মোটরসাইকেলে লাদাখ ঘুরতে যাওয়ার কথা ভাবেন অনেকেই। রুক্ষ পাহাড়ে প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের জন্য ভারত সহ গোটা বিশ্বের পর্যটকদের পছন্দের গন্তব্য লাদাখ। কিন্তু কী ভাবে এই ট্রিপের পরিকল্পনা করবেন তা বুঝে পাচ্ছেন না? বছরের কোন সময় লাদাখ যাবেন? লাদাখে কী কী দেখবেন? এই রকম কিছু প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন এই প্রতিবেদনে। তা আর দেরি কিসের? শুরু করে দিন আপনার স্বপ্নের লাদাখ রাইডের প্ল্যানিং:

রোমহর্ষক অভিজ্ঞতার স্বাদ নিয়ে ফিরে লিখলেন সরোজ মজুমদার

সরোজ বাবুএকজন পদার্থবিদ্যার স্কুল শিক্ষক, ভ্রমণ করতে ভালোবাসেন। সময় ও সুযোগ পেলে বাইক নিয়ে একাকী ভ্রমণে বেরিয়ে পড়েন । এবার বেরিয়ে এলেন লাদাখ থেকে, একাই । 

সরোজবাবর কথায় বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলাম ৫ই সেপ্টেম্বর ২০২২, সোমবার  ও লাদাখ ঘুরে বাড়ি ফিরেছিলাম ২১ সেপ্টেম্বর ২০২২, বুধবার । আমি আমার প্রতিদিনের যাত্রাপথের কাহিনী নিম্নে বর্ণনা করলাম ।

৫ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ সোমবার, ১ম দিন (কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ থেকে বারানসি, উত্তর প্রদেশ) :

বাইকে ভ্রমণ করতে হলে আগাম প্রস্তুতি যা যা নিতে হয় যেমন, বাইক সার্ভিস করানো, লাগেজ , হেলমেট ও অ্যাকশন ক্যামেরা রেডি করা ইত্যাদি, সব আগেই সেরে রেখেছিলাম । রাতে উত্তেজনায় ভালো ঘুম আসার কথা নয়, আসেও নি ভালো । রাত ২:১৫ তে ঘুম থেকে উঠে স্নান সেরে নিজেকে ও বাইক কে রেডি করে ভোর ঠিক ৩:২২ মিনিটে বেলঘরিয়ার বাড়ি থেকে একাকি বেরিয়ে পড়লাম লাদাখ এর উদ্দেশে । বালি ব্রিজ, ডানকুনি, গুরাপ, শক্তিগড় হয়ে বর্ধমান পেরোবার পর ভোরের আলো ফুটলো । 

ন্যাশনাল হাইওয়ে-১৯ ধরে এরপর দুর্গাপুর, রানীগঞ্জ, আসানসোল হয়ে মাইথনে এসে বরাকর নদী পার হতেই পশ্চিমবঙ্গের সীমানা অতিক্রম করে ঝাড়খন্ড রাজ্যে প্রবেশ করলাম । ঝাড়খণ্ডে আসার পর, সকাল সাড়ে আটটায় দুটো রুটি সঙ্গে টক-দই আর এক কাপ ব্ল্যাক-টি সহযোগে প্রাতরাশ সেই নিলাম । ঝাড়খণ্ডে ন্যাশনাল হাইওয়ে-১৯ এর দুপাশে অনেক তরোয়াল ও লাঠির দোকান দোকান আছে । তোপচাঁচি, জামতাড়া, বর্হি, চৌপারন, হয়ে ফল্গু নদির সেতু পেরিয়ে এপাশে চলে আসতেই ঝাড়খন্ড ছেড়ে বিহার রাজ্যে প্রবেশ করলাম । ন্যাশনাল হাইওয়ে-১৯ এর দুপাশ জুড়ে সারা রাস্তায় প্রচুর কাশ ফুল ফুটেছে দেখলাম ।

ঔরঙ্গাবাদ, সোন নদী, দেহরী, সাসারাম, শিভ্সাগর, হয়ে করমানসার নদীর উপর ব্রিজ পেরোতেই  বিহার ছেড়ে উত্তরপ্রদেশে চলে এলাম । দুপুরে উত্তরপ্রদেশে লাঞ্চ সারলাম ভেজ-ফ্রাইড রাইস  ও টক-দই এর সাথে । বারানসিতে গঙ্গা নদীর উপর ব্রিজ পেরিয়ে ন্যাশনাল হাইওয়ে-১৯ ধরে এগিয়ে চললাম । অবশেষে ৭৩০কিমি দূরত্ব অতিক্রম করে উত্তরপ্রদেশের বারানসি শহরকে পিছনে ফেলে রেখে বিকেল ৫:৩০ এ পৌঁছেগেলাম গোপীগঞ্জে, যেখানে আমার আজকের রাত্রিবাস ।

৬ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ মঙ্গলবার, ২য় দিন (বারানসি থেকে আগ্রা, উত্তর প্রদেশ) :

ভোর ৩ টেতে মোবাইলে অ্যালার্ম এর আওয়াজ শুনে ঘুম ভাঙলো । তাড়াতাড়ি বিছানা থেকে উঠে স্নান সেরে নিয়ে বাইকে লাগেজ চাপিয়ে ভোর সাড়ে চারটের সময় উত্তরপ্রদেশের গোপীগঞ্জ থেকে বেরিয়ে পড়লাম আগ্রার উদ্দ্যেশ্যে, ন্যাশনাল হাইওয়ে-১৯ ধরে ।  সকল ৬ টার সময় তৃতীয় বারের জন্য আবার গঙ্গা নদীর দেখা পেলাম, উত্তর প্রদেশের ধীমী তে । গতকাল ভোরে যখন বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলাম তখন দক্ষিনেস্বরে বালি ব্রিজে গঙ্গা নদীর দেখা পেয়েছিলাম এবং ওইদিনই বিকেলে বারানসি তে ।  সকাল সাড়ে আটটায় প্রাতরাশ সেরে নিলাম । 

এই প্রসঙ্গে বলে রাখা ভালো যে, আমার এই লাদাখ রাইড এ প্রতিদিনের খাবার মেনু ছিল এইরকম – সকালে দুটো রুটি ও টক দই সাথে ব্ল্যাক টি, দুপুরে ভেজ- ফ্রাইড রাইস ও টক দই  আর রাতে দুটো রুটি ও টক দই, সামান্য কিছু ব্যাতিক্রম ছাড়া (পাওয়া যাইনি বলে ) । এছাড়া যাত্রাপথে সকালের দিকে ও বিকেলের দিকে দুটো টি-ব্রেক নিতাম ।

উত্তরপ্রদেশের গোপীগঞ্জ থেকে বেরিয়ে; প্রয়াগরাজ, কানপুর, ইটাওয়া শহর পেরিয়ে আগ্রা – লখনউ এক্সপ্রেসওয়ে তে পৌঁছে গেলাম দুপুর ১ টা নাগাদ ।

৮৫ টাকা টোল ফিস দিয়ে ঢুকে পড়লাম আগ্রা – লখনউ এক্সপ্রেসওয়ে তে । বলে রাখা দরকার যে এই আগ্রা – লখনউ এক্সপ্রেসওয়ে তে বাইক রাইডার দেরও টোল ফিস দিতে হয় । দারুন রাস্তা ।  দ্রুত বাইক চালিয়ে আগ্রা – লখনউ এক্সপ্রেসওয়ে  হয়ে, আগরা ইনার রিং রোড ধরে দুপুর আড়াইটে নাগাদ পৌঁছে গেলাম আগ্রার হোটেলে ।  এইদিনের মোট যাত্রাপথ ছিলো ৫২৭ কিমি ।

তাড়াতাড়ি লাঞ্চ সেরে ও একটু বিশ্রাম নিয়ে বিকেল ৪ টে নাগাদ বাইক নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম তাজ মহলের উদ্দ্যেশে । তাজ মহল ওয়েস্ট-গেট পার্কিং এ বাইক রেখে, টিকিট কাউন্টার থেকে ৫০ টাকা দিয়ে টিকিট কেটে ঢুকে পড়লাম তাজমহল ক্যাম্পাসের মধ্যে । তাজমহল ক্যাম্পাসের ভিতৰ তখন কাঠ চাপা ফুলের গন্ধে ভরপুর ।  পড়ন্ত বিকেলের রৌদ্রে তাজ মহল তখন দারুন সুন্দর লাগছিলো । পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে যমুনা নদী । ২১০ টাকা দিয়ে টিকিট কেটে মূল তাজমহল এর মধ্যে প্রবেশ করলাম । মূল তাজমহল এর মধ্যে মাঝখানে রয়েছে মমতাজ এর সমাধি ও তার পাশে সম্রাট শাজাহানের ।

৭ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ বুধবার, ৩য় দিন (আগ্রা, উত্তর প্রদেশ থেকে জলন্ধর, পাঞ্জাব) :

