


দরাপপুর , নদিয়া: সোমবার কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোয় মেতে ওঠে গোটা বাংলা। ঘর আলো করে আসেন দেবী। দেবী লক্ষ্মী যে বাড়িতে বিরাজ করেন সেখানে কোনও অর্থের অভাব ঘটে না। ঘরোয়া বহু পুজোর পাশাপাশি বেশ কিছু জায়গায় আয়োজন করা হয়েছে থিমের পুজোর। আর সেই সমস্ত পুজোগুলির মধ্যে চোখ ধাঁধানো আলোর রোশনাইয়ে সেজে উঠেছে নদিয়া জেলার চাকদহ ব্লকের দরাপপুর গ্রাম। যা লক্ষ্মীগ্রাম নামেই পরিচিত।

আশ্বিনের পূর্ণিমায় দেবী লক্ষ্মীর আরাধনায় মাতে বাংলা। বাংলার ঘরে ঘরে পূজিতা হন ধন-সম্পদের দেবী। দুর্গা, কালী, জগদ্ধাত্রীর মতো দেবীরা রাজা- মহারাজা- জমিদার-বিত্তবানদের বাড়ির ঠাকুরদালান পেরিয়ে সর্বজনীন হয়ে উঠেছেন। অধিকাংশ জায়গায় বারোয়ারি আয়োজনেই তাঁদের পুজো হয়। লক্ষ্মী যেমন বরাবর মান্যের পুজো পেয়েছেন, তেমনই সর্বজনের দ্বারাও পূজিতা হয়েছেন। কিন্তু সেই অর্থে বারোয়ারি আয়োজনে তাঁর পুজো দেখা যায় না। তবে ব্যতিক্রম রয়েছে। নদিয়া জেলার চাকদহ ব্লকের দরাপপুর গ্রাম হয়ে উঠেছে ‘লক্ষ্মীগ্রাম’। সর্বজনীন লক্ষ্মী পুজো হয় গ্রাম জুড়ে।দেখুন ভিডিও
গোটা বাংলা যখন দশমীর বিসর্জনের বিষাদে ডুবে থাকে, তখন দরাপপুর সেজে ওঠে কোজাগরী পূর্ণিমা উপলক্ষে।বাড়ির পুজোগুলিই সর্বজনীন পুজোর আকার ধারণ করেছে এখানে ।


নিত্য নতুন মণ্ডপ সজ্জার সঙ্গে অভিনব প্রতিমা, নতুন ভাবে সেজে উঠেছে খালনা গ্রাম। থিম আর সাবেকিয়ানায় মিলেমিশে একাকার এই গ্রাম। দরাপপুর গ্রামের যে পুজো মণ্ডপগুলি দর্শনার্থীদের আকর্ষনের কেন্দ্রবিন্দু তার মধ্যে একটি হল … ক্লাব।

নদিয়ার চাকদহ ব্লকের দরাপপুর-সহ বল্লভপুর, নেতাজি বাজার, চৌগাছা এলাকাতেও পাড়ায় পাড়ায় বারোয়ারি লক্ষ্মীপুজো হয়। এই পুজোগুলির সূচনা হয়েছিল ওপার বাংলায়। এক একটি পুজোর বয়স ৭৫-৮০ বছর। কোনও কোনও পুজো নিছক বাড়ির পুজোই ছিল। দেশভাগের পরে এপারে এসে সেগুলি সর্বজনীন পুজোর রূপ নিয়েছে। এখন রীতিমতো থিম পুজো হয়। থিমের টক্কর চলে উদ্যোক্তাদের মধ্যে।

বাংলার সর্বজনীন পুজোর মানচিত্রে বনগাঁর দুর্গা পুজো , কাঁকিনাড়ার গণেশ পুজো, বাঁশবেড়িয়া ও কাটোয়ার কার্তিক পুজো, চন্দননগর ও কৃষ্ণনগরের জগদ্ধাত্রী পুজোর মতো লক্ষ্মী পুজোর ক্ষেত্রে দরূপুর হয়ে উঠেছে কেন্দ্রবিন্দু।

জেলা বা জেলার বাইরে থেকেও দর্শনার্থীরা আসেন নদিয়ার চাকদের লক্ষ্মী পুজো দেখতে। চাকদহ ব্লকের লক্ষ্মী পুজো রাজ্য, দেশ তথা বিদেশেও আলোচিত। আজ থেকে প্রায় ৮০ বছর আগে পূর্ববঙ্গে ঢাকার কিছু মানুষ ভারতের নদিয়া জেলার চাকদহ ব্লকে বসবাস শুরু করেন। তাঁরাই দেশ ছেড়ে আসার সময় তাঁদের গৃহলক্ষ্মীকে নিয়ে এসে হিঙনাড়া জিপির দরাপপুর, ভল্লবপুর, হরিআঁখি, দেউলি জিপির চৌগাছা অঞ্চলে পুজো শুরু করেন। কল্যাণী বা কলকাতায় দুর্গা পুজোকে নিয়ে যখন মাতামাতি, ঠিক সেই সময়ে শ’দেড়েক লক্ষ্মী পুজো হয় এই সমস্ত এলাকায়।

প্রতিটি ঘরে লক্ষ্মী পুজো হয় সেখানে। দুর্গা পুজোয় যেমন আত্মীয় স্বজন দেশ বিদেশ থেকে বাড়িতে আসেন, নতুন জামা কাপড় পরে সারা রাত ঠাকুর দেখেন, ঠিক তেমনই লক্ষ্মী পুজোয় বাংলাদেশের ঢাকা, ত্রিপুরা, রাজ্যের মধ্যে জলপাইগুড়ি, কোচবিহার, দিনাজপুর-সহ সারা রাজ্যের মানুষ এই ছয়দিন নতুন পোশাক পরে ঠাকুর দেখতে বের হন, এমনটাই জানালেন দরাপুর গ্রামের বাসিন্দারা।
প্রত্যেক বাড়িতে পিঠেপুলি, ছাতু ও নাড়ু হবে এবং অতিথিদের হাতে তুলে দেবেন তাঁরা। গরিব, ধনী সবার ঘরে লক্ষ্মী পুজো হয়। দরাপপুরের মেলা কমিটির সহ সম্পাদক অজয় দাস বলেন, “চাকদহ ব্লকের এই অঞ্চলটা এখন লক্ষ্মী পুজোর জন্য সবাই চেনে। লক্ষ্মী পুজোর জন্য বিখ্যাত দরাপপুর, ভল্লবপুর, হরিআঁখী, চৌগাছা। দুর্গা পুজোর প্যান্ডেল ভেঙে তবেই লক্ষ্মী পুজোর প্যান্ডেল হয়। দু’দিনের মেলা বসে।

থিমের সঙ্গে সাবেকিয়ানার ছোঁয়া, এখানে ঘরে ঘরে লক্ষ্মীপুজোয় মাতেন সকলে ।
মূলত কৃষক শ্রেণির পুজো। নতুন ধান ওঠে, এই সময় সেই ধানই লক্ষ্মীর চরণে দিয়েই চাষের কাজ শুরু হয়। সুতরাং বলা যেতে পারে শুধুমাত্র দুর্গাপুজোই নয় দশমীর কয়েক দিন পরেই লক্ষ্মী পুজো নিয়েও মাতোয়ারা সমস্ত বাঙালি