Kashmiri shawl: শাহতুষ, পশমিনা ও রাফল এর পসরা নিয়ে বনগাঁ শহরে কাশ্মীরি-রা দেখুন ভিডিও

0
1665

অর্পিতা বনিক, দেশের সময়: কুয়াশা ভরা শীতের সকাল, প্রেয়সীর হাত ধরে কোনো এক নির্জন রাস্তায় হাঁটা কিংবা রাস্তার ধারে চায়ের দোকানে ধোঁয়া ওঠা এক কাপ চায়ে শরীরে উষ্ণতা ধরে রাখা—এর পূর্ণতা যেন অপেক্ষা করে কোনো এক মৃদু উষ্ণ অনুভূতিতে। সেই অনুভূতি যেন লুকিয়ে থাকে শাল বা চাদরে নিজেকে মুড়িয়ে নেওয়ার মাঝে।

শীত নিবারণের জন্যে যত আধুনিক পোশাকই থাকুক না কেন, অনুভূতির জায়গাজুড়ে শাল বা চাদরের গ্রহণযোগ্যতা সবকিছুকে ছাপিয়ে যায়।

শীত মানেই ফ্যাশনপ্রেমী মানুষদের জন্য ট্রেন্ডি একটি সময়। শীতের নানা সময়কাল পোশাকের ক্যানভাসে ফুটে ওঠে। তাই হালকা শীত থেকে শুরু করে কনকনে হাড় কাঁপানো ঠান্ডা যে কোনো সময়ই পোশাকের মাঝে ধরা দেয় নতুনত্ব। শীত পোশাকের ক্ষেত্রে খুব পরিচিত একটি নাম শাল কিংবা চাদর। সকালের নরম রোদ কিংবা বিকালের কুয়াশার আগমনে আপনাকে উষ্ণ রাখবে শাল কিংবা চাদর। অন্যদিকে হালকা শীত মানেই যেন নানা ডিজাইনের আর বাহারি ধরনের শালের মেলা। যেহেতু খুব বেশি শীতের আমেজ ধরা দেয়নি প্রকৃতিতে তাই এ সময়ে হালকা শাল কিংবা চাদরেই শীতে মিলবে উষ্ণতা।

শীতের শহরে দেখা মেলে ওঁদের। কাশ্মীরি শাল- এর পসরা নিয়ে দোরে দোরে ঘুরতে থাকেন বিক্রির আশায়। ব্যবসার আশায় ঘর থেকে বহু দূরের সীমান্ত শহর বনগাঁয় কাশ্মীরি শালওয়ালাদের এখন অবাধ বিচরণ৷

এই শহরে ৫টি স্টল দিয়েছেন বেশ কিছু কাশ্মীরি ব্যবসায়ী। সেখানে মিলছে কাশ্মীরি পোশাক ৷ এ শহরের উপরে ভরসা রাখছেন শাফাত কাশ্মীরিও। তিন দশক ধরে বাংলায় ব্যবসা করতে আসা শাফাত-এর নিজের দোকান রয়েছে শ্রীনগরে। বলছেন, ‘‘আপনাদের সঙ্গে, বাংলার সঙ্গেই সবচেয়ে ভাল সম্পর্ক আমাদের। এখানে এলে ভাল থাকি, আর এখানকার মানুষের ব্যবহারও খুব ভাল।’’


বর্তমান সময়ে শীতের আধুনিক এতসব পোশাক থাকতেও শীত নিবারণের পাশাপাশি সাজসজ্জাতে শাল বা চাদরকে বিশেষ প্রাধান্য দেওয়া হয়।

আর সেই শাল যদি হয় কাশ্মীরি শাল, তাহলে তো কথাই নেই। বহু যুগ ধরে অভিজাত্যের প্রশংসার তালিকায় রয়েছে এ শাল।

মুঠো মুঠো হলদে পাতাকে দিয়েছে উড়িয়ে, ডেকেছে রৌদ্রকে,
ডেকেছে তুষার উড়িয়ে দেওয়া বৈশাখী ঝড়কে,
পৃথিবীর নন্দন কানন কাশ্মীর। ’

সেই কবে লিখেছিলেন সুকান্ত ভট্টাচার্য। প্রকৃতির বিস্ময় কাশ্মীরের সৌন্দর্য, তুষার, হিম শীতল হাওয়া, ডাল লেকে শিকারা-বিহার, চিনার গাছের সারি ছাড়াও কাশ্মীরের আরেক সম্পদ হলো কাশ্মীরি শাল।

কাশ্মীরি শালের তিনটি ভাগ রয়েছে। শাহতুষ, পশমিনা ও রাফল। দেখুন ভিডিও

কাশ্মীরের বিখ্যাত শাল হচ্ছে পশমিনা। ভেড়া ও ছাগলের পশম দিয়ে তৈরি হয় এই শালের সুত। একেকটি শাল এতই মিহি যে, তা আংটির ভেতর দিয়ে পার করা যেত। সুপ্রাচীন ইতিহাস রয়েছে পশমিনা শালের। শাহজাদা দ্বারা শিকো রানাদিলকে হিরের আংটি পরাতে গেলে তিনি নাকি তা ফিরিয়ে দেন। তখন এক জাদু দেখান শাহাজাদা। ওই আংটির মধ্যদিয়েই অক্লেশে গলিয়ে দিলেন এক বহুমূল্য শাল। সেটিই ছিল পশমিনা শাল।

কাশ্মীরি পশমিনার নাম রয়েছে বিশ্বজুড়ে। হিমালয়ের উঁচুতে মাইনাস ৩০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় ঘুরে বেড়ায় ক্যাশমিয়ার ছাগল। চ্যাংপা যাযাবররা চিরুনি দিয়ে তাদের বাড়তি লোম ঝরিয়ে আনেন। রিফুকার চরকা কেটে তৈরি করেন পশমিনা উল, যা সাধারণ সুতা থেকে ছয় গুণ পাতলা এবং তিন গুণ উষ্ণ। যত ভালো পশমিনা, তত বেশি মিহি ও উষ্ণ।

প্রচলিত আছে, নেপোলিয়ন বোনাপার্ট তার স্ত্রী সম্রাজ্ঞী জোসেফাইনকেও উপহার দিতেন কাশ্মীরি শাল। সম্রাজ্ঞী ওই শাল গায়ে জড়িয়ে ফ্যাশন শোতে অংশ নিতেন। কাশ্মীরি শালের কদর কেবল যে বাংলায় ছিল তা নয়, ইউরোপেও ব্যাপক জনপ্রিয় ছিল। রাজা বাদশাদের দম্ভ করার মতো পোশাক ছিল এই কাশ্মীরি শাল। কেননা এর অধিক মূল্যের কারণে এটি সহজলভ্য ছিল না। কাশ্মীরি শালের দীর্ঘ স্থায়িত্ব অনেক বেশি যত্ন করে রাখলে এর আয়ু ১০০ বছর পার করে।

মানে ও ঐতিহ্যে শেষ কথা এই কাশ্মীরি শালের বাজার আজ ছেয়ে যাচ্ছে মেশিনে বোনা নকল শালে। আমরা অনেকেই জানি না এই শালে জি ওয়ান ট্যাগ থাকে, যার কারণে মানুষ ঠকে যাচ্ছেন নকল শাল কিনে।

পশমিনা শাল বলে মেশিনে বোনা নকল শাল বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে। পশমিনা ভেড়ার লোম ছেঁটে কাশ্মীরের শাল শিল্পীরা দীর্ঘ পরিশ্রমে একটি শাল তৈরি করেন। কিন্তু মেশিন ও নকল কাশ্মীরি শালে বাজার ছেয়ে যাওয়ায় খারাপ অবস্থা পশমিনা শাল শিল্পীদের। অনেকদিন আগে থেকেই অবস্থাটা শোচনীয়।

অতীতের মতো বর্তমানেও কাশ্মীরি শাল আভিজাত্যের প্রতীক। একটি শাল তৈরির পেছনে থাকে একজন শ্রমিকের কঠোর পরিশ্রম, ব্যয় করা অনেকটা সময়। এ কারণে এই শালের দাম বাজারের অন্য যেকোনো শালের তুলনায় বেশি। তবে এই শাল অন্য যেকোনো শালের তুলনায় টেকসই ও আরামদায়ক।

কনকনে শীতের মাঝে একটি কাশ্মীরি শাল গায়ে জড়িয়ে নেওয়ার ব্যাপারটাই যেন অন্যরকম। এক দিকে যুগের সঙ্গে তাল মেলানো আভিজাত্যে পরিপূর্ণ পোশাকও পরা হয়, অন্যদিকে কনকনে শীতে শরীরে লাগে উষ্ণতার ছোঁয়া।

Previous articleWinter Update : আগামী সপ্তাহেই কলকাতায় জাঁকিয়ে শীত? যা জানাচ্ছে হাওয়া অফিস
Next articleSafe Drive Save Life:বনগাঁয় মোটরসাইকেল আরোহীদের হাতে হেলমেট তুলে দিয়ে পুলিশের গান্ধীগিরি! দেখুন ভিডিও

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here