তৃতীয়বারের জন্য নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতায় আসছেন না বলে শেষলগ্নের প্রচারেও দাবি করলেন তৃণমূল নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূল নেত্রী বলেন, ‘খুব সম্ভবত, কাউন্টিংয়ে যদি সবকিছু ঠিকঠাক হয়ে যায়, নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতায় আসছে না।’ একইসঙ্গে ধ্যান নিয়েও নাম না করে প্রধানমন্ত্রীকে কটাক্ষ করেন মমতা। ভোটের প্রচার শেষ হলেই ধ্যানে বসার কথা মোদীর।
দেশের সময় বৃহস্পতিবার দুপুর তখন আড়াইটে। সপ্তম দফার ভোটের আগে এদিনই শেষ প্রচার। সুকান্ত সেতু থেকে তাঁর পদযাত্রা শুরু করার মুহূর্তেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করলেন, তিনি ভবিষ্যৎ দেখতে পাচ্ছেন। তিনি নিশ্চিত। “বিজেপি আর ক্ষমতায় ফিরছে না”।
লোকসভা নির্বাচনের প্রচারের শেষ দিনে যাদবপুরের দলীয় প্রার্থী সায়নী ঘোষ এবং কলকাতা দক্ষিণের দলীয় প্রার্থী মালা রায়ের সমর্থনে রোড শো শুরুর আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘দায়িত্ব নিয়ে কথাগুলো বলছি, খুব সম্ভবত, কাউন্টিংয়ে যদি সব ঠিকঠাক হয়, নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতায় আসছে না।’
এদিন প্রথম নয়। এ বার লোকসভার ভোটের অনেক আগে থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ কথা বলছেন। নবান্নে আমলাদের সঙ্গে আলোচনায়। সাংবাদিকদের সঙ্গে আড্ডায়। জনসভায়। প্রচারে। বারবার তিনি এই কথাটাই বলছেন, বিজেপি এবার আর ক্ষমতায় ফিরবে না। সম্প্রতি বনগাঁর একটি সভা থেকে মমতা এও বলেন, বিজেপির বড় জোর ১৯০ থেকে ১৯৫টি আসনে জিতবে।
কৌতূহলের বিষয় হল, এটা স্রেফ কথার কথা! নরেন্দ্র মোদী যেভাবে বলছেন, ইস বার চারশ পার। মমতা কি সেভাবেই তার পাল্টা হিসাবে বলছেন এ কথা!
পর্যবেক্ষকদের অনেকের মতে, হতে পারে সেটাই। দলকে চাঙ্গা রাখতে এবং ভোটে ধারনা তৈরির চেষ্টায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ কথা বলছেন। তবে এও মনে রাখতে হবে যে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপির ভরাডুবিরও সাক্ষী।
২০০৪ সালের লোকসভা এনডিএ-র শরিক ছিলেন মমতা। সেবার ভোটের প্রচারে বিজেপি ঝড় তুলেছিল। তামাম সমীক্ষা দাবি করেছিল যে বিজেপি একাই সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজনীয় আসন পেয়ে যাবে। কেউ কেউ বলছিলেন, অটলবিহারী বাজপেয়ীর নেতৃত্বে এনডিএ ৩০০ পার করবে।
কিন্তু দেখা যায়, বিজেপি দেড়শও পার করতে পারেনি। বিজেপির সঙ্গে থাকায় বাংলায় ভরাডুবি হয়েছিল তৃণমূলেরও। দক্ষিণ কলকাতা লোকসভায় একা জিতেছিলেন মমতা। প্রশ্ন হল, মমতা কি তেমন কোনও ইঙ্গিত দেখতে পাচ্ছেন? কারণ, বর্তমান সময়ে সর্বভারতীয় রাজনীতিতে তাঁর মতো অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ও পোড় খাওয়া রাজনীতিক বিরল।
মমতার এ কথায় অবশ্য আমল দিতে চাননি বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। বাংলায় বিজেপির সম্ভাবনা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বরং মুচকি হেসে বলছেন, “কত জন মন্ত্রী আর বিধায়ক আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছিল তা ৪ তারিখের পর বলব। বাংলায় গেরুয়া সুনামি আসছে। শেষ দফার ভোটেও চমকপ্রদ ফল হবে”।
দু’দিন আগে একটি সংবাদমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দাবি করেছিলেন, ‘বাংলায় বিজেপির সবচেয়ে ভাল ফল হবে’। সেদিনই আবার অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, প্রথম ৬ দফায় যে ৩৩টি আসনে ভোট হয়েছে তার মধ্যে ২৩টিতে জিতে গেছে তৃণমূল।
উল্লেখ্য লোকসভা নির্বাচনের প্রচার শেষে তামিলনাড়ুর কন্যাকুমারীতে পৌঁছবেন নরেন্দ্র মোদী। সেখানে বিবেকানন্দ রক মেমোরিয়ালে ধ্যানে বসার কথা রয়েছে তাঁর। সেই ধ্যানের জন্য কন্যাকুমারীর নিরাপত্তাও আঁটসাঁট করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর ধ্যান চলাকালীন সেই এলাকায় কড়া নজরদারি চালাতে প্রায় দু’হাজার পুলিশ কর্মী ও নিরাপত্তাকর্মী মোতায়েন করা হচ্ছে। পাশাপাশি কন্যাকুমারীর সৈকতে পর্যটকদের প্রবেশের উপরেও জারি করা হচ্ছে নিষেধাজ্ঞা। রিপোর্ট অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার ৩০ মে সন্ধ্যা থেকে শুরু হয়ে ১ জুন সন্ধ্যা পর্যন্ত মোদী ধ্যান করবেন বিবেকানন্দ রকে।
আজ বৃহস্পতিবারই দেশে লোকসভা নির্বাচনের শেষ প্রচার। আর এই অন্তিম লগ্নের প্রচারে মালা রায় ও সায়নী ঘোষের সমর্থনে রোড শো করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রোড শো-তে মমতার সঙ্গে পা মেলান দলের প্রথম সারির নেতৃত্ব।
তবে ঘটনা হল, দু’দলেরই বহু নেতা ঘরোয়া আলোচনায় স্বীকার করছেন, এবারের ভোটে সবটা বোঝা যাচ্ছে না। সাইলেন্ট ভোটিং হচ্ছে। তৃণমূল বিজেপি— দুই যুযুধান দলের অনেকে মানছেন যে বহু আসনে ফিফটি-ফিফটি পরিস্থিতি। অর্থাৎ যে কেউ জিততে পারে। কে জিতছে এখনই হলফ করে বলা সম্ভব নয়।