ভোর ৪:৪০ এ এদিনের যাত্রা শুরু করলাম । প্রথমে কিছুটা ভুল রাস্তায় যাওয়ার পর, আগ্রা ইনার রিং রোড ধরে পৌঁছে গেলাম ভারতের দ্রুততম এক্সপ্রেসওয়ের এন্ট্রি টোল গেটে । যমুনা এক্সপ্রেসওয়ে । এখানেও বাইকারদের টোল ফিস দিতে হয় । ২০৫ টাকার টোল ফিস দিয়ে যমুনা এক্সপ্রেসওয়েতে ভোরের অন্ধকারে যাত্রা শুরু করলাম । স্থানীয় লোকজনেরা তখন রাস্তায় শরীর চর্চায় ব্যস্ত । দারুণসুন্দর রাস্তা । ভোরের আবহাওয়া এমন রাস্তায় রাইড করার আনন্দই আলাদা ।  যমুনা এক্সপ্রেসওয়েতে তিনটি পেট্রোল পাম্প আছে যা মেইন রাস্তা থেকে কিছুটা নেমে গিয়ে পরে । এরকমই একটি পেট্রল পাম্প থেকে বাইকে এ পেট্রল ভরে নিয়ে পৌঁছে গেলাম গ্রেটার নয়ডা । সেখান থেকে উঠেগেলাম ইস্টার্ন পেরিফেরাল এক্সপ্রেসওয়েতে । উত্তরপ্রদেশ ছেড়ে এবার ঢুকে পড়লাম হরিয়ানা রাজ্যের সোনিপতে, যেখানে আজকের প্রাতরাশ সেরে আবার চলা শুরু করলাম । পানিপথ, কার্নাল, কুরুক্ষেত্র, আম্বালা, লুধিয়ানা

ফাগওয়ারা হয়ে, সর্বমোট ৬২৪ কিমি রাস্তা অতিক্রম করে, বিকেল সাড়ে পাঁচটায় এসে পৌঁছালাম পাঞ্জাব রাজ্যের জলন্ধর শহরে যেখানে আমার আজকের রাত্রিবাস । পাঞ্জাবে রাস্তার পাশে অসংখ্য মুসম্বি লেবুর জুসের দোকান ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল হাব পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করবে ।

৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ বৃহস্পতিবার, ৪র্থ দিন (জলন্ধর, পাঞ্জাব থেকে সোনামার্গ, জাম্মু এন্ড কাশ্মীর) :

পাঞ্জাবের জলন্ধর থেকে ভোর সাড়ে পাঁচটায় আমার চতুর্থ দিনের একাকী বাইক যাত্রা শুরু করলাম ।  পাঠানকোট হয়ে চলে এলাম পাঞ্জাব ও জম্মু -কাশ্মীর রাজ্যের বর্ডার লক্ষনপুরে রবি নদীর পাড়ে ।  এখানে আসতেই আমার প্রিপেইড মোবাইল সিম তার কাজ করা বন্ধ করে দিলো, আমি লাদাখ রাইড এর জন্য নেয়া নতুন পোস্টপেইড সিম টি মোবাইলে চালু করে নিলাম । রাস্তায় সাধারণ গাড়ি ও আর্মি গাড়ির ভিড় থাকায়; সাম্বা, মনসার মোড়ে এসে জম্মু শহর কে বাইপাস করে উধমপুর হয়ে শ্রীনগর যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম । রাস্তার কন্ডিশন মোটামুটি হলেও রাস্তার দুপাশের সৌন্দর্য অসাধারণ । উধমপুরে প্রাতরাশ সেরে জম্মু-শ্রীনগর হাইওয়ে তে এসে পৌছালাম । ৯ কিমি দীর্ঘ ড: শ্যামা প্রসাদ মুখার্জী টানেল পেরিয়ে রামবানে এসে একটু টি ব্রেক নিলাম ।  এরপর ৮ কিমি দীর্ঘ বানিহাল-কাজিগুন্দ টানেল পেরিয়ে শ্রীনগরে পৌছে  লাঞ্চ সেরে নিলাম । এরপর রূপসী সিন্ধ নদীর বয়েচলা, আর দুধারের পাহাড়ি সৌন্দর্য দেখতে দেখতে, ৫১৫ কিমি পথ চলে বিকেল সাড়ে ছটায় সোনামার্গ এ পৌঁছেগেলাম । এখানে সন্ধ্যা একটু দেরি করে হয় ।

৯ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ শুক্রবার, ৫ম দিন (সোনামার্গ, জাম্মু এন্ড কাশ্মীর থেকে  লেঃ, লাদাখ ) :

রাতে সোনামার্গে দারুন ঠান্ডা ছিল ।  সকাল ছটায় ঠান্ডার মধ্যেই রাইড শুরু করলাম ।  সাতটার আগেই জোজিলা পাস এ চলে এলাম । জোজিলা পাস্ অতিক্রম করতেই আর্মি চেক পোস্ট চলে এলো, সেখানে আমার নাম, ঠিকানা, মোবাইল নম্বর, বাইকের নম্বর সবকিছু রেজিস্টার করতে হলো । এখানেই

জম্মু -কাশ্মীর ও লাদাখ রাজ্যের বর্ডার । আমার ভারতের কেন্দ্র শাসিত রাজ্য লাদাখ এ এন্ট্রি হলো ।  মূল লাদাখ ভ্রমনের সূচনা হলো এখান থেকেই ।  

সকাল নটায় পৃথিবীর দ্বিতীয় শীতলতম গ্রাম দ্রাস এ পৌছে প্রাতরাশ করে, বাইকে পেট্রল ভরে নিয়ে আবার চলা শুরু করলাম ।  চারিদিকের পাহাড়ি আলো-আঁধারী অপরূপ দৃশ্য দেখতে দেখতে সকাল সাড়ে নটায় কাৰ্গিল ওয়ার মেমোরিয়ালে এসে পৌছালাম । কার পার্কিং এ বাইক রেখে কাৰ্গিল ওয়ার মেমোরিয়ালের ভিতর প্রবেশ করলাম । এখানে ঢোকার জন্য কোন প্রবেশ মুল্য নেই, তাবে আপনী আপনর ইচ্ছেমতো দান-বক্সে দান করতে পারেন ।  এখান থেকে বেরোবার সময় প্রবেশ পথের মূল গেটের উপর লেখাটি খুব ভালো লাগলো তাই আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম এখানে … WHEN YOU GO HOME TELL THEM OF US AND SAY ‘FOR YOUR TOMORROW, WE GAVE OUR TODAY’.

আবার পথ চলা শুরু করলাম । দুপুর  ১টার সময় ১২,১৯৮ ফুট  উচ্চতার নামিকলা (নামিকা লা) পাস এ পৌছালাম ।  লাদাখে চারিদিকের প্রাকৃতিক দৃশ্য এককথায় অসাধারণ । এখানকার পাহাড় গাছবিহীন । একেকটি পাহাড়ের রং একেকরকম এবং তার আকার আকৃতিও আলাদা আলাদা ।  দুপুর ২ টতে ফটুলা টপে যখন এলাম আকাশ মেঘলা করে ছিলো ও তার সাথে বেশ জোরে বাতাস বইছিল । বিকেল পাঁচটায় সিন্ধু ও জান্সকার নদীর সঙ্গমস্থল নিম্মুতে এসে মনটা ভরে গেল । লাদাখে আকাশের রং ঘন নীল । নিম্মু থেকে আরেকটু পথ এগোতেই ম্যাগনেটিক হিল এর দেখা পেলাম । অবশেষে ৩৪২ কিমি পথ পেরিয়ে বিকেল সাড়ে ছটায় লাদাখের রাজধানী লেঃ শহরে এসে পৌছালাম । লেঃ তে আমার দুদিনের রাত্রিবাস ছিল ।

১০ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ শনিবার, ৬ষ্ঠ দিন (লেঃ, লাদাখ ) :

সকালে লেঃর হোটেলে ঘুমথেকে উঠে দেখি ঝিরি ঝিরি বৃষ্টি হচ্ছে, যা দেখে মনটা একটু খারাপ হয়ে গেলো । দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করার পর, সকাল সাড়ে নটায় বাইক নিয়ে পুরো লেঃ শহরটি ঘুরে দেখার জন্য বেরিয়ে পড়লাম । প্রথমেই গেলাম লেঃ শহর থেকে ১৯ কিমি দূরে থিকসে মনাস্ট্রিতে ।  সুবিশাল মনাস্ট্রি, রাস্তায় যেতে যেতে অনেক দূর থেকেই নজরে পড়বে ।  কার পার্কিং এ বাইক রেখে ৫০ টাকার প্রবেশ মূল্য দিয়ে টিকিট কেটে মনাস্ট্রিতে প্রবেশ করলাম । খুব সুন্দর মনাস্ট্রি, পুরোটা ঘুরে দেখতে বেশ কিছুটা সময় লাগলো । মনাস্ট্রির ছাদ থেকে চারিদিকের অপরূপ দৃশ্য ভোলার নয় । মনাস্ট্রির ভিতরে থাকা গৌতম বুদ্ধের বিশাল মূর্তি মনে প্রশান্তি এনে দেবে । থিকসে মনাস্ট্রি থেকে চলে এলাম ৬কিমি আগের সে-প্যালেস এ । কিছুটা উপরে উঠতে হয়, বাইক নিয়ে উপরে প্যালেসের সামনে চলে গেলাম । এরপর কিছুটা সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে প্যালেস ঘুরে দেখা । এখানেও প্যালেসের উপর থেকে চারিদিকের দৃশ্য খুব সুন্দর । এরপর চললাম ৪ কিমি আগের সিন্ধু নদীর তীরে, সিন্ধু ঘাটে । কল্লোলিত পাহাড়ি নদী সিন্ধুর কলরব মনোমুগ্ধকর ।  সিন্ধু ঘাট থেকে এবার চললাম ১৩ কিমি দূরে পাহাড়ের উপর শান্তি স্তুপা দেখতে । বাইক রেখে ৩০ টাকা প্রবেশ মূল্যের টিকিট কেটে পাহাড়ি ঢাল বেয়ে চললাম শান্তি স্তুপার দিকে । ঘন নীল – সাদা আকাশের নিচে শান্তি স্তুপা ও তার চারপাশের প্রকৃতি নৈসর্গিক । শান্তি স্তুপা দেখে বাইক নিয়ে পাহাড়ি ঢাল বেয়ে নিচে নামা শুরু করলাম এবং বিকেল তিনটের সময় ‘হল অফ ফেম’ মিউজিয়ামে এসে পৌছালাম ।  এটি ভারতীয় সেনাবাহিনী দ্বারা নির্মিত এবং রক্ষিত ।  ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে প্রাণ হারানো সেনাদের স্মরণে এই মিউজিয়ামটি তৈরি করা হয়েছে ।  এখানে প্রবেশ মূল্য ২৫০ টাকা এবং মোবাইল এর জন্য ২০ টাকা এবং এই পুরো পেমেন্টটা করতে হবে ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ডে , ক্যাশ চলবে না।

