দ্রে প্রার্থী হন ইদ্রিশ আলি ৷ এরপর ২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনে এই কেন্দ্রে অভিনেত্রী নুসরত জাহানকে প্রার্থী করে দল ৷ এবার ফের সেই নুরুলের উপরেই ভরসা রেখেছে দল ৷ তাঁর বিপক্ষে সন্দেশখালি আন্দোলনের অন্যতম প্রধান মুখ রেখা পাত্রকে প্রার্থী করেছে বিজেপি ৷
প্রসঙ্গত, নারী নির্যাতনের অভিযোগকে কেন্দ্র করে সম্প্রতি শিরোনামে উঠে আসে সন্দেশখালি। সেখানে শেখ শাহজাহান ও তাঁর সঙ্গীদের হাতে মহিলারা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বলে বেশিকিছু অভিযোগ ওঠে। যদিও পরে সন্দেশখালি সংক্রান্ত বেশকিছু ভিডিয়ো ভাইরাল হয়। যেখানে টাকা দিয়ে মহিলাদের দিয়ে ধর্ষণের অভিযোগ করানো হয়েছে বলে মন্তব্য করতে শোনা যায় স্থানীয় বিজেপি নেতা গঙ্গাধর কয়ালকে। যদিও সেই ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি দেশের সময় অনলাইন। সেই ভিডিয়ো প্রকাশ্যে আসতেই ব্যাপক শোরগোল পড়ে যায় রাজ্য রাজনীতিতে।
পরবর্তীতে আরও একটি ভিডিয়ো প্রকাশ্যে আসে। যে ভিডিয়োতে এক মহিলা দাবি করেন যে ভুল বুঝিয়ে ও সাজা কাগজে সই করিয়ে নিয়ে তাঁদের দিয়ে ধর্ষণের অভিযোগ করানো হয়েছে। সেই ঘটনায় স্থানীয় বিজেপি নেত্রী পিয়ালি দাস ওরফে মাম্পির বিরুদ্ধে মহিলাদের ভুল বুঝিয়ে অভিযোগ দায়েরের অভিযোগ ওঠে। সেই ঘটনায় মাম্পিকে জেল হেফাজতেও পাঠায় আদালত। যদিও পরবর্তীত তাঁর গ্রেফতারি বেআইনি বলে জানিয়ে দেয় কলকাতা হাইকোর্ট। এমনকী তাঁকে অবিলম্বে মুক্তি দেওয়ার নির্দেশও দেয়। এবার সেই সন্দেশখালি ইস্যুতেই ফের একবার মুখ খুললেন মমতা।