Kalpana Manna:বাঙালি গৃহবধূ কল্পনা মান্নার স্বপ্ন ছোঁয়ার লক্ষ্যে বাধা আর্থিক প্রতিবন্ধকতা

0
1314

পিয়ালী মুখার্জী, কলকাতা: ছাপোষা মধ্যবিত্ত পরিবারের বাঙালি গৃহবধূ। আর পাঁচটা সংসারী মানুষের মতোই স্বামী সন্তান নিয়ে কেটে যাচ্ছিল দৈনন্দিন জীবন। জানলা দিয়ে যখনই মুক্ত প্রাঙ্গনে চোখ পরতো বুকের ভেতরে চিনচিনে ব্যাথা অনুভূত হতো। স্বপ্ন কে না ছুঁতে পাওয়ার আকাঙ্খা মন ভিজিয়ে দিত প্রতিদিন। এই ভাবেই কেটে যাচ্ছিল দিন মাস বছর। কিন্তু সুপ্ত বাসনা, অপূর্ণ স্বপ্ন তাঁকে ঘুমোতে দিতোনা। সেই অমোঘ আকর্ষণের হাতছানি তাঁকে ফিরিয়ে নিয়ে এলো ক্রীড়া প্রাঙ্গনে।

কথায় বলে ইচ্ছে থাকলে কি না হয়। সমস্ত প্রতিকূলতা কে জয় করে শুরু হয় ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই। সব বাধা কে অতিক্রম করে অদম্য ইচ্ছে আর বজ্র কঠিন মনের জোর কে সম্বল করে তীব্র ভালোবাসার টানে শুরু হয় দৌড়।

হ্যাঁ, কথা হচ্ছে বাংলার মাটিতে বেড়ে ওঠা প্রতিভাময় ও সম্ভবনাময় এথ্যেলেটিক কল্পনা মান্নার। যিনি শুধুমাত্র কল্পনায় আটকে না থেকে নিজেকে প্রমাণ করেছেন বাস্তবে। যাঁকে দেখে বাংলার ঘরে ঘরে মহিলারা নিজেদের কল্পনা করছেন সেই জায়গায়।

কল্পনা মান্না বর্তমানে উত্তর ২৪ পরগনার আড়িযাদহের বাসিন্দা। জন্মসূত্রে বেড়ে ওঠা তারকেশ্বর থানার নতুন গ্রামে। ছেলেবেলার স্কুল জীবন থেকেই খেলাধুলার প্রতি অনুরাগ। সেই সময় জেলা স্তরে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণে আসে সাফল্যও। এই ভাবে চললেও বৈবাহিক সূত্রে আবদ্ধ হবার পর ছেদ পরে খেলাধুলায়। বছর কুড়ি অতিবাহিত হয়ে যায় সংসার ধর্ম পালনেই।

দীর্ঘ বিরতির পর ২০১৬ সালে আবার মাঠে প্রত্যাবর্তন কল্পনার। রাজ্যস্তর আয়োজিত প্রতিযোগিতায় সল্টলেক স্টেডিয়ামে ১০০ মিটার রানে দ্বিতীয় স্থান অর্জন। তার পর থেকে আর ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে।

একটার পর একটা ছোটো থেকে বড় সাফল্য এসেছে তাঁর ঝুলিতে। কঠোর অনুশীলনই মূল মন্ত্র করে নেন কল্পনা তার জীবনে। আর পরিশ্রমের যে কোনো বিকল্প নেই তা প্রমাণ করে যাচ্ছেন তাঁর কাজের মধ্যে দিয়ে। বর্তমানে তিনি আড়িয়াদহ স্পোটিং ক্লাবের আজীবন সদস্য। তিনি এখন প্রশিক্ষকের তত্ত্বাবধানে বেলঘড়িয়া এথেলেটিক ক্লাব, বালি দক্ষিণেশ্বর মাঠ, বালি জুটমিলের মাঠে নিয়মিত অনুশীলন করে থাকেন।

২০১৭ – ২০১৮ সালে রাজ্য স্তরের বিবিধ প্রতিযোগিতা তাঁকে সাফল্য এনে দেয়। সাফল্যের সেই ধারাকে অব্যাহত রেখেই ২০১৮ সালের ১৬ ই ফেব্রুয়ারি প্রথমবার দিল্লীর জওহরলাল নেহেরু স্টেডিয়ামে জাতীয় স্তরের ১০০ মিটার রানে তৃতীয় স্থান অধিকার করেন।

২০১৯ সালে কল্পনা ভারতের হয়ে বাংলাদেশের বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে আন্তর্জাতিক স্তরের ১০০ মিটার রানে তৃতীয়, ৪০০ মিটার রিলে রেসে দ্বিতীয় এবং লং জাম্পে দ্বিতীয় হয়ে দেশের জন্য একটি ব্রোঞ্জ ও দুটি রৌপ পদক লাভ করেন। এই ভাবেই গতিময়তার মধ্যে ছন্দ পতন। বিশ্ব জুড়ে অতিমারীর প্রকোপে খেলা ও বিভিন্ন প্রতিযোগীতা বন্ধ থাকে প্রায় দুবছর।

সাম্প্রতিক ২০২১ সালে ২৭ শে নভেম্বর থেকে ৩০ শে নভেম্বর উত্তর প্রদেশের বারাণসীতে আয়োজিত তৃতীয় জাতীর মাস্টার্স এথেলেটিকস প্রতিযোগিতায় রাজ্যের হয়ে অংশগ্রহণ করেন কল্পনা এবং ৪ টি বিভাগেই প্রথম স্থান অধিকার করে ৪ টি স্বর্ণ পদক অর্জন করেন।

২০২১ সালে ডিসেম্বর মাসে রাজ্যস্তরের ৩৬ তম স্টেট মাস্টার্স এথেলেটিক মিট কোননগরের মাঠে অনুষ্ঠিত হয়, সেখানেই তিনটি ইভেন্টে প্রথম স্থান অধিকার করে স্বর্ণ পদক লাভ করেন তিনি। ২৭ শে এপ্রিল থেকে ১ লা মে তামিলনাড়ুর জহরলাল নেহেরু স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ৪২ তম জাতীয় এথেলেটিক মিটে ১০০ মিটার, ২০০ মিটার, লং জাম্প, রিলে রেসে ২ ব্রোঞ্জ পদক, ১ স্বর্ণ পদক ও একটি রৌপ পদক লাভ করেন কল্পনা। এই মাসেই তামিলনাড়ুর একটি প্রতিযোগিতা থেকে তিনি জিতেছেন ৩ টি স্বর্ণ, একটি রৌপ ও একটি ব্রোঞ্জ পদক।

কল্পনা মান্নার সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা অর্থ। খেলাধুলার যে বিপুল ব্যায় ভার বহন করা তাঁর পক্ষে কষ্টসাধ্য হচ্ছে বলে জানান দেশের সময় কে। অনুশীলন, খেলার উপযুক্ত সরঞ্জাম, উপযুক্ত খাদ্য, বিভিন্ন জায়গায় যাওয়া আসা থাকা খাওয়ার খরচ তাঁর পক্ষে সাধ্যাতীত হচ্ছে বলে জানান।

বিভিন্ন সংস্থার সাথে যোগাযোগ করেও বিশেষ ফলপ্রসূ হয়নি বলে জানান কল্পনা। তাঁর আক্ষেপ যদি কোনো সরকারি অনুদান অথবা কোনো স্পন্সর পাওয়া যেতো তাহলে খেলাধুলা চালিয়ে নিয়ে যেতে কিছু সুবিধা হতো। কল্পনার আবেদন তিনি রাজ্য দেশের জন্য এতো পদক এনেছেন, যদি কোনো স্বহৃদয় ব্যক্তি বা সংস্থা অথবা সরকারি ভাবে কেউ এগিয়ে আসেন। তাঁর আশা যোগ্যতার সঠিক মূল্যায়ন তিনি পাবেন।

Previous articleDesher Samay e Paper দেশের সময় ই পেপার
Next articleMonsoon: তিন দিন আগেই বর্ষা ঢুকে পড়ল কেরলে,বঙ্গে কবে? জানুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here