১১ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ রবিবার, ৭ম দিন (লেঃ থেকে হুন্ডার, লাদাখ ) :

আজকেও সকালে লেঃর হোটেলে ঘুমথেকে উঠে দেখি ঝিরি ঝিরি বৃষ্টি হচ্ছে । কিন্তু আজকে আর বৃষ্টির জন্য দেরি করা যাবে না, কারণ আজকে অনেকটা পথ যেতে হবে । অগত্যা সকাল ছটায় বেরিয়ে পড়লাম । রাস্তা বেশ ভেজা ছিল । যত এগোচ্ছিলাম পাহাড়ি রাস্তার চড়াই তত বাড়ছিলো, আর তার সাথে ঠান্ডা । সকাল সাতটায় যখন ‘সাউথ পুলু’ এসে পৌঁছালাম চারিদিকের পাহাড় সব বরফে সাদা হয়ে গেছে । সাউথ পুলুর চেক পোস্টে আমাকে আটকে দেয়া হলো, কারণ খারাপ আবহাওয়ার কারণে খারদুংলার দিকে যেতে দেয়া যাবে না । খারদুংলার দিকে তখন স্নো ফল হচ্ছিল ।  ঠিক এইসময় সাউথ পুলুর চেক পোস্টে আমরা তিনজন বাইক রাইডার ছাড়া আর কেউ ছিলনা, আমি ও মধ্যপ্রদেশ থেকে আসা দুজন । ঠান্ডার মধ্যে এক কাপ গরম চা ও গরম ম্যাগি খেয়ে নিলাম ।  আড়াই ঘন্টা অপেক্ষা করার পর সকাল সাড়ে নটায় অবশেষে আমাদের খারদুংলার দিকে যাওয়ার অনুমতি মিললো ।  পাহাড়ি আঁকাবাঁকা ভেজা রাস্তা ধরে ক্রমশ উপরের দিকে উঠতে লাগলাম ।  রাস্তার দুপাশ তাজা বরফে ঢেকে গেছে । পাহাড়ি চড়াই যে বাড়ছিলো সেটা বাইকের ইঞ্জিনের আওয়াজে টেরপাচ্ছিলাম ।  উচ্চতা বৃদ্ধির সাথে সাথে বাইকের গতি ক্রমশ কমে আসছিল ও তারসাথে চললো স্নো ফল । সম্ভাবত অধিক উচ্চতা আর অত্যন্ত ঠান্ডার কারণে আমার হেলমেটে লাগানো অ্যাকশন ক্যামেরা কাজ করা বন্ধ করে দিলো । ঠান্ডায় আমার দুহাত অবশ হয়ে আসছিলো । অবশেষে সব প্রতিকূলতা কাটিয়ে সকাল দশটায় ১৭,৯৮২ ফুট উঁচু বরফে ঢাকা, বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মোটরগাড়ি চলার যোগ্য রাস্তা ‘খারদুংলা পাসে’ পৌঁছেগেলাম । কিছু সময় খারদুংলা টপে কাটিয়ে এবার নিচে নামতে শুরু করলাম ।  নর্থ পুলু হয়ে খালসারে পৌছাতে ঠান্ডার প্রকোপ অনেকটা কমে গেলো । রাস্তার পাশদিয়ে বয়ে চলেছে সায়ক নদী ।  নুব্রা ভ্যালির ডিস্কিট হয়ে হুন্ডারে পৌছাতেই বালিয়াড়ির দেখা মিললো ।  পাহাড়ের নিচে সুদূর বিস্তৃত সাদা বালির অপূর্ব সুন্দর পাহাড়ি মরুভুমি ।  দুপুর দুটোর সময় হুন্ডারের হোটেলে পৌঁছে স্নান ও লাঞ্চ সেরে নিলাম । হুন্ডারে অনেক হোটেলেরই নিজস্ব বাগান ও চাষের জমি আছে । আমি হুন্ডারে যে হোটেলটিতে ছিলাম সেটিতে অনেকগুলি লাল ও সবুজ আপেল গাছ এবং বেশ কিছুটা জায়গা জুড়ে বিভিন্নরকম সবজির চাষ ছিল । হোটেলে আমার রুমের জানালার পাশেই একটি বরো লাল আপেল ভর্তি গাছ ছিল, যে গাছটি থেকে দুটি আপেল পেরে আমি খেয়েছিলাম ।  বিকেলে বাইক নিয়ে হুন্ডারের স্যান্ড ডিউনস ও দ্বি-কুজ যুক্ত উট দেখতে চলেগেলাম । ২৫০ টাকায় এখানে ক্যামেল রাইড করা যায় । পড়ন্ত বিকেলের সূর্যের আলোয় স্যান্ড ডিউনসের সৌন্দর্য অপরূপ । হুন্ডারে আমি দুদিন রাত্রিবাস করেছিলাম । এদিনের মোট রাইড ছিলো ১৩৮ কিমি ।

১২ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ সোমবার, ৮ম দিন (হুন্ডার, তুরতুক, ত্যাগশী, থ্যাং; লাদাখ ) :

সকাল ছটার একটু আগে হুন্ডারের হোটেল থেকে বেড়িয়ে পড়লাম তুরতুক, ত্যাগশী হয়ে থ্যাং যাওয়ার জন্য । হুন্ডার থেকে দূরত্ব ৯৩ কিমি ।  ডিস্কিট -তুরতুক হাইওয়ে ধরে এগিয়ে চললাম, রাস্তা খুবই ভালো । পুরো রাস্তায় সঙ্গী হলো সায়ক নদী, কখনো ডানদিকে কখনো বামদীকে ।  রাস্তায় একটি আর্মি চেক পোস্টে আমকে আমার ব্যক্তিগত বিবরণ সব লিপিবদ্ধ করতে হলো, এবং এর ঠিক পাশেই আর্মির একটি ক্যান্টিন ছিল, যেখানে আজকার প্রতরাশ সেরেনিলাম ।  থোয়সে, বোগঢ্যাং হয়ে তুরতুকের ৫ কিমি আগে রাস্তার বামদিকে একটি খুব সুন্দর পাহাড়ি ঝর্ণা পেলাম । ঝর্ণার জল পাহাড় থেকে নেমে সায়ক নদীতে মিশেছে । সকাল সাড়ে নটায় তুরতুক পৌঁছেগেলাম । তুরতুকের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য অসাধারণ । ১৯৭১ সালের আগে পর্যন্ত তুরতুক পাক অধিকৃত কাশ্মীরের অংশছিলো । ত্যাগশীতে এসে আর্মি চেক পোস্টে আমকে আবার আমার ব্যক্তিগত বিবরণ সব লিপিবদ্ধ করতে হলো এবং যেকোনো একটি পরিচয়পত্র হিসাবে আধার কার্ড জমা করতে হলো । এরপর আমার থ্যাং ভিলেজে যাবার অনুমতি মিললো ।  থ্যাং ভিলেজ হলো ভারত ও পাক অধিকৃত কাশ্মীরে মধ্যে বর্ডারের শেষ গ্রাম । মাত্র কয়েকশ মিটার দূরে, পাকিস্তানের দিক থেকে শেষ গ্রাম এবং তাদের সেনাবাহিনীর বাঙ্কার দেখতে পাওয়া যায় ।

স্থানীয় মানুষেরা স্থানীয় আখরোট, শুকনো এপ্রিকট এবং এপ্রিকটের সাস বিক্রির জন্য স্টলও স্থাপন করেছেন ।  থ্যাং ভিলেজের প্রাকৃতিক দৃশ্য অসাধারণ ।

