দেশের সময় ,কলকাতা : জামিনের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে জেলমুক্তি বালুর! জেল থেকে ছাড়া পেলেন রাজ্যের প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক (বালু)। বুধবারই রেশন দুর্নীতি মামলায় তাঁকে জামিন দিয়েছে কলকাতার বিচারভবন। এর পর সন্ধ্যায় জেল থেকে ছাড়া পেলেন তিনি।
আদালত জামিন দেওয়ার পরেই প্রেসিডেন্সি জেলে ভিড় জমিয়েছিলেন বালুর অনুগামী। পৌঁছে গিয়েছিলেন বালুর মেয়ে প্রিয়দর্শিনী মল্লিক। এর পর বিকেল সাড়ে ৫টা নাগাদ জেল থেকে বেরোন প্রাক্তন মন্ত্রী। বেরোনোর পর অবশ্য জেলের বাইরে বেশি ক্ষণ দাঁড়াননি তিনি। জেল থেকে বেরিয়েই গাড়িতে উঠে চলে গিয়েছেন মেয়ের সঙ্গে। গিয়েছেন সল্টলেকের বাড়িতে।
এদিন সন্ধের মুখে প্রেসিডেন্সি জেল থেকে বেরিসে আসতে দেখা যায় বালুকে। পরণে সবুজ রঙের পাঞ্জাবি। বাবাকে আনতে জেলে হাজির হয়েছিলেন মেয়ে প্রিয়দর্শিনী।
২০২৩ সালের ২৭ অক্টোবর ম্যারাথন জেরার পর রেশন দুর্নীতি মামলায় রাজ্যের তৎকালীন বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয়কে গ্রেফতার করেছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। অবশেষে ১৪ মাস পর এদিন ৫০ হাজার টাকার জামিন বন্ড এবং ৫০ লাখ টাকার ব্যক্তিগত বন্ডে জ্যোতিপ্রিয় ওরফে বালুর জামিন মঞ্জুর করে কলকাতার নগর দায়রা আদালত।
জামিন মঞ্জুরের পরই জেল চত্বরে ভিড় জমান জ্যোতিপ্রিয়র অনুগামীরা। তবে জেল থেকে বেরিয়ে সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হননি বালু। সোজা গাড়িতে চেপে বাড়ির উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন।
২০২৩ সালে দুর্গা পুজোর মুখে টানা ২০ ঘণ্টারও ম্যারাথন জেরা শেষে রাজ্যের তৎকালীন বনমন্ত্রীকে গ্রেফতার করেছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। অবশেষে ১৪ মাস পর জামিন পেলেন প্রাক্তন মন্ত্রী।
রেশন দুর্নীতি মামলায় আগেই জামিন পেয়েছেন চালকল ব্যবসায়ী বাকিবুর রহমান, বনগাঁর প্রাক্তন পুরপ্রধান শংকর আঢ্য ও ব্যবসায়ী বিশ্বজিৎ দাস। তবে প্রভাবশালী তত্ত্বে বারবার বালুর জামিনের বিরোধিতা করেছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা।
এদিন বেশ কিছু শর্তে বালুর জামিন মঞ্জুর করে আদালত। এগুলি হল – তদন্তকারী আধিকারিকদের সহযোগিতা, বিচারপ্রক্রিয়ায় নিয়মিত উপস্থিত থাকা, সাক্ষীদের প্রভাবিত না করা। পাসপোর্ট-ভিসা জমা রাখতে হবে। এছাড়া আদালতের অনুমতি ছাড়া রাজ্যের বাইরে যেতে পারবেন না।
অন্যদিকে শারীরিক অসুস্থতার জন্য আদালতে একাধিকবার জামিনের আবেদন জানান জ্যোতিপ্রিয়র আইনজীবী। এমনকী এজলাসে দাঁড়িয়ে বিচারকের উদ্দেশে হাতজোড় করে জ্যোতিপ্রিয়কেও একাধিকবার জামিনের আবেদন জানাতে দেখা গিয়েছে। কখনও বলেছেন, ‘মনে হচ্ছে বাম দিকটা পক্ষাঘাত হয়ে যাবে।’ কখনও বা বলেছেন, ‘খুব অসুস্থ। মনে হচ্ছে মরে যাব।’ এও বলেছেন, “‘আমার শরীর ভাল নয়। চিকিৎসার জন্য যেকোনও শর্তে জামিন চাই।”
দুর্গাপুজোর আবহে বাড়িতে ম্যারাথন তল্লাশির পর রাতে বালুকে গ্রেফতার করেছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। ২০ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে তল্লাশি ও জিজ্ঞাসাবাদের পরেই গ্রেফতার করা হয়েছিল তাঁকে। ইডি সূত্রে দাবি করা হয়েছিল, মন্ত্রীর বাড়ি থেকে রেশন বণ্টন সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র মিলেছে। জেলবন্দির পর অসুস্থতার কারণে এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তিও হয়েছিলেন।
তবে পরে সুস্থ হয়ে ফের জেলে ফিরে গিয়েছিলেন তিনি।
প্রসঙ্গত, জ্যোতিপ্রিয়কে গ্রেফতারের পর বার বার তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। জানিয়েছিলেন, বিজেপি ‘ষড়যন্ত্র’ করেই বনমন্ত্রীকে গ্রেফতার করেছে। অথচ ২০২২ সালের ২৩ জুলাই তৎকালীন শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ইডির হাতে গ্রেফতার হওয়ার মাত্র কয়েক দিনের ব্যবধানে তাঁকে মন্ত্রিত্ব ও দলের মহাসচিব পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছিলেন মমতা এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। পার্থকে সাসপেন্ডও করা হয়েছিল।
নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ধৃত পার্থ এখনও জামিন পাননি। সদ্যই তাঁর জামিনের আবেদন খারিজ হয়েছে। কিন্তু জামিন পেলেন বালু।