কোজাগরীতে বিশেষ সাজ, কাজ সামলে আজ যে ভাবে হয়ে উঠবেন ‘লক্ষ্মীমন্ত’ । কী রকম ভাবে সাজলেই আপনাকে দেখাবে ঠিক লক্ষ্মী প্রতিমাটির মতো। রইল টিপস –
উৎসবের মরশুমে আপাতত ইতি নেই।
সবে মাত্র দুর্গাপুজো শেষ হয়েছে।বিজয়ার রেশ এখনও কাটেনি বললেই চলে । বাঙালি সদ্য টানা রাত জেগে ঠাকুর দেখা ও সাজপোশাকের ধুম পেরিয়ে ক্ষণিকের বিশ্রাম পেয়েছে। এর মধ্যে এসে গিয়েছে কোজাগরী লক্ষ্মীপুজো।
আজ শারদ পূর্ণিমা, সব বাড়িতেই চলছে কোজাগরীর আরাধনা। লক্ষ্মীর পূুজো মানেই চারিদিকে সুন্দরের সমারোহ। আলপনা এই পুজোর অন্যতম অংশ। এছাড়াও ধূপ, ধুনো, ফুল, কড়ি, পান-সুপুড়ি, লক্ষ্মী চুপড়িতে সুন্দর করে সাজানো হয় মা লক্ষ্মীকে। কেউ কেউ ভালবেসে লক্ষ্মীকে পরিয়ে দেন মুকুট, নথ, দুল, বালা, হার। লক্ষ্মী তো বাড়ির মেয়েই। আর তাই তাঁর আগমনহেতু সব বাড়িতেই থাকে সুন্দর আয়োজন। ধনদেবীকে তুষ্ট করতে সকলেই তাঁর নিজের মতো করে চেষ্টা করেন। আর তাই লক্ষ্মীপুজোর ভোগের মধ্যে থাকে অন্যতম স্বাদ। খুব যত্ন নিয়ে এদিন মেয়ের জন্য বাড়ির মেয়েরা লুচি, পায়েস, সুজি, খিচুড়ি, লাবড়া, চাটনি-এসব রান্না করেন। উঠোন জোড়া থাকে আলপনা।
এত কাজের মধ্যেও কোজাগরী পুর্ণিমার দিন লক্ষীমন্ত সাজতে মন চাইছে?
তবে কী রকম ভাবে সাজলেই আপনাকে দেখাবে ঠিক লক্ষ্মী প্রতিমাটির মতো। টিপস্ দিলেন মেকআপ আর্টিস্ট দীপ্তমা নন্দী। সদ্য বিবাহিতাদের জন্য লক্ষ্মীপুজোর দিন খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও সুন্দর হয়। এই দিনটিকে ঘিরে যেমন তাঁদের নানা ভাবনা চিন্তা আয়োজন থাকে, তেমনই নানা স্বপ্নও থাকে সাজপোশাকের জন্য।
দীপ্তমা বললেন, ‘‘নব বিবাহিতাদের জন্য লক্ষ্মীপুজোর সাজে থাকুক লাল টকটকে ব্লাউজের সঙ্গে লাল পাড় সাদা শাড়ি। সঙ্গে বিয়ের বহু গয়না একসঙ্গে পরে নিন, যাকে বলে গা ভরা সোনার গয়না পরা, একদম সেই রকম। গলায় চোকার, চেন আবার হাতে শাঁখা-পলা ইত্যাদি থাকুক।’’
আবার তরুণী ও যুবতীদের সাজ হোক একটু অন্য। তবে লক্ষ্মী ঠাকুরের মনের মতোই। তাঁরা পরতে পারেন যে কোনও হলুদ শাড়ির সঙ্গে হলুদ ব্লাউজ। নানা ধরনের কমলা রঙের শেডস, গোল্ডেন শাড়ি ও ব্লাউজ কিংবা রানী রঙের শাড়ির সঙ্গে গাঢ় সবুজ রঙের ব্লাউজ পরে নিতে পারেন লক্ষ্মীপুজোর সঙ্গে।
অনুষঙ্গে অবশ্যই থাকুক সোনার গয়না, তা ভারী কানের দুল হতে পারে, কিংবা কানে মাঝারি দুলের সঙ্গে গলার হার হতে পারে।
বিবাহিতাদের জন্য চওড়া শাঁখা পলা কিংবা তরুণী অবিবাহিতাদের জন্য লাল কাঁচের চুড়ির গোছার সঙ্গে সোনার বালা মিশিয়ে পরলে সাজ লাগবে আরও চমকদার ও সুন্দর।
