সাংসারিক হোক বা সামাজিক, কোনও প্রতিকূলতাই তাঁর কাছে বাধা নয়। তাঁর পেশার কাছে তাঁর ভালবাসার কাছে দায়বদ্ধ। আর সেই দায়বদ্ধতার ময়দানে সে হার-না-মানা যোদ্ধা। এমনই উদ্ভাসিত চরিত্র এবং গল্প রয়েছে আমাদের আশপাশে। আমাদের কেবল চিনে নেওয়ার পালা:
কেউ বলে সিনেমা বা সংগীত জগতে যেসব মেয়ে আসে, তারা সবাই খুব সস্তা– এ প্রবাদ আজও শোনা যায় সমাজের নানা স্তরে। কেউ বলে ওরকম গান তো ওপারার চামেলীও করতে পারে কিন্তু আদতে প্রতিভা আর অধ্যাবসায়ের কতটা জোর থাকলে যে এই ‘সস্তা’ পথে মাথা উঁচু করে খ্যাত হওয়া যায়, তা অনেকেই জানেন না।
আবার এই সব খ্যাতির আড়ালেও যে ঠিক কতটা লড়াই থাকে কত জনের, তা বেশিরভাগই জানেন না। জানেন না, নিছক শখে নয়, কত যন্ত্রণায় বাধ্য হয়ে কত জন এসেছেন এই রুপোলি জগতে। আবার তারা আকাশছোঁয়া খ্যাতিও অর্জন করেছেন৷
তাই আজ, আন্তর্জাতিক শ্রমজীবী নারী দিবসে আমরা বেছে নিলাম, এমন এক জন নারীকে, যিনি গানের জগতে আসার আগে ও পরে বহু লড়াইয়ের মুখোমুখী হয়েও নিজের গানের জগতে লড়াই করে চলেছেন প্রতি মুহুর্তে।নিজের জায়গাটা ধরে রেখে নারীর সম্মান প্রতিষ্ঠা করার লক্ষে ছুটছেন প্রতি নিয়ত।
ভারতের সীমান্ত শহর উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁ জয় পুরের বাসিন্দা সোমা দেবনাথ।দেশের সময়েকে জানিয়েছেন সংগীত জগতে তাঁর যুদ্ধের কথা:
ছাত্রজীবন শেষ না হতেই শিক্ষক জীবনে পা দিয়েছেন। তরুণ শিল্পী সোমা দেবনাথ ৷ গত পুজোয় প্রকাশিত হয়েছে তার প্রথম রবীন্দ্রসঙ্গীতের অ্যালবাম।
তার সঙ্গীত যাত্রার গল্প শোনা যাক নিজের মুখেই…
গানের অ্যালবাম
এটাই আমার প্রথম অ্যালবাম ‘সুরের বাঁধনে’প্রকাশিত হয় গত পুজোয়। গান শেখার সময় থেকেই মনে হয়েছিল গান রেকর্ড করাটাও জরুরি। গায়কিতেও কিছুটা পরিবর্তন এসেছে এর মধ্যে। তাছাড়া আমি শিক্ষকতা করছি প্রায় পাঁচ বছর ধরে। সে কারনেও গানের সঙ্গে বোঝাপড়া আগের থেকে ভালো হচ্ছে। প্রথমবার তাই প্রেম পর্ব পূজা পর্ব থেকে বিচ্ছিন্নভাবে গান নির্বাচন না করে নিজের ভালো লাগে যে গানগুলো করতে সেগুলো নিয়েই এই অ্যালবাম। সস্প্রতি Jio Saava এই অ্যালবাম এর দশ টি রবীন্দ্র সংগীত শুনতে পাবেন এখন থেকে৷
Listen to ‘Jodi Jantem’ on JioSaavn – https://www.saavn.com/s/song/bengali/Surer-Bandhone/Jodi-Jantem/KVlaS0VcDlo?referrer=svn_source=share&svn_medium=com.whatsapp&utm_source=share&utm_medium=com.whatsapp
গান নিয়ে পরিকল্পনা
