দেশের সময় , কলকাতা জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক ‘দুর্নীতির গঙ্গাসাগর’। আদালতে তাঁর জামিনের বিরোধিতা করে এমনটাই বলল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি। রেশন দুর্নীতি কাণ্ডে জেলবন্দি রাজ্যের প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী। শনিবার মামলার শুনানি ছিল। সেখানেই এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট বালুর জামিনের বিরোধিতা করে। জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে কার্যত ‘দুর্নীতির রিং মাস্টার’ বলে মন্তব্য করা হয় ইডি’র তরফে।
আদালতে ইডি জানায়, রেশন দুর্নীতিকে যদি পাখির মতো উপর থেকে দেখা যায়, তাহলে দেখা যাবে, গঙ্গাসাগরে যেমন বিভিন্ন নদীর শাখা-প্রশাখা এসে মেশে, তেমনই এক্ষেত্রেও দুর্নীতির বিভিন্ন শাখা এসে মিশেছে জ্যোতিপ্রিয়র কাছে।
এনিয়ে ইডির দাবি, তদন্তে তারা দেখেছে, ভুয়ো সংস্থা থেকে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের মালিকানা, সবেতেই জ্যোতিপ্রিয়র লোক রয়েছে। আদালতে ইডির মন্তব্য, রেশন দুর্নীতির এফআইআরে প্রথমে জ্যোতিপ্রিয়র নাম ছিল না। কিন্তু তদন্ত করতে গিয়ে তাদের হাতে একাধিক নথি এসেছে। তা থেকে দেখা যাচ্ছে, এফআইআরে নাম না থাকলেও দুর্নীতির রিং মাস্টার তিনি।
ইডির দাবি, ষড়যন্ত্রকারীরা সামনে আসেন না। পিছন থেকেই কলকাঠি নাড়েন। জ্যোতিপ্রিয়ও সেভাবে পিছন থেকে সবটা পরিচালনা করেছিলেন। যখন রেশন দুর্নীতি হয়েছে, তিনি তখন রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী। একজন ক্ষমতাশালী।
এর আগে গত ১১ ডিসেম্বর জ্যোতিপ্রিয়কে কিং পিন বলে আদালতে দাবি করেছিল ইডি। সেসময় ওই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার তরফে দাবি করা হয়, জ্যোতিপ্রিয় জামিন পেয়ে গেলে তদন্ত প্রক্রিয়ায় প্রভাবিত করতে পারেন।
জ্যোতিপ্রিয়র আইনজীবী অবশ্য আদালতের কাছে তাঁর মক্কেলের প্রভাবশালী তত্ত্ব খারিজ করার চেষ্টা করেন। বলেন, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক এখন মন্ত্রী নেই। তাহলে তিনি কী করে প্রভাব খাটাবেন? ইডি অবশ্য জ্যোতিপ্রিয়র আইনজীবীর দাবি উড়িয়ে দেয়। ইডির আইনজীবী বলেন, কেউ কিং হন, কেউ কিং মেকার। কিং মেকাররা এতটাই ক্ষমতাশালী যে, জামিন পেলে পুরো মামলা প্রভাবিত করতে পারেন।
গত বছরের ২৭ অক্টোবর রেশন দুর্নীতি কাণ্ডে জ্যোতিপ্রিয়কে গ্রেফতার করে ইডি। গ্রেফতারির পর অসুস্থ হয়ে পড়েন বালু। কিছুদিন হাসপাতালে ছিলেন তিনি। পরে সুস্থ হতেই ফের তাঁকে জেলে নিয়ে যাওয়া হয়। সেই থেকে তিনি জেলে রয়েছেন। তাঁর জামিনের জন্য বিচারভবনে আবেদন করেন জ্যোতিপ্রিয়র আইনজীবী।
নভেম্বর থেকে তার শুনানি শুরু হয়েছে। যার কঠোর বিরোধিতা করে চলেছে ইডি। এর আগে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী ওই সংস্থা আদালতে জানিয়েছে, রেশন দুর্নীতি মামলায় যারা গ্রেফতার হয়েছেন, তারা প্রত্যেকেই জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের দিকে আঙুল তুলেছেন। ইডির দাবি, এখনও বালুর প্রভাব কমেনি। তিনি রাজনৈতিকভাবে এখনও যথেষ্টই প্রভাব খাটাতে সক্ষম। ইডির আইনজীবী এর আগে জ্যোতিপ্রিয় সম্পর্কে আদালতে এমনও মন্তব্য করেছেন যে, রাজা না হলেও রাজা তৈরি করার ক্ষমতা রয়েছে তাঁর।
এ প্রসঙ্গে এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি থাকাকালীন একটি ঘটনার কথা আগেই উল্লেখ করেছে ইডি। তাদের তরফে আদালতে জানানো হয়, গ্রেফতারির পর অসুস্থ হয়ে পড়েন জ্যোতিপ্রিয়। সেসময় বেশ কয়েকদিন তাঁকে এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি রাখা হয়েছিল। ওই সময় ইডি একটি চিরকূট উদ্ধার করে।
অভিযোগ, হাসপাতালে বসে মেয়েকে চিঠি লিখেছিলেন জ্যোতিপ্রিয়। সেই চিঠি ইডির হাতে পৌঁছয়। তাতে টাকার লেনদেন সংক্রান্ত বেশ কিছু তথ্য লেখা ছিল বলে দাবি ইডির। এই প্রসঙ্গ উল্লেখ করেই ইডির দাবি, সুযোগ পেলে জ্যোতিপ্রিয় যে কী করতে পারেন, তার প্রমাণ পেয়ে গিয়েছে তারা।