আর ব্লাউজের কেতা? স্প্যাগেটি স্ট্র্যাপ বা সাহসী পিঠের ব্লাউজ নৈব নৈব চ। দীপ্তমার মতে, ‘‘কিছু কিছু ক্ষেত্রে ছকভাঙা সাজতে নেই, সব দিনের সাজে যে মোহময়ী চটক থাকতেই হবে তাঁরও কোনও মানে নেই। লক্ষীপুজোর সাজে অকারণ সাহসিকতার বদলে থাকুক নির্ভেজাল বাঙালিয়ানার ছোঁয়া”।
গ্লাস হাতা ব্লাউজ বা ফ্রিল দেওয়া অনেক ব্লাউজ এখন বাজারে কিনতে পাওয়া যায়, তাই পড়ে নিন শাড়ির সঙ্গে।
লাল শাড়ির সঙ্গে সবুজ ব্লাউজের কন্ট্রাস্ট, বিবাহিতা হোক কী অবিবাহিতা সকলের জন্যই আদর্শ। সাবেকি সাজের জন্য এই মিশেলই দারুণ। ‘‘কথায় বলে মা লক্ষ্মী কোজাগরী পূর্নিমাতে লক্ষীমন্ত সাজেই বেশি খুশি হন,’’ বললেন দীপ্তমা, ‘‘তাই লক্ষ্মীপুজোর সাজে আরও এক ধাপ উঠতে চাইলে পায়ে অবশ্যই পরুন মোটা করে আলতা। বিবাহিতা হন কী অবিবাহিতা, আলতা পরা চাই-ই চাই।’’
মধ্য বয়স্কা গিন্নিদের জন্য এই একই রকম সাজে থাকুক আরও বনেদিয়ানার ছোঁয়া। লাল ব্লাউজ ও সাদা শাড়ির সঙ্গে থাকুক গলায় দুটি হার, কানে পাশা দুল। পাশার সঙ্গে যদি টানা চেন থাকে তা হলে তো আরও ভাল, সে রকম দুলই বেছে নিন।
আর নাকে থাকুক সাবেকি নথ। মাত্র একটি মুক্তোর টানা নথ, আর ভেলভেটের টিপের বদলে থাকুক সিঁদুরের টিপ। বিবাহিতা হলে অবশ্যই চওড়া করে সিঁদুর পরবেন, তার সঙ্গে মুখের সাজেও থাকুক বেশ লক্ষ্মীমন্ত লাল টুকটুকে ধরণ।
আসলে লক্ষ্মী পুজো তো নিজেকে মনের মতো করে সাজিয়ে তোলার পুজো। সবার কাছে সবাই লক্ষ্মী। সারাদিন পরিশ্রম করে রাতে বাড়ি ফিরে কোনও রকমে খেয়ে শুয়ে পড়া মেয়েটিও যেমন লক্ষ্মী তেমনই সারাদিন বাড়ি গুঠিয়ে রাখার কাজ যিনি করেন তিনিও লক্ষ্মী। এমন দিনে নিজেকে লক্ষ্মীমন্ত করে তোলার দায়িত্ব আপনারই। কাজ সেরে নিজের মতো করে সাজুন। লাল পেড়ে শাড়ি, নথ, সোনার গয়নাতেই যে সাজতে হবে এমন একেবারেই নয়। আবার পঞ্চব্যাঞ্জনে ভোগ সাজিয়ে নিবেদন করতে হবে তেমনও নয়। হালকা শাড়ি, গয়না আর একদম নো-মেকআপ লুকে নিজের মতো করে সাজুন।
তেমনই ট্র্যাডিশন্যাল লাল পাড় সাদা শাড়ি, সোনার গয়না, নথেও নিজেকে সাজিয়ে নিতে পারেন। পায়ে সুন্দর করে আলতা পরে তারপর পরতে পারেন নূপুর। খোঁপায় ফুল দিতে পারেন। কপালে একটা ছোট্ট টিপ আর হাতে চুড়ি পরে নিজের সাজ পরিপূর্ণ করুন। লক্ষ্মী পুজোর দিন বাড়িতে কাজের কোনও শেষ থাকে না। আর তাই যে শাড়িতে নিজের আরাম লাগে তেমনই শাড়ি বাছুন। সোনায় গয়নায় যে সাজতেই হবে এমন কিন্তু একেবারেই নয়। শাড়ির সঙ্গে মানানসই গয়না বেছে নিলেই হল। এদিন শুধু রুপোর হয়নাতেও সাজতে পারেন। আজকাল নানা রকমের রুপোর গয়না পাওয়া যায়। পায়ে আংট, কানে ঝুমকা, হাতে বড় আংটি, নাকছাবি সব মিলিয়ে সুন্দর লুক তৈরি করতে পারেন।