এবার ফেরারপালা, ফেরার পথে আর্মি চেক পোস্ট থেকে আমার জমা রাখা আধার কার্ড নিয়ে হুন্ডারে ফেরার পথ ধরলাম । দুপুর আড়াইটে নাগাদ হুন্ডারের হোটেলে পৌঁছে লাঞ্চ সেরে একটু বিশ্রাম করেনিলাম । বিকেল সাড়েচারটের সময় আবার বেড়িয়েপড়লাম ডিস্কিট মনাস্ট্রির উদ্দেশ্যে । ৩০ টাকার টিকিট কেটে বাইক নিয়ে পাহাড়ের উপর অবস্থিত ডিস্কিট মনাস্ট্রির কাছে পৌঁছলাম । এবার কিছুটা পায়ে হেটে মূল মনাস্ট্রিতে চলে এলাম । মূল আকর্ষণ গৌতম বুদ্ধের বিশাল মূর্তি । মনাস্ট্রির উপর থেকে চারিদিকের দৃশ্য ভোলার নয় । এরপর সোজা চলে এলাম ডিস্কিট পেট্রল পাম্পে, বাইকে ফুল ট্যাংক পেট্রল ভরে নিলাম এবং সাথে কিছু অতিরিক্ত পেট্রল নিয়ে নিলাম ।  কারণ আগামীকাল থেকে আমি লাদাখের যে যে জায়গাগুলোতে যাবো সেখানে কোনো পেট্রল পাম্প নেই ।  এদিনের মোট যাত্রাপথ ছিলো ২২৩ কিমি ।

১৩ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ মঙ্গলবার, ৯ম দিন (হুন্ডার থেকে প্যাংগং লেক, লাদাখ ) :

ভোর ৫:৪৫ এ হুন্ডার থেকে প্যাংগং লেকের উদ্দেশে রওনা দিলাম । ডিস্কিট হয়ে খালসারে পৌছে আগম – সায়ক রিভার রোড ধরে সায়ক নদীকে বামদিকে নিয়ে চলতে থাকলাম ।  সকাল আটটায় আগমে এসে প্রাতরাশ সেরে নিলাম । আগম পর্যন্ত রাস্তা মোটামুটি ভালোই ছিলো । কিন্তু এর পরেই শুরু হলো সেই চূড়ান্ত খারাপ রাস্তা বা অফরোডিং । চলার গতি অত্যন্ত মন্থর হয়ে গেলো । বাইককে নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রাণ ওষ্ঠাগত হতে লাগলো । অনেকগুলো ওয়াটার ক্রসিং কে পার হতে হলো এই রাস্তায় । তাই আগে থেকেই পায়ে গামবুট পরে নিয়েছিলাম । সায়ক ভিলেজে, দুর্বুক হয়ে ট্যাংস্টেতে পৌছালাম ।

ট্যাংস্টে থেকে বামদিকের প্যাংগং লেক রোড ধরলাম । ফার্স্ট ভিউ অফ প্যাংগং লেক বলে একটি জায়গায় এসে প্রথম একচিলতে নীলাম্বরী প্যাংগং লেকের দেখা মিললো ।  দুপুর ১২ টার সময় লুকুং এ এসে পুরো প্যাংগং লেকের দর্শন পেলাম । উপরে সাদা মেঘের সাথে নীল আকাশ, চারিধারে বরফ আচ্ছাদিত পাহাড় আর তার মাঝে ঘন নীলবসনা প্যাংগং লেক । প্রকৃতির উজাড় করা রূপের ছটায় অফরোডিং এর কষ্ট মুহূর্তে ভুলিয়ে দিলো ।  এমন রূপ দেখার জন্য হাজার হাজার কিলোমিটার দূর থেকে বাইক চালিয়ে আসা যায় । লুকুং থেকে প্যাংগং রোড ধরে স্প্যাগমিক, মান ভিলেজ হয়ে প্যাংগং লেককে বামদিকে সঙ্গে নিয়ে মিরাক ভিলেজে যখন পৌছালাম তখন দুপর দুটো বাজে ।  লুকুং থেকে প্যাংগংয়ে আসতে এতটা সময় লাগলো তার কারণ নীলবসনা রূপসী রাস্তায় আমাকে বার বার দাঁড়াতে বাধ্য করছিল । মিরাক ভিলেজে,  প্যাংগং লেকর ধারে একটি হোমস্টেতে আজকের রাত্রিবাসের জন্য আস্তানা গাড়লাম । দুপুরের খাওয়া সেরে আজকে আর বিশ্রাম নিতে ইচ্ছে করলনা । সোজা চলেগেলাম প্যাংগং লেকের পাড়ে । প্যাংগং লেকর পার দিয়ে পায়ে হেটে পুরো বিকেলটা কাটিয়ে দিলাম । প্যাংগং লেকের হোমস্টেগুলিতে সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ থাকে । তাই তাড়াতাড়ি আমার মোবাইল ও ক্যামেরা গুলিকে চার্জে বসিয়ে দিলাম । সন্ধ্যা হতেই আকাশে চাঁদ উঠল । প্যাংগং লেকের রূপ তখন অন্যরকম । আজকের যাত্রাপথ ছিলো ১৯৮ কিমি দীর্ঘ ও চূড়ান্ত অফরোডিংএ ভরা ।

 

 ৪ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ বুধবার, ১০ম দিন (প্যাংগং লেক থেকে হানলে, লাদাখ ) :

সকালে হোমস্টেতে ব্রেকফাস্ট করে, সাড়ে ছটার সময় হানলের উদ্দেশে বেরিয়ে পড়লাম । নতুন টারম্যাক রোড তৈরি হচ্ছে সেই রাস্তা ধরে প্যাংগং লেককে বামদিকে সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে চললাম । সকালে প্যাংগং লেকের জলের রং ততোটা নীল নয় ।  সকাল আটটার সময় চুশূলে পৌছালাম । প্যাংগং লেক তার গতিপথ ঘুরিয়ে চীনের মধ্যে চলে গেলো । এখান থেকে চীনের বর্ডার খুব কাছে । চুশূল থেকে হানলে যাবার দুটি রাস্তা আছে । একটি রেজাঙলা হয়ে যেটি পুরোটাই অফরোডিং এবং ওয়াটার ক্রসিং আছে । আরেকটি কাকসাংলা হয়ে যেটা পুরোটাই পাহাড়ি চড়াই উৎরাই আর অসংখ্য জিগ – জ্যাগ কার্ভ এ

ভরা ও আগেরটি থেকে ৪৫ কিমি অধিক রাস্তা । আমি কাকসাংলা হয়ে যাবার সিদ্ধান্ত নিলাম । পাহাড়ি চড়াই রাস্তা বেয়ে অসংখ্য হেয়ার পিন ব্যান্ড কার্ভ পেরিয়ে পাহাড়ের বুকে একটি সুন্দর লোকের দেখা পেলাম যার নাম মীরপাল লেক ।  সকাল ১০টার সময় ১৭,৮৫১ ফুট উঁচু কাকসাংলা টপে হাজির হলাম ।

চারিদিকে পাহাড়ের মাথাগুলো সাদা বরফে ঢাকা । এখানে ভীষণ জোরে বাতাস বইছিল আর তার সাথে ঠাণ্ডাও বেশ লাগছিল তাই আর বেশিখন দাঁড়ালাম না ।  পাহাড়ি ঢাল বেয়ে নিচে নামতে শুরু করলাম । মাহে তে পৌছে এক প্লেট ম্যাগি আর এক কাপ গরম চা খেয়ে নিলাম । মাহে থেকে লেফট টার্ন নিয়ে নিয়মার দিকে এগিয়ে চললাম । এখানে কোনো পেট্রল পাম্প না থাকায় নিয়মাতে এসে একটি স্থানীয়া দোকান থেকে পেট্রল কিনে বাইকে ফুল ট্যাংঙ্ক করে নিলাম ও সাথে কিছুটা অতিরিক্ত পেট্রলও নিয়ে নিলাম । নিয়মা থেকে লোমা তে এসে পৌঁছালাম । এই রাস্তার দুপাশের প্রাকৃতিক শোভা ভীষণ সুন্দর, রাস্তার ডানপাশ দিয়ে বয়ে চলেছে সিন্ধু নদী । লোমা চেক পোস্টে আমার সমস্ত ব্যক্তিগত তথ্য নথিবদ্ধ করতে হলো আর তার সাথে লেঃ তে, লাদাখ ঘোরার জন্য যে অনলাইন পার্মিট করেছিলাম সেটাও দেখতে হলো । মাহে থেকে লোমা পর্যন্ত রাস্তার কন্ডিশন ভিষণ ভালো । মাহে থেকে আমার ডানদিকে হানলে নদীকে সঙ্গে নিয়ে অপূর্বসুন্দর পথশোভা দেখতে দেখতে এগিয়ে চললাম । দুপুর আড়াইটে নাগাদ হানলে তে এসে পৌছালাম ও রাত্রিবাসের জন্য একটি হোমস্টেতে আশ্রয় নিলাম ।  লাঞ্চ সেরে একটু বিশ্রাম নেবার পর হানলের কিছু জায়গা ঘুরে দেখবো বলে হোমস্টে থেকে বাইরে এসে দেখি আবহাওয়া ভীষণ খারাপ, প্রবল জোরে বাতাস বইছে , চারিদিক অন্ধকার হয়ে এসেছে এবং তার সাথে ঝিরি ঝিরি বৃষ্টি ।  সিদ্ধান্ত পাল্টে হোমস্টেতে থেকে গেলাম । সন্ধ্যাবেলায় আমার হোমস্টেতে মহারাষ্ট্র থেকে আসা দুটি ছেলের সাথে পরিচয় হলো যারা আগামী কাল উমলিঙ্গলা যাবে । রাতের দিকে আকাশ একটু পরিস্কার হওয়াতে হানলের রাতের আকাশে সেই বিখ্যাত মিল্কি ওয়ের দেখা পেলাম ।

