দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ কাশ্মীর নিয়ে আন্তর্জাতিক মঞ্চে ফের পাকিস্তানকে কড়া জবাব ভারতের। সীমান্ত পার সন্ত্রাস বন্ধ না হলে আলোচনা সম্ভব নয়। রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ সভায় বললেন ভারতের প্রতিনিধি। প্রসঙ্গত, এর আগে কাশ্মীর নিয়ে রাষ্ট্রসংঘে ভারত বিরোধী একাধিক মন্তব্য করেন পাক প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ। তাঁর বক্তব্য শেষ হতেই এই নিয়ে পালটা জবাব দেন ভারতের ফার্স্ট সেক্রেটারি মিজিতো ভিনিতো। তিনি বলেন, “জম্মু-কাশ্মীর নিয়ে কথা বলার আগে সীমান্ত পার সন্ত্রাস বন্ধ করুক ইসলামাবাদ।” ভারতের বিরুদ্ধে মিথ্যে অভিযোগ করা হচ্ছে বলেও জবাবি ভাষণে বলেছেন তিনি।
পাকিস্তান শুধু একটাই কাজ পারে, আর তা হল সন্ত্রাস তৈরি করা, রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ সভায় পাকিস্তানকে কার্যত দুরমুশ করল ভারত। রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পারিষদে ভারতের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করছেন ফার্স্ট সেক্রেটারি মিজিতো ভিনিতো। তিনি বলেন, যে দেশ শান্তি ও মৈত্রীর সম্পর্ক তৈরি করতে চায়, তারা আড়ালে সন্ত্রাসে মদত দেয় না। পাক প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের সব প্রতিশ্রুতিই ভুয়ো বলে দাবি করেছেন তিনি।
গত অগস্ট মাসে সংবাদমাধ্যমের সামনে পাক প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ বলেছিলেন, যুদ্ধের মাধ্যমে নয়, ভারতের সঙ্গে স্থায়ী শান্তির সম্পর্ক তৈরি করতে চায় পাকিস্তান। এমনকি পাক প্রধানমন্ত্রী এও দাবি করেন, কাশ্মীর নিয়ে সমাধানের পথ বের করা হবে। রাষ্ট্রপুঞ্জের প্রস্তাব মেনে কাশ্মীরে শান্তি বজায় রাখার কথাও বলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ। সেই কথার রেশ টেনেই রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ সভায় পাকিস্তানকে এক হাত নেয় ভারত।
ভারতের তরফে প্রতিনিধি মিজিতো ভিনিতো বলেন, পাকিস্তান যে আসলে সন্ত্রাস জিইয়ে রাখতে চায় তার জ্বলন্ত প্রমাণই হল দাউদ ইব্রাহিম। মুম্বই বিস্ফোরণ সহ একাধিক নাশকতার মাথাকে পাকিস্তান সযত্নে নিজেদের আশ্রয়ে রেখেছে। এদিকে কাশ্মীর সীমান্তে নিত্যদিনই সংঘর্ষবিরতি চুক্তি ভাঙছে পাক সেনারা। জঙ্গি ঢোকানো হচ্ছে উপত্যকায়। যে দেশ শান্তির সম্পর্ক তৈরি করতে চায় তারা এভাবে সন্ত্রাসে মদত দেয় না।
কাশ্মীর বিষয়, সীমান্ত সন্ত্রাস নিয়ে ভারত এবং পাকিস্তানের চাপানউতর দিন দিন বেড়েছে। ২০১৯ সালের ৫ অগস্ট কাশ্মীরের বিশেষ সুবিধা প্রত্যাহার করে কেন্দ্র। তার পর দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের অবনতি ঘটে। ভারতীয় রাষ্ট্রদূতদের নিজেদের দেশ থেকে ফিরিয়ে দেয় পাকিস্তান। রাষ্ট্রপুঞ্জে ভারত জানিয়েছে, কাশ্মীর দেশের অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল, থাকবেও।
পাকিস্তান মিথ্যা কথা বলে বিভ্রান্তি তৈরির চেষ্টা করছে। মিজিতোর আরও দাবি, যে দেশ একসময়ে গর্বের সঙ্গে স্বীকার করেছে যে, জম্মু কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ চালানোর জন্য তাদের জঙ্গি শিবিরগুলিতে হাজারে হাজারে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে, সে দেশের মানবাধিকারের সঙ্গে কোনও সম্পর্ক থাকতে পারে কি! এমনকি রাষ্ট্রপুঞ্জ যাদের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে রেখেছে সেই কট্টরপন্থীদেরও ভাতা দিচ্ছে ইসলামাবাদ।
রাষ্ট্রপুঞ্জের বৈঠকে ভারত আরও জানিয়েছে যে পাক অধিকৃত জম্মু ও কাশ্মীর এবং লাদাখে বাইরের লোক ঢোকাচ্ছে ইসালামাবাদ। তার ফলে সেখানে কাশ্মীরিরাই অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছেন। এটা সুপরিকল্পিত ভাবেই করছে ইসলামাবাদ। তা ছাড়া মতাদর্শগত ভাবে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের তারা খতম করতে নেমেছে। জোর করে তাদের ধর্মান্তরিত করা হচ্ছে, তাদের উপর অত্যাচার করা হচ্ছে। সংখ্যালঘুরা সেখানে বৈষম্যের শিকার। এতকিছুর পরেও ভারতের সঙ্গে শান্তি স্থাপনের মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে পাকিস্তান।
কাশ্মীর প্রসঙ্গের পাশাপাশি রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ সভায় ফের একবার পাকিস্তানে সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচারের বিষয়টি তুলেছে ভারত। মিজিতো ভিনিতো বলেন, “যখন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের হাজার হাজার তরুণীকে অপহরণ করা হয়, তখন সেটাকে কী বলা হবে? আন্তর্জাতিক মঞ্চে এসে কাশ্মীর নিয়ে মিথ্যা প্রচার করছে পাকিস্তান।” এর জন্য পাক প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমা চাওয়া উচিত বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। উল্লেখ্য ২০১৯-র ৫ অগাস্ট সংবিধানের ৩৭০ ও ৩৫ (ক) ধারা বাতিল করে নরেন্দ্র মোদী সরকার। এর জেরে জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহার করে নিয়েছে কেন্দ্র। ভারতের এই পদক্ষেপকে ‘বেআইনি এবং একতরফা’ বলে রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ সভায় মন্তব্য করেন পাক প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ। তিনি বলেন, “এর জেরে শান্তি প্রতিষ্ঠার আশা শেষ হয়ে গিয়েছে।” দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে আঞ্চলিক উত্তেজনা বেড়েছে বলেও দাবি করেন তিনি। তাঁর সেই মন্তব্যের কড়া ভাষায় জবাব দিল নয়াদিল্লি।