কামদুনি গণধর্ষণ কাণ্ডে রায়ের দিন হাইকোর্ট চত্বরে কাঁদতে দেখা গিয়েছিল মৌসুমী কয়াল, টুম্পা কয়লাদের। হাইকোর্টের নির্দেশের পর সোমবার প্রেসিডেন্সি জেল থেকে মুক্তি পেলেন কামদুনি কাণ্ডের চার অভিযুক্ত। খবর পেতেই ফের কান্নায় ভেঙে পড়লেন টুম্পারা!
একদিকে যখন প্রেসিডেন্সি কেন্দ্রীয় সংশোধনাগার থেকে চারজনের মুক্তি মিলল, তখন কামদুনির নির্যাতিতার পরিবার ও প্রতিবাদী মুখ মৌসুমী কয়াল, টুম্পা কয়ালরা দেখা করলেন বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে। কামদুনি মামলা ইতিমধ্যেই সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছে। সেক্ষেত্রে কামদুনির নির্যাতিতার পরিবারকে আইনি সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন বিরোধী দলনেতা।
দেশের সময়,কলকাতা: কামদুনি মামলায় হাইকোর্টের রায়ের পর শোরগোল পড়ে গিয়েছে রাজ্যে। সোমবার রাতেই প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগার থেকে মুক্তি পেয়েছে চারজন। নিম্ন আদালতে ফাঁসির সাজা পাওয়া আমিন আলিকে বেকসুর খালাস করেছে হাইকোর্ট। এছাড়া নিম্ন আদালতে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা পাওয়া আরও তিনজনের এদিন রাতে জেলমুক্তি হয়েছে। একদিকে যখন প্রেসিডেন্সি কেন্দ্রীয় সংশোধনাগার থেকে চারজনের মুক্তি মিলল, তখন কামদুনির নির্যাতিতার পরিবার ও প্রতিবাদী মুখ মৌসুমী কয়াল, টুম্পা কয়ালরা দেখা করলেন বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে। কামদুনি মামলা ইতিমধ্যেই সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছে। সেক্ষেত্রে কামদুনির নির্যাতিতার পরিবারকে আইনি সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন বিরোধী দলনেতা।
কামদুনির নির্যাতিতার পরিবার ও প্রতিবাদী মুখ টুম্পা-মৌসুমীরা যাতে সুপ্রিম কোর্টে মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত নিরাপত্তার জন্য আদালতে আবেদন করেন, সেই কথাও বলেন বিরোধী দলনেতা। তবে যতদিন না সেটা হচ্ছে, ততদিন নিগৃহীতার পরিবার ও প্রতিবাদী মুখদের জন্য বেসরকারি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে চান শুভেন্দু অধিকারী। বললেন, “ওদের সঙ্গে কথা বলে, ওরা যেমন চাইবে, তেমন সাহায্য করব। তবে এটি একটি অস্থায়ী ব্যবস্থা। স্থায়ী সমাধানের জন্য আমরা ওদের নিরাপত্তার জন্য আদালতে আবেদন জানাতে বলব।”
প্রসঙ্গত, রাজ্যের তরফে কামদুনি মামলায় হাইকোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে ইতিমধ্যেই সুপ্রিম কোর্টে আবদেন করা হয়েছে। রাজ্য সরকারের তরফে সুপ্রিম কোর্টে বলা হয়েছে, কামদুনিকাণ্ডে ওই চারজন জেল থেকে মুক্তি পেলে আইন-শৃঙ্খলার অবনতি হতে পারে। যদিও শুভেন্দু অধিকারী বলছেন, “গোটাটাই লোক দেখানো। এসব করে লাভ নেই। এখানে (হাইকোর্টে) ১৫জন সরকারি আইনজীবী বদল করা হয়েছে। রাজ্য সরকার, সরকারি আইনজীবী ও সিআইডি যদি ঠিকঠাকভাবে লড়ত, তাহলে হয়ত এই রায় হত না।”
এদিকে শুভেন্দুর সঙ্গে দেখা করে বেরিয়ে আজও কেঁদে ভাসালেন মৌসুমী, টুম্পারা। কাঁদতে কাঁদতে বললেন, “দোষীরা ছাড়া পেয়ে গিয়েছে আজ। সবাইকে ছেড়ে দিয়েছে। আমরা আজ উকিলের জন্য এখানে এসেছিলাম। এখানে এসে জানতে পারলাম, চারজনকে ছেড়ে দিয়েছে। রাজ্য প্রশাসন ও সিআইডি কিছু করতে পারল না।”
বেসরকারি নিরাপত্তার প্রসঙ্গে টুম্পা কয়াল জানালেন, “শুভেন্দুবাবু এই কথা বলেছেন ঠিকই। কিন্তু আমাদের কোনও নিরাপত্তা দরকার নেই। আমাদের প্রতিটি রক্তবিন্দু দিয়ে আমরা লড়াই করে যাব।”
প্রসঙ্গত,২০১৩ সালের কামদুনি গণধর্ষণ মামলায় গত শুক্রবার বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর ডিভিশন বেঞ্চ রায় ঘোষণা করে। সেই রায়ে বলা হয়, নিম্ন আদালতে যাদের ফাঁসির সাজা দেওয়া হয়েছিল, সেই সাজা রদ করা হচ্ছে। ফাঁসির সাজাপ্রাপ্ত তিনজন অভিযুক্তর মধ্যে একজনকে আবার বেকসুর খালাস করে দিয়েছে হাইকোর্ট। বাকি দু’জনকে আমৃত্যু কারাদণ্ডের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
শুধু তাই নয়, যেসব অভিযুক্তদের আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছিল নগর দায়রা আদালত, সেই তিন অভিযুক্তকেও বেকসুর খালাসের নির্দেশ দিয়েছে বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর ডিভিশন বেঞ্চ। আদালত জানিয়েছে, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে যথেষ্ট প্রমাণের অভাবেই এই রায় দেওয়া হয়েছে।
এদিকে, সোমবারই হাইকোর্টের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেছে রাজ্য সরকার। উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ৭ জুন পরীক্ষা দিয়ে কামদুনির বাড়িতে ফিরছিলেন রাজারহাট ডিরোজিও কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রীটি। অভিযোগ, বাস থেকে নেমে হেঁটে বাড়ি ফেরার পথে তাঁকে রাস্তা থেকে জোর করে পাঁচিল ঘেরা একটি ঘরে নিয়ে যায় দুষ্কৃতীরা। সেখানেই দফায় দফায় চলে গণধর্ষণ। এই ঘটনার তদন্ত রাজ্য পুলিশের কাছ থেকে পায় সিআইডি।
তদন্তে নেমে সিআইডি আটজনকে গ্রেফতার করে। ২০১৬ সালে নিম্ন আদালত তাদের মধ্যে ছ’জনকে দোষী সাব্যস্ত করে সাজা শোনায়। তিনজনকে ফাঁসি ও তিনজনকে আমৃত্যু কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারক। হাইকোর্টে সেই নির্দেশ খারিজ হয়ে যায়। তারপর সোমবার প্রেসিডেন্সি জেল থেকে বের হন চার অভিযুক্ত।