 ৫ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ বৃহস্পতিবার, ১১তম দিন (হানলে, উমলিঙ্গলা; লাদাখ ) :

ভোর পাঁচটায় উঠে দেখি আকাশ মেঘ  কুয়াশায় ছেয়ে আছে । অপেক্ষা করতে থাকলাম । সকাল সাড়ে সাতটা নাগাদ সূর্যের আলোর দেখা পেতেই উমলিঙ্গলার পথে বেরিয়ে পড়লাম । উমলিঙ্গলা যাওয়ার যে শর্টকাট রাস্তাটি আছে সেটি নিলাম ।  এপথে যেমন অফরোডিং তেমন চড়াই ।  রাস্তার অবস্থা বেহাল । চড়াই উৎরাই পেরিয়ে নুরবুলা টপ এর কাছাকাছি এসে ভালো টারম্যাক রোডের দেখা মিললো । এখানে এসে কিছুটা তুষারপাত পেলাম । নেরবোলে হয়ে চিসুমলে থেকে ডানদিকে চিসুমলে ব্রিজ পেরিয়ে কিছুটা যাওয়ার পর থেকে স্নো ফল শুরু হলো । রাস্তা ভেজা, রাস্তার দুপাশ তুষারের চাদরে ঢাকা । চারিদিকের পাহাড়গুলি বরোফে ঢেকে পুরো সাদা হয়ে আছে । আকাশ মেঘলা হয়েছিল, সূর্যের আলোর দেখা পাওয়া যাচ্ছিল না ।

অনবরত তুষারপাত হতে থাকায় হেলমেটর ভাইসর ঝাপসা হয়ে আসছিলো, দেখতে অসুবিধা হওয়ায় অগত্যা প্রবল ঠান্ডার মধ্যে বাধ্য হয়ে হেলমেটের ভাইসর খুলে নিয়েই বাইক চালাতে থাকলাম । তুষার আমার চোখে মুখে থেকে শুরু করে সারা গায়ে পড়ছিলো । তুষার হেলমেটের ভাইসরের উপর ক্রমাগত পড়তে থাকায় একটা বিরামহীন টুং টাং শব্দ হতে থাকলো । প্যাঁচালো রাস্তার প্রতিটি প্যাঁচ বেয়ে উপরের দিকে ওঠা আর তার দরুন উচ্চতা বৃদ্ধির সাথে সাথে বাইক ক্রমশ তার শক্তি হারিয়ে ধীর গতির হতে থাকলো । রাস্তায় যেতে বামদিকে একটি বোর্ডের লেখা চোখে পড়লো, “ YOU ARE AT EVEREST BASE CAMP HEIGHT” অর্থাৎ আমি এখন এভারেস্ট পাহাড়ের বেস ক্যাম্পের উচ্চতায় আছি । মনের ভিতর একটা অন্যরকম অনুভুতি খেলে গেলো ।

চলতে চলতে অবশেষে সকাল সাড়ে দশটার সময় বিশ্বের সর্বোচ্চ মোটরেবল পাস;  ১৯,০২৪ ফুট উচ্চতার উমলিঙ্গলাতে পৌঁছেগেলাম ।  অনবরত তুষারপাত হয়ে চলায় চারিদিকে শুধু বরফ আর বরফ । বিস্বের সর্বোচ্চ মোটরেবল পাসে একাকী আসতে পারার আনন্দে মন ভরে রইলো । এবার ফেরার পালা ।  অনেকটা নিচে নেমে আসার পর তুষারপাত বন্ধ হলো । দুপুর ১২ টা নাগাদ যখন ১৭,৩২৮ ফুট উচ্চতার নূরবুলা টপে পৌছালাম তখন আবার তুষারপাত পেলাম ।

বেশ কিছুটা ভালো টারম্যাক রোড পাওয়ার পারে আবার অফরোডিং শুরু হলো । দুপুর দেরটাতে হানলের হোমস্টেতে ফিরলাম । উমলিঙ্গলা যাওয়া এবং ফিরে আসা দিয়ে মোট ১৫৩ কিমি রাইড হলো । দুপুরের খাওয়া দাওয়া সেরে ও একটু বিশ্রাম নিয়ে বিকেল তিনটের সময় হানলের অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল অবজারভেটরি দেখতে বেরিয়ে পড়লাম । পাহাড়ের গা বেয়ে আস্তে আস্তে উপরে উঠতে লাগলাম । পাহাড়ের মাথায় অবস্থিত অবজারভেটরির সামনে যখন এসে দাড়ালাম পড়ন্ত বিকেলের রৌদ্রে উপর থেকে পুরো হানলে গ্রামটিকে দেখা যাচ্ছিলো । অবজারভেটরি দর্শন সেড়ে এগিয়ে চললাম হানলে মনাস্ট্রির উদ্দ্যেশে । এটিও একটি পাহাড়ের উপর অবস্থিত । পাহাড়ের উপরে হানলে মনাস্ট্রিতে এসে দেখ্লামযে এখান থেকেও পুরো হানলে গ্রামটিকে দেখা যাচ্ছে । এবার হোমস্টেতে ফেরার পালা । এদিনও হানলের রাতের আকাশে মিল্কি ওয়ের দেখা মিললো; অপূর্ব সুন্দর শোভা তার ।

 ৬ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ শুক্রবার, ১২তম দিন (হানলে থেকে সোমোরিরি লেক; কারজোক, লাদাখ) :

সকাল সাড়ে পাঁচটার সময় হোমস্টের বাইরে এসে দেখি, বাইকের সিট, টপ বক্সের উপর বরফের লেয়ার জমে আছে । বাইকের সিটের উপর আঙ্গুল দিয়ে একটু লেখা লেখি করলাম । হোমস্টে থেকে খানিকটা গরম জল এনে বাইকের বরফের লেয়ার পরিস্কার করে নিয়ে সকাল ৬:২৫ এ আজকের রাইড শুরু করলাম । সিন্দু নদী পেরিয়ে লোমা চেক পোস্টে এসে ওখানে জানাতে হলো যে আমি হানলে থেকে চলে যাচ্ছি, চেক পোস্টে সেটা নোট করে নিলো । লোমা থেকে নিয়মার দিকে যখন এগোচ্ছি আকাশে একটি বরো এরোপ্লেন দেখতে পেলাম । প্রথমে যাত্রীবাহী এরোপ্লেন ভেবেছিলাম, কিন্তু কিছুক্ষন পরে দেখি ওই এরোপ্লেন থেকে প্যারাট্রুপিং হচ্ছে । আর্মির জওয়ানেরা এরোপ্লেন থেকে প্যারাশুট নিয়ে পাহাড়ের মাথায় নেমে আসছে । সকাল পৌনে নটার সময় মাহে তে এসে ম্যাগি ও এক কাপ চা খেয়ে নিলাম । মাহেতে বিহার রেজিমেন্টের একজন আর্মি অফিসারের সাথে পরিচয় হলো । অনেক্ষন ওনার সাথে কথা হলো । উনি আমার রাইড সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে চাইলেন । উনি খুশি হয়ে আমাকে এক বোতল ফ্রুট জুস উপহার দিয়েছিলেন । মাহের পর থেকে রাস্তার অবস্থা খারাপ হতে শুরু করলো । কিছুটা যাৰর পর বামদিকে টার্ন নিয়ে সিন্ধু নদীর উপর নির্মিত মাহে ব্রিজ পেরিয়ে ভীষণ বাজে অফরোড শুরু হলো । একটা বরো ওয়াটার ক্রসিং পেরোতে গিয়ে মাঝখানে জলের মধ্যে বাইক আটকে গেল । দুপা নামিয়ে জলের মধ্যে দাঁড়িয়ে পড়লাম, পায়ে গামবুট থাকায় পা ও প্যান্ট ভেজে নি । পাশেই ওয়াটার ক্রসিঙের উপর নির্মীয়মান কালভার্ট এ কর্মরত ‘বি-আর-ও’ এর একজন কর্মীর সাহায্য চাইলাম । সে এসে আমার বাইকে ধাক্কা দিয়ে ওয়াটার ক্রসিং থেকে বেরোতে সাহায্য করলো । রাস্তার অবস্থা ভীষণ খারাপ হওয়ায় বাইকের গতি ভীষণ মন্থর হয়ে পড়লো । সুমডোতে এসে বামদিকের রাস্তা নিলাম ।

ক্যাগার লা, পাস পেরিয়ে সকাল ১১:১৫ তে ক্যাগার লেক এ হাজির হলাম ।  দারুন সুন্দর একটি লেক । দিগন্ত বিস্তৃত নির্জনতা, স্বেতশুভ্র পাহাড়, বিস্তীর্ণ বালুরাশি আর তার মাঝে নিলাভো লেকের রূপ মোহিত করে দিলো । আবিষ্ট হয়ে বেশকিছুক্ষন দাঁড়িয়ে রইলাম । আবেশের রেস্ কিছুক্ষন চলার পর বাইকের একটা অদ্ভুত শব্দে ভাঙলো ।  বাইক থেকে নেমে দেখি বাইকের সাইড টুল বক্সের একটি নাট-বোল্ট ভেঙে, বক্স ঝুলে আছে, আর তার থেকেই শব্দ হচ্ছে ।

