দেশের সময় , নদিয়া: তিনি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একান্ত ভক্ত, একথা তিনি সর্বদাই গর্ব করে বলেন৷
নদিয়ার করিমপুরের হোগলবেড়িয়া আদর্শ শিক্ষা নিকেতনের প্রধান শিক্ষক গিরিন্দ্রনাথ । তিনি যে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একনিষ্ঠ সৈনিক, তার প্রমাণ আগেও বহুবার মিলেছে। এমনকী, সেই কারণে বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছিলেন এই শিক্ষক। স্কুলের পড়ুয়াদের সামনেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি বসিয়ে তাতে স্যালুট দিতে দেখা গিয়েছিল তাঁকে। তাছাড়া স্কুলের বুকলিস্টেও মুখ্যমন্ত্রী ছবি ছাপিয়েছিলেন তিনি।
এবার পদবি পরিবর্তন করলেন তিনি৷ ছিলেন দাস, হলেন বন্দ্যোপাধ্যায়! না, ভোজবাজি নয়। রীতিমতো আদালতে হলফনামা দিয়ে তবেই এই ‘বদল’ হয়েছে। যাকে বলে, পরিবর্তন! অনুপ্রেরণা? মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । তাঁর প্রতি অকৃত্রিম ভক্তি ও ভালবাসা থেকেই নিজের পদবী পাল্টে গিরিন্দ্রনাথ ‘দাস’ থেকে এখন হয়ে গেছেন গিরিন্দ্রনাথ ‘বন্দ্যোপাধ্যায় ।’
তবে তৃণমূল সুপ্রিমোর প্রতি নিখাদ ভালবাসা থেকে এবারে তিনি যা করলেন, তাতে চমকে উঠেছেন অনেকেই। রীতিমতো কোর্ট থেকে অ্যাফিডেভিট করিয়ে সাতপুরুষের ‘দাস’ পদবী বদলে ফেলে বন্দ্যোপাধ্যায় পদবী নিয়েছেন তিনি।
গিরিন্দ্রনাথ প্রথমবার সংবাদ শিরোনামে উঠে এসেছিলেন ২০২২ সালের আগস্ট মাসে। সেই সময় স্কুল থেকে ছাত্রছাত্রীদের ব্যাগ দেওয়া হচ্ছিল। তখনই দেখা হয়েছিল, ফুলবাড়ীর অসুস্থ মে টাঙানো রয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর বড়সড় ছবি। আর তাতেই স্যালুট ঠুকছেন হেডস্যার ‘গিরিন্দ্রনাথ দাস।’
এরপর চলতি বছরের জানুয়ারি মাসেই নতুন শিক্ষাবর্ষের জন্য স্কুলের পাঠ্যপুস্তকের একটি তালিকা প্রকাশ করা হয়। সেই বইয়ের প্রথম পাতাতেই জ্বলজ্বল করছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি। সেই নিয়েও যথেষ্ট জলঘোলা হয়েছিল। তবে নিন্দুকদের কথা গায়ে মাখেননি গিরিন্দ্রনাথ। তিনি যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘ফ্যানবয়!’
গিরিন্দ্রনাথ সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি যা করেছেন একদম ঠিক করেছেন। ‘লোকে বড় বড় খেলোয়াড়, অভিনেতা, জ্ঞানীগুণী ব্যক্তির গুণমুগ্ধ হিসেবে তাঁদের নামে ছেলেমেয়ে বা প্রিয়জনের নামকরণ করেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁদের থেকে কোন অংশে কম? তাঁকে আমি শ্রদ্ধা করি, ভালবাসি। তাই তাঁকে দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে আমি যদি তাঁর বন্দ্যোপাধ্যায় পদবি গ্রহণ করি, তা হলে অসুবিধা কোথায়?’ প্রশ্ন তাঁর।
এই নিয়ে অবশ্য বিরোধীরা কটাক্ষ করতে ছাড়েনি প্রধান শিক্ষককে। তাঁকে সরাসরি ‘তৃণমূলের দলদাস’ বলে দাগিয়ে দিয়েছেন করিমপুর বিধানসভার বিজেপির কনভেনার মৃগেন বিশ্বাস। যদিও পদবী পরিবর্তনের বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি তিনি। তাঁর দাবি, ‘ওটা ওঁর ব্যাক্তিগত বিষয়।’
একই সুর করিমপুরের সিপিএমের ১ নম্বর এরিয়া কমিটির সম্পাদক সন্দীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের গলাতেও। ‘উনি যেভাবে শিক্ষাক্ষেত্রে রাজনৈতিক রং লাগিয়েছেন, তা একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়,’ দাবি তাঁর।