দেশের সময় কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস দুর্ঘটনা নিয়ে ভারতীয় রেলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিলেন প্রাক্তন রেলমন্ত্রী তথা বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার বিকালে উত্তরবঙ্গের উদ্দেশে রওনা হওয়ার আগে কলকাতা বিমানবন্দরে মমতা বলেন, ‘‘রেল অনাথ হয়ে গিয়েছে। দেখার কেউ নেই।’’ শুধু রেলের পরিকাঠামোকে কাঠগড়ায় তোলেননি মমতা। তাঁর অভিযোগ, দূরপাল্লার ট্রেনে রাতের সফরও এখন বিভীষিকার। তাঁর কথায়, ‘‘আমি তো দেখছি, শিয়ালদহে যাত্রীদের কী দুর্ভোগের মধ্যে পড়তে হচ্ছে মাঝেমাঝেই। এ-ও শুনতে পাই, রাতের ট্রেনে যাত্রীদের যে বেডিং (কম্বল-চাদর, বালিশ) দেওয়া হয়, তাতেও অনেক ডার্টি থিঙ্স (নোংরা জিনিসপত্র) থাকে। এই তো হচ্ছে অবস্থা।’’
উত্তরবঙ্গে রেল দুর্ঘটনা নিয়ে এনডিএ সরকার তথা বিজেপিকে তুলোধনা করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর সরাসরি অভিযোগ, সরকার চালানোর পরিবর্তে কেন্দ্রের শাসকরা এখন হ্যাকিংয়ে ব্যস্ত। কোথায় কীভাবে কারচুপি করা হবে, কোথায় রিগিং করতে হবে।
তাঁর কথায়, “রেল এখন অনাথ হয়ে গেছে। আগের মতো শ্রী নেই। মাধুর্যও নেই। যাত্রী স্বাচ্ছন্দের ব্যাপারে কোনও খেয়ালই রাখা হয় না। যাঁরা দূরপাল্লার ট্রেনে যাতায়ত করেন, তাঁরাই বলেন, বেড লিনেন খুবই নোংরা”।
উত্তরবঙ্গের ভয়াবহ রেল দুর্ঘটনার পর সাধারণ মানুষের মনে যে প্রশ্নটা ঘুরছে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও সেই প্রশ্নটাই সরাসরি তুললেন। তা হল, পর পর এত দুর্ঘটনা ঘটে যাচ্ছে, দুটি ট্রেনের সংঘাত এড়াতে যে যন্ত্রটা থাকার কথা সেটা কোথায় গেল?
সোমবার সকালে শিয়ালদহগামী কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসে পিছন থেকে এসে ধাক্কা মারে একটা মালগাড়ি। নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনের পর নীচবাড়ি ও রাঙাপানি স্টেশনের মধ্যে ঘটে যায় এই ভয়াবহ দুর্ঘটনা। যে ঘটনায় হতাহতের সংখ্যা বহু।
https://x.com/ANI/status/1802651351245365613?t=_6ZmM-KbRApoI39szfrsFA&s=19
এদিন এই ট্রেন দুর্ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়তেই, প্রশ্নের মুখে পড়েন রেল মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণো। গত বছর খানেকের মধ্যে বেশ কয়েকটি ভয়ঙ্কর রেল দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটেছে। আর প্রতিবারই তিনি একটি যন্ত্র তথা প্রযুক্তির কথা শুনিয়েছেন। তার নাম ‘কবচ’। যে যন্ত্র দুটি ট্রেনের মুখোমুখি সংঘাত বা পিছন থেকে এসে ধাক্কা মারার মতো ঘটনা রুখে দেবে।
এদিন মমতা বলেন, আমি রেলমন্ত্রী থাকার সময়ে অ্যান্টি কলিউশন ডিভাইস লাগিয়েছিলাম। কোঙ্কন রেল সেই প্রযুক্তি আবিষ্কার করেছিল। আমি মাডগাঁওয়ে তাদের কারখানায় গিয়েছিলাম। সেই ডিভাইস কোথায় গেল?
