শ্রাবণী হালদার, বনগাঁ: “স্বর্গীয় ভূপেন্দ্রনাথ স্মৃতি কর্মতীর্থ “প্রাঙ্গণে শনিবার থেকে শুরু হল বনগাঁ লিটল ম্যাগাজিন মেলা ২০২২ ৷ মেলাটির প্রতিনিধিত্ব করছেন সম্পাদক রুদ্র প্রসাদ ঘোষ। বনগাঁ লিটিল ম্যাগাজিন মেলা কমিটির আয়োজনে মেলাটি এবার চতুর্থ বছরে পা রাখল৷ উদ্বোধক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কলকাতা লিটল ম্যাগাজিন লাইব্রেরির প্রতিষ্ঠাতা ও কর্ণধার সন্দীপ দত্ত ৷ দেখুন ভিডিও :
কবি বিভাস রায়চৌধুরী বলেন, বনগাঁয় এই লিটল ম্যাগাজিন মেলা হচ্ছে গত কয়েক বছর ধরে। সেটা ছোটরা করলেও বনগাঁর সংস্কৃতির অঙ্গ হয়ে গেছে। অনেক ভালবাসা জানাই। পাশাপাশি মনে রাখতে হবে লিটল ম্যাগাজিন আন্দোলনের ইতিহাস ও উদ্দেশ্যকে।
মনে রাখতে হবে পুঁজিবাদী ব্যবস্থার বিরুদ্ধে ‘লিটল ম্যাগাজিন’ একটি প্রতিবাদ। একটি আন্দোলন। সমাজের শাসক শ্রেণির তৈরি করা মূল্যবোধের বিরুদ্ধে থাকে বলে ‘লিটল ম্যাগাজিন’ সমাজে অপ্রিয়।
ম্যাগাজিন শব্দের অর্থ বারুদশালা। বারুদের মতোই শব্দ-অক্ষর (চিন্তাভাবনায় ভরা) পত্রিকায় ঠাসা থাকে বলে এডওয়ার্ড কেভ ১৭৩১ সালে ‘জেন্টলম্যান’স ম্যাগাজিন’ প্রকাশের মুহূর্তে পত্রিকাকে প্রথম ‘ম্যাগাজিন’ বলে অভিহিত করেন। এবং এই ডাকটি জনপ্রিয় হয়ে যায়।
আঠেরো শতকের শেষ বা উনিশ শতকের শুরুতে ইউরোপে প্রথম প্রতিষ্ঠান বিরোধী, নিরীক্ষামূলক পত্রিকাকে ‘লিটল ম্যাগাজিন’ বলা হয়। আমাদের দেশে ‘লিটল ম্যাগাজিন’ কথাটি প্রথম পাঠকের কাছে আনেন বুদ্ধদেব বসু পাঁচের দশকে।
গত শতাব্দীর পঞ্চাশ-ষাট-সত্তরের সময়কালে ক্রমশ প্রভাবশালী হয়ে ওঠে লিটল ম্যাগাজিন। দুই বাংলাতেই। আজও লিটল ম্যাগাজিন প্রকাশিত হয় দুই বাংলায়। কারণ সাধারণ সমাজ আজও পুঁজিবাদীদের দখলে। তার বিরুদ্ধে লড়াই চলছে। সেই লড়াইয়ের অন্যতম হাতিয়ার লিটল ম্যাগাজিন। আমরা ‘কবিতা আশ্রম’ নিজেদের শুধু ম্যাগাজিন মনে করি। আমরা বলি ‘স্বল্প পুঁজির স্ব-অধীন পত্রিকা।
মেলার প্রধান আয়োজক রুদ্র বাবু জানান প্রতিবছর জানুয়ারি – ফেব্রুয়ারি মাসে ‘লিটল ম্যাগাজিন ‘ মেলা করা হলেও চলতি বছর করোনা পরিস্থিতির কারণে সময় পরিবর্তন করে ১১ এবং ১২ জুন দু’দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হচ্ছ ৷ মেলায় প্রবেশের সময় থাকবে দুপুর দুটো থেকে রাত দশটা পর্যন্ত। এবছর লিটল ম্যাগাজিনের ২৮ টি স্টল থাকছে৷
” আমাদের শহরে বসন্ত ফিরে আসে … বর্ষার রিম ঝিম নৃত্যে…!! এই গানে মঞ্চ মাতালেন মধুমন্তী মুখো পাধ্যায়ের সঙ্গে প্রতুষ ঘোষ ৷ আয়োজকেরা জানালেন এবার এই মেলা নিয়ে এই গানটি লিখেছেন কবি দেবাশিষ রায়চৌধুরী, আর সেই গানের সুর দিয়েছেন শিল্পী প্রত্যুষ ঘোষ ৷ এদিন মধুমন্তী মুখো পাধ্যায়ের সঙ্গে গাইলেন প্রত্যুষ ও ৷ এদিন অনুষ্ঠান পরিচালনায় সঞ্চালিকার ভূমিকায় রশ্মিতা বিশ্বাস দর্শকদের নজর কারলেন
উদ্বোধক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কলকাতা লিটল ম্যাগাজিন লাইব্রেরির প্রতিষ্ঠাতা ও কর্ণধার সন্দীপ দত্ত ৷ বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বনগাঁ পৌরসভার চেয়ারম্যান গোপাল শেঠ ও অন্যান্য পার্ষদ বৃন্দ।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মেলবন্ধনে আয়োজিত মেলাটি তে থাকছে কবিতাপাঠ ,গল্প পাঠ। প্রতিযোগিতা বিভাগে আবৃত্তি, বসে আঁকো প্রতিযোগিতা, কুইজ ৷ থাকছে গান ও নাচের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। ১২ জুন রবিবার থাকছে প্রতিযোগিতা মূলক অনুষ্ঠানের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান।
কবি দেবাশিষ রায়চৌধুরী বলেন মফঃস্বলের , পত্রপত্রিকার কাছে এই মেলা র গুরুত্ব অনেকখানি। তাঁদের অনেকে নিজেদের ম্যাগাজিন নিয়ে কলকাতায় পৌঁছতে পারে না। কলেজ স্ট্রিটের অনেক বইয়ের দোকানির কাছে, যাঁরা তাঁদের পত্রপত্রিকা রাখেন। তাঁরাও রেখে যান, ঠিক কথা। তবে সব সময় টাকা পান না বলে অভিযোগ আছে ,আর দূর-দূরান্ত থেকে নিয়মিত কলকাতায় আসা সম্ভব নয়।
যেমন কেউ হয়তো ৫ কপি বা ১০ কপি বই নিয়ে কলেজ স্ট্রিটের কোন বইয়ের দোকানে গেলেন। টাকা নেওয়ার জন্য বার বার আসতে হবে। অনেক সময় শুনতে হয় বই বিক্রি হয়নি। বাংলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নিয়মিত তাগাদা দেওয়া সম্ভব নয়। তাই এই ধরনের লিটল ম্যাগাজিন মেলায় গেলে বিভিন্ন জেলার কোনও কাগজ পেয়ে যাব বা একটা পত্রিকা পেয়ে যাব। এর পাশাপাশি কিছু লেখক-পাঠক তাঁরা সেখানে অনুষ্ঠান করেন। গল্প-কবিতা পাঠ, আলোচনা সভা হবে এটা একটা বড় পাওয়া স্থানীয় কবি-সাহিত্যিক এবং সমস্ত সাধারণ মানুষের কাছে৷
কবি মলয় গোস্বামী বলেন, সাহিত্য ও সংস্কৃতির মেলবন্ধন এ আয়োজিত লিটল ম্যাগাজিন মেলাটি বনগাঁ শহরকে আরো উজ্জ্বল করে তুলেছে।