হীয়া রায় ও অর্পিতা বনিক: কলকাতার আর জি কর হাসপাতালের নারকীয় হত্যাকান্ডের ঘটনায় তোলপাড় গোটা দেশ। লাগাতার আন্দোলনে সামিল হয়েছেন দেশের বিভিন্ন হাসপাতালের চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মীরা। আর সেই আন্দোলনের ঢেউ এসে পড়ল এবার বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে। মঙ্গলবার সকালে আন্দোলনে সামিল হলেন হাসপাতালের সমস্তস্তরের চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মীরা। দেখুন ভিডিও
এদিন সকাল ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত জরুরী বিভাগ বাদ দিয়ে হাসপাতালের বাকি বিভাগে পেন ডাউন কর্মসূচি পালন করেন চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীরা। পাশাপাশি, যতদিন না দোষীরা উপযুক্ত শাস্তি পাচ্ছে, ততদিন কালো ব্যাজ পড়ে চিকিৎসকরা বনগাঁ হাসপাতালে পরিষেবা দেবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এদিন হাসপাতাল চত্ত্বরে প্রতিবাদ মিছিলও করা হয়।
বনগাঁ হাসপাতালের চিকিৎসক ডাঃ গোপাল পোদ্দার এব্যাপারে বলেন, ‘আরজিকর হাসপাতালের বীভৎস হত্যাকান্ড শুধু চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী নয়, গোটা সমাজকে নাড়িয়ে দিয়েছে। ডাক্তার হিসেবে আমরা খুবই লজ্জিত, শোকাহত। ঘটনার ৫ দিন পরেও আমরা সবাই একটা ধোঁয়াশায় মধ্যে রয়েছি। এটা একজনের ঘটনা নয়, সংগঠিত অপরাধ। তাই সমস্ত অপরাধীকে গ্রেপ্তার করে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।’
আরজিকরের ঘটনাকে বীভৎস নারকীয় হাড়হিম করা হত্যাকান্ড হিসেবে আক্ষায়িত করে I
চিকিৎসক ডাঃ আশিস কান্তি হীরা বলেন, ‘একটা সুস্থ দেশে একজন চিকিৎসকের উপর এমন বর্বরচিত হত্যাকান্ডে দোষীদের এমন শাস্তি দিতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে এমন কান্ড ঘটানোর আগে অপরাধীরা একবার ভাববে। এই শাস্তি কে, কিভাবে দেওয়া হবে, তার দায়িত্ব প্রশাসনের। প্রশাসনকে বার্তা, কঠোর ব্যবস্থা না নিলে চিকিৎসকেরা জরুরী প্রয়োজনে পরিষেবা থেকে বিরত থাকতে বাধ্য হবেন।’
আশিষ বাবু আরও বলেন, ‘আরজিকরের ঘটনা শুধু ডাক্তার বা স্বাস্থ্যকর্মীদের অপমান নয়, এটা গোটা নারী জাতির অসম্মান। গোটা দেশে এমন ঘটনার নজির নেই। তাই এই জঘন্য ঘটনার প্রতিবাদে সমগ্র নারী জাতিকে এই আন্দোলনে শামিল হওয়া উচিত।
বুধবার রাত ১১টা ৫৫মিনিটে বনগাঁর নীলদর্পণ হলের সামনে যে জমায়েতের ডাক দেওয়া হয়েছে, সেখানে সকলে উপস্থিত হোন, এটাই আবেদন।’
আরজি কর কাণ্ডের প্রতিবাদ চলছে রাজ্যজুড়ে । কার্যত সব মেডিক্যাল কলেজে চলছে কর্মবিরতি। জুনিয়র ডাক্তারদের কাজ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তের জেরে চিকিৎসা পরিষেবাও ব্যাহত হচ্ছে। এই অবস্থায় তাঁদের আন্দোলনকে ন্যায্য দাবি করেও চিকিৎসা পরিষেবা স্বাভাবিক করার বার্তা দিল রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর। সাংবাদিক বৈঠক করে এদিন স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণ স্বরূপ নিগম সব পরিষেবা স্বাভাবিক রাখার কথা বলেন।
স্বাস্থ্যসচিবের বক্তব্য, আরজিকরে যে ঘটনা ঘটেছে তার তীব্র নিন্দা করছে রাজ্য সরকার। দোষীদের কড়া শাস্তির দাবি তাঁরাও জানাচ্ছে। এই ঘটনার অপরাধী ১২ ঘণ্টার মধ্যেই গ্রেফতার হয়েছে, তদন্তও চলছে। কিন্তু আন্দোলনের জেরে চিকিৎসা পরিষেবা ব্যাহত হওয়ায় বহু মানুষের ভোগান্তি হচ্ছে, সেই দিকেও নজর দেওয়া দরকার, এমনই মত নারায়ণ স্বরূপ নিগমের। তিনি বলেছেন, ”মুখ্যমন্ত্রী নিহত চিকিৎসকের বাড়ি গিয়ে উপযুক্ত তদন্তের আশ্বাস দিয়েছেন। অপরাধী ১২ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতার হয়েছে, যে কোনও তদন্তে এটা মনে হয়ে সবচেয়ে দ্রুত গ্রেফতারি। আরজি করে যা হয়েছে তার কঠোর নিন্দা করে সরকার।”
আরজি কর কাণ্ডে সিভিক ভলেন্টিয়ার সঞ্জয় রায় গ্রেফতার হয়েছে। তবে অনেকের সন্দেহ তার সঙ্গে আরও কেউ জড়িত আছে এই ঘটনায়। তাই আসল দোষীদের শাস্তির দাবিতেই চলছে লাগাতার আন্দোলন, আর তার জেরেই কর্মবিরতি। জুনিয়র ডাক্তারদের স্পষ্ট দাবি, দোষীদের কঠোর শাস্তি যতক্ষণ না হবে ততক্ষণ আন্দোলন চলবে। এই ঘটনায় দোষীর ফাঁসির দাবিও তোলা হয়েছে।
গত শুক্রবার সকাল থেকে গোটা রাজ্য তোলপাড় আরজি কর কাণ্ড নিয়ে। ধীরে ধীরে ঘটনার প্রতিবার রাজ্যের সীমানা অতিক্রম করে গোটা দেশেই ছড়িয়ে গেছে। জায়গায় জায়গায় হচ্ছে মিছিল, বিক্ষোভ। একাধিক মেডিক্যাল কলেজ থেকে শুরু করে স্কুল-কলেজের পড়ুয়ারা, সাধারণ মানুষও রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করছেন। একই ছবি ধরা পড়ছে সোশ্যাল মিডিয়া জুড়েও। সেখানেও চলছে দেদার লেখালেখি। প্রতিবাদের ঝাঁজ যে প্রতিনিয়ত বাড়ছে তা বলাই বাহুল্য।