টুল বক্সের নাট-বোল্ট যেভাবে ভেঙেছে সেটা এই মুহূর্তে ঠিক করা সম্ভব নয় বুঝে, দড়ি দিয়ে বেঁধে নিলাম । বাইকের দিকে আরেকটু খেয়াল করতেই, চোখে পড়লো টপ বক্সের ক্লামসহ একটি নাট-বোল্ট খুলে পড়ে গেছে । চূড়ান্ত অফরোডিংয়ের জন্য বাইকে যে ভাইব্রেশন হচ্ছিলো তার জন্যই এসব ঘটনা ঘটেছে ।

আমার হাতেও ভীষণ ব্যাথা করছিলো । আরো কিছুটা পথ চলার পর কার্যকে এসেগেলাম । এখান থেকে দূরে সোমোরিরি লেক দেখা যাচ্ছিলো । এখানে বামদিকে ৭০ কিমি দীর্ঘ কার্যক থেকে চুমুর যাওয়ার একটি রাস্তা আছে দেখলাম । গুগল ম্যাপ অনুযায়ী এই রাস্তা দিয়ে কার্যক থেকে হানলে যাওয়া যায় ।

চলতে চলতে দুপুর ১২:৪০ এ সোমোরিরি লেকর একদম কাছে চলে এলাম । সুবিশাল নীল জলরাশির লেক সোমোরিরি । একবার দেখলে ভালো নাবেসে থাকার উপায় নেই । রাত্রিবাসের জন্য সোমোরিরি লেকের একদম পাশে একটি হোমস্টেতে আশ্রয় নিলাম । হোমস্টেতে দুপুরের খাওয়াদাওয়া সেরে ও একটু বিশ্রাম নিয়ে বিকেলে বাইক নিয়ে  সোমোরিরি লেকের চারিপাশ ঘুরে দেখার জন্য বেরিয়ে পড়লাম । আজকের যাত্রাপথ ছিলো ১৫৫ কিমি দীর্ঘ ও চূড়ান্ত অফরোডিং এর ।

 ৭ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ শনিবার, ১৩তম দিন (সোমোরিরি লেক, কারজোক থেকে সারচু, লাদাখ) :

প্রতিদিনের ন্যায় ভোরে উঠে প্রস্তুত হয়েও আজকের দিনের রাইড, বৃষ্টির জন্য শুরু করতে পারলাম না । বৃষ্টি ও খারাপ রাস্তার কথা ভেবে রাইড শুরু করতে দেরি হলো । প্রাতরাশ সেরে নিলাম হোমস্টেতেই । বৃষ্টি কমতেই সকাল ৭:১৮ তে যাত্রা শুরু করলাম । ভীষণ ধীরে ধীরে বাইক চালাতে হচ্ছিল । এতো সকালে সোমোরিরি লেকের জল আর ততটা নীল নেই ।  সোমোরিরি লেককে পিছনে রেখে এগিয়ে চললাম । সুমডোতে এসে বামদিকের রাস্তা নিলাম পূগার দিকে । প্রথমে কিছুটা ভালো রাস্তা পেলেও তারপরেই আবার শুরু হলো অফরোডিং । রাস্তার বিভিন্ন অংশে রাস্তা মেরামতের কাজ হতে দেখলাম । রাস্তায় বিপরীত দিক থেকে কোনো গাড়ি আসতে দেখলেই, তার ড্রাইভারকে জিজ্ঞেস করছিলাম ভালো রাস্তা কখন পাওয়া যাবে । পোলোগংকালা পাস পেরিয়ে বামদিকে একটি ছোট্ট নীল জলের লেক স্টার্টসাপুক দেখতে পেলাম । এখান থেকে কিছুটা এগোতেই দেখা মিললো সকার লেকের । ভীষণ সুন্দর একটি লেক পাহাড়ি নির্জনতার মাঝে স্বমহিমায় বিরাজমান । সকার লেকের অনতিদূরে ‘থুকযেতে’ রাত্রিবাসের জন্য কিছু হোমস্টে ও টেন্ট মিলবে । এখানে আমি একটু চাপানের বিরতি নিলাম । কেরালা থেকে আসা চারজন রাইডারের সাথে এখানে পরিচয় হলো, ওনারাও মানালির দিকে যাবেন । আলাপচারিতা সেরে আবার চলতে শুরু করলাম এবং চলতে চলতে ডেবরিং এ এসে লেঃ – মানালী হাইওয়েতে উঠে পড়লাম । বামদিকে বাইক ঘুরিয়ে লেঃ – মানালী হাইওয়েতে মানালীর দিকে চলতে শুরু করলাম । মোরে প্লেইন্স পর্যন্ত দারুন সুন্দর রাস্তা ।  পাং থেকে রাস্তা খারাপ হতে শুরু করলো । পাং এর খাবারের দোকান গুলিতে অনেক রাইডারদের ভিড় দেখতে পেলাম । পাং থেকে বেশ কিছুটা রাস্তা যাওয়ার পর রাস্তায় গাড়ির জ্যাম শুরু হলো । বার বার জ্যামে আটকে পড়ছিলাম ।

লাচুং লা থেকে হুইস্কি নালা হয়ে নাকিলা পাসে পৌছালাম । রাস্তায় গাড়ির জ্যাম যেন পিছুছাড়ার নাম নিচ্ছিল না । গাটা লুপস এর অসংখ্য হেয়ার পিন বেন্ড রাস্তা ধরে নিচে নামতেই, ডানপাশে সারাপ নদী আমার পথের সাথী হলো ।  বিকেল সাড়ে চারটের সময় সারচুতে এসে একটি রেস্টুরেন্টের সামনে দাঁড়ালাম ।  রাস্তায় গাড়ির জ্যামের জন্য আজকে আর লাঞ্চ করা হয় নি । বিকেল পাঁচটার সময় লাঞ্চ সেড়ে আজ আর না এগিয়ে সারচুতে থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম । আজকের রাইড ছিলো ২১৫ কিমির । সারচুর প্রাকৃতিক শোভা খুবই সুন্দর । আমার প্রিপেইড মোবাইল সিম যেটি পাঠানকোট পেরোবার পর্ বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো সেটি সারচুতে আবার চালু হয়ে গেল ।  সারচুতে সোলার ব্যাটারির নিজস্ব বিদ্যুৎ ব্যাবস্থা যা সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাট ১০টা পর্যন্ত চালু থাকে । সারচু লাদাখ ও হিমাচল প্রদেশের বর্ডার এবং লাদাখের শেষ গ্রাম । সারচুতে রাতে বেশ ঠান্ডা ছিল ।

 ৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ রবিবার, ১৪তম দিন (সারচু, লাদাখ থেকে বিলাসপুর, হিমাচল প্রদেশে) :

সকাল পাঁচটার সময় রুমের বাইরে এসে দেখি, হানলের মতো বাইকের সিট, টপ বক্সের উপর বরফের লেয়ার জমে আছে । বাইকের সিটের উপর আঙ্গুল দিয়ে একটু লেখা লেখি করলাম । ব্রেকফাস্ট সেরে সকাল ৬:৩০ এ রাইড স্টার্ট করলাম । একটু এগোতেই চেকপোস্ট পড়লো যেখানে আমাকে সবকিছু এন্ট্রি করতে হলো । চেকপোস্ট হয়ে সারচু ব্রিজ পার হতেই আমি লাদাখে ছেড়ে হিমাচল প্রদেশে চলে এলাম । আমার বাইকে একাকী লাদাখ ভ্রমণের পরিসমাপ্তি হলো । এবার মানালি হয়ে বাড়ি ফেরার পালা । সারচু থেকে মানালির দিকে লেঃ-মানালী হাইওয়েতে অনেকগুলো বাজে ওয়াটার ক্রসিং আছে ।

ভরতপুর টেন্ট কলোনী হয়ে; ১৫,৯১০ ফুট  উচ্চতার ‘বারালাচ লা’ পাস্ পেরিয়ে সুরাজ তাল লেকের পাশে এসে দাঁড়ালাম । সকালবেলার সূর্যের আলোয় লেকটি দেখতে খুব সুন্দর লাগছিল । জিং জিং বার পেরিয়ে রাস্তার ডানপাশে একটি ছোট লেক ‘দীপক তাল’ দেখতে পেলাম । এখান থেকে একটু এগোতেই পাহাড়ের গায়ে  একটি ঝর্ণা দেখতে পেলাম যেটি ঠান্ডায় পুরো জমে গেছে । দারচা থেকে  একটি রাস্তা চলে গেছে সিঙ্কুলা পাস হয়ে জান্সকার ভ্যালির দিকে । লেঃ-মানালী হাইওয়ে ধরে জিসপা, গেমুর, কেলং হয়ে টান্ডিতে এসে হাজির হলাম । টান্ডি পেট্রল পাম্প থেকে বাইকের ফুল ট্যাংক পেট্রল ভরে নিলাম । ভাগা নদীর উপর টান্ডি ব্রিজ পেরিয়ে ডানপাশে ভাগা ও চেনাব নদীর সঙ্গমস্থল দেখতে পাওয়া যায় । লেঃ-মানালী হাইওয়ের ডানপাশে চেনাব নদীকে সাথে নিয়ে  সিসু হয়ে টেলিং এ এসে ডানদিকের রাস্তায় এগোতেই অটল টানেলের নর্থ পোর্টালের মুখো মুখি হলাম, ঘড়িতে তখন সকাল ১১ টা ।  ৯ কিলোমিটার দীর্ঘ অটল টানেল ১০,০০০ ফুট উপরে অবস্থিত বিশ্বের দীর্ঘতম সুড়ঙ্গ যা লেঃ-মানালী হাইওয়েতে যাতায়াত ব্যবস্থাকে অনেকটাই সুগম করেছে । তাই এখন আর রোহটাং পাস হয়ে মানালির দিকে যাওয়ার দরকার নেই ।  এক অনন্য সুন্দর অভিজ্ঞাতা নিয়ে অটল টানেলের মধ্যে দিয়ে বাইক চালিয়ে অটল টানেলর সাউথ পোর্টাল দিয়ে বেরিয়ে এলাম । ধুন্ডি ব্রিজ পার হতেই আমার বামপাশে পেলাম রূপসী, চঞ্চল বিপাশা নদিকে ।  পথ চলার ক্লান্তি কিছুটা কমিয়ে দিল বিপাশা । সোলাং ভ্যালিতে এসে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে প্যারাগ্লাইডিং দেখলাম । দুপুর সাড়ে বারোটায় মানালি তে এসে পৌছালাম । মানালি থেকে কুলু আসার পথে রাস্তার পাশে অনেক আপেল বিক্রির ষ্টল এবং প্যারাগ্লাইডিং, রাফটিং সহ অন্যান্য অ্যাক্টিভিটির টিকেট বুকিং অফিস দেখা গেলো । কুলুতে গায়ের শাল তৈরির অনেক কারখানা ও বিক্রির দোকান আছে । কুলুতে এসে গায়ের শীতের সব পোশাক খুলে নিলাম কারণ ঠান্ডা আর একদমি ছিল না । কুলুর একটি রেস্তোরায় লাঞ্চ সেরে নিলাম । চলতে চলতে হিমাচল প্রদেশের মান্ডিতে এসেগেলাম । এবার বিপাশা কে বিদায় জানানোর পালা, এই পুরো রাস্তায় বিপাশা আমার সঙ্গে ছিল । সুন্দর নগর, বারটি হয়ে বিকেল ছটার সময় হিমাচল প্রদেশের বিলাসপুরে এসে পাহাড়ের কোলে, শতদ্রু নদীর পাশে রাত্রিবাসের জন্য একটি হোটেল নিলাম । আজকের যাত্রাপথ ছিলো ৩৪৭ কিমি দীর্ঘ ।

 ৯ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ সোমবার, ১৫তম দিন (বিলাসপুর, হিমাচল প্রদেশে থেকে আগ্রা, উত্তর প্রদেশ) :

ভোর সাড়ে চারটায় ঘুম থেকে উঠে রেডি হয়ে ৫:৫০ এ রাইড শুরু করলাম । ভুল করে কিছুক্ষনের জন্য শিমলা যাওয়ার রাস্তায় ঢুকে পড়েছিলাম ।  হিমাচল প্রদেশের বিলাসপুরের আমার হোটেল থেকে ৬০ কিমি এসে ‘বড়া পিন্ড’ এ পৌছালাম । পুরোটাই পাহাড়ি রাস্তা ছিলো । বড়া পিন্ড, হিমাচল প্রদেশ ও পাঞ্জাবের বর্ডার । এখান থেকে সমতলের রাস্তা শুরু । পাহাড় ও পাহাড়ি রাস্তা কে আলবিদা জানিয়ে আমার সমতলের জার্নি শুরু হলো । পাঞ্জাবের চন্ডিগড় হয়ে হরিয়ানার আম্বালাতে এসে আজকের ব্রেকফাস্ট সেরে নিলাম বিশালাকার পাঞ্জাবি পরোটা দিয়ে । কুরুক্ষেত্র, কারনাল, পানিপত, হয়ে সোনিপতের রাই  থেকে লেফট টার্ন নিয়ে  ইস্টার্ন পেরিফেরাল এক্সপ্রেসওয়েতে উঠে পড়লাম ।  ১৬ কিমি চলার পর যমুনা নদীর উপর ‘ইস্টার্ন পেরিফেরাল এক্সপ্রেসওয়ে সেতু’ পার হতেই হরিয়ানা ছেড়ে উত্তর প্রদেশ রাজ্যে চলে এলাম । এখান থেকে আজ ও আগামীকাল পুরো সফরটাই হবে উত্তর প্রদেশ রাজ্যে । ইস্টার্ন পেরিফেরাল এক্সপ্রেসওয়েতে দোকানপাট বা ধাবা কিছুই পাওয়া যায় না ।  দীর্ঘ সময়ের রাস্তা অতিক্রমকরে ‘গ্রেটার নয়ডা’ হয়ে যমুনা এক্সপ্রেসওয়েতে এসে হাজির হলাম ।  ২০৫ টাকার টোল ফিস দিয়ে অতিসুন্দর রাস্তার আনন্দ নিতে থাকলাম । এই রাস্তার ডানপাশে খুব কাছেই দুটি বিখ্যাত জায়গা বৃন্দাবন ও মথুরা পরে । বাইকে পেট্রল শেষ হয়ে আসায় একটি পেট্রোল পাম্প থেকে ফুল ট্যাংক পেট্রল ভরে নিলাম । যমুনা এক্সপ্রেসওয়ে ছেড়ে ‘আগ্রা ইনার রিং রোড’ ধরে কাঠ চাঁপা ফুলের গন্ধে মাতোয়ারা হয়ে, ৬৪২ কিমি জার্নি শেষ করে রাত্রিবাসের জন্য আগ্রার হোটেলে পৌঁছেগেলাম ।

২০শে সেপ্টেম্বর, ২০২২ মঙ্গলবার, ১ ৬তম দিন (আগ্রা থেকে বারানসি, উত্তর প্রদেশ) :

এই দিনটা ছিলো আমার বৃষ্টিতে ভেজার দিন । সকাল ৫:২৫ এ রাইড শুরু করলাম । এতো সকালেও দেখলাম আগ্রার বিখ্যাত পেঠা মিষ্টির দোকান গুলো সব খোলা আছে ।  ২০০ থেকে ৪০০ টাকা কেজি দরে পেঠা মিষ্টি বিক্রি হচ্ছিল দোকানে, বাড়ির জন্য কিছুটা কিনে নিলাম । ‘আগ্রা ইনার রিং রোড’ হয়ে  ৮৫ টাকার টোল ফিস দিয়ে ‘আগ্রা লখনউ এক্সপ্রেসওয়ে’ ধরলাম । বেশ ভালোই যাচ্ছিলাম । বাধ সাধলো বৃষ্টি । ‘আগ্রা লখনউ এক্সপ্রেসওয়েতে’ বৃষ্টির হাত থেকে বাঁচার জন্য দাড়াবার মতো কোনো জায়গা নেই । অনেকটাই ভিজে গেলাম । অগত্যা রাস্তার মধ্যে দাঁড়িয়েই রেইন কোট পরে নিতে হলো । বেশ কিছুটা চলার পর বৃষ্টি বন্ধ হলে, বাইক থামিয়ে রেইন কোট খুলে নিলাম । ‘আগ্রা লখনউ এক্সপ্রেসওয়ে’ থেকে বেরিয়ে, ন্যাশনাল হাইওয়ে-১৯ ধরে ইটাওয়া হয়ে অরাইয়া তে এসে ব্রেকফাস্ট করলাম । আকাশ মেঘলা ছিল তাই রোদের তাপের কষ্টটা ছিলো না । কানপুর, ফতেহপুর, পার করে এলাহাবাদে প্রচন্ড বৃষ্টির মধ্যে পড়েগেলাম । বৃষ্টির হাত থেকে বাঁচার জন্য একটি পেট্রল পাম্পে আশ্রয় নিলাম । এক ঘন্টার কিছু বেশি সময় ঠায় বসে থাকতে হলো । ঘড়ির কাঁটা ২ টো পেরিয়ে গেছে কিন্তু আজকের লাঞ্চ তখন করা হয় নি । বৃষ্টি বন্ধ হতেই আবার চলতে শুরু করলাম ।  উত্তর প্রদেশে ন্যাশনাল হাইওয়ে-১৯ এর দুপাশ জুড়ে সারা রাস্তায় প্রচুর কাশ ফুল ফুটেছে দেখলাম । সামনেই দূর্গা পূজা ছিল, এটি তারই আগমনী বার্তা । বিকেল চারটের সময় আজকের লাঞ্চ হল । ৫৯০ কিমির রাইড সেরে, বৃষ্টিতে ভিজে বিকেল ৫:৪০ এ বারানসির হোটেলে পৌছালাম । হোটেলের রুমে ঢুকে ফ্যান চালিয়ে আমার ভেজা জামা কাপড় গুলো সব শুকোতে দিলাম । সন্ধ্যায় বাইক নিয়ে হোটেল থেকে বেরিয়ে বারানসি শহরের দিকে গেলাম । বারানসির পান খেয়ে এবং বারানসির বিখ্যাত প্যারা সন্দেশ বাড়ির জন্য কিনে নিয়ে হোটেলে ফিরে এলাম ।  

 ১শে সেপ্টেম্বর, ২০২২ বুধবার, ১ ৭ তম দিন (বারানসি, উত্তর প্রদেশ থেকে কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ) :