যতদিন পারব নিজের গানের স্কুলে শিক্ষকতা করবো। এছাড়াও এই স্কুলে বিনা মূল্যে দুঃস্থ ছেলে মেয়েদের জন্য গান শেখানো শুরু করেছি। পড়াশোনা শেষ করে এসে সমমনা বন্ধুদের নিয়ে কাজ শুরু করার পরিকল্পনা আছে। আমি একটু ভিন্ন ধারায় গান শেখাতে চাই। বাধাধরা একঘেয়ে নিয়ম ধরে গানের শিক্ষা না দিয়ে আমি কিছুটা ভিন্নভাবে গান শেখাতে চাই যেখানে সবাই মনের আনন্দে গান শিখতে পারবে। আর আমৃত্যু গান করে যাওয়ার ইচ্ছা আছে। রবীন্দ্রসঙ্গীতের বাইরে তিন কবির গান (দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, অতুলপ্রসাদ সেন, রজনীকান্ত সেন) নিয়েও কাজ করার ইচ্ছা আছে। পাশা পাশি আধুনিক বাংলা গানের চর্চা করছি মন প্রাণ দিয়ে৷
রবীন্দ্রসঙ্গীত ভবিষ্যতে…
আমার মনে হয় রবীন্দ্রনাথের গান স্বভাবতই সর্বসাধারণের জন্য না। এর একটা বাঁধা গণ্ডি আছে, নির্দিষ্ট শ্রোতাগোষ্ঠি আছে। কয়েক হাজার মানুষের মধ্যে আমার শ্রোতাগোষ্ঠী সীমাবদ্ধ। যেমন, আমার গানেরও বেশ ক’জন অনুরাগী আছেন। আমার আগের সিডি যিনি কিনেছেন তিনি হয়ত আবারও কিনবেন। কিন্তু নতুন কেউ কিনবে কিনা আমি নিশ্চিত নই। এই সিডি বিক্রির টাকা দিয়েই দুঃস্থ শিল্পীদের সাহায্য করতে চাই৷ আমার মনে হয় সবাই মিলে কিছু ‘ইন্টারেস্টিং’ কাজ করতে হবে এ বিষয়টা নিয়ে। নাহলে রবীন্দ্রসঙ্গীতের খুব বেশি নতুন শ্রোতা তৈরি হবে না। আমার স্কুল করার যে অন্যতম কারণ তাহলো ‘ট্রেডিশনাল’ পদ্ধতিতে না শিখিয়ে কিছু মজার প্রক্রিয়ায় রবীন্দ্রসঙ্গীত করা যাতে নতুন প্রজন্ম আকৃষ্ট হয়। যদিও রবীন্দ্রসঙ্গীতের আবেদন কখনওই হারাবার নয়। পশ্চিমা গান বা সংস্কৃতির প্রতি আমাদের অনেক ঝোঁক। তাই এসব থেকে নিজেদের স্বকিয়তা ধরে রাখতে হলে নিজেদের সংস্কৃতি নিয়ে ‘ইন্টারেস্টিং’ কাজ করতে হবে।
বাড়ীতে মা,বাবা দু’জনই অসুস্থ অর্থনৈতিক সংকট চরমে তবু গানের জগতের জন্য কোন রকম আপস করতে চাইনা। এই চলার পথে অনেক অশুভ শক্তির মুখোমুখি হয়েছি,সব ক্ষেত্রে মায়ের আশীর্বাদে বেঁচে ফিরেছি৷
বনগাঁর প্রাক্তন বিধায়ক গোপাল শেঠ বলেন, বনগাঁ সংস্কৃতির পীঠস্থান,আর এই তরুণ শিল্পী সোমা দেবনাথ এর গান সকলকে মুগ্ধ করবে, এবং তার এই ভাল মনের জন্য বিশেষ করে দুঃস্থ ছেলে মেয়েদের জন্য গানের স্কুল গড়াকে সাঁধুবাদ জানাই,আমরা তার এই ভাল কাজের জন্য বনগাঁবাসী তার সাথে আছি।
কবি মলয় গোস্বামী বলেন আসলে সোমা তার সুরের বাঁধনে বনগাঁর মানুষকে বেঁধে ফেলেছে৷
‘সুরের বাঁধনে’র ভিডিও অ্যালবাম এবং নিজের কথা ও সুরে নতুন গান রেকর্ড করছি ৷
দেখুন সোমা দেবনাথ এর গান: