দেশের সময়, কলকাতা : পুরনো সমস্ত রেকর্ড ভেঙে দিল ৪৬ তম আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলা।এ বছরের মতো শেষ পর্বে চলে এসেছে আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলা (International Kolkata Book Fair)। ৪৬তম কলকলা বইমেলা (46th Kolkata Book Fair) একের পর এক রেকর্ড ব্রেক করেছে। কোভিড অতিমারি কাটিয়ে নতুন উদ্যমে বইমেলায় ভিড় জমিয়েছেন সাধারণ মানুষ। অনলাইন আর কিন্ডলের যুগে দাঁড়িয়েও পাতা উলটে, ব়্যাক ঘেঁটে দেদার বই কিনেছেন অসংখ্য মানুষ।
রবিবার বইমেলার শেষ দিনে সাংবাদিক সম্মেলনে গিল্ডের সাধারণ সম্পাদক ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায় জানান, ‘বইমেলায় এবার লোকসংখ্যা ২৫ লক্ষ পার করে গিয়েছে। গতবার বই বিক্রি হয়েছিল ২৩ কোটি টাকার। এবারে সেই রেকর্ডও ভেঙে ছাড়িয়ে গিয়েছে ২৫ কোটি।’
এদিন সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন গিল্ডের সভাপতি সুধাংশু শেখর দে, সম্পাদক ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায়, মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন, বিধান নগর পুরসভার মেয়র কৃষ্ণা চক্রবর্তী, সাংসদ দোলা সেন, সিপি বিধান নগর গৌরব শর্মা, সাহিত্যিক স্বপ্নময় চক্রবর্তী, অনুষ্টুপ প্রকাশনার কর্ণধার অনিল আচার্য এবং স্পেনের কর্মকর্তারা।
সুধাংশু শেখর দে বলেন, ‘এত বড় বইমেলা সুষ্ঠভাবে করার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ জানাই। কোনো রকম ত্রুটি থাকলে আমাকে জানাবেন। আমরা সবাই ভুল থেকে শিক্ষা নিই।’
ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘ছোট থেকে বড় স্টল সব জায়গাতেই প্রচুর বই বিক্রি হয়েছে এবার। তবে সবথেকে বেশি পরিমাণে বিক্রি হয়েছে বাংলাদেশের বই। প্রায় ১ কোটি টাকার ওপর বই বিক্রি হয়েছে বাংলাদেশ প্যাভিলিয়নে।’ তাছাড়া বইমেলার সঙ্গে যুক্ত সব স্পনসরদের ধন্যবাদ জানান তিনি।
পুলিশ বাহিনী, দমকল বাহিনী থেকে শুরু করে স্টেট ব্যাংক, সিস্টার নিবেদিতা ইউনিভার্সিটি, বিদ্যুৎ দপ্তরকেও ধন্যবাদ জানিয়েছে গিল্ড। এই প্রথম নিজের নামের জায়গা বইমেলা প্রাঙ্গণে আয়োজন করা হয়েছে বইমেলা। যে কারণে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ধন্যবাদ জানিয়েছেন সকলেই।
স্পেনের পক্ষ থেকে বলা হয়, এবার স্পেন প্যাভিলিয়নে একশোর ওপর আলোচনা সভা বসেছে। সিনেমা, সাহিত্য, ফুটবল, গান বাদ যায়নি কিছুই। মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন বলেন, ‘২০১৭ সালে দীঘায় বসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথম সল্টলেকে বইমেলা করার কথা বলেছিলেন। মুখ্যমন্ত্রীর কথায় ধর্ম আমার, ধর্ম তোমার, উৎসব সবার। সাধারণ মানুষের জন্য বিনা প্রবেশমূল্যে বইমেলা করে দিয়েছেন তিনি।’ বিশেষ পুরস্কার দেওয়া হয় বাংলাদেশ, থাইল্যান্ড, বিধান নগর পুরসভা, পশ্চিমবঙ্গ তথ্য সংস্কৃতি দপ্তর, বিধান নগর পুলিশ, দমকল, সিস্টার নিবেদিতা ইউনিভার্সিটি এবং বাকি পার্টনারদের।
বাংলার ঐতিহ্য দুর্গাপুজো কে তুলে ধরার অভিনব ভাবনার জন্য পুরস্কার দেওয়া হয় জাগো বাংলাকেও। হলের মধ্যে ছোট স্টল হিসেবে পুরস্কার পায় মায়া আর্ট স্পেস। বড় স্টল হিসেবে পুরস্কার পায় পেঙ্গুইন। মেলার মধ্যে খোলা জায়গায় ছোট স্টলের মধ্যে যুগ্মভাবে জয়ী হয়েছে ৭ নং সাহিত্য পাড়া লেন এবং বাণী শিল্প। বড় স্টলের মধ্যে জয়ী হয়েছে প্রতিভাস এবং কারিগর।
এ বছর বইমেলায় হিট শিয়ালদা মেট্রো। রেকর্ড সংখ্যক মানুষ কেবলমাত্র শিয়ালদা থেকে মেট্রোয় চেপে পৌঁছে গিয়েছিলেন কলকাতা বইমেলায়। কলকাতা মেট্রোর মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক কৌশক মিত্র বলেন, “রেকর্ড গড়েছে ইস্ট ওয়েস্ট মেট্রো। শনিবার পর্যন্ত গ্রিন রুটে মেট্রোয় চড়েছেন ৬৬ হাজার মানুষ। গত দুই সপ্তাহে কেবলমাত্র কলকাতা বইমেলার জন্য মেট্রোর আয় এক লাফে অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে। প্রচুর সংখ্যক যাত্রী এই রুটে বইমেলা পৌঁছে গিয়েছেন সহজেই। রবিবার পরিষেবা পাওয়া এবং রাত ১০টা পর্যন্ট মেট্রো চলায় বইমেলা থেকে ফেরাও অনেক সহজ হয়ে গিয়েছিল। ফলে এই বইমেলা মেট্রোর জন্য একটা বড় ইভেন্ট হয়ে দাঁড়িয়েছিল।” তিনি আরও জানিয়েছেন, শনিবার কেবলমাত্র শিয়ালদা স্টেশনে পা রেখেছেন ২৪ হাজার ৮৮৩ জন মানুষ। করুণাময়ী এবং সল্টলেক সেক্টর ফাইভ স্টেশনে টিকিট কেটেছেন যথাক্রমে ২০ হাজার ৩১৯ এবং ৬ হাজার ৮৩০ জন।”
গিল্ডের তরফে জানানো হয়েছে ৪৭ তম আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলার প্রথম সাংবাদিক সম্মেলন করা হবে ২০২৩ সালের নভেম্বর মাসে। ছবিগুলি তুলেছেন দেবাশিস রায় ৷