মাঝ রাতে ঘুম ভেঙে গেলো । উঠে দেখি প্রচন্ড জোরে বৃষ্টি হচ্ছে বারানসিতে । জানলা খোলা থাকায় বৃষ্টির ছাঁট আমার গায়ে এসে লাগায় ঘুমটা ভেঙে গেছে । জানলা বন্ধ করে দিয়ে আবার শুয়ে পরলাম । ভোর তিনটের সময় ঘুম থেকে উঠে, রেডি হয়ে ৪:১৭ তে  রাইড শুরু করলাম । আজকে বাড়ি ফেরার পালা । ঝিরি ঝিরি বৃষ্টি মাথায় নিয়ে বারানসিতে গঙ্গা নদীর উপর ব্রিজ পেরিয়ে ন্যাশনাল হাইওয়ে-১৯ ধরে এগিয়ে চললাম । রাতের অন্ধকারে বাইকের হেড লাইটের আলোয় রাস্তার বিভিন্ন জায়গায় জল জমে আছে দেখতে পাচ্ছিলাম, তাই বাইক ধীরে ধীরে চালাতে হচ্ছিলো । দীর্ঘ সময় চলার পর ভোরের আলো ফুটল । গঙ্গার উপনদী করমানসার উপর ব্রিজ পেরোতেই  উত্তর প্রদেশ ছেড়ে বিহারে প্রবেশ করলাম । শিভ্সাগর, সাসারাম, দেহরী, সোন নদী, ঔরঙ্গাবাদ পেরিয়ে এসে একটি ধাবাতে প্রাতরাশ সেরে নিলাম । ফল্গু নদিতে প্রচুর কাশ ফুল ফুটে আছে দেখলাম । ফল্গু নদির সেতুর উপর থেকে যা দেখতে অসাধারণ লাগছিল ।  ফল্গু নদির সেতু পেরিয়ে এপাশে চলে আসতেই বিহার ছেড়ে ঝাড়খন্ড রাজ্যে প্রবেশ করলাম ।  চৌপারন, বর্হি, জামতাড়া, তোপচাঁচি, রাজগঞ্জ হয়ে ধানবাদ এর কাছে আসতেই আবার প্রবল বৃষ্টির মধ্যে পড়লাম । বৃষ্টির হাত থেকে বাঁচার জন্য একটি বাইকের শোরুমে আশ্রয় নিলাম ।  ৪০ মিনিট অপেক্ষারপর বৃষ্টি থামার শেষে আবার রাওনা দিলম । মাইথনে এসে বরাকর নদী পেরোতেই নিজের রাজ্য পশ্চিমবঙ্গে প্রবেশ করলাম । বৃষ্টির জন্য আজকেও লাঞ্চ সারতে দেরি হয়ে গেলো । আসানসোল, দুর্গাপুর পেরিয়ে এসে বিকেল তিনটের সময় ন্যাশনাল হাইওয়ের পাশে একটি রেস্তোরায় লাঞ্চ করে নিলাম । রেস্তোরার পিছন দিকটাই প্রচুর কাশ ফুল ফুটেছে দেখলাম । আজ  ২১শে সেপ্টেম্বর, মহালয়া ২৫শে সেপ্টেম্বর । সামনেই দূর্গা পূজা । মনে একটা আলাদা আনন্দের আমেজ রয়েছে । ঝাড়খন্ড রাজ্যের মধ্যে দিয়ে যখন আসছিলাম ন্যাশনাল হাইওয়ের পাশে অনেকগুলো দূর্গা পূজার প্যান্ডেল দেখতে পেয়েছিলাম । বর্ধমান পেরিয়ে শক্তিগড় আসতেই দাঁড়াতে হলো । ঘড়িতে তখন বিকেল ৪:৪০ বাজে । শক্তিগড়ের ল্যাংচা না নিয়ে তো বাড়ি যাওয়া যাবে না । এখানকার ল্যাংচার স্বাদ অতুলনীয় । একটি দোকান থেকে ল্যাংচা কিনে বাড়ি ফেরার পথ ধরলাম । রসুলপুর থেকে ডান দিকে ঘুরে গুড়াপ হয়ে সিঙ্গুরে আসতেই সন্ধ্যার অন্ধকার ঘনালো । এরপর ডানকুনি টোল প্লাজা, রাজচন্দ্রপুর, বালি হয়ে বিবেকানন্দ সেতুতে (বালি ব্রিজ) আসতেই, আজ বারানসিতে ভোর সাড়ে চারটের পর ফের একবার গঙ্গা নদীর সাথে দেখা হয়ে গেলো, মাঝে থাকলো ৬৭৫ কিমির দুরত্বের ব্যবধান । দক্ষিনেশ্বর, ডানলপ হয়ে সন্ধ্যা সাতটায় বেলঘরিয়ায় বাড়িতে ফিরলাম । সঙ্গে নিয়ে এলাম একরাশ স্মৃতি, আনন্দ আর ভালোলাগা ।  আমার বাইকে একাকি লাদাখ ভ্রমণের পরিসমাপ্তি হলো ।

কী ভাবে যাবেন ? সঠিক মোটরসাইকেল নির্বাচন করুন:

লাদাখের রাস্তা মনোরম হলেও, লম্বা সফরের জন্য মোটরসাইকেলটি আরামদায়ক হওয়া প্রয়োজন। একটানা গাড়ি চালিয়ে কোমর, পিঠ ব্যথা হবে। তাই এমন মোটরসাইকেল নিন, যাতে রাস্তা খারাপ হলেও খুব বেশি ঝাঁকুনি না হয়। জ্বালানির ট্যাঙ্ক বড়, এমন মোটরসাইকেল নির্বাচন করুন।

কোথায় কেমন চিকিৎসার সুবিধা পাওয়া যাবে, তা আগে থেকে দেখে নিন:

এত দীর্ঘ পথ অতিক্রম করার আগে দেখে নিন, কোথায় কেমন চিকিৎসার পরিষেবা পাওয়া যায়। কারণ রাস্তায় কারও শরীর খারাপ হলে তৎক্ষণাৎ হাতের সামনে সব কিছু পাওয়ার আশা কিন্তু রাখবেন না। আর যদি পাহাড়ে উঠলেই মাথা ঘোরা বা গা গোলানোর সমস্যা থাকে, তা হলে প্রাথমিক কিছু ওষুধ সঙ্গে নিয়েই বেরোবেন।

কখন যাবেন?
গ্রীষ্মকাল লাদাখ ভ্রমণের জন্য আদর্শ সময়। জুন থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে সবথেকে ভালো আবহাওয়া পাবেন। এই সময় লাদাখে বিভিন্ন হ্রদের বরফ গলে জল হতে শুরু করে। যা প্রকৃতিকে আরও সুন্দর করে তোলে। এই সময় লাদাখ রাইডে প্রকৃতির শোভা বুক ভরে নিজের মধ্যে নিয়ে নিতে পারবেন।

লাদাখে কয়েকটি উৎসব হয়। লোসার ফেস্টিভ্যাল, হেমিস ফেস্টিভ্যাল, সিন্ধু দর্শন ফেস্টিভ্যাল, লাদাখ হার্ভেস্ট ফেস্টিভ্যাল সহ একাধিক উৎসব জনপ্রিয়। উৎসবের সময় গেলে লাদাখ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা সম্পূর্ণ বদলে যেতে পারে।

কোন পথে যাবেন?

এপ্রিল থেকে মে পর্যন্ত লাদাখের বিভিন্ন রাস্তা বন্ধ থাকে। তাই এই সময় মোটরসাইকেলে লাদাখ না যাওয়াই ভালো। তবে জুনের প্রথম সপ্তাহ থেকে নভেম্বর পর্যন্ত কার্গিল হয়ে লাদাখ থেকে কাশ্মীর ভ্রমণেও যেতে পারেন। সেই ক্ষেত্রে একসঙ্গে প্রকৃতির দুই রূপ চাক্ষুষ করতে পারবেন।

এছাড়াও মানালি থেকে লে মোটরসাইকেলে রাইড করতে পারেন। এই রাস্তা তুলনামূলক চ্যালেঞ্জিং। রাস্তাও অনেক লম্বা। জুনের মাঝামাঝি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত এই রাস্তা খোলা থাকে। তবে বৃষ্টি, তুষারপাত ও ধসের কারণে মাঝে মাঝে রাস্তা বন্ধ থাকে।

কী কী দেখবেন?

লাদাখে রয়েছে সুন্দর কয়েকটি মঠ। আলচি, হেমিস, স্পিটুক মঠগুলি অন্যতম। এছাড়াও ম্যাগনেটিক হিল, শান্তি স্তূপ, হে মার্কেট, ওয়ার মিউজিয়াম ঘুরে দেখতে পারেন। এছাড়াও খার্দুংলা টপ, প্যাঙ্গং লেক সহ লাদাখের আরও অনেক জায়গা ঘুরে দেখতে পারেন।

কী কী সঙ্গে রাখবেন?

গ্রীষ্মের সময় লাদাখ গেলেও সেখানে রাতের দিকে বেশি ঠাণ্ডা পড়বে। তাই সঙ্গে কিছু গরম পোশাক রাখুন। এছাড়াও লাদাখের উচ্চতা অনেক বেশি হওয়ার কারণে বাইরে যাওয়ার আগে সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন। সঙ্গে রাখুন একটি উচ্চ মাসের SPF -এর সানস্ক্রিন।

কোথায় থাকবেন?

লাদাখে খুব কম খরচে হোটেল পেয়ে যাবেন। এছাড়াও এখন কম খরচে অনেক হস্টেল পাওয়া যায়। চাইলে অনলাইনে বুক করে নিতে পারেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here