
আট ও নয়ের দশকের সন্ত্রাসবাদের কালো দিনগুলিকে পিছনে ফেলে পর্যটনের হাত ধরে ঘুরে দাঁড়াচ্ছিল কাশ্মীর। গত কয়েক বছরে লক্ষ লক্ষ মানুষ ভিড় করেছে ভূস্বর্গে, শুরু হয়েছিল ফিল্মের শুটিং। কিন্তু দু’দিন আগে পহেলগামে জঙ্গি হানায় ২৬ জন পর্যটকের মৃত্যুতে ঘড়ির কাঁটা এক ধাক্কায় কয়েক দশক পিছিয়ে গিয়ে নতুন করে অন্ধকার নেমে এসেছে উপত্যকায়। দেখুন ভিডিও
৪৮ ঘণ্টা আগেও পর্যটকদের ভিড়ে গমগম করছিল ডাল লেক, নাগিন লেক, মুঘল আমলের বাগিচাগুলি। শিকারায় ছিল ঠাঁই নেই ঠাঁই নেই রব। দু’দিনেই ছবিটা আমূল পাল্টে গিয়েছে রাজধানী শ্রীনগরে।
ভরা মরশুমে পর্যটকশূন্য ডাল লেকে শিকারাগুলি পাড়ে বাঁধা। চালকরা মনে করতে পারছেন না কবে এই অপেক্ষা ফুরোবে। স্বতঃস্ফূর্ত বন্ধ ও অঘোষিত আতঙ্কে রাস্তাঘাটে লোকজন নেই, দোকানপাট বন্ধ। শ্রীনগর থেকে বেরিয়ে আসার ফ্লাইটে ভিড় উপচে পড়ছে, কিন্তু শ্রীনগরগামী ফ্লাইটে কোনও যাত্রী নেই।

পহেলগামের জঙ্গি হামলার ঘটনাস্থলে এখন শুধু আর্মির কনভয় আর বুটের শব্দ। উল্টে পড়ে থাকা লাল সবুজ প্লাস্টিকের চেয়ার আর ভেলপুরি, চায়ের অস্থায়ী বন্ধ দোকানগুলি সে দিনের নৃশংসতার সাক্ষী। সেনা জওয়ান ও গুটিকয় সাংবাদিক ছাড়া বৈসরন ভ্যালিতে আর কোনও মানুষের দেখা নেই।

বুধবারই নজিরবিহীন ভাবে কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদের বিরোধিতা করে পথে নেমেছিলেন সব স্তরের মানুষ। রাজ্যের সর্বত্র মসজিদ থেকে মাইকে প্রচার করে এই বন্ধে সামিল হতে অনুরোধ করা হয়েছিল সাধারণ মানুষকে। হোটেল ব্যবসায়ী, দোকানদার, হস্তশিল্পীরা পথে নেমে জঙ্গিদের হিংসার বিরুদ্ধে বুক চিতিয়ে প্রতিবাদ করেছেন।

কিন্তু তার পরেও পরিস্থিতি কবে স্বাভাবিক হবে জানে না কেউ। পর্যটকদের কাশ্মীর ছাড়ার হিড়িকে আগামী দিনের ধসে পড়া অর্থনীতি দেখতে পাচ্ছেন স্থানীয়রা। শ্রীনগরের বাসিন্দা জামেওয়ার শাল শিল্পীদের কথায়, ‘সেনা ও পুলিশ দ্রুত ওই ঘটনায় জড়িতদের ধরে শাস্তি দিক। পর্যটকরা চলে গেলে আমাদের না খেয়ে মরতে হবে।’

হোটেল ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, ‘পর্যটকদের যে ভাবে মারা হয়েছে তাতে আমাদের মাথা লজ্জায় হেঁট হয়ে গিয়েছে। পর্যটন ব্যবসা বন্ধ হলে আমরা খাব কী?’আর এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘আমরা সেনার পাশে আছি। ওই পর্যটকরা কী দোষ করেছিল? তাদের এ ভাবে মেরে জঙ্গিরা আমাদেরেই শেষ করতে চাইছে।’