সাংবাদিকরা মমতাকে বলেন, রেল এখন কবচ নামে একটা ডিভাইস লাগাচ্ছে। জবাবে মুখ্যমন্ত্রী বোঝাতে চান, এসব বুজরুগি। একটাই যন্ত্র ঘুরিয়ে ফিরিয়ে নতুন নামকরণ করা হচ্ছে। তাঁর কথায়, ভাতকে কেউ ভাত বলে, কেউ বলে রাইস। তাতে কোনও ফারাক হয় না।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, অন্তত কুড়ি জন যাত্রীর অবস্থা আশঙ্কাজনক। আহতের সংখ্যা অনেক বেশি। তাঁর কথায়, “এর দায় কে নেবে?”
রেল দুর্ঘটনা রুখতে সরকারের সামগ্রিক সদিচ্ছা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, রেলের অবস্থা শুধরোতে কোনও আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। শুধু বাইরে থেকে কিছু পরিবর্তন করা হচ্ছে। আমি দুরন্ত এক্সপ্রেস চালু করেছিলাম। সেটাই কি এখন বন্দে ভারত বলে চালানো হচ্ছে?
মমতার কথায়, “রেল এখন অনাথ হয়ে গেছে। আগের মতো শ্রী নেই। মাধুর্যও নেই। যাত্রী স্বাচ্ছন্দের ব্যাপারে কোনও খেয়ালই রাখা হয় না। যাঁরা দূরপাল্লার ট্রেনে যাতায়ত করেন, তাঁরাই বলেন, বেড লিনেন খুবই নোংরা”।
মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ‘‘এখন শুধু ফ্যাশন হচ্ছে, ঘোষণার নামে কথার ফুলঝুরি হচ্ছে। অথচ কাজের কাজ কিছু হচ্ছে না। এখনও ওড়িশায় অনেক মৃতদেহ পড়ে রয়েছে। যেগুলিকে চিহ্নিত করা যায়নি।’’
উত্তরবঙ্গ যাওয়ার জন্য বিমান না পাওয়া নিয়েও ক্ষোভ উগরে দেন মমতা। তাঁর কথায়, ‘‘আমাদের এখানে তেল ভরবে, অথচ আমরাই যেতে পারব না এটা হতে পারে না। এর পর আমাদেরও ভাবতে হবে।’’ সার্বিক ভাবে কেন্দ্রীয় সরকারের রেল এবং অসামরিক বিমান পরিবহণ মন্ত্রককে একযোগে আক্রমণ শানান মমতা।
মুখ্যমন্ত্রী জানান, এদিন রেল দুর্ঘটনার পাওয়ার পরই তিনি উত্তরবঙ্গে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু কোনও ফ্লাইট পাননি। এ ব্যাপারে ক্ষোভ জানিয়েছেন, মমতা। তাঁর কথায়, বাংলা থেকে সব ফ্লাইট তুলে দেওয়া হচ্ছে। চক্রান্ত করছে বাংলার বিরুদ্ধে।
গাইসাল রেল দুর্ঘটনার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে মমতা বলেন, ‘‘গাইসালে যে দুর্ঘটনা ঘটেছিল, তা আজকের ঘটনাস্থল থেকে একটু দূরে। ওই জ়োনটা ব্ল্যাক স্পট। বার বার ওখানে দুর্ঘটনা ঘটে। তা-ও কোনও নজর নেই।’’ উল্লেখ্য, মমতা যখন কলকাতা বিমানবন্দরে এ কথা বলছেন, প্রায় একই সময়ে বাগডোগরায় নেমে ফাঁসিদেওয়ার উদ্দেশে রওনা দেন রেলমন্ত্রী অশ্বিনী। মমতা নাম না করলেও অশ্বিনীকে নিশানা করেই প্রচার সর্বস্ব রেল বলে কটাক্ষ করেছেন। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, তিনি আহতদের দেখতে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যাবেন।