দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ উত্তর ২৪ পরগনা: ‘দিদির দূত’রা ময়দানে নামতেই জায়গায় জায়গায় বিক্ষোভের চিত্র প্রকট হচ্ছে। কোথাও আবার বিতর্কও দানা বাঁধছে। কয়েকদিন আগেই এক বিজেপি কর্মীকে চড় মারার ঘটনা ঘটে দেগঙ্গায়। এবার নতুন বিতর্ক উত্তর ২৪ পরগনারই বনগাঁয় । ‘দিদির দূত’ হিসাবে এলাকায় যান সাংসদ কাকলি ঘোষদস্তিদার । সেখানে নানা লোকের নানা অভিযোগ আসছিল। কয়েকজন রাস্তা নিয়েও অভিযোগ করেন। এরপরই সাংসদকে বলতে শোনা যায়, ভোট না দিলে কিছুই হবে না।
বনগাঁর চৌবেড়িয়া ২ নম্বর গ্রামপঞ্চায়েতের ন’হাটা বাজারে ‘দিদির দূত’ হিসাবে গিয়েছিলেন কাকলি ঘোষদস্তিদার। ন’হাটা কৃষ্ণ মন্দিরে পুজো দিয়ে এলাকায় যান সাংসদ। সেখানে বেঞ্চ পেতে বসে কাকলি লোকজনের সঙ্গে কথা বলছিলেন। সে সময় এক মহিলা এগিয়ে আসেন।
সাবিত্রী দাস নামে ওই মহিলা কাকলি ঘোষদস্তিদারের কাছে অভিযোগ জানান, ৮৭-র মোড় এলাকায় একটি রাস্তা দীর্ঘদিন ধরে খারাপ। সেই রাস্তা সংস্কারের দাবি জানান তিনি। এরপরই পাল্টা কাকলি ঘোষদস্তিদার ওই মহিলাকে জিজ্ঞাসা করেন, “এখানে মেম্বার কে?” অর্থাৎ পঞ্চায়েত কাদের তা জানতে চান সাংসদ। উত্তর আসে, বিজেপির। এরপরই সাংসদ বলেন, বুঝতে পেরেছেন কেন হয়েছে। এরই মধ্যে ওই মহিলা সাংসদের মুখের উপর স্পষ্ট বলেন, “আমরাও তাহলে পঞ্চায়েতে তৃণমূলকে ভোট দেব না। দেখি তার পর কীভাবে পঞ্চায়েত দাঁড় করায় তৃণমূলরা।”
এরপরই কাকলি ঘোষদস্তিদার বলেন, “কিছুই হবে না। চাল পাবে না, লক্ষ্মীর ভাণ্ডার পাবে না, কন্যাশ্রী পাবে না, স্বাস্থ্যসাথী পাবে না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় না থাকলে কিছুই পাবে না।” পরে সাবিত্রী দাস বলেন, “আমাদের ভোট দিতে হবে, ভোট দেব। উনি তো বললেন ভোট দিলে ” তবে এদিনের এই ঘটনার পর কাকলি ঘোষদস্তিদার অবশ্য নিজের বক্তব্যেই অনড়। “আমি মজা করছিলাম দেখলেন না। সব নম্বর লিখে নিয়েছি” বলার পরও কাকলিকে বলতে শোনা গেল, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষমতায় না থাকলে ওই জায়গায় কী হবে? ৪০ বছর যাদের ভোট দিয়েছে তারা তো ফেলে রেখে দিয়েছে। রাস্তাও করেনি, কোনও উন্নয়নই করেনি। এটা তো প্রমাণিত অন্য লোককে ভোট দিলে তারা কাজ করতে পারে না।”
কাকলির এই মন্তব্য প্রকাশ্যে আসতেই বিতর্ক শুরু হয়েছে। কাকলিকে নিশানা করেছেন বিজেপির সাধারণ সম্পাদক দেবদাস মণ্ডল। বলেছেন, ‘‘সাংসদ বলেছেন বিজেপিকে ভোট দিয়েছে বলে রাস্তাঘাট হবে না। এক জন সাংসদ হয়ে এ কথা বলতে পারেন! পঞ্চায়েতে এ কথার জবাব দেবেন গ্রামের মানুষ।’’
পঞ্চায়েত ভোটের আগে রাজ্য জুড়ে ‘দিদির সুরক্ষা কবচ’ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে তৃণমূল। রাজ্যের ১০ কোটি মানুষের সমস্যার কথা জানতে ‘দিদির দূত’ হিসাবে গ্রামে গ্রামে যাচ্ছেন শাসকদলের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ও নেতানেত্রীরা। কিন্তু এই কর্মসূচির শুরু থেকেই জনতার অভিযোগ শুনতে গিয়ে বিক্ষোভের মুখে পড়ছেন ‘দিদির দূতেরা’। এই আবহে গত সোমবার মুর্শিদাবাদের সাগরদিঘির সভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ‘‘এটা আমারই প্রকল্প। আপনার সমস্যা থাকলে নিশ্চয়ই বলবেন। সমস্যা তো থাকেই। তবে কারও কথা শুনে কুৎসা-অপপ্রচারে কান দেবেন না।’’ তবে তৃণমূলনেত্রীর বার্তার পরও রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে ‘দিদির দূত’দের ঘিরে বিক্ষোভের ছবি বদলায়নি। এই পর্বে এ বার গ্রামে রাস্তার দাবি শুনতে গিয়ে কাকলির ‘আগে ভোট দিন’ মন্তব্য নতুন মাত্রা